অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং আইয়ামে জাহেলিয়াতের রাজনীতি

সাঈদ ইফতেখার আহমেদসাঈদ ইফতেখার আহমেদ
Published : 28 March 2018, 02:18 PM
Updated : 28 March 2018, 02:18 PM

অধ্যাপক জাফর ইকবাল আপন প্রাণশক্তিতে সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। জাফর ইকবালের জন্য অনেক শুভকামনা। আইয়ামে জাহেলিয়াতের (অজ্ঞতার যুগ) রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করেন তারা অন্য অনেকের মতো  জাফর ইকবালকেও হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু এ যাত্রা তিনি ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন। এটা জানা গেছে যে, অনেকদিন ধরেই তাঁকে হত্যা করবার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

জাফর ইকবালের উপর যারা হামলা করল, বা অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী, ব্লগার বা প্রচলিত ধারার বাইরে যারা চিন্তা করেন তাঁদের আইয়ামে জাহেলিয়াতের যেসব অনুসারীরা হত্যা করল তাঁরা কি ধরণের সমাজ বা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়? কেন তাদের বর্তমান রাষ্ট্র বা সমাজের প্রতি এত ক্ষোভ? কেনই বা তারা তাদের মত যারা চিন্তা করে না তাঁদেরকে মেরে ফেলতে চায়? ভিন্নমত গ্রহণ করবার মত মানসিক শক্তি কেন তাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি?

যারা এ আইয়ামে জাহেলিয়াতে বিশ্বাস করেন তাদের মানস কাঠামোই বা কেমন? এ ধরনের প্রবণতা কি বাংলাদেশে নতুন, নাকি আগেও ছিল? এটা কি শুধুই কিছু মুসলিম প্রধান দেশগুলির বর্তমান সমস্যা, নাকি অমুসলিম কিছু দেশও অতীত এবং বর্তমানে এ ধরনের অসহিষ্ণু বা আইয়ামে জাহেলিয়াতের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে?

প্রথমেই দেখা যাক,আইয়ামে জাহেলিয়াত বলতে আমরা কী বুঝি। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা সব মানুষকে পশুর মতো এক রকম মনে করেন। পশুরা যেমন স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে না, তাঁরাও মনে করেন মানুষও হল পশুর মতো, যাদের স্বাধীনভাবে  চিন্তা করবার ক্ষমতা নাই। দুটো পশুর আচার, আচরণ, জীবন-যাপনে যেমন কোনো পার্থক্য থাকে না, তেমনি সব মানুষ পশুর মতই একই রকম জীবন যাপন করবে, একই রকম ভাবে ভাববে। দু'জন মানুষের চিন্তাধারার মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না।

গৃহপালিত পশুরা যেমন একজন রাখালের অধীনে পরিচালিত হয়, তেমনি মানুষও পরিচালিত হবে একজন মানুষের অধীনে। সে নেতৃত্বদানকারী মানুষটি যা বলবে সবাই তা সঠিক বলেই জানবে। মানুষের ভাল-মন্দ বোঝার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে তাঁর হাতে, কেননা মানুষের তাঁদের নিজেদের ভাল-মন্দ বুঝবার ক্ষমতা নেই। তাঁরা মনে করেন যেহেতু সাধারণ মানুষের বুঝবার ক্ষমতা নেই তাই তারা কোন বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবে না বা মনে কোন খটকা রাখবে না। মানুষের জীবনের মূল কাজ হল একটি একক কর্তৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে তাঁর আদেশ বা নির্দেশ বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে চলা। এর বাইরে মানব জীবনের কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে না।

পশুর সাথে মানুষের মূল পার্থক্যের জায়গাটা হল মানুষ চিন্তা করতে পারে, নিজের ভাল-মন্দ বুঝতে পারে। উন্নত মস্তিষ্করে কারণেই পৃথিবীসহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব কিছু সম্পর্কেই মানুষের রয়েছে অনুসন্ধিৎসু মনন। মানুষের মন-জগতের গঠনটাই এমন যে, বিচার-বিবেচনা না করে তার পক্ষে মনোজাগতিক ভাবে কোন কিছু মেনে নেয়া একরকম অসম্ভব।

আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা মানুষের মনোজগতের ঠিক এ জায়গাটি বুঝে উঠতে পারেন না। তাই কোন মানুষ যখন প্রশ্ন করে, ভিন্নভাবে চিন্তা করে তখন তারা বিস্মিত হয়, কারণ তারাতো জেনে এসেছে যে মানুষ প্রশ্ন করতে জানে না, তাহলে কেমন করে এমন হল? তখন তাদেরকে যে বিষয়টা বোঝানো হয় সেটি হল যেহেতু এ মানুষরা প্রশ্ন করছে, সন্দেহ করছে, ভিন্নভাবে ভাবছে কাজেই তারা তো 'স্বাভাবিক', 'সুস্থ' মানুষ নয়। যেহেতু তাঁরা 'স্বাভাবিক' নন, তাই মানব সমাজকে 'বিশুদ্ধ' রাখবার জন্য তাদেরকে সরিয়ে দিতে হবে। তারা পবিত্র কোরানের  'মুয়াল্লিফাতিল কুলুব' বা 'অন্যের মন জয় করে চলা' নীতি হয় বুঝতে অক্ষম অথবা বুঝলেও মানতে চান না।

যেহেতু আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা প্রশ্ন করতে জানেন না, সুতারাং তাদেরকে যা বোঝানো হয় তাই তারা সঠিক বলে মনে করে। তারা নেতৃত্ব দিতে পারে না, নিজের মাথা দিয়ে স্বাধীনভাবে ভাবতে পারে না, যেটা পারে সেটা হল রোবট বা বিশেষ প্রাণিকূলের মত শুধু হুকুম তামিল করতে। ফলে, তাদেরকে যা বলা হয়, তারা তাই করে। তাদেরকে যদি কাউকে মেরে ফেলতে বলা হয় তারা অগ্র-পশ্চাৎ কিছু না ভেবে সেটাই করে থাকে। অর্থাৎ, আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীগণ মানুষের যা গুণাবলী, যা কিনা তাঁকে পশুর থেকে তফাত করেছে সে সমস্ত গুণাবলী থেকে বঞ্চিত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ইত্যাদি নানাবিধ কারণে তাদের মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ না হবার ফলে অথবা মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়ক সমাজ বা পরিবেশে বেড়ে না উঠবার ফলে।

এখন দেখা যাক আইয়ামে জাহেলিয়াতের সব অনুসারীরা একই মত বা পথে বিশ্বাস করেন কিনা। বিস্ময়কর ব্যাপার হল, মানবজাতিকে একক সত্তা হিসাবে দেখতে চাইলেও, আইয়ামে জাহেলিয়াতের পথ কোনটা হবে সে প্রশ্নে তারা নিজেরাই বহুধা বিভক্ত। আর এ বিভক্তির মাঝেই মানব চরিত্রের যে মূল বৈশিষ্ট অর্থাৎ বৈচিত্রতা- যেটাকে আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা নিজেরাই গ্রহণ করতে পারেন না- সেই চিন্তার বৈচিত্রের কারণে তারা নিজেরাও নানা মতাদর্শিক এবং ধর্মীয় গোষ্ঠিতে বিভক্ত। তাই দেখা যায় এ আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা একত্রিত হন কখনো ধর্মকে (শুধু একটি ধর্ম নয়, বিভিন্ন ধর্ম) ব্যবহার করে, কখনো বা কমিউনিজম, ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ এসব মতাদর্শকে সামনে রেখে। আবার তারা যে যে মতবাদ বা ধর্মের যে ব্যাখ্যাটা বিশ্বাস বা সঠিক মনে করেন তার বাইরের সবাইকে 'বিপথগামী' ভাবেন। আর, 'বিপথগামিতার' সমাধান তাদের কাছে একটাই, আর তাহলো তাদের হত্যা করা।

আইয়ামে জাহেলিয়াত শুধু ইসলাম আসার পূর্বেই নয়, ইসলাম আসার পরপরও এর অনুসারীরা ছিল সক্রিয়। ইসলাম আসার পর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলামকেই ব্যবহার করা হতে থাকে ইসলামকে রক্ষা করবার কথা বলে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা, হজরত উথমান (ওসমান) ইবন আফফান (রাঃ) যাকে মহানবীর (সাঃ) দুই কন্যা রুকাইয়া এবং উম্মে কুলথুমকে (কুলসুম) বিবাহ করবার কারণে 'দুই আলোকের অধিকারী'  (The Possessor of Two Lights) বলা হয়- ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তাঁকে পর্যন্ত 'ইহুদী' আখ্যায়িত করে হত্যা করা হয়।

