বিজ্ঞান গবেষণায় বাজেট বাড়বে কবে?

নাদিম মাহমুদনাদিম মাহমুদ
Published : 12 June 2018, 07:00 AM
Updated : 12 June 2018, 07:00 AM

এই পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করতে একদল মানুষ নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। একের পর এক আবিস্কারের নেশায় আমাদের এই গ্রহ হয়ে উঠছে আরো বেশি আধুনিক ও সুখকর। পালের এই হাওয়ায় যারা কলকাঠি নাড়ছেন তা হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান চর্চার উৎকর্ষতায় আমরা এগিয়ে চলছি, মহাকাশে নিজেদের বসতবাড়ি তৈরি করার চেষ্টাও করছি।

যে বিজ্ঞান আমাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিবেশের সুরক্ষা দিয়ে থাকে তারা সুনির্দিষ্টভাবে তাকে লক্ষ্যস্থল করে তুলছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোতেই সুরক্ষা দেয় বিজ্ঞান। এই পরিক্রমায় কোন একটি দেশ কতখানি উন্নতি করছে কিংবা এগিয়ে যাচ্ছে তার প্যারামিটার হলো সেই দেশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে কতখানি এগিয়ে চলছে তার হিসেব কষা। গবেষণা খাতে সেই দেশ কতটুকু নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে, তা হয়ে উঠে একটি উন্নত দেশের এজেন্ডা।

সারা বিশ্বে চিকিৎসা ও জীববিদ্যা গবেষণায় যে প্রতিষ্ঠানটি দাতা সংস্থার ভূমিকা পালন করে তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ ইনস্টিটিউট বা এনআইএইচ। মার্কিন সরকারের অর্থ সহায়তায় দেশটিতে ১৯৩০ সালে এনআইএইচ যে গবেষণা বরাদ্দ পায় তা দিয়ে দেশটির কয়েকশ বিশ্ববিদ্যালয়-গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আন্তজার্তিক পরিসরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা বরাদ্দ দিয়ে তা তদারকি করে আসছে। যদিও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অনেক আগে থেকে বায়োলজিক্যাল ও মেডিকেল গবেষণার শিরোমণি হিসেবেই গবেষকদের কাছে পরিচিত ছিল। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এনআইএইচ প্রতি বছর তাদের গবেষণা বরাদ্দে স্ফীত  হয়েছে। নিত্যদিনের সাথে তাল মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের বেতন-ভাতা ও গবেষণার মান নির্ণয়ের ক্ষেত্র হিসেবেই কাজ করছে।

বিশ্বের অনেক দেশই বিজ্ঞান চর্চায় বেশ হুঙ্কার দিয়ে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে তিনি 'বিজ্ঞান গবেষণায় বরাদ্ধ সংকোচনের' যে বার্তা দিয়েছিলেন তা অবশ্য গত বছর বাস্তবায়ন করে দেখান তিনি। বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের হিসেব মতে গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন এনআই্এইচ ও পরিবেশ রক্ষা সংস্থা বা ইপিএ মোট বাজেটের শতকরা ১৮ ভাগ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেন। যা ২৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্য। শুধু তাই নয় এনআইএইচের অধীনে চলা ২৭ টি ইনস্টিটিউটের লোকবল ও ব্যয়ভার সংকোচনের নির্দেশ জারি হয়েছিল।

মধ্যপাচ্যের উগ্রপন্থিদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রেক্ষিত্রে প্রথম সারির দেশগুলো এখন সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা আর জঙ্গিদের দমনে নতুন নতুন অস্ত্র-প্রযুক্তি কিংবা লোকবল বৃদ্ধিতে এক চরম প্রতিযোগিতায় নেমেছে 'দাতা' দেশগুলো। যে গবেষকরা যুগে যুগে সভ্যতার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, সেই সভ্যতাকে ধ্বংস করতেই যুদ্ধ বিগ্রহে বুঁদ হয়ে গেছেন ক্ষমতাশীন দেশগুলো। সূর্যের আলোকে যেমন ছত্রাক ভয় পায়, ঠিক তেমনি বিজ্ঞানের আলোকে ভয় পায় উগ্রবাদীরা। আর তাই গবেষণাকে বাঁচাতে লাখো গবেষক নেমেছিল রাস্তায়। স্লোগান আর প্লাকার্ডের ভাষায় ধরা পড়েছে ক্ষোভের উত্তপ্ততা।

