ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মান্ধতা এবং আমরা

গৌতম রায়
Published : 30 Jan 2018, 10:00 AM
Updated : 30 Jan 2018, 10:00 AM

বর্ধমানের কাছে কর্ড লাইনে পাল্লা রোড স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়, আবার মেইন লাইনে পালসিট স্টেশনে নেমেও যাওয়া যায়, গ্রামটির নাম 'কলানবগ্রাম'।বর্ধিষ্ণু কৃষিপ্রধান এলাকা বড়শূলের লাগোয়া।অনেকে এককথাতে এই গ্রামটিকে বোঝাতে আলাদা করে আর ওই গ্রামটির নাম না বলে বড়শূল-ই বলেন। জাতীয় আন্দোলনে রাঢ় বাংলার 'দুর্বাসা মুনি' নামে খ্যাত মহাত্মা বিজয় কুমার ভট্টাচার্য স্বাধীনতার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে গান্ধীজীর গঠনমূলক কাজের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সেখানে স্থাপন করেছিলেন 'শিক্ষানিকেতন' ।

বিজয় কুমারের পত্নী সাধনা ভট্টাচার্য ছিলেন সর্ব অর্থে ওই সেখানকার আশ্রমজননী।সর্ব অর্থেই এক আশ্রমিক পরিবেশ শিক্ষানিকেতনের সামগ্রিক পরিমণ্ডলে।আশ্রম কিন্তু কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মাচারণ নেই।

আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভাঙুর নদী।কবি কল্পনাতে এই ভাঙুরেই একদিন ভেসেছিল চাঁদ সদাগরের ভেলা। গোটা প্রতিষ্ঠানটি জুড়ে এক অপূর্ব নৈসর্গিক পরিবেশ। প্রকৃতি যেন আপন মাধুর্যে উজার করে দিয়েছে শিক্ষানিকেতনের প্রতিটি বিন্দু। এখানে উপাস্য দেবতা একমাত্র মানুষ।মানুষের ঈশ্বরকেই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই এখানে শেখানো হচ্ছে।শিক্ষা বিষয়টি সেখানে কেবল কেতাবী ধ্যানধারণাতে আবদ্ধ নয়।শিক্ষা সেখানে জীবনের অঙ্গ।তাই শিক্ষানিকেতনে শিক্ষাদান পদ্ধতিতে সব থেকে বড়ো ভূমিকা পালন করে চলেছে কর্মমুখীনতা।শিক্ষার এই কর্মমুখী অভিধারাতে কোনো মানুষই বেকার থাকবে না- গান্ধীজীর এই তাত্ত্বিক অভিমতকে বাস্তবে প্রয়োগ করে দেখিয়েছিলেন মহাত্মা বিজয় কুমার ও তাঁর পত্নী সাধনা দেবী। তাঁদের কর্মপদ্ধতির এইসব দিকগুলির আলোচনাতে এখানে না গিয়ে এখানে আমরা দেখবার চেষ্টা করবো যে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতাকে কতোখানি আত্মস্থ করে সেই বোধকে এখানে প্রয়োগ করেছিলেন বিজয় কুমার। আর সেই বোধের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কী অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁর পত্নী আশ্রম জননী সাধনা দেবী, যিনি আশ্রমের সবার কাছে ছিলেন একান্ত আপনার- 'বড়মা' ।

সাধনা দেবী একজন নিষ্ঠাবতী ধর্মপ্রাণা রমণী ছিলেন।বিজয় কুমারের জীবনকালে সাদা খোলের লাল পাড় মোটা খদ্দরের শাড়ি ছাড়া জীবনে পড়েননি আর বিজয় কুমারের মৃত্যুর পর সাদা খোলের খদ্দরের থান- এই ছিল তাঁর পোশাক।বড়মা সাধনা দেবীর ধর্মাচারণ ছিল তাঁর একান্ত অন্তরের বিষয়। কোনোদিন প্রকাশ্যে, আড়ম্বরপূর্ণভাবে তাঁকে ধর্মাচারণ করতে কেউ দেখেননি।জীবনের কোনো ক্ষেত্র রজোগুণের প্রকাশ পাছে না হয়ে পড়ে এজন্যে তাঁর ভিতরে যে সতর্কতা দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