ইসলাম প্রসারের সাথে সাথে কোরানের মাঝে যাতে কোন বিকৃতি না আসে সেজন্য হজরত উথমান (রাঃ), জায়াদ ইবন তাহবিদকে (রাঃ) দায়িত্ব দিয়েছিলেন আরবের কুরাইশরা যে উচ্চারণে (Dialect) আরবী বলে সেটিকে মূল ধরে কোরানের সংকলন তৈরি করবার জন্য। এ সংকলন তৈরি হবার পর উথমানের আদেশ মত এ সংকলন ব্যতিরেকে বিভিন্ন অঞ্চলে আর যেসব সংকলন রয়েছে সেগুলিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

বস্তুত, আজকের যে কোরান আমরা দেখছি সেটি হল জায়াদ ইবন তাহবিদের সংকলনকৃত কোরান। কিন্তু সেসময় অনেকে হজরত উথমানের কোরান সংকলনের অধিকার রয়েছে কিনা এ প্রশ্ন তুলেছিলেন।  ইসলামের ইতিহাসে যিনি এত বড় অবদান রেখেছেন, সেই তাঁকে হত্যা করবার পর 'ইসলাম রক্ষাকারীদের' প্রবল বিরোধিতার মুখে তাঁর স্ত্রী নায়লার সহযোগিতায় মাত্র কয়েকজন সাহাবা মিলে (যাদের মধ্যে জায়াদ ইবন তাহবিদও ছিলেন) তাঁর লাশ তিনদিন পর দাফন করে। এ 'ইসলাম রক্ষাকারী'দের হাত থেকে রক্ষা পান নাই মহানবীর (সা.) আরেক জামাতা হজরত আলী (রা.) এবং তাঁর দুই প্রিয় দৌহিত্রও।

পরবর্তী সময়ে উমাইয়া এবং আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে কিছু ব্যতিক্রম বাদে অনেকেই স্বাধীন চিন্তা চেতনার বিকাশ এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নয়ন যাতে ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থেকেছেন। বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব ইবনে সিনাসহ যেসমস্ত বিজ্ঞানী এবং মনিষীদের নিয়ে গর্ব করেন, তাঁদের অনেকেই সেসময়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে নানা ভাবে নিপীড়ন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বস্তুত, রাষ্ট্রশক্তি স্বাধীন চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করবার ও গবেষণা এবং উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করবার ফলে, তৎকালীন সময়ে আরব বিশ্ব নানা ক্ষেত্রে ইউরোপ থেকে এগিয়ে থাকা সত্বেও, পরবর্তীতে ইউরোপে রেনেসাঁর মাধ্যমে ক্রমশ সেখানে স্বাধীনভাবে চিন্তা করবার দ্বার উন্মুক্ত হবার ফলে আরব বিশ্ব আস্তে আস্তে ইউরোপ থেকে পিছিয়ে পড়তে শুরু করে।

আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ কি কেবল আরবেই ছিল, ইউরোপে ছিল না? ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়, ইউরোপে আইয়ামে জাহেলিয়াতের অবস্থা ছিল আরো ভয়াবহ। সেখানে মধ্যযুগে, যেসময় কালটাকে ইউরোপের আইয়ামে জাহেলিয়াতের কাল বলা যায় সেসময় সেখানে বহু নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়, তাদের উপর ভূতের আছর আছে একথা বলে। জিয়োরদানো ব্রুনোকে সেসময় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা খৃষ্ট ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বলে। খৃস্ট ধর্মীয় গুরুরা তাঁর বিরুদ্ধে আগুনে পুড়িয়ে মারার এ ফতোয়া দেয়।

কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও সহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিকরা নানা রকম নিপীড়ণ, জেল, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হন। কোপার্নিকাস এবং গ্যালিলিও এর তত্ত্ব অর্থাৎ সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘোরে বলাতে বলা হল এটা বাইবেলের শিক্ষা বিরোধী- যেখানে টলেমি অনুসারে পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা রয়েছে। এর সব কিছুই করা হয়েছে একটা কথা বলে অর্থাৎ খৃস্ট ধর্মকে রক্ষা করবার কথা বলে। কিন্তু ইউরোপের মানুষ এর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায়। সেখানে রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণ আন্দোলন দানা বাঁধে। নানাবিধ কুসংস্কার পশ্চাৎপদতা থেকে খৃস্ট ধর্মকে বের করে নিয়ে আসবার জন্য রিফরমেশন বা সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠে। শুরুতে শাসক এবং ধর্মীয় গুরুদের প্রচন্ড বাঁধা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অমানবিক নিপীড়নের সম্মুখীন হলেও ইউরোপে শেষ পর্যন্ত মানবিকতা এবং স্বাধীন চিন্তাধারা জয় লাভ করে। এ বিজয় ইউরোপকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ সবকিছুতে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে নিয়ে যায়।

আইয়ামে জাহেলিয়াত থেকে বের হয়ে আসলেও ইউরোপে এর অনুসারীরা সব সময় সুযোগ খুঁজেছে একে আবার ফিরিয়ে আনবার। বিংশ শতাব্দীতে তাই আমরা জার্মানিতে নাৎসিবাদ আর ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখি। নাৎসিরা মনে করত তাদের নেতা এডলফ হিটালার যা বলবেন সেটাই সঠিক এবং বাকি জার্মানদের কর্তব্য হল বিনা বাক্য ব্যয়ে তাঁর আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা। তাঁর আদেশ-নির্দেশ যারা মেনে চলবে না তাঁদেরকে হত্যা করা তাঁরা অবশা কর্তব্য মনে করত।

ফলে, বাংলাদেশে এখন যেমন আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা ক্ষমতায় আসবার জন্য তাদের অপছন্দের মানুষদের হত্যা করছে, তেমনি নাৎসি পার্টিও ক্ষমতায় আসবার আগ থেকেই তাদের অপছন্দের ব্যক্তিদের হত্যা করা শুরু করে। তারা জার্মান ছাড়া আন্য জাতিগোষ্ঠীকে "নিম্ন- জাতিগোষ্ঠী" বা Sub-human মনে করত এবং ইহুদী ধর্মালম্বীদের মানবজাতির শত্রু মনে করত। তাই তারা ব্যপকভাবে ইহুদী নিধনের পাশাপাশি, জিপসিসহ অন্য জাতিগোষ্ঠী এবং কমিউনিস্টদের নির্মূলে ব্যপক হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় জার্মান জাতির বহু লেখক, চিন্তাবিদ, বৈজ্ঞানিক নিপীড়ণ, জুলুম, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির মুখোমুখি হন। আইনস্টাইনসহ যারা পেরেছেন পালিয়ে যেয়ে প্রাণ রক্ষা করেছেন।

নাৎসিরা ওসময় জার্মানির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হয় হত্যা করে, না হয় দেশ ছাড়তে বাধ্য করে, এবং এর সবকিছুই করা হয় নাৎসিবাদকে রক্ষার নামে। তারা প্রচার চালায় এসমস্ত জার্মান লেখক, চিন্তাবিদ, বৈজ্ঞানিকরা নাৎসিবাদ তথা জার্মানির শত্রু, তারা সবাই ইহুদী অথবা কমিউনিস্ট, তাই নাৎসি পার্টি এবং জার্মান রাষ্ট্রের কর্তব্য হল জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাঁদের হত্যা করা।

প্রায় একই সময় ইউরোপের আরেকটি দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নেও এরকম অন্ধকার শাসন দেখা যায় জোসেফ স্তালিনের নেতৃত্বে। সেখানেও তখন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে এমনকি যারা অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদেরকেও নির্বিচারে হত্যা করা হতে থাকে সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করবার নামে।

কার্ল মার্কস এমন এক সমাজ নির্মানের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে প্রত্যেকের অবাধ বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিত হবে, প্রত্যেকের অবাধ বিকাশের স্বার্থে। স্তালিন সেই মার্কসের নাম ব্যবহার করেই এমন এক রাষ্ট্র কায়েম করলেন যেখানে স্তালিন ছাড়া সবার বিকাশ শুধু বাধাগ্রস্ত নয়, কেউ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করলেই তাঁর জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। ওসময়টাতে শুধু চিন্তাবিদ বা বুদ্ধিজীবী নয়, কমিউনিস্ট পার্টির বহু সদস্যকে হত্যা, নির্বাসন এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ফলে, সেসময় একটি বিকশিত জাতি জর্জ ওরয়েলের ভাষায় পরিণত হয় 'পশুর খোঁয়াড়ে'।

আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা মানুষকে ঠিক পশু মনে করে খোঁয়াড়ে পুড়ে রাখতে চায়। আর এই খোঁয়াড়ে পুড়বার কাজটা করতে তাদের নিজ নিজ দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক মতবাদ বা প্রধান ধর্মকে ব্যবহার করে দেশ, জাতি বা ধর্ম রক্ষার কথা বলে। মধ্যযুগে ইউরোপে তাই বলা হয় খৃস্টান ধর্ম রক্ষার কথা, আরবে ইসলাম, জার্মানিতে নাৎসিবাদ, ইতালিতে ফ্যাসিবাদ, সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজম ইত্যাদি। এদের কাছে ব্যক্তির চেয়ে বড় হয়ে উঠে মতবাদ বা দল। দল, নেতা বা গোষ্ঠীর  জন্য কোন ব্যক্তিকে হত্যা বা নির্যাতন করা তাদের কাছে জায়েজ। আর এ হত্যা বা নির্যাতন করতে বর্তমানে মুসলিম প্রধান দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে ইসলাম ধর্মকে, ভারতে হিন্দু ধর্মকে, বৌদ্ধ প্রধান দেশ শ্রীলঙ্কা,মিয়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মকে, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা এসমস্ত দেশে সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজমকে, ইসরাইলে ইহুদি ধর্মকে।

আবার আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা ক্ষমতা দখল, দলীয় কোন্দল, নেতৃত্ব লাভ ইত্যাদি ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করে থাকে ধর্ম বা রাজনৈতিক মতবাদকে। এক্ষেত্রে তারা তাদের অপছন্দের ব্যক্তিদের প্রথমে ভিলেন বানাবার চেষ্টা করে। এ চেষ্টার প্রক্রিয়া হিসাবে মুসলমান প্রধান দেশে অপছন্দের ব্যক্তিরা মুসলমান হলেও রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে ভিন্নমত ধারণ করবার  কারণে তাঁদেরকে প্রথমে মুরতাদ (যিনি ইসলাম ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছেন) বা নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে কেউ কমিউনিস্ট হলেও ক্ষমতার লড়াইয়ে অপর পক্ষকে প্রতিক্রিয়াশীল, সংস্কারবাদী, বিপ্লবের শত্রু ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করা হত। অর্থাৎ, রাজনৈতিকভাবে যাদেরকে পছন্দ করা হয় না তাঁদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য প্রথমেই একটা নেতিবাচক ট্যাগ লাগান হত।

বাংলাদেশেও গত শতকের আশি এবং নব্বইয়ের দশকে কবি শামসুর রাহমানসহ অনেককে-যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনের সাথে সঙ্গতি রেখে আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে চাইতেন-তাঁদেরকে ইসলাম ধর্ম ব্যবহার করে মুরতাদ বলা হয়েছে; যদিও ইসলামের যেকোন মাজহাব অনুসারেই কেউ যদি নিজেক মুসলিম বলে পরিচয় দিতে চায়, অন্য কেউ তাঁকে মুরতাদ বলতে পারে না।

বর্তমানে তাঁরা মুরতাদ না বলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মুসলিম হলেও সরাসরি নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করতে অধিক পছন্দ করেন। ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মাঠ পর্যায়ে যারা করেন এরকম কয়েকজনকে এ নিবন্ধের লেখক নাস্তিক উপাধি দেবার কারণ জিজ্ঞাসা করলে অকপটে তাঁরা লেখককে বলেন যেহেতু তাঁরা আমাদের রাজাকার বলে তাই আমরা তাঁদের নাস্তিক বলি।