এর মাত্র এক বছরের মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ভুল বুঝতে পারেন। বিজ্ঞানের গবেষণা ছাড়া যে কোন দেশের এগিয়ে চলা  সম্ভবপর নয়, তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। নিজেকে শুধরিয়ে নিতে ২০১৯ সালের জন্য ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্ধ দেয়, যা গবেষণা উন্নয়নে ১২ দশমিক ৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের একটি অন্যতম ভাল দিক বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন (সূত্র সায়েন্স, মার্চ, ২০১৮)।

শুধু ট্রাম্পই নন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাত বছরের জন্য ‌হরিজন ইউরোপ নামে গত ৮ জুন ৯৪ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে যা অতীতের বাজেটের চেয়ে ২২ ভাগ বেশি। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো যখন বিজ্ঞান গবেষণায় নিজেদের মেলে ধরছেন, তখন অজানা কারণে আমরা বিজ্ঞানবিমূুখ হয়ে উঠছি। অথচ মুখে মুখে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান। একের পর এক দূর্বলতার ছকে নিজেদের তুল ধরছি।

এই তো কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে বার্ষিক বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত বাজেটের তথ্য বলছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতে মোট বাজেটের ১ দশমিক ৮ ভাগ কমিয়ে দেয়া হয়েছে, যা গত দুই বছরের তুলনায় কম। সারা বিশ্ব যখন বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ তা থেকে পিছিয়ে অন্য একটি পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে।

ঘোষিত বাজেট বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার ব্যয়ের পরিসীমা এঁকেছেন সরকার। তার মধ্যে শিক্ষাখাতে ভাগ পড়েছে ৬৭,৯৩৫ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৬০ ভাগ। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করার চেয়ে, ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাতে বসেছে।

অথচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতটিকে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ এবার তা কমে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।

শিক্ষাখাতে ভাগ বাটোয়ারায় দেখা গেছে ৬৭,৯৩৫ কোটি টাকা এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ২২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে ২৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে ২ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আর এইসব বরাদ্দের সিংহভাগই চলে যায়, বেতন-ভাতায়। গবেষণায় খরচের দিকে তাকালে মনে হবে, এই দেশে শিক্ষার জন্য গবেষণা কিংবা গবেষণার জন্য অর্থ নেই। নামে মাত্র কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষকরা সেটা পেয়ে কখনো সন্তোষ প্রকাশ করতে পারে না।

এই তো গত বছর পত্রিকায় দেখলাম, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হইয়াছে। বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হইয়াছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ মতো (৭০ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।) যে অর্থগুলোর ব্যয়ের হিসেবে রাখা হয় তার মধ্যে গ্রন্থাগারের বই ক্রয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা, রাসায়নিক যন্ত্রপাতি, শিক্ষা সফর, সেমিনার, পরীক্ষা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সহায়তা, ইন্টারনেট, বৃত্তি, খেলাধুলা, শিক্ষার্থী পরিবহন ও গবেষণা অন্তর্ভুক্ত আছে।(সূত্র ইত্তেফাক ১৭ জুন, ২০১৭)। গবেষণার বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দিনে দিনে উদাসীন হয়ে উঠছে তার মূল কারণ এই বাজেটের অপ্রতুলতা।

