তালাক বাড়ছে- শারিয়া কী বলে?

হাসান মাহমুদহাসান মাহমুদ
Published : 11 Sept 2018, 01:17 PM
Updated : 11 Sept 2018, 01:17 PM

'মিরপুরের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. আমির হোসেন ১১ বছর ধরে বিয়ে এবং তালাক রেজিস্ট্রির কাজ করছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বিচ্ছেদের হার প্রতি বছরই বাড়ছে, আবেদনের ৭০ ভাগই আসে নারীদের কাছ থেকে" – প্রথম আলো ২৭ অগাস্ট ২০১৮ ও আরো অনেক সূত্র। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ থেকে বিশেষ অজ্ঞ পর্য্ন্ত অনেকেই চিন্তিত। এটাও বলা হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র হলে শারিয়া আইন হতো, তাহলে এতো সংসার ভাঙ্গত না।  কথাটা ঠিক, শারিয়া আইন হলে এতো সংসার ভাঙ্গত না।

ভাঙা সংসার বাচ্চাদের মাথায় বজ্র হয়েই পড়ে – এসব নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা বলবেন – এ নিবন্ধ শুধু সমস্যাটার শারিয়া আঙ্গিক নিয়ে। বাংলাদেশ শারিয়া রাষ্ট্র নয়। কিন্তু প্রায় সব ইমাম এবং তাঁদের অসংখ্য ভক্ত শারিয়া আইন চান।  এ নিয়ে দেশে শক্তিশালী এক অদৃশ্য টানাপড়েন বিরাজ করছে তাই এ সম্বন্ধে আলোচনা ও গণসচেতনতার বিকল্প নেই। আমরা দেখব সংশ্লিষ্ট (১) তালাকের শারিয়া আইন (২) কোরানের হুকুম এবং (৩) নবীজীর (স.) বিধান।   নিবন্ধের সূত্রগুলো কেউ চাইলে শারিয়া বইয়ের পৃষ্ঠার স্ক্যান পাঠানো যেতে পারে।

(১) তালাকের আইন

স্বামী স্ত্রীকে তিন ধাপে কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে তালাক দিতে পারবে (বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৫১, ৩৪৩; হানাফি আইন হেদায়া পৃঃ ৮১; শাফি'ই আইন উমদাত আল সালিক আইন নং এন.৩.৫; মওলানা মুহিউদ্দীনের বাংলা-কোরানের তফসির পৃঃ ১২৮; মওলানা আশরাফ আলী থানভী'র "দ্বীন কি বাঁতে" আইন # ১৫৩৭, ১৫৩৮, ১৫৪৬ ও ২৫৫৫; ইউরোপিয়ান ফতোয়া কাউন্সিল ইত্যাদি)।

অন্যদিকে, স্ত্রী তালাক চাইলে শারিয়া কোর্টে মামলা করতে হবে, এর নাম 'খুলা আইন'।  স্বামীর শারীরিক বা আর্থিক অক্ষমতা, বেশি মারপিট ইত্যাদির প্রমাণ থাকলে কাজী বিবাহ বাতিল করতে পারেন। ওগুলো প্রমাণ করা কঠিন, প্রমাণ না থাকলে কোর্ট স্ত্রীর কাছ থেকে (দেনমোহরের) টাকা বা সম্পত্তি বা ন্যায্য অধিকার ত্যাগ করিয়ে নিয়ে স্বামীর অনুমতির চেষ্টা করবে, নাহলে তালাক হবে না (বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৫৫ ; শাফি'ই আইন #হ.৫.০, হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১১২, শারিয়া দি ইসলামিক ল' – ডঃ আবদুর রহমান ডোই, পৃঃ ১৯২ ইত্যাদি)।   ক'বছর আগে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সিডো (নারী অধিকার) নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলে এক মুফতি ওইসব আইনের ভিত্তিতেই বিবিসি'র সাক্ষাৎকারে বলেছেন – "ইসলামী আইন অনুসারে নারী তালাক চাহিলে তালাকের ইচ্ছা প্রকাশ করিতে পারে, কিন্তু ইহা নির্ভর করে স্বামী তাহার অনুরোধ রাখিবে কি না তাহার উপর।"

মুফতির দাবি এবং এই শারিয়া আইন – এক বা দুই তালাক দেবার পরে "স্বামী তাহার স্ত্রীকে আবার ফিরাইয়া লইতে পারে, স্ত্রীর সম্মতি থাকুক বা না থাকুক"- (বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৫২) – এবারে আমরা দেখব এগুলো কোরান- রসুল (স) লঙ্ঘন করে কিনা।

