ছাত্রলীগে সংস্কার জরুরি

বিজন সরকার
Published : 28 April 2018, 06:58 AM
Updated : 28 April 2018, 06:58 AM

সক্রিয় রাজনীতি করার ইচ্ছে কখনও হয়নি। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করি। তবে খুব বেশী দিন রাজনীতি থেকে নিজকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়নি। স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ও একানব্বই নির্বাচনে বিএনপির জয়ের ফলে রাজনীতি চর্চার প্রতি ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠি। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে আকর্ষণ বোধ করিনি। আগেও না, এখনো না।

স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর একানব্বই সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হল। নির্বাচনের আগে ও পরের সময়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল খুবই উত্তপ্ত ছিল। একদিকে এরশাদের পতনের চূড়ান্ত ঘণ্টা বাজছে, অন্যদিকে তৎকালীন মার্কিনী প্রেসিডেন্ট জর্জ  বুশ ইরাকে হামলার হুমকি দিচ্ছে।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ কিছু রেকর্ড করা গান বাজতে শুনতাম। সেই সময়টি আমরা নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে যাই। "যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই" গানটি বেশি বেশি করে বাজতে শুনতাম। আমাদের গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের সামনে ছিল নির্বাচনী ক্যাম্প। সেই নির্বাচনী ক্যাম্পে ভোর থেকে সকল নীরবতাকে ছিন্ন করে অসাধারণ গানটি বেজে উঠতে।

ঠিক তখন থেকেই মনের ভিতর কয়েকটি প্রশ্ন বারবার জেগে উঠত। নিশ্চিত করেই বলতে পারি সেইগুলিই ছিল আমার জীবনে প্রথম রাজনৈতিক প্রশ্ন।

প্রশ্নগুলি ছিল "যে মানুষটি বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীন ভূমি দিয়েছে সেই মানুষটিকে কারা মেরে ফেলল? কেন মেরে ফেলল? মানুষটির কি কোন ভুল ছিল? কেন আজো বিচার হয়নি?" তখনও জানতে পারিনি, কেবল বঙ্গবন্ধুকে নয় তাঁর পরিবারের সবাইকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়েছে।

আমাদের গ্রামীণ পারিবারিক পরিবেশে রাজনীতি নিয়ে টুকটাক আলোচনা হত। গ্রামের মুরুব্বিরা বঙ্গবন্ধুকে শেখ সাব বলেই ডাকতেন। আস্তে আস্তে জানলাম, বঙ্গবন্ধু ছাত্র বয়স থেকেই রাজনীতি-ঘেঁষা মানুষ।  

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে আসলাম, তখন বিএনপি ক্ষমতায়। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকায় মানুষের কথা বলা ও চিন্তা প্রকাশের ক্ষেত্রটি সহজ হয়ে ওঠে। ফলে পঁচাত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত বাংলাদেশের যে গৌরবময় ইতিহাসটিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটি ক্রমশ আলোতে আসতে লাগল। যে "রাজাকার" শব্দটি শুনিয়ে আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানো হত, আমাদের প্রজন্ম সেই রাজাকারদের ক্রমশ চিনতে শুরু করি।

চারটি ঘটনায় বিএনপির সরকারের সেই সময়টি আলোচিত ছিল। দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যা, সার কেলেঙ্কারি, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রভাবে বছরব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সর্বশেষ মাগুরার উপনির্বাচন।

তখন ভোরের কাগজ সর্বাধিক প্রচলিত জাতীয় দৈনিক। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর কলাম ভোরের কাগজ ও জনকণ্ঠে প্রকাশিত হত। এটি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর রাজনৈতিক কলাম সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি পঠিত কলাম ছিল। রাজনৈতিক কলামের প্রতি প্রেমিকার মত ভালবাসাটি ঠিক তখন থেকেই। গাফফার চৌধুরী লেখার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে টুঙ্গি পাড়ার এক কিশোরের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার ইতিহাসটি জানা হল।

এটি সহজেই অনুমেয় যে সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ জন্মের পেছনে আওয়ামীলীগ তথা বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় ভূমিকার কথা আমাদের প্রজন্ম জানতে শুরু করে। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে সক্রিয় রাজনীতির চিন্তাকে মনে স্থান দেয়নি। রাজনীতি করার জন্য যে শিক্ষা, ত্যাগ, নিষ্ঠা ও ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তার ঝুঁকি নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক যোগ্যতা থাকা দরকার, সেটি ছিল না।

আজকাল আওয়ামী লীগ কিংবা দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মী হতে তেমন স্ক্রিনিং টেস্টের দরকার হয় না। আওয়ামী লীগ এমন নমনীয় প্রক্রিয়ায় নেতাকর্মী নির্বাচন করবে সেটি আগে বুঝতে পারলে নিজের স্বার্থপর চরিত্রটিকে লালন করেই রাজনীতি করা যেত। যদি বুঝতে পারতাম, রাজনীতি করে ধন সম্পদের মালিক হওয়া যায়, প্রভাবশালী হওয়া যায়, মানুষ ভয় পায় তাহলে রাজনীতিকে ক্যারিয়ার হিসাবে নিতে আমাদের কোন অসুবিধা হত না। যদি জানতে পারতাম, বড় নেতাদের সাথে একটি সেলফিই আপনাকে নেতা বানিয়ে দিবে তাহলে নিজের পরিবার পরিজনকে দেশে রেখে বিদেশে স্বদেশ ও স্বজাতি বিচ্ছিন্ন জীবনের কষ্ট বছরের পর বছর বহন করতে হত না।

২.