বাংলাদেশ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য কি পরিমাণ অর্থ ঢালছে আর সেই অর্থগুলো ভাগবাটোয়ার পদ্ধতিগুলো কতটা জটিলতার মধ্যে দিয়ে দেয়া হচ্ছে তা ভাবতে খারাপ লাগছে। নয়ন মোহন্ত আমার বিভাগের ইমিডিয়েট এক সিনিয়র ছিলেন, যিনি বাংলাদেশের বর্তমানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। কয়েকদিন আগে তিনি ফেইসবুকে একটা পোস্ট তুলেছেন। এই পোস্টটি দেখার পর সত্যি আমার অনেক খারাপ লেগেছে। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাত্রই স্বপ্ন দেখেন শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেকে একজন ছোট খাটো গবেষক হিসাবে মেলে ধরার। আমিও এর ব্যাতিত্রুম নই। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্নভাবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করে থাকেন। তেমনি একটি ব্যবস্থা আর এন্ড ডি প্রজেক্ট। মজার ব্যাপার হল,গত বছর জুন/জুলাই এর দিকে এই প্রজেক্টের সর্বসাকুল্যে এক লক্ষ টাকা পাবার আশায় আমার মত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ রিসার্চ প্রজেষ্ট জমা দেন। এর পর থেকেই যন্ত্রনার শুরু। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভাইভার জন্য ডেকে পাঠাল ঢাকায়, এর পর নামের লিস্ট দিয়ে প্রাপ্য টাকার বিল সাবমিট করতে বলল। গবেষকগণ লাইনে দাড়িয়ে পিয়ন পদের ভাইভা টপকিয়ে ৯০/৮০/৭০/৬০ হাজার টাকার মত বিশাল অংকের গবেষণা অনুদানের জন্য মনোনীত হলেন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে বিল সাবমিট করলেন। এর পর কর্তৃপক্ষ সেই বিলের চেক রেডি করা শুরু করল,এক দুই করে তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কিছু সৌভাগ্যবান শিক্ষক/গবেষকের চেক রেডি করল এবং সচিবালয়ে নিতে যাববার আমন্ত্রন জানাল। গবেষকগণ সচিবালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে পিঁপড়ার মত লাইন দিয়ে ঠায় দাড়িয়ে রইল, ঘন্টাখানেক পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের দেখা মিলল না। অতঃপর সিরিয়াস গবেষক হিসাবে একজন নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ফোন করলেন। ফোন পাবার আধাঘন্টা পর চেক বিতরন শুরু হল।আমিও অপ্লাই  করার দীর্ঘ ১১ মাস পর, একজন ছোট পিঁপড়ার মত চেক সংগ্রহ করলাম। মনে হল পাইলাম তারে পাইলাম।গবেষণা চেক যখন এতটাই আরাধ্য গবেষণা তখন কেমন হবে? এ দৃশ্য এক দিনের নয়,এ দৃশ্য প্রতিদিনের। কবে এর শেষ দেখবো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক রিসার্চ করার জন্য কেন এত অবহেলিত হবে? খুব করে জানতে ইচ্ছা করছে!

শুধু তিনি নন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা একনিষ্ঠভাবে গবেষণা করার প্রয়াস চালিয়ে আসছেন, এইসব আক্ষেপ সবার। মাত্র ৬০ হাজার টাকার জন্য একজন গবেষককে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাতে মনে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই টাকাগুলো গবেষকদের দান করে দিচ্ছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিজ্ঞান গবেষকদের জন্য বরাদ্দের দেখভালোর দায়িত্বে থাকেন কোন না কোন কলা কিংবা বানিজ্য অনুষদ থেকে পাশ করে আসা সচিব। যাদের কাছে বরাদ্দ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও মাঝে মাঝে কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। আমাদের চিন্তাশীলতার জায়গাগুলো ঘুনে ধরতে শুরু করছে। আমরা এখন দেশের উন্নয়ন বলতে, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন বুঝি। শিক্ষার উন্নয়ন বলতে, স্বাক্ষরতা অর্জনকে বুঝি। গবেষণা বলতে বুঝি, পত্রিকায় প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মন্তব্য কলাম কিংবা টকশোর আলাপ।