শিক্ষানিকেতনটি জন্মলগ্ন থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার পরাকাষ্ঠা হিসাবে মেলে ধরেছে তা আজ ধর্মনিরপেক্ষতার এই সঙ্কটময় আবর্তে কল্পনা করতে পারা যায় না।কর্মমুখী শিক্ষাকে জীবনের শিক্ষার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রতিষ্ঠান এই শিক্ষানিকেতনের অভ্যন্তরে কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মাচারণের রেওয়াজ নেই।বিদ্যা চর্চার সঙ্গে সংস্কৃতির ককটেল বানিয়ে সরস্বতী পুজোকে ঘিরে যে একটা অদ্ভূত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মচর্চার রেওয়াজ গত কুড়ি বছরে এ রাজ্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবেশে বেশ জলচল হয়ে গেছে, তার ঢেউ কিন্তু পৌঁছতে পারেনি কলানবগ্রামের 'শিক্ষা নিকেতন' নামক এই ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে সংস্কৃতি চর্চা বা বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর অর্চনা ইত্যাদি কোনো যুক্তিতেই একটি বিশেষ ধর্মের চর্চার অনুমতি কোনোদিন দেননি আশ্রম জননী সাধনা দেবী।তাঁর যুক্তি ছিল; আমি যদি শিক্ষাঙ্গনের ভিতরে সরস্বতী পূজো করবার অনুমতি দিই, তাহলে কেউ যদি এই প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কোরবানি করতে চান, তাহলে তাঁকে আমার অবশ্যই কোরবানির ও অনুমতি দিতে হবে।তা না হলে আমি একটি বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছি, এই গুরুতর অভিযোগ কেবল শুনতেই হবে না,সেই অভিযোগকে মাথা পেতে স্বীকার করেও নিতে হবে।

এই প্রতিষ্ঠানে যেসব শাখা অঙ্গ আছে সেগুলির নামকরণের সঙ্গে পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে যেসব অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলি রয়েছে , সেগুলির নামকরণ থেকে দৈনন্দিনতা, কোনো কিছুর ভিতরে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সংস্পর্শ নেই।তাবলে এখানে কিন্তু নাস্তিকতার ও পাঠ দেওয়া হয় না।ঈশ্বর বিশ্বাস এঁদের শিক্ষা পদ্ধতির একটি অঙ্গ।তবে সেই বিশ্বাসের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সংযোগ নেই।কোনো বিশেষ ধর্মের ধর্মীয় বিশ্বাস এখানকার ছাত্র ছাত্রীদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় না।

এই প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ সংগঠনগুলির নামকরণের ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে পালন করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে।শিক্ষা নিকেতনের ক্রেশ বা শিশু লালনের স্থানের নামকরণ হয়েছে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্মৃতিতে। শিশু ভবনের নাম 'মঞ্জুষা তরঙ্গিনী শিশু ভবন' । মহাত্মা বিজয় কুমার ভট্টাচার্যর জাতীয় আন্দোলনের সময়ের সহযোদ্ধা আচার্য প্রমথনাথের নামে নামাঙ্কিত হয়েছে বুনিয়াদী বিদ্যালয়টি।গান্ধীজির বুনিয়াদী শিক্ষা ভাবনার সার্থক আধুনিকীকরণ এখানে ঘটেছে।গান্ধীজির চরকার জায়গায় তার সঙ্গেই আজ এখানে ঠাঁই পেয়েছে কম্পিউটারের মাউসও। চিন্তার আধুনিকতার অভাব এক ধরনের মৌলবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়। এই বিষয়টিতেও সদা সতর্ক নজর কর্তৃপক্ষের । তাই তাঁরা আচার্য প্রমথনাথ বুনিয়াদী বিদ্যালয়ে গান্ধীজির বুনিয়াদী শিক্ষা ভাবনাকে সময়োপযোগী উপস্থাপনা দিয়েছেন। ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এই সমন্বয় যেমন একদিকে অন্ধ চেতনার মূলে কুঠারাঘাত করে তেমনি জ্ঞানের আলোকবর্তিকারও সন্ধান দেয়।
এই শতাব্দীর প্রথম দশকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশের এক কর্তাব্যক্তির আপিসে ভবাণী ভবনে যেতে হয়েছিল।