বর্তমান সময়ের ছাত্রলীগের মত করুণ অবস্থা আগে ছিল না। এখন ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাত্রলীগের হাতে নেই। কেন্দ্রে যেমন কোন মন্ত্রী কিংবা সাংগঠনিক নেতার হাতে ছাত্রলীগ নানান গ্রুপে বন্দী, ঠিক তেমনি মাঠ পর্যায়েও জেলা ছাত্রলীগ কোন না কোন স্থানীয় এমপি কিংবা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর পকেটে বন্দী। ছাত্রলীগ দৃশ্যত একটি পাপেটে রূপান্তরিত হয়েছে। কোন ছাত্রলীগের নেতার  নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রয়োগ করার যে সামর্থ্য নেই, সেটি অনুমেয়। ছাত্রলীগের কোন না কোন গ্রুপ কোন না কোন মূল দলের নেতাদের গ্রুপে। তারা যে মূল দলের নেতাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে সেটি এখন ওপেন সিক্রেট।  তাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক সাহসের মেরুদণ্ড নড়বড়ে।

ছাত্রলীগের ভিতরে  যে রাজনৈতিক কালচারটি তৈরি হচ্ছে সেটির প্রভাব বহুমাত্রিক। এটি কেবল ছাত্রলীগকে দুর্বল করবে, তা নয়, সেটি আওয়ামী লীগ ও দেশের জন্যও হুমকি হিসাবে সামনে আসবে। ছাত্রলীগ যদি সংগঠনটির আদর্শিক কর্মকাণ্ড করতে ব্যর্থ হয়, নিজস্বতা সুরক্ষা করতে না পারে, সেটির মূল্য দেশ ও জাতিকে দিতে হবে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের যেটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটি ছাত্রলীগ ছাড়া টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ছাত্রলীগ যদি নিজের শরীর থেকে ক্যান্সারকে না সরায়, নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে রাজনীতি না করে, সেটির মূল্য পুরো জাতিকে দিতে হবে।

আজকাল গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়, অমুক জেলার শিবিরের নেতা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে এবং আওয়ামীলীগের কোন না কোন নেতা সেই অনুপ্রবেশকারীকে ছাত্রলীগে প্রবেশ করিয়েছে। দেশের বহু জায়গায় অনুপ্রবেশকারীদের ঠ্যালায় পরীক্ষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা, অনেকে ক্ষেত্রে এলাকা ছাড়ার ঘটনাও ঘটছে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে যে একটি ঋনাত্নক মিউটেশন ঘটছে, সেটি অস্বীকার করা মানেই হচ্ছে,সত্যকে অস্বীকার করে সংগঠনের ভিতরে সমস্যাগুলিকে জিইয়ে রাখা। সংগঠনটিকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করা।

কোটা পদ্ধতি বিরোধী আন্দোলনটি ছাত্রলীগের চোখ খুলে দেওয়ার কথা। কোটা পদ্ধতি সংস্কার একটি যৌক্তিক দাবী। সেটির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবে সাধারণ ছাত্ররা, শিবিরের সাথে মিশে ছাত্রলীগের পদ-পদবী ওয়ালা নেতারা কেন?

ফলে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন ছাত্রলীগের জন্য সমুদ্রসম পাঠ। ছাত্রলীগের ভিতরের একটি ক্ষুদ্র অংশই সেই আন্দোলনকে উস্কে দিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন তাদের রাজনৈতিক পরিচয়। ছাত্রলীগের ভিতরে উস্কানি দাতারা স্রেফ অনুপ্রবেশকারী। ওরা সময় ও প্রেক্ষাপটের সুযোগে তাদের ভিতরের ল্যাঞ্জা বাহির করে ফেলছে এবং ভবিষ্যতেও সমন্বিতভাবে ব্যাপক হারে তা করবে