শিক্ষকদের যেখানে জার্নালগুলোতে নিজেদের গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশে ব্যস্ত থাকার কথা আজ তারা পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে চলছেন। যাদের উচিত নতুন নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্র তৈরি করা, তারা নিজেদের মেধাকে বিলিয়ে দিচ্ছেন, ‌রাজনৈতিক দলগুলোর স্লোগানের স্রোতে।

আমরা যখন শিক্ষার গবেষণায় নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলছি, তখন আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ২০১৮-১৯ বাজেটে গবেষণার জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশটির বার্ষিক বাজেট ঘেটে দেখা যাচ্ছে, ভারত বিজ্ঞান-গবেষণায় ৫৩৬ দশমিক ২ বিলিয়ন রুপী বা ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিচ্ছে। যা গবেষণায় অন্যতম অনুঘটক হিসেবে গবেষকদের প্রেরণা জুগিয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

কয়েকদিন আগে আমরা মহাকাশে নিজেদের স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছি। নিজেদের জন্য আরো বেশি প্রযুক্তিগত উন্মেষ ঘটানোর প্রয়াস চলছে। নিঃসন্দেহে সরকারের এটি ভাল পদক্ষেপ। কিন্তু সরকার যে অর্থ বিদেশি বিজ্ঞানীদের পিছনে ঢালছেন তা যদি আমাদের দেশে গবেষকদের পিছনে ব্যয় করতো তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কিছু অর্জন করা সম্ভব হতো। আমরা কেন, নিজেদের নিয়ে ভাবছি না? আমাদের কি মেধা আর শ্রম দেয়ার বড়ই অভাব পড়েছে? এই দেশের অনেক ছেলেই তো নাসা, এনআইএইচ কিংবা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন, তাদের মেধা তো বাংলাদেশ চর্চার মধ্যে  গড়ে উঠছে, নাকি?

বর্তমান যুগকে বায়োমেডিক্যাল গবেষণার উত্তম সময় বলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভবিষৎ বিজ্ঞানের রহস্য স্নায়ু, ঔষধ, বায়োফিজিক্যাল আর ন্যানো বায়োলজির রন্ধে সুপ্ত। আর তা উম্মোচিত হলে, এক বিংশ শতাব্দির বড় চালেঞ্জ অর্জন হবে বলে বিজ্ঞানিদের ধারণা। অথচ তা আজ হুমকির মুখে। নিদারুণ অর্থাভাবে অনেক গবেষক, পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ সংকোচনের নেশা যদি বন্ধ না হয় হয়তো আগামীতে আমরা একটি অন্ধকার পৃথিবীতে পা দেব। ব্লাকহোলে ফিরে গিয়ে কোটি কোটি বছরের লাখো বিজ্ঞানী, গবেষক আর তাত্ত্বিকদের অর্জনকে ম্লান করে ফেলবো কি?

না, সময় এখনি। বিজ্ঞানকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। বাজেটে গবেষণার জন্যে বিশেষ বরাদ্দ রাখা উচিত। এই দেশের মেধাবীদের দেশে ধরে রাখতে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়ন করাও জরুরি।  গবেষণায় সরকারের ভালো লাগা তৈরি করতে হবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বাহিরের দেশগুলোর সাথে আমরা হয়তো নিজেদের তুলনা করতে পারবো না, কিন্তু নিজেদের গবেষণার পরিসীমা তৈরি করার দায়িত্ব আমাদেরই।  অর্থ বৈভবের পিছনে আমরা ছুঁটছি না, কেবল নিত্য নতুন গবেষণার মধ্য দিয়ে আগামী পৃথিবীকে আরো  রোগমুক্ত, বর্ণিল ও  প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।