মহান শিক্ষা দিবসের ডাক: সর্বজনীন গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চাই

মুশতাক হোসেন
Published : 17 Sept 2018, 10:23 AM
Updated : 17 Sept 2018, 10:23 AM

১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া শরীফ খান কমিশনের বাঙ্গালী বিরোধী ও গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে এদেশের সংগ্রামী ছাত্র সমাজ হরতাল আহ্বান করেছিল। হরতালকে আইয়ুব খানের সামরিক সরকার বুলেটের মাধ্যমে মোকাবেলা করে। সরকারী বাহিনীর গুলীতে শহীদ হন বাবুল, গোলাম মোস্তফা ও ওয়াজিউল্লাহ।

সমস্যাটা শুরু হল কি ভাবে? এদেশের (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষেরা এ অঞ্চলের জন্য একটি পৃথক শিক্ষানীতি দাবি করেছিল। প্রথম কারণ ছিল, এ অঞ্চলের মানুষ ছিল নির্যাতিত, পশ্চিম অঞ্চলের (তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান, বর্তমান পাকিস্তান) তুলনায় বঞ্চিত ও আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার। দ্বিতীয় কারণ ছিল, এদেশের ভাষা-সংস্কৃতি-জীবন ধারা ছিল পশ্চিম অংশের চাইতে একেবারেই আলাদা। বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করে এদেশের সংস্কৃতি-ইতিহাস-সমাজ-অর্থনীতি অনুযায়ী একটি পৃথক শিক্ষানীতিই কেবলমাত্র এ অঞ্চলের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারত।

সামরিক শাসক আইয়ুব খান পাকিস্তানের তদানীন্তন শিক্ষা সচিব জনাব এস এম শরিফ-এর নেতৃত্বে একটি কমিশন করলেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য একটি শিক্ষা নীতি প্রণয়নের জন্য। এটাই শরিফ কমিশন নামে খ্যাত। সামরিক শাসনের মাঝে পাকিস্তানের তদানীন্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব মঞ্জুর কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্দ্যেশ্যে বক্তৃতা করতে আসেন। সামরিক আইন ও গণবিরোধী শিক্ষানীতি বিষয়ে ছাত্ররা তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তা বিক্ষোভে পরিণত হয়। মন্ত্রী ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে বাঁচেন।

১১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিশন ২৪ অধ্যায়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে এ অঞ্চলের মানুষের দাবিকে উপেক্ষা ও উপহাস করে, শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে গণ্য করে। শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার দাবিকে উপেক্ষা করে তারা। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলে: (ক) গোটা পাকিস্তানে উর্দু ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা; (খ) এত কম খরচে রাষ্ট্র শিক্ষা প্রদান করবে না; (গ) স্নাতক ডিগ্রী কোর্স ২ বছরের বদলে ৩ বছর ব্যাপী করা হবে; (ঘ) স্নাতক ডিগ্রী কোর্সে উত্তীর্ণের জন্য ন্যূনতম ৫০% নম্বর পেতে হবে, প্রথম শ্রেণী পেতে হলে ৭০% নম্বর পেতে হবে; (ঙ) বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা একটি কল্পস্বর্গের (ইউটোপিয়ান) ধারণা; (চ) মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলক ইংরেজি শিক্ষা চলবে; (ছ) আবাসিক (রেসিডেন্সিয়াল) স্কুলগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও তার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির পরে শরিফ কমিশনের এহেন সুপারিশ ছিল শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা। ১৯৫৪ সনে তদানীন্তন পূর্ব পাাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে ২১ দফার নির্বাচনী ইশতেহারের ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের চেতনাকে অস্বীকার করে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে গণ্য করা ছিল জনরায়কে চূড়ান্ত অবজ্ঞা করা।

সর্বপ্রথম স্নাতক শ্রেণীর ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে শরিফ কমিশনের বিরুদ্ধে। কারণ স্নাতক কোর্সকে ১ বছর বাড়িয়ে ৩ বছর করা হয়, এবং পাস করার ও প্রথম শ্রেণী পাওয়ার ন্যূনতম নম্বর বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫০% ও ৭০% করা হয়। ক্রমান্বয়ে এ আন্দোলনে সাধারণ ছাত্ররা যোগ দেয় ও জনসাধারণ এতে সমর্থন যোগায়। কারণ গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারী হবার পর থেকেই ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের মনে অসন্তোষ জমতে থাকে। শরিফ কমিশন বাতিলের আন্দোলন সে বিক্ষোভকে প্রকাশের সুযোগ এনে দেয়। এর সাথে তুলনীয় স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮২-৮৩ তে সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলন প্রথমে মজিদ খানের সাম্প্রদায়িক গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শুরু হলেও কালক্রমে তা সামরিক শাসনবিরােধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রূপ নেয়।