কিন্তু, বাংলাদেশের বাস্তবতা হল  প্রাচীনকাল থেকেই এ ভূখণ্ডে বস্তুবাদী, নাস্তিকতাবাদ দানা বাঁধতে পারেনি। প্রাচীনকালে হিন্দুত্ববাদকে চ্যালেঞ্জ করে নাস্তিকতাবাদী চার্বাক দর্শন বাংলায় জন্ম লাভ করলেও এর অবস্থান ছিল অতীব প্রান্তিকে। এ ভূখণ্ডের মানুষ সব সময় আকৃষ্ট হয়েছে ভাববাদী, আধ্যাত্নিকতার দর্শনে। বর্তমানে নাস্তিক্যবাদীদের অবস্থান বাংলাদশে অতীব প্রান্তিকে বললেও অনেক বেশি বলা হয়, কেননা হাতে গোণা কয়েকজন ছাড়া এ দেশে কেউ নাস্তিক্যবাদ অনুসরণ করেন না। কিন্তু আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা যাদের কাউকে কাউকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহযোগীতার জন্য রাজাকার বলা হয়, প্রচারণার জোরে এমন একটি ধারণা সমাজে জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে যে এদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হল নাস্তিক।

বস্তুত, এ রাজাকারদের সাথে নিয়েই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালি জাতির চিন্তাশীল ব্যক্তিদের নির্মূল করার প্রকল্প হাতে নেয় যাতে দেশ স্বাধীন হলেও একটি সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ে না উঠে আইয়ামে জাহেলিয়াতের বাংলাদেশ গড়ে উঠে। বস্তুত,পাকিস্তানি নিপীড়ণবাদী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে মুক্ত হয়ে বহুত্ববাদী (যে রাষ্ট্র বহু মত এবং পথকে ধারণ করতে পারে), উদার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলার আপামর জনগণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু, বহুত্ববাদী, উদার-গণতান্ত্রের এ আকাঙক্ষা শুরুতেই ধাক্কা খায়।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনের বিপরীতে গিয়ে একদলীয় শাসনে চলে যায়। অপরদিকে, বৈধ, অবৈধ সমস্ত বাম রাজনৈতিক দলগুলো বহুত্ববাদী সমাজ চেতনার বিপরীতে, একনায়কতান্ত্রিক, কতৃত্ববাদী রাষ্ট্র এবং সমাজ চিন্তার বিকাশে জোরালো ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, পাকিস্তানপন্থি ধর্মভিত্তিক দলগুলো শুরু থেকেই ছিল বহুত্ববাদী, উদার-গণতান্ত্রিক ধারণার বিরোধী। অর্থাৎ, দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিপরীতে, একটা অসহিষ্ণু সংস্কৃতির বিকাশ লাভ করতে থাকে, যার ফল আমরা দেখি বিতর্কিত কবিতা লেখার জন্য কবি দাউদ হায়দারকে দেশ থেকে বের করে দেয়া।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এ অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি আরো বাড়তে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম, তাই আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা তাঁদের রাজনৈতিক আকাঙক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করতে থাকে, যা তাঁরা ১৯৪৭ সাল বা তার আগে থেকে শুরু করেছিল। এদেশের বেশিরভাগ মানুষের ধর্ম হিন্দু হলে, তাঁরা সনাতন ধর্ম বেছে নিত অথবা কমিউনিজম যদি প্রভাবশালী মতবাদ হত, তাহলে কমিউনিজমকে বেছে নিত।

১৯৯১ পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অনেক সাবেক বামপন্থী এ কাতারে যোগ দেয়। বাম রাজনীতির পরিভাষা কিছু আরবী শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে এবং এর সাথে কিছু উত্তর-আধুনিক (Postmodern) রেটোরিক যোগ করে মধ্য ও উচ্চবিত্তের কাছে আইয়ামে জাহেলিয়াতের রাজনীতির মতাদর্শ সম্প্রসারণে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা তাঁরা এখনো করে যাচ্ছেন।

আমরা যে আস্তে আস্তে ঘোর আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে চলে যাচ্ছি জাফর ইকবালের উপর এ বর্বর হামলার ঘটনা তা আরেকবার মনে করিয়ে দিল।

আইয়ামে জাহেলিয়াতের সংস্কৃতি গত পনের বিশ বছরে আস্তে আস্তে সমাজের সর্বস্তরে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যার পরিণতি হল জনগণের বিশেষ করে তরুণ সমাজের একটা বড় অংশের মাঝে চরম অসহিষ্ণু মনোভাবের জন্ম।