একটি উদাহরণ দেই। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোরিয়াতে পিএইচডি করতে এসেছেন। তাদের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের সময়ে নিয়োগ পাওয়া। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় তাদের বড় একটি অংশ শিবিরপন্থী। দেশে থাকতে হয়ত তারা ছাত্রলীগ নামটি ব্যবহার করেছে। চাকুরী নেওয়ার সময় হয়ত আওয়ামী লীগের কোন না কোন বড় নেতার সুপারিশ তারা পেয়েছে। এমতাবস্থায় যদি ছাত্রলীগকে আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার পদ্ধতি থেকে কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে রক্ষা না করা যায়, তবে ছাত্রলীগ সাংগঠনিক ও আদর্শিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরবে। অনুপ্রবেশের দরজা প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হয়ে উঠবে। সেটির প্রভাব পড়বে  রাষ্ট্রের উপর, দলের উপর এবং ব্যক্তি শেখ হাসিনার উপর। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের নাটবল্টু কেন ঢিলা হয় সেটি ছাত্রলীগকে বুঝতে হবে।

আওয়ামী লীগ ও দলটির অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনে অনুপ্রবেশ ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ চারিত্রিক ভাবেই ভিন্ন। কোন শিবিরপন্থী ব্যক্তি যখন ছাত্রলীগে প্রবেশ করে রাজনীতি করতে চায়, সেটির প্রভাব খুব গভীরে গিয়ে পড়বে। কোন এক সময় তারাই আওয়ামী লীগে যাবে। তখন আর স্বীকার করা যাবে না যে তিনি আওয়ামী লীগার নয়।

পরিশেষে বলতে চাই, ছাত্রলীগের মত এমন একটি সংগঠনে রাজনীতি করার ইচ্ছে হয়ত আমার মত বহু ছাত্ররই ছিল। তারাও হয়ত আমার মত স্রেফ ব্যক্তি স্বার্থের কারণে সেই পথে আসেনি। তবে বহু বন্ধুবান্ধবকে তৃণমূলের ছাত্রলীগের সাথে কঠিন প্রেমে আবদ্ধ থাকতে দেখেছি। সংগঠনের জন্য নিজের ক্যারিয়ার কেবল নয়, নিজের জীবনকেও ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।

২০০১ বিএনপি-জামায়েত জোট ক্ষমতায় আসার পর প্রথম যে সংগঠনটির উপর নির্যাতন শুরু হয় সেটি হল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের উপর একটি কাঠামোগত নির্যাতন চলেছিল দীর্ঘ পাঁচটি বছর। সেই সময়টি আমি তৃণমূলের ছাত্রলীগের বন্ধুবান্ধবদের দুরবস্থা দেখেছি। অগণিত মামলা হামলাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে। দেখছি, বিকালে ছাত্রদলের নেতার হাতে চড়চাপড় খেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকে সন্ধ্যায় টিউশনিতে যেতে। কারণ আয় বন্ধ হয়ে গেলে আরও বড় বিপদ।

একটি বাস্তব চিত্র দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রাক্তন সেক্রেটারির মতে ছাত্রলীগ এতিম সংগঠন। আমারও মূল্যায়ন তাই। ফেবুতে উনার এই মন্তব্যটি দেখে আমার তাৎক্ষনিক একটি কথা মনে পরে গেল।

২০০১ সালের নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক পরে একটি গণমামলার হাজিরা দিতে প্রায় সত্তর থেকে আশি জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জেলা শহরে আসে। যাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। রাতে জেলা শহরের এক নেতার বাসায় সভা হয়। বেশ কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলাম, "রাতে খেয়েছ? ঘুমাবে কোথায়?" কয়েকজন জানালো, আমরা জেলা শহরে প্রথমবার এসেছি। এখানে আমাদের কোন আত্নীয় স্বজন নেই। রাতে কলা রুটি খেয়ে রেল স্টেশনে ঘুরে রাতটি কাঠিয়ে দিব। জামিনের জন্য সকাল সকাল কোর্টে যেতে হবে।

কিছুটা দূরে হঠাৎ করেই একজন চিৎকার করে উঠল। অমুক(থানা কমিটির নেতা) চাচা কই? আমাদের খাওয়ার টাকা দিল না যে? রাতে কোথায় ঘুমাব? উনি কেন চলে গেলেন? পাঁচ বছরে তো উনি কম কামায়নি।

কিন্তু নেতা তাঁর কর্মীদের ফেলে ঘুমানোর জন্য চলে গেলেন হোটেলে। আজ নেতা নেতাই আছেন। বেড়েছে রাজনৈ্তিক ক্ষমতা, অর্থ, পদবি সহ আরও কত কি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগের প্রেমে পড়া সেই নেতা কর্মীদের অনেকেই এখনো আগের মতই আছে। কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা করছে, কেউ এনজিওতে কাজ করছে। নির্যাতিত ছাত্রলীগের কর্মীরা কেউ আওয়ামী লীগের আজকের রাজনীতিতেই নেই। দল ক্ষমতায়। মধ্যস্তরে নেতা আমদানি করা হচ্ছে বিএনপি থেকে, জামায়েত শিবির থেকে অথবা কোন সুবিধাবাদী গ্রুপ থেকে।

এমতাবস্থায় ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজান, সংগঠনটির সংস্কার জরুরি।  কঠিন হস্তে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ বন্ধ করুন। তা না হলে আওয়ামী লীগকে একদিন চরম মূল্য দিতে হবে।