বাংলাদেশ নিয়ে শহিদুল আলমের মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্ত প্রজন্ম (পর্ব-২)

Published : 14 August 2018, 02:58 PM
Updated : 14 August 2018, 02:58 PM

শহিদুল আলম একজন গুণী মানুষ সন্দেহ নাই। তার বৈশ্বিক নেটওয়ার্কও অসাধারণ। তিনি যে শুধু ফটোগ্রাফি ভালো করেন তাই নয়, উনি অসম্ভব ভালো বক্তাও। আবার বাংলাদেশ নিয়ে সবটা যে উনি মিথ্যা বলেন, তাও নয়। এই যেমন দুর্নীতি নিয়ে, ক্রসফায়ার নিয়ে বা অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ইস্যুতে উনার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করার তেমন কিছু আমি খুঁজে পাইনি।

উনার সমস্যা শুধু মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে। তিনি তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি উনি খুব সুকৌশলে ব্যবহার করেন মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধী বিচারকে বিতর্কিত করতে। আর মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার – এই দুটোর সাথেই যেহেতু আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে আছে, তাই তিনি আওয়ামী লীগেরও তীব্র বিরোধিতা করেন। এমনিতে আওয়ামী বিরোধিতায় আমি কোনও অসুবিধা দেখি না। বিরোধিতার মতো কাজ করলে বিরোধিতা করাই উচিত। সেটা তার নাগরিক অধিকারও। কিন্তু এই বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি যখন মিথ্যার আশ্রয় নেন এবং অসততা করেন, তখনই সমস্যা দেখা দেয়।

মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের গণ আন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি বারবার মিথ্যাচারে করেছেন। আসুন দেখি,  দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এর পর আরেক আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল জাজিরাকে উনি কী বলেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আল জাজিরার ভূমিকা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে না।

মিথ্যা – ১

আল জাজিরার উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্নটি ছিলো:  Is this all about road safety or is there something larger going on there?

উত্তরে শহিদুল আলম বলেছেন-

Very much larger. This has been going on very very long time. It's non-elected government, they do not really have mandate to rule but they have been taking on by brute force.

অর্থাৎ, এই আন্দোলনটি নিছক সড়ক নিরাপত্তার আন্দোলন নয়। তার চেয়ে অনেক বড় কিছু। এই সরকার একটি অনির্বাচিত সরকার এবং তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনও ম্যান্ডেট নেই, কিন্তু তবুও তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে।

তারপর তিনি বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং ইত্যাদির খতিয়ান দিয়ে বলেছেন, "So, it really is that pent-up energy, emotion, anger that has been let loose this particular incident."

এখন আপনারা বলুন, নিরাপদ সড়ক চেয়ে যে শিশু-কিশোররা রাস্তায় নেমে এসেছিলো, তারা কী সরকারের ম্যান্ডেট, দুর্নীতি, ব্যাংক ডাকাতি ইত্যাদি নিয়ে কোনও কথা বলেছিলো! এসবের কারণেই পুঞ্জীভুত রাগ থেকে রাস্তায় নেমে এসেছিলো? সেই পুরনো কৌশল, উদ্দশ্যমূলক মিথ্যা বলা। শাহবাগ আন্দোলনের মতো তিনি এই আন্দোলটাকেও কথার মারপ্যাঁচে  বিশ্বের কাছে ভুলভাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন।

মিথ্যা-২

তারপর তিনি হঠাৎ করেই কোটা আন্দোলনকে টেনে এনে বলেছেন-

… the quota system is rigged in such a way that only people close to party in power get to get government jobs and there is a disproportionate amount of jobs going to them.

অর্থাৎ কোটা সিস্টেমকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দলের কাছের লোকেরাই শুধু সরকারি চাকরি পায় এবং অসামঞ্জস্য পরিমান চাকরি তাদের ভাগে জোটে। কী ভয়ঙ্কর মিথ্যা! এমনকি কোটা সংস্কার বা বাতিলের দাবিদাররাও এতোটা মিথ্যা বলতে দ্বিধা করবে।

মিথ্যা-৩

এবার শহিদুল আলমকে আটক প্রসঙ্গ। উনাকে খুবই বাজেভাবে, টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা সবাই দেখেছি। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, তিনি যত অন্যায়ই করুন না কেন, এভাবে কাউকে আটক করা অন্যায়। কিন্তু তারপরের ঘটনা প্রবাহ যদি দেখি, তবে আমরা দেখতে পাই উনাকে আটকাবস্থায় নির্যাতন করার গল্প। এমন কি আমরা এও জানতে পারি, উনাকে রক্তাক্ত করে সেই রক্তমাখা পাঞ্জাবি ধুয়ে আবার তাকে পরতে দেয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তাকে অতিসত্বর হাসপাতালে নেয়ার আদেশ দেন। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পর মেডিকেল বোর্ড কোনও নির্যাতনের চিহ্ন কেন খুঁজে পেলো না? ইতোমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় আবার হাসপাতালের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হতে দেখি আমরা।

(লিংক: https://www.facebook.com/banglanewspost/videos/1028061994065353/)

যেখানে হাসপাতালের কড়িডোরে তাকে ডিবি পুলিশের দুজন কর্মকর্তার সাথে হাসতে হাসতে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যেতে দেখা যায় এবং তারপরই আবার আমরা যখন টিভি ক্যামেরার সামনে তাকে দেখি, তখন তাকে স্ত্রীর কাঁধে ভর দিয়ে অসুস্থতার ভান করতে। এসব গুণি ও মানি মানুষের এসব মিথ্যা অভিনয় সত্যিই আশ্চর্যের!