তাঁদের মাঝে এ ধারণা বিস্তার লাভ করতে থাকে যে বিরোধী মতের মানুষদেরকে হত্যা করা অন্যায় তো নয়ই, বরং পুণ্যের কাজ। এর ফলশ্রুতিতেই আমরা দেখতে পাই এ তরুণ সমাজ কর্তৃক ধর্মকে ব্যবহার করে আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীদের একের পর এক স্বাধীন মননের অধিকারীদের হত্যা করতে, যার সূত্রপাত হয়েছিল অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে আক্রমণের মধ্যে দিয়ে। অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলা এসমস্ত হামলারই ধারাবাহিকতা মাত্র।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ থেকে এ পর্যন্ত প্রত্যেকটি হামলার পর আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীদের উপর যাতে এ হামলার দায় না চাপে তার জন্য জোরালোভাবে কাজ করেছে বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা, এবং সাবেক বামপন্থীদের একটি বড় অংশ। তারা প্রতিবারই  হত্যাকাণ্ড ঘটবার পর বিষয়টিকে এমনভাবে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে এনেছে যাতে মনে হয় এসবের পিছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের হাত। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে গত নয় বছরে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মকাণ্ড দেশে আইয়ামে জাহেলিয়াতের সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

খুব বড় দাগে দেখলে এ পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবার চিন্তাধারা আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়। তাঁদের  (বিএনপি, জামায়াত, সাবেক বাম) যুক্তি অনুসরণ করলে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয় তাহল অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ থেকে  অধ্যাপক জাফর ইকবাল পর্যন্ত প্রতিটা হত্যা বা হামলা করেছে আওয়ামী লীগ এবং বিশ্ব ইতিহাসে এটি এমন একটি ইউনিক দল, যে কিনা তার সমর্থক চিন্তাবিদ এবং বুদ্ধিজীবিদের মেরে ফেলে।

অনেকেই যারা নিজেরা আইয়ামে জাহেলিয়াতের রাজনীতির বিরোধী হলেও এক একটা হত্যাকাণ্ড ঘটবার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বুঝে না বুঝে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে যুক্তি তুলে ধরতে বা মন্তব্য করতে থাকেন, যা আখেরে যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি বিকাশে ভূমিকা পালনকারীদের মূল লক্ষ্য নাস্তিক বা ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীগণ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে নাস্তিক, বা ইসলাম পরিপন্থী জীবন আচরণ বা বক্তব্য দেন এমন ব্যক্তিবর্গ তাঁদের টার্গেট নন, যদি  তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান আইয়ামে জাহেলিয়াতের পক্ষে যায়। আবার, অন্যদিকে কেউ ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চললেও বা ভাল মুসলিম হলেও তাঁরাও তাঁদের চোখে নাস্তিক বা মুরতাদ, যদি তাঁদের রাজনৈতিক বিশ্বাস আইয়ামে জাহেলিয়াতের বিপক্ষে যায়।

আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীরা মুক্তিযুদ্ধের দর্শন- বহুত্ববাদী, উদার-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের বিরোধী- যে রাষ্ট্র সকল ধর্ম, মত, রাজনৈতিক চিন্তা এবং পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের অন্তর্গত সকল জাতিসত্বার বিকাশে অনূকূল পরিবেশ তৈরি করবে। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী অধ্যাপক জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের এ দর্শনকে ধারণ করেন, এ দর্শনের আলোকেই তিনি ভালো-মন্দ বিচার করেন। অধ্যাপক জাফর ইকবালসহ যারাই মুক্তিযুদ্ধের এ দর্শনকে ধারণ করেন তাঁরা সবাই তাঁদের চোখে 'নাস্তিক', অথবা 'মুরতাদ', তাঁদের সবাইকে কতল করা তাঁদের দৃষ্টিতে জায়েজ।

অনেকেই সঠিক বিচার, রাষ্ট্রের ভূমিকা, রাষ্ট্র ধর্ম এসবের কথা বলছেন এ মৃত্যু উল্লাস বন্ধ করবার জন্য। কিন্তু, যতদিন পর্যন্ত অধ্যাপক জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের আলোকে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন সে বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে, এবং সেই বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত আইয়ামে জাহেলিয়াতের অনুসারীদের জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত যত পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন এ মৃত্যু উল্লাস বন্ধ হবে না।