১৭ সেপ্টেম্বরে দেশব্যাপী সফল হরতাল ও পুলিশের গুলীতে মোস্তফা-বাবুল-ওয়াজিউল্লাহ'র জীবনদানের পর ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক গণআন্দোলনে পরিণত হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে ডাকসু ও ছাত্র সংগঠনগুলো এক জনসভা আহ্বান করে। ডাকসু'র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জনাব এনায়েতুর রহিম। তখন ডাকসু'তে সহ-সভাপতির পদ সৃষ্টি হয় নি। সে ছাত্র সমাবেশ থেকে শরিফ কমিশনের শিক্ষানীতি বাতিল, ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার ও অন্যান্য দাবি মানার জন্য সরকারের প্রতি চরমপত্র দেয়া হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

বর্তমান শিক্ষানীতির পর্যালোচনার আগে দেখা যাক আগেরকার শিক্ষানীতিগুলো কখন চালু হয়েছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের আগে টোল, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির-মঠ ইত্যাদি ধর্মীয় উপসনালয়ে শিক্ষা দান চালু ছিল। এর বাইরে পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও অস্তিত্ব ছিল। তবে সেগুলোও ধর্মীয় শিক্ষার সাথে অঙ্গিভূত ছিল। বহু আগে ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যে বৌদ্ধ যুগে ঐতিহাসিক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় হতে, এখন আমরা যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত, সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। ইউরোপিয় আদলে এ শিক্ষাকে সমকালীন (বা আধুনিক) শিক্ষা হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। ১৮৩৫ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ঘোষিত শিক্ষানীতিকে বাংলা তথা ভারতের প্রথম সমকালীন শিক্ষানীতি বলা যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ইংরেজি ভাষা ও ইউরোপিয় জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার সূচনা ঘটে। এরপর ১৮৩৫ হতে ১৮৩৮ পর্যন্ত অ্যাডাম রিপোর্ট একটা ব্যাপক শিক্ষা সংস্কারের সূচনা করে। একে আরো শক্তিশালী করে আরো আটটি কমিশন, কমিটি ও রিপোর্ট। এদের মধ্যে ১৮৮২ সালে হান্টার কমিশন প্রতিবেদন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ সম্বলিত ১৯১১ সালের নাথান কমিশন ছিল উল্লেখযোগ্য।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশন ও কমিটি প্রতিবেদন প্রদান করে। ১৯৫৭ সালে আতাউর রহমান খানের পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সংস্কার কমিশন, ১৯৫৯ সালের শরিফ কমিশন (যার বিরুদ্ধে ১৭ সেপ্টেম্বর হরতাল হয়েছিল এবং এ দিনটিকে শিক্ষা দিবস অভিধায় পালন করা হয়), ১৯৬৬ সালের হামিদুর রহমান কমিশন, ১৯৬৯ সালে এয়ার মার্শাল নূর খান কমিশন, ১৯৭০ সালের শামসুল হক কমিটির শিক্ষানীতি উল্লেখযোগ্য। এ সব কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়।এর মধ্যে ১৯৭০ সালে এসএসসি বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সাচ্চা পাকিস্তানী বানাবার জন্য "পাকিস্তান: দেশ ও কৃষ্টি" নামে ১০০ নম্বরের একটা নতুন বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্র-ছাত্রী সমাজ তদানীন্তন ডাকসু'র তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিশাল আন্দোলন গড়ে তোলে। ডাকসু'র সহ-সভাপতি ছিলেন জনাব আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জনাব আবদুল কুদ্দুস মাখন। কেন্দ্রীয় স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মুশতাক হোসেন ও লুৎফা হাসীন রোজী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবু বকর সিদ্দীকি। তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার বইটি এসএসসি সিলেবাস থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আটটি শিক্ষা কমিশন বা কমিটি তার প্রতিবেদন পেশ করে। ১৯৭৪ সালে ড. কুদরাত-ই-খুদা কমিশন, ১৯৭৯ সালে কাজী জাফর অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি, ১৯৮২-৮৩ সালে ড. মজিদ খানের শিক্ষানীতি (এর বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালে বিশাল ও তীব্র ছাত্র অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়), ১৯৮৭ সালে মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট, ২০০০ সালে জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০০৩ সালে ড. মনিরুজ্জামান মিয়ার জাতীয় শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন, ২০১০ সালে আবার জাতীয় শিক্ষা নীতি ঘোষিত হয়।

২০১০ সালে যে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণীত হয়েছিল এখনকার সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় সে নীতির সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু এ শিক্ষানীতিতেও ১৯৬৯ সালে প্রণীত ছাত্র সমাজের ১১ দফা, ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা, ১৯৯০ সালের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফার মৌলিক দাবি পূরণ হয়নি। এ সব দফাসমূহের মূল কথা ছিল একটি সর্বজনীন গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি চালু করা। বাংলাদেশের সকল ছাত্র ছাত্রীর জন্য মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার আজো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, যদিও গত দুই দশকে অনেক অগ্রগতি ঘটেছে, বিশেষ করে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে। উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে, এমনকি প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একই পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে বাংলাদেশের সকল নাগরিককে একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার সর্বজনীন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বদলে মাদ্রাসা আরবি মাধ্যম, সাধারণ বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম ইত্যাদি বিভিন্ন ধারার বৈষম্যমূলক শিক্ষার অপ্রতিহত প্রসার ঘটছে। এ সব বৈষম্য দূর করার বদলে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের তোয়াজ করার নীতি গ্রহণ করে বাংলা মূলধারার সাধারণ শিক্ষায় ধর্মীয় উপাদান যোগ করতে গিয়ে একে অবৈজ্ঞানিক কুসংস্করাচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িক পাঠ্যে রূপান্তর করা হচ্ছে। শিক্ষায় গণমুখী উপাদানের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার সদূরপ্রসারী ফলাফল হিসেবে সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের বৈষম্য কমিয়ে আনা, কিন্তু টাকা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় গরীবের সন্তান আজ মেধার মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়েছে। বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য যুক্তিবাদী শিক্ষা পাঠ্যক্রম গড়ে তোলার বদলে ধর্মীয় গোঁড়ামী ও উগ্রবাদীদের উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত হয়ে শিক্ষা পাঠ্যক্রমের বিকৃতি সাধনে ব্যস্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার সরকার। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একই ধারার শিক্ষায় ধর্মকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে শিক্ষা পাঠক্রমে টেনে না এনে উচ্চতর শিক্ষায় ধর্ম নিয়ে গবেষণামূলক শিক্ষার সুযোগ রাখা ছিল যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু স্কুল পর্যায়ে ধর্মকে আবশ্যিক পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে শিশু-কিশোর মনে গোাঁড়ামী ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষার কাঠামোকে আধুনিক রূপ দেবার জন্য নতুন কাঠামো চালু করা, পরীক্ষার মূল্যায়নের জন্য নম্বরের বদলে গ্রেড পদ্ধতি চালু করা আধুনিকতার দাবি রাখে। কিন্তু গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার মানে আজ ধস নেমেছে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও দক্ষ শিক্ষক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করার কারণে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা বাজেট বর্তমান বাজেটের তিন-চারগুণ করা, এবং পর্যায়ক্রমে ৫ বছরের মাথায় বাজেটের অন্ততঃ এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করা। শিক্ষাকে মুনাফার খাত হিসেবে বিবেচনা না করে একে সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করলে এ খাতে টাকা বরাদ্দ করতে সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ ইতঃস্তত করবেন না।

আগামী দশকে বাংলাদেশকে বিশ্বমানে পৌঁছাতে হলে শিক্ষাকে আধুনিক সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক রূপে গড়ে তোলার কাজে হাত দিতে হবে। সাময়িক রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য কূপমন্ডুক কুসংস্কারাচ্ছন্ন পশ্চাদপদ গোষ্ঠীকে তোয়াজ করার নীতি বাদ দিতে হবে। আর এ জন্যে সহযোগিতা চাইতে হবে এ প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকেই। শহীদ মোস্তফা-বাবুল-ওয়াজিউল্লাহ'র উত্তরসূরী এ যুুগের ছাত্র সমাজ নিশ্চয়ই জাতিকে সামনে এগিয়ে নেবার মিছিলে সামনেই থাকবেন। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সে উজ্জ্বল সম্ভাবনাগুলোকেই আমরা দেখতে পেয়েছি।

তথ্যসূত্র:

১. Mohammad Jashim Uddin. Education Day : What it means to young generation? New Nation. Sept 19, 2017

২. সাপ্তাহিক একতা। ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস। বর্ষ ৪৮ সংখ্যা ৫। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৩. ড. মো. আখতারুজ্জামান। জাতীয় শিক্ষানীতিঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২