সংসার টিকিয়ে রাখা নারীর স্বভাবগত প্রবৃত্তি। সেই স্ত্রী যখন তালাকের আবেদন করে তখন বুঝতে হবে তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। স্বামী বিলক্ষণ জানে তার 'অনুমতি' ছাড়া কোর্টের সাধ্য নেই বিয়ে বাতিল করার, সে 'অধিকার'-এর পূর্ণ সুযোগ সে নেয়। স্ত্রী যতক্ষণ দেনমোহর এবং নিজের ও বাচ্চাদের কাস্টডি বা ভরণপোষণ ইত্যাদি ত্যাগ না করছে ততক্ষণ সে তালাকের অনুমতি দেবে না। সে আবার বিয়ে করবে, কিন্তু স্ত্রী করতে পারবে না এবং ততদিনই বেচারা স্ত্রীকে ঐ স্বামীর সাথেই থাকতে হবে, ঘরবাড়ী বাচ্চাদের দেখাশুনা রান্নাবান্না করতে হবে। কখনো স্বামী উপরি কামাইয়ের ধান্ধায় আরো টাকা চেয়ে বসে, এর বাস্তব উদাহরণও আমাদের কাছে আছে। তার 'অনুমতি'র চেষ্টায় বেচারা কাজীর বছরের পর বছর লেগে যায়, ততদিনই স্ত্রীকে শারিয়া কোর্টে ছুটোছুটি করতে হয়, উকিলকে অজস্র টাকা ঢালতে হয়, অফিস থেকে বিনা বেতনের ছুটি নিতে হয় বা চাকরি ছাড়তে হয়, অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাদের এবং নিজের ভরণপোষণের ন্যায্য অধিকারও ত্যাগ করতে হয়।  এ ছাড়াও আছে সামাজিক সমস্যা। তালাকের পর চতুর্দিক থেকে তার ওপরে নষ্ট মানুষের মাছি পড়ে, কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায়না, তার ছোটবোনের বিয়ের সমস্যা হয় বলে সে তার বাবা মা ভাইবোনেরও সমর্থন পায়না। এইসব মিলিয়ে এমন ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে অসহায় স্ত্রী মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে, কোর্টে যায় না। তাছাড়া কাজীকেও ফেরেশতা মনে করার কোনো কারণ নেই। খেলাফত আমলেও নারীর ন্যায্য অধিকার ছেড়ে দেবার জন্য শারিয়া কোর্টে নতুন এক ফর্ম বানানো হয়েছিল যাতে নারীরা বাধ্য হয়ে সই করত। উদাহরণ দিচ্ছি খেলাফত আমলে শারিয়া কোর্টের শিকায়তে দফতরী (নালিশ বিভাগ) থেকে:-

"সতেরো ও আঠারো শতাব্দীতে প্রচুর খুলা হইত। খুলা পদ্ধতিতে স্ত্রীকে যে কোন প্রাপ্য, এমনকি স্ত্রীর নিজের ও সন্তানদের ভরণপোষণও পরিত্যাগ করিতে হইত। এই জন্য খুলার দলিলে এক অতিরিক্ত কাগজ সংযোজিত করা হয়। উহাতে সন্তানদের নাম, পিতার নাম ও সন্তানদের খরচের ব্যাপারে (স্বামীর দায়িত্ব নাই, এই ব্যাপারে) স্ত্রীর স্বীকৃতির কথা লিখা থাকে। ভিদিন অঞ্চলের হাওয়া খাতুন ১৭৮৩ সালে স্বামীকে খুলা-তালাক দেয়। তাহাকে মোহরের ৪০০০ অ্যাক্সেসের (তৎকালীন তুর্কী টাকা) অপরিশোধিত ১০০০ অ্যাক্সেস এবং ভরণপোষণের অর্থ পরিত্যাগ করিতে হয়…….জুলাই ১৮০২ − ইস্তাম্বুলের হালিমা খাতুন আসিয়া দাবি করিল যে মোহর পরিত্যাগ করিবার জন্য তাহার স্বামী আহমেদ তাহাকে খুলার জন্য চাপ দিতেছে……দুর্নীতিপরায়ণ কাজিরা ষড়যন্ত্র করিত ও ঘুষ খাইত" (পৃঃ ৮৯, ৯২, ১০০, ১০৪, ইত্যাদি) – 'উইমেন, দ্য ফ্যামিলি অ্যাণ্ড ডিভোর্স ল'জ ইন ইসলামিক হিস্ট্রি' – ডঃ আমিরা আজহারি – অনেক মামলার উদ্ধৃতি।

এবারে কোরান-রসুল (স)।

(২) কোরান

খুলা আইনটা সরাসরি কোরান বিরোধী। কোরানে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোথাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনিচ্ছুক স্ত্রীকে সংসার করতে বাধ্য করার হুকুম তো নেই বরং নারীকে তালাকের একচ্ছত্র অধিকার দেয়া আছে, উদাহরণ দিচ্ছি।