পুলিশের সেই বড়ো কর্তার খাস আপিস ঘরে দেখলাম বহু দেব-দেবতার ছবি। তাঁর কাজের টেবিলটির নীচেও বহু ঠাকুর দেবতার ছবি এবং ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার রয়েছে। আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, যদি অন্য ধর্মমতের কোনো মানুষ এই পুলিশ কর্তার কাছে কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেন, তাহলে তাঁর মানসিক অবস্থা কী হবে? যদি একজন অহিন্দু মানুষ কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যাজনিত ঘটনার জেরে ওই পুলিশ অফিসারের শরণাপর্ণ হন, তাহলে তাঁর কি অভিব্যক্তি ঘটবে? সেই অভিযোগ জানাতে আসা মানুষটি কি পুলিশ অফিসারের সরকারী আপিসের ঘরের দেওয়ালে, টেবিলের কাঁচের তলায় এতোসব ঠাকুর-দেবতার ছবি দেখে কোথাও একটা মানসিক আতঙ্ক অনুভব করবেন না?

ঈশ্বর কি কেবল ছবিতে, ক্যালেন্ডারের পাতাতেই বিরাজ করেন? তিনি কি ভক্তের হৃদয়ে অবস্থান করেন না? শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতের একটি চরিত্র হাজরা মশাই।শ্রীরামকৃষ্ণের পৈতৃক আবাস কামারপুকুরেরই কাছের কোনো গ্রামের মানুষ। বহুকাল দক্ষিণেশ্বরে থেকেছেন শ্রীরামকৃষ্ণের অবস্থানকালে। ঈশ্বর ভক্ত। কিন্তু রজো গুণে টইটম্বুর। একটা বাঘছালের উপরে বসে জপ ধ্যান করেন। আর অবসর সময়ে যখন জপধ্যান করেন না, সেই বাঘছাল খানা টাঙিয়ে রাখেন শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে। সেই হাজরা মশাই এবং তাঁর বাঘছালের কথা প্রসঙ্গে দারুণ শিক্ষণীয় ভঙ্গিমায় ধর্মের এই দেখনদারি রূপটির কঠোর সমালোচনা করে গিয়েছেন ভক্তকুলশিরোমণি শ্রীরামকৃষ্ণ।

ওই পুলিশ অফিসারের ঘরে দেওয়ালে, দেরাজে অত্তো ঠাকুর – দেবতার ছবি দেখে আমার কেবল ই শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতের ওই হাজরা মশাইয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আসলে আমাদের এই ধর্ম চর্চার নামে আড়ম্বরপ্রাণতাকে এতোখানি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলা হয় যেখানে ধর্মপ্রাণতার বেড়ার ধারকাছ দিয়ে না গিয়ে আমরা চলে যাই ধর্মের নামে নিজের গা জোয়ারিকে দেখাতে। এই গা জোয়ারির ভিতর দিয়েই আমরা অপর ধর্ম এবং অপর ধর্মের মানুষদের প্রতি একটা চাপা আস্ফালন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকাশ করে ফেলি। আমরা ভুলে যাই শ্রীরামকৃষ্ণের 'যতোমত ততোপথে'র সেই অনন্য সাধারণ দিক নির্দেশ।

ভারতের মতো বহু ভাষা, বহুমত, বহু পরিধানের দেশে ভাষা, ধর্মভিত্তিক সংখ্যাগুরুর একটা বিশেষ রকমের দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে।এই দায়িত্ব কর্তব্যের দিকটা সম্পর্কে সংখ্যাগুরু সমাজের যে দায়িত্ব সেটা আদৌ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হতে আমরা দেখি না। এই যে বর্ধমানের কাছে কলানবগ্রামের 'শিক্ষা নিকেতনে'র কথা বলা হলো, এখানে সংখ্যাগুরুর দায়িত্ববোধের যে পরাকাষ্ঠা আমরা দেখতে পাই, তার বিন্দুমাত্রও তো আমরা দেখলাম না ওই পদস্থ পুলিশ অফিসারের সরকারী আপিসের কর্মপদ্ধতির ভিতরে। দেশের স্বাধীনতার পর দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ পরিকাঠামোর উপরে গড়ে তোলা ছিল পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর প্রাথমিক এবং প্রধানতম কাজ। খাদ্য, বস্ত্র, সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতোই তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতাকে।

আর তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল? তাঁর কাছে সব থেকে গুরুত্ব পেয়েছিল গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নিমাণ। নেহরুর কাছে সেদিন সোমনাথ মন্দিরের পুনর্গঠন একