ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ-ইউনিটের প্রশ্নফাঁস, ডিজিটাল জালিয়াতি এবং একটি বিশ্লেষণ

Published : 21 Oct 2018, 02:30 PM
Updated : 21 Oct 2018, 02:30 PM

একান্ত বাধ্য না হলে বা অফুরন্ত সময় না থাকলে, আমার সাধারণত পত্রপত্রিকা পড়া হয় না। কার হিসাবে যদি বলি তাহলে দুয়েকটি ছাড়া সবই খারাপ খবর। সংবাদগুলো পড়ে মন খারাপ হয়। এই খারাপ খবর কেন লেখা হয় এ সম্পর্কে এক জ্যেষ্ঠ রিপোর্টারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম।

উনি বলেছিলেন, "খারাপ সংবাদ হলো সাংবাদিকতার লাইনে ভাল সংবাদ। যে যত খারাপ সংবাদ আগে দিতে পারবে সেই সাংবাদিকের দাম ততো বেশি।" বুঝলাম, সাংবাদিকতা ও সংবাদ মানে কী! কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য বিষয়ে দুইটি লেখা লিখেছি। পত্রিকায় জমা দিয়েছি। প্রতিদিনই ছাপাবে ভেবে পত্রপত্রিকা পড়ছি। একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিত কিছুদিন আগে ভালো খবর ছাপানোর জন্য একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই উদ্যোগটি এখনও চালু আছে কিনা জানি না। আরও একটি কারণ আছে। পূজার ছুটি। বাসায় একটি টিভি। বাসায় গ্রাম থেকে আসা একটি মেয়ে থাকে। তার দখলে টিভিটি। টিভি না দেখলে নাকি তার মাথা কাজ করে না। তখন বাসায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া ইদানিং ঢাকা শহরে বাসাগুলো যারা বাঁচিয়ে রেখেছে, সেই কাজের মানুষগুলো কেন জানি গৃহমালিকের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে। এখন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বাসায়ও অত্যাচারিত হলে সারা বাংলাদেশে ছি, ছি পড়ে যাবে। সেই মেয়েটি মোটামুটি জি-বাংলা দেখার জন্য টিভিটি দখল করে রেখেছে।

এছাড়া বাসার কর্ত্রী কর্তৃক হুলিয়া জারি করা আছে রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে নাক না গলাতে। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে যে ঘটনা প্রবাহমান তা আমি চিন্তা করছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যেকোনও বিষয় নিয়ে ভাবনা বা মতামত দেওয়ার অধিকারটি যেভাবেই হোক আমি অর্জন করেছি। ১৮ তারিখের ডেইলি স্টার পত্রিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেকোনওভাবে অসদুপায় অবলম্বন করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এজন্য মোবাইল কোর্ট থাকবে এবং অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এটি সম্ভবত দেওয়া হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘ-ইউনিটের প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য। হায়রে দেশ! চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। যারা প্রশ্নফাঁস করবে তারা আপনার বিজ্ঞাপনকে থোড়াই-কেয়ার করে। এই লেখাটি লেখার সময় দেখলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধত্ব করে। আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা অনুসারে বাংলাদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে আছে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে খারাপ কিছু শুনলে আমার নিজেরও খারাপ লাগে।

সংবাদের সারসংক্ষেপ

মনের দু:খে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ-ইউনিটের প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত সকল খবর পড়ার চেষ্টা করলাম। কারণ আগেই বলেছি, বাসার টিভি অন্যের দখলে। ডিজিটাল যুগে মানুষের কারও সাথে কথা বলার সময় নাই। তাই একমাত্র সম্বল ল্যাপটপটিকে আপন ভেবে সকল পত্রপত্রিকায় এই সংবাদটি ঘাঁটতে থাকি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা হতে আমি যে সারসংক্ষেপটি বুঝতে পেরেছি তা হলো-  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ছিল সকাল ১০টায়। পরীক্ষা শুরুর আগে ৯টা ১৭ মিনিটে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। বেলা ১১টায় পরীক্ষা শেষ হলে যাচাই করে দেখা গেছে, সেখানে বাংলা অংশে ১৯টি, ইংরেজি অংশে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান অংশে ৩৬টি সহ সর্বমোট ৭২টি প্রশ্নের হুবহু মিল রয়েছে। এরই ভিত্তিতে মামলা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্যকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিআইডি ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একই সাথে ফলাফল স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরের দিন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেয় এবং ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি তুলে ধরে। কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারণে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, গতবারের তুলনায় এবারের পাশের হার অনেক বেশি। ৭০ হাজার ৪৪০ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৮ হাজার ৪৬৩ জন যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। ফলাফলে আরও দেখা গেছে যে, প্রথম ১০০ জনের ৭০ জনই নিজস্ব ইউনিটে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এছাড়াও দুই ইউনিটের ফেইল করা শিক্ষার্থীরাই 'ঘ' ইউনিটের প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছেন। প্রথম হয়েছেন জাহিদ, যিনি গ-ইউনিটে ফেল করেছিলেন। সে বাংলায় ৩০ এর মধ্যে ৩০ এবং ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭.৩ পেয়েছে। দ্বিতীয় তসলিম বিন আলম। তিনিও 'ক'-ইউনিটে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। ঘ-ইউনিটের ফল বাতিলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন আমরণ অনশন করছেন। শনিবার একটু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। নিজের চোখের সামনে দেখলাম রাজু ভাস্কর্যের নিচে ছাত্রটি অনশন করছেন। তার সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এখন পর্যন্ত আমার জানা মতে অনশনকৃত ছাত্রটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা পরীক্ষা বাতিল অথবা পাসকৃত শিক্ষার্থীদের পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। যেটুকু জানি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার এই মুহূর্তে ছুটিতে বাংলাদেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে কী হবে সেটি দেখার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।

বিশ্লেষণ

সকল পত্রিকার তথ্যের ভিত্তিতে আমার নিজস্ব একটি বিশ্লেষণ আছে। আমি একটি ছোটখাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমি একটি অনুষদের ডিনের দায়িত্বে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু দায়িত্বের কারণে ভর্তি পরীক্ষার সাথে ওতপ্রোতভাবে আমি জড়িত ছিলাম এবং এবারও আছি। গতবছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় সৌভাগ্যবশত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের দুইটি অংশ ধরা পড়ে যায়। সেখান থেকে এই ডিজিটাল জালিয়াতির প্রক্রিয়াটি অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। এটিকে একটি শক্তিশালী শিল্প বলা যেতে পারে। এখানে অনেক কর্মী একসাথে কাজ করে। তিনটি ধাপে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, প্রশ্নপত্র প্রস্তুতকরণ বা পরীক্ষার হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী যারা দায়িত্বরত থাকেন তাদের যে কোন একজন যদি জালিয়াতি চক্রের সাথে সংযুক্ত থাকেন তবে প্রথমে আইফোন বা অত্যাধুনিক স্মার্টফোনের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে প্রশ্নের ছবি তুলে থাকেন। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সেই ছবি দ্বিতীয় গ্রুপের কর্মীদের কাছে চলে যায়। দ্বিতীয় গ্রুপ প্রশ্নগুলোর উত্তর সমাধান করে। এক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রদের ভাড়া করা হয়। তারা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশ্নগুলোর উত্তর সমাধান করে। সমাধানকৃত উত্তর তৃতীয় গ্রুপ মোবাইলের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তরগুলো শিক্ষার্থীদের পাঠায়। যেহেতু পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ এ কারণে মোবাইলের সিমটি একটি ক্রেডিট কার্ড বা ডেভিড কার্ডের মত ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ডিভাইসটি পরীক্ষার্থীর ডান বা বাম হাতের কব্জিতে বাধা থাকে। ডিভাইসটি থেকে শোনার জন্য হেডফোনটি ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। এই ডিভাইসগুলোর কানে দেওয়ার অংশটি এতই ছোট যে অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাহায্যে কানে ঢুকানো ও বের করা হয়। সমাধানকৃত উত্তরপত্রটির প্রশ্ন ও উত্তর এই সংযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে বলে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাথে আগেই কোডিং করা থাকে। ফোনে দ্বিতীয় গ্রুপ সেট ক বললে, সে কাশি দিবে বা অন্য ধরনের শব্দ করবে এবং না মিললে চুপ থাকবে। পরীক্ষার অনেক আগেই এই ধরনের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং সিন্ডিকেটটি এই ধরনের ডিভাইসগুলো তাদের কাছে সরবরাহ করে। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকে যে, তিন থেকে পাঁচ লক্ষ বা ততোধিক টাকার বিনিময়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। এ ধরনের একশ শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে পরীক্ষা শুরুর কিছু আগে বা শুরুর সাথে সাথে প্রশ্নপত্র পেলেও বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে সমাধান বা উত্তর পাঠানো সম্ভব। গত ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র পাঠানোর আইফোন এবং যে পরীক্ষার্থী তাদের সনাক্ত করা গেলেও যারা উত্তরপত্র সরবরাহ করেছিল তাদের সনাক্ত করা যায় নাই। তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হলেও তাদের বর্তমান বাংলাদেশের আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে গেছে কিনা সেটা বলতে পারবো না। তবে ওই সময়েই শুনেছিলাম এই জালিয়াতির সাথে অনেক বড় চক্র জড়িত। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমার অনুমান, প্রশ্নপত্র বিভিন্ন কেন্দ্রে বিলির সময়ে এই প্রশ্নপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে আউট করা হয়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তরপত্র পায়। ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, প্রথম ১০০ জনের ৭০ জনই নিজ ইউনিটে উত্তীর্ণ হতে পারে নাই। সুতরাং এই শিক্ষার্থীগুলোই ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তরপত্র পেয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু ১৮ হাজার ৪৬৩ জনকে পরীর্ক্ষাথীকে উত্তীর্ণ করার আগেই অন্য পদ্ধতি জালিয়াতি করার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

তবে গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমেই প্রশ্নপত্রটি ফাঁস হয়েছে।

এই বিষয়টি নিয়ে বিভক্তি

আমাদের দেশে সবকিছু নিয়েই বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অদ্ভুত কারণে আমরা বাংলাদেশের মানুষ কোনও না কোনও দল উপদলে বিভক্ত। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ এতো বেশি তা চিন্তা করা যায় না। আমি কোন গ্রুপ করতে চাই না, কিন্তু কীভাবে জানি গ্রুপের অংশ হয়ে যাই। এক সপ্তাহ আগে এক বিখ্যাত অধ্যাপকের কাছে গেলাম। দেখলাম আনুমানিক পঞ্চাশ জন শিক্ষক উনার কাছে বসে আছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্যাতিত। আমি একজন বড় অধ্যাপককে সম্মান জানাতে এসে তার গ্রুপের সদস্য হয়ে গেলাম। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের 'ক্ষুরা রোগের টিকা' আবিষ্কারের সাংবাদিক সম্মেলনে গেলাম।

সাংবাদিক সম্মেলন শেষে উনাকে একজন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন এবং বললেন- 'বাংলাদেশে এ টিকা ইতোমধ্যে আবিষ্কার হয়ে গেছে এবং ব্যবহার হচ্ছে।' উপাচার্য মহোদয় উত্তরে উনার টিকাটির স্বকীয়তা উল্লেখ করলেন। উভয়ের কথোপকথন দেখে বুঝতে পারলাম উনারা একজন আরেক জনের বিরোধীপক্ষ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! আমি উপাচার্যের গ্রুপে পড়ে গেলাম। ওই অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যার উপস্থিত ছিলেন। উনি এই টিকার পক্ষে কথা বলেছেন। ফলে উনিও আমার মত বিজ্ঞানকে ভালবেসে একটি পক্ষ হয়ে গেলেন। কিছুদিন আগেও দেখলাম কোটা বিরোধী নিয়ে নানান রাজনীতি। নিরাপদ সড়ক চাই- এটি নিয়েও নানা বিভক্তি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ-ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের দায় কার উপর বর্তায়? আমরা কি বলতে চাই, এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বহীনতা? নাকি বর্তমান সরকারকে নির্বাচনপূর্ব চাপের মুখে ফেলানোর জন্য ২০ দলের আপ্রাণ চেষ্টা নাকি এটি সরকারের একটি ব্যর্থতা?

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম-সাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত 'সমকালীন পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষকতা ও চিন্তা অধিকার' শীর্ষক মতবিনিময় সভা থেকে আসা এক শিক্ষকের সাথে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি এই প্রশ্নফাঁস কাহিনীকে ভয়ঙ্কর অ্যাখ্যা দিয়ে আখতার হোসেনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এখন আমি কী হবো? আওয়ামী লীগ, ২০ দলীয় ঐক্য জোট নাকি 'স্বাধীনচিন্তা শিক্ষক নেটওয়ার্ক'। প্রশ্নফাঁসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে কেন্দ্র করে যে বিভক্তিটি তৈরি হয়েছে সেটিও কি লজ্জাকর নয়? এটি হতে রাজনীতির ফায়দা না নিয়ে এটিকে সম-সাময়িক দুর্দশা বলে ভাবতে পারি কি?

প্লেটো নাকি বলেছেন, 'মাত্র পাঁচ হাজার চল্লিশ জনের অধিক জনসংখ্যা হলে সেটি আদর্শ রাষ্ট্র হতে পারে না।' তাহলে ষোলো কোটি মানুষ নিয়ে বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে সমস্যা থাকাটাই স্বাভাবিক।

সুপারিশমালা

এই পরিপ্রেক্ষিতে কি করলে বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশ পরিত্রাণ পাবে? যদিও ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ধরে রাখার জন্য ফলাফল বাতিলের সুযোগ আছে। অথবা ছাত্রলীগ কর্তৃক প্রস্তাবকৃত পাসকৃত ছাত্রদের নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যারা ধরা পড়েছে তাদের হতে তথ্য নিয়ে তাদের ফলাফল বাতিলের সুযোগ আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাও প্রস্তাব করেছে যে, অন্য ইউনিটের ফলাফল দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও একমাত্র ফলাফল বাতিল ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।

সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছু সুপারিশ করছি পরীক্ষার সময় পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।

পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের শরীর বিশেষ করে হাতের কব্জি ও কান ভালভাবে পরীক্ষা করা উচিত। ব্লুটুথ ডিভাইস আছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে অনেক ডিভাইস বিদ্যমান। এগুলো পরীক্ষার হলে ব্লুটুথ ডিভাইস সনাক্তকরণে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া যেহেতু ব্লুটুথ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, সুতরাং নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করেও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। নেটওয়ার্ক জ্যামারের ক্ষেত্র কম হওয়ায় এটিকে বড় এলাকার জন্যে ব্যবহার সম্ভব হয় না। এজন্যে যখন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময় ওই এলাকার মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন হবে। এগুলো সবই স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা।

ভবিষ্যতের জন্য অনেক পুরাতন আমলের ন্যায় লিখিত পরীক্ষা চালু করা যেতে পারে। যদিও লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষণ একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার কিন্তু বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণের একটি ভাল উপায়।

আপনার আমার সকলের সন্তান আছে। তাদের দিকে তাকিয়ে এক হই সকলে। বাংলাদেশের সমস্যাগুলো বাঙালি হিসেবে সমাধান করি।