(ক) আল্ আহযাব আয়াত ২৯ – "হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় নেই।" খেয়াল করুন, এই আয়াত অনুযায়ী তালাক দেয়া বা না দেয়া স্বামীর ইচ্ছের ওপরে নির্ভর করেনা, স্ত্রী চাইলে স্বামী তালাক দিতে বাধ্য। আল্লাহ নিজে নবী-পত্নীদেরকে সম্পূর্ণ অধিকার দিয়েছিলেন নবীজীর (স) সাথে থাকার বা ছেড়ে যাবার।  তাঁরা নবীজীকে (স) ছেড়ে যাননি সেটা তাঁদের সেই অধিকার প্রয়োগ।

(খ) নিসা আয়াত ১৯ − (সংশ্লিষ্ট অংশ) "হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও।"

এখানে 'উত্তরাধীকারী' মানে জোর করে তাদেরকে দাসী বানিয়ে নিজে মালিক বনে যাওয়া নয় বরং স্ত্রীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের স্বামী হয়ে বসা। বাংলায় যেমন 'হুক্কা-খাওয়া'র মানে হুঁকোটাকে কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলা নয়। মউদুদি বলেন, তখন কেউ মারা গেলে তার বৌদেরকে ভাই-চাচারা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে যেতো, তাই এ-আয়াত। কিন্তু মউদুদি 'তাদেরকে যা প্রদান করেছ' অর্থাৎ দেনমোহর কথাটা এড়িয়ে গেছেন, যা শুধু স্ত্রীর বেলায় খাটে। অথচ বিশ্বের বেশীরভাগ ইসলামী বিশেষজ্ঞ দেনমোহর কথাটার সমর্থন করেছেন যেমন বিশ্ববিখ্যাত শারিয়াবিদ ডঃ জামাল বাদাওয়ী। আবারও বলছি, কোরানে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোথাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনিচ্ছুক স্ত্রীকে সংসার করতে বাধ্য করার হুকুম নেই।

(৩) রসুল (স)

খুলা আইনটা সরাসরি রসুল (স) বিরোধী।

রসূল (স) দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোথাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনিচ্ছুক স্ত্রীকে সংসার করতে বাধ্য তো করেনই নি নেই বরং তাঁর ইচ্ছে ও সুপারিশের বিপরীতে হলেও নারীকে তালাকের একচ্ছত্র অধিকার দিয়েছেন। উদাহরণ দিচ্ছি।

(ক) "এখনও আমার চোখের সামনে ভাসিতেছে যে, বরীরার স্বামী মুগীস কাঁদিতেছে এবং তাহার পিছুপিছু ছুটিতেছে। চোখের পানিতে তাহার দাড়ি ভিজিয়া গেল। এই দৃশ্য দেখিয়া নবী করীম (দঃ) বলিলেন, 'হে আব্বাস! বরীরার প্রতি মুগীসের ভালবাসা আর মুগীসের প্রতি বরীরার উপেক্ষা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক!' তিনি বরীরাকে বলিলেন, 'তুমি যদি মুগীসকে পুনরায় গ্রহণ করিতে!' সে বলিল, 'ইয়া রসুলুলাহ! ইহা কি আপনার নির্দেশ ?' তিনি বলিলেন, 'আমি ইহা সুপারিশ করিতেছি।' বরীরা বলিল, 'মুগীসের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নাই'।"

কি মনে হয়? মুগীস বরীরাকে এতই ভালবাসত যে সে "কাঁদিতেছে এবং তাহার পিছুপিছূ ছুটিতেছে, চোখের পানিতে তাহার দাঁড়ি ভিজিয়া গেল।" এমন প্রেমময় স্বামী ক'জন নারী পায়? এত ভালবাসার পরেও "মুগীসের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নাই", – নবীজী (স) কি বরীরাকে বাধ্য করলেন মুগীসের সাথে সংসার করতে?  নোপ্ ! দেখুন মুহিউদ্দনের অনুদিত কোরান, পৃষ্ঠা ২৭১:- "বরীরা আরজ করলেন: ইয়া রসুলুলাহ! এটি আপনার নির্দেশ হলে শিরোধার্য, পক্ষান্তরে সুপারিশ হলে আমার মন তাতে সম্মত নয়। রসুলুলাহ (সাঃ) বললেন : নির্দেশ নয়, সুপারিশই। বরীরা জানতেন যে, রসুলুলাহ (সাঃ) নীতির বাইরে অসন্তুষ্ট হবেন না। তাই পরিষ্কার ভাষায় আরজ করলেন : তাহলে এ সুপারিশ আমি গ্রহণ করব না। রসুলুলাহ (সাঃ) হৃষ্টচিত্তে তাকে তদাবস্থায়ই থাকতে দিলেন।" সিদ্ধান্ত গিভেন, চ্যাপ্টার ক্লোজড।

এরই নাম ইসলামী নারী-অধিকার যা স্বয়ং রসুলের (স) ইচ্ছে ও সুপারিশের বিরুদ্ধে তাঁর সমর্থনেই অভ্রভেদী দণ্ডায়মান। সেই বেহেশতি অধিকার ডাকাতি হয়ে গেছে শারিয়া আইনে, আল্লাহ রসুলের (স) নামেই!

