আকাশে আকাশে ছড়ানো বেদনা: কাঁদো মানুষ কাঁদো

অজয় দাশগুপ্তঅজয় দাশগুপ্ত
Published : 13 March 2018, 01:31 PM
Updated : 13 March 2018, 01:31 PM

বেদনা আমাদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ রাখে। আনন্দে বিভক্ত হলেও বাঙালি দু:খে এক। তার প্রমাণ আবার পেলাম । নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে পতিত বিমানটির বেলায়। ইউএস বাংলায় চড়ার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের সকলের । কোন পরিবহনের বা কাদের এই ক্রাফট সেটা এখন আর কোন কথা নয়। এখন বিষয়টা বেদনা আর দু:খের।

আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি দেশে যাবার একমাত্র বাহন এই উড়োজাহাজ।  তাছাড়া এখন দেশের মানুষের জীবনেও বিমানে ভ্রমণ কোন বিলাসিতা না। এটা জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। বাজেট এয়ারলাইনস গুলো আসার পর মানুষের জীবনে গতি এসেছে। তারা এখন বাস ট্রেনের পরিবর্তে বিমানে চড়তে পারেন। এই কারণে এখন বিমান দুর্ঘটনা মানে কিন্তু ধনী বা বড়লোক নামে পরিচিতজনদের মৃত্যু না। এখন সাধারণ মানুষের জীবন  যায় এতে। যে বিমানটি কাল পরে গিয়েছিল তাতে ছিলো ছাত্র-ছাত্রী বেড়াতে যাওয়া মানুষ আর কাজের কারণে যেতে বাধ্য কিছু সাধারণ মানুষজন। এই কষ্ট মানা যায়না।

বিমানে ভ্রমণ যে কতটা ঝুঁকির সেটা আমাদের চাইতে ভালো কেউ জানেনা। প্রতিবার মনে হয় এই শেষ। আর চড়বো না। কিন্তু আবারও যেতে হয়। একবার আমি আর আমার স্ত্রী দীপা হাওয়াই গিয়েছিলাম। হনলুলু থেকে বিগ আইল্যান্ড যেতে একঘণ্টাও লাগেনা। যাবার বেলায় সব ঠিকঠাক। ফেরার পথে কিছুটা উড়ে আসার পর শুরু হলো প্রলয়দোলা।

এমনই অবস্থা মুখে কৃত্রিম হাসি অন্তরে ভয় নিয়ে ড্রিঙ্কস দিতে আসা মেয়েটি টালসামলাতে না পেরে পড়েই গেল। বন্ধ হয়ে গেল পানীয়-টানীয়। একটানা ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল সিটবেল্ট বেঁধে রেখে নিজেকে সংযত রাখার। নিচে তাকিয়ে দেখি যতদূর চোখ যায় প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তাল জলরাশি। জীবন তখন হাতের মুঠোয়। শুধু সিডনি রেখে আসা অর্কের মুখখানা ভেসে উঠছিলো। মা বাবা কেউই থাকবেনা তার?

কেমন করে জানি বেঁচে গিয়েছিলাম। যাঁরা কাঠমান্ডুতে বাঁচেননি তাঁদের সে সময়কার চেহারা বা মনোভাব বুঝতে পারি। পৃথিবীতে এত নিষ্ঠুর দুর্ঘটনা আর কিছুতে নাই।
নেপালে যাবার সময়ও এমনটা হয়েছিল। ঝাঁকুনি আর প্রবল কাঁপাকাাঁপির পর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানটি কোনক্রমে ল্যান্ড করতে পেরেছিল।

এখন এটা মনে করতেই পারি এয়ারলাইন্স ভেদে গুরুত্ব দেয়ার বিষবটাও হয়তো আলাদা। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ইউএস বাংলার বিমানটিকে কাঠমান্ডুর কর্তারা তেমন গুরুত্ব দেয়নি।

পাওয়া গেছে ব্ল্যাক বক্স। ফলে ঘটনা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সন্দেহ একটাই আমরা বড় নাজুক জাতি। নিজেদের ভেতর মারামারি বা ঝগড়া জানলেও অন্যের বেলায় কঠিন হতে পারিনা। হতে পারে বিমানটি পুরনো বা অকেজো কোন যান্ত্রিক কারণে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু এটা মনে করার অনেক কারণ আছে যে সেখানকার কর্তাদের ঘাটতি থাকতে পারে। কারণ নাক ভেঙে পড়া থাকা তুর্কি বিমান বা আরো অনেক বিমান এ বিমানবন্দরে বিপদে পড়েছে। মানুষ জান হারিয়েছে। তাই সত্য বেরিয়ে আসুক।

শোকার্ত জাতির আজ একটাই প্রার্থনা:

মৃত্যুর জানাজা মোরা কিছুতেই করিবোনা পাঠ
কবরেরও ঘুম ভাঙে জীবনের দাবী আজ এতই বিরাট।

মনটা বড় কাঁদছে। আহারে মানুষ। অসহায় মানবসন্তান।