(খ) সুরা আল্ আহযাব আয়াত ২৯ এর পটভূমি। আয়েশা (রা) বলিয়াছেন – আল্লাহ'র রসুল (স) আমাদিগকে সুযোগ দিয়াছেন এবং আমরা আল্লাহ ও তাঁহার রসুলকে বাছিয়া লইয়াছি" – সহি বুখারী − মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মুহসিন খান অনুদিত, ৭ম খণ্ড ১৮৮, ৩য় খণ্ড ৬৪৮।

(গ) থাবিত বিন কায়েসের স্ত্রী রসুলের নিকট আসিয়া বলিল, 'হে আলাহ'র রসুল! থাবিত বিন কায়েসের চরিত্র বা দ্বীনদারীর উপর আমার কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু আমার ভয় হইতেছে আমি আলাহ'র অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিতে পারিব না' (অর্থাৎ স্বামীর প্রতি কর্তব্যে গাফিলতি হতে পারে) – সহি বুখারী হাদিস ২৪৮৩, হাফেজ আবদুল জলিল।

ইহাতে রসুল বলিলেন, 'তুমি কি তাহার বাগানটা ফেরত দিতে রাজি ?' সে বলিল, 'হ্যাঁ।' অতএব সে তাহাকে বাগান ফেরত দিল এবং রসুল (দঃ) থাবিতকে তালাক দিতে বলিলেন। (এই স্ত্রীর নাম জামিলা)। অর্থাৎ স্বামী ভালোবাসলেও কিংবা সে দ্বীনদারী ভাল মানুষ হলেও নারী বাধ্য নয় সে সংসার করতে যা তার মন চায় না। সিদ্ধান্ত গিভেন, চ্যাপ্টার ক্লোজড।

(ঘ) শুধু স্ত্রীর ইচ্ছের ভিত্তিতে নবীজী বিয়ে বাতিল করেছেন এর প্রমাণ আরো আছে। যেমন- সহি ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড, ১৮৭৪। বিয়ের পর এক মেয়ে এসে তাঁকে বলল তার বাবা তার মতের বিরুদ্ধে জোর করে তাকে বিয়ে দিয়েছেন। নবীজী (স) কি করলেন?  তাকে ধমক দিয়ে বললেন যাও সংসার কর?  নোপ্ !!  তিনি তাকে দিলেন কোরানে আল্লাহ'র দেয়া অধিকার – "ইচ্ছে হলে তুমি এই বিয়ে বাতিল করতে পার" – সিদ্ধান্ত গিভেন, চ্যাপ্টার ক্লোজড।

এইসব দলিলের ভিত্তিতে বছর পনেরো আগে মিসরের সরকার আইন পাশ করেছে যে, স্ত্রী তার দেনমোহর ফিরিয়ে দিয়ে তালাকের আবেদন করলেই তালাক বিচ্ছেদ হয়ে যাবে, কারো ওপর স্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে না।

কালতামামী-

হ্যাঁ, দেশে শারিয়া আইন থাকলে মা-বোনেরা অত্যাচারী স্বামীর সংসারে বন্দী হয়ে পিষ্ট হতেন, তালাকের আবেদনও করতে পারতেন না, এতো তালাকও হতো না। কিন্তু সেটা কি মূল্যে? সেটা নারীর সম্মান ও অধিকারের মূল্যে। ইসলাম তো শান্তির সংসার চায়, জবরদস্তির সংসার কি শান্তির হতে পারে? কোরান- হাদীসের ওই উদাহরণগুলো কি সত্যতা প্রমাণ করে?  আসলে এই প্রচণ্ড নারী-বিরোধী, কোরান রসূল (স) বিরোধী 'খুলা' আইনটা এসেছে ইহুদী আইন থেকে, একে বলে 'গেট'।  শারিয়া আইনের মতই ওদের এই 'গেট' আইনেও স্ত্রী তালাক চাইলে ইহুদী কোর্টে আবেদন করতে হয়, নারীর একই সর্বনাশ ঘটে।  স্রষ্টা ও প্রেরিত পুরুষের নাম ভাঙিয়ে এই যে নারীর ওপরে অত্যাচার – একে কীভাবে মূল্যায়ন করব আমরা?

কোষ্টকাঠিন্য শুধু পেটেতেই নয়,

এ কঠিন অসুখটা বিবেকেও হয়……

(লেখকের "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" বইয়ের একটি অধ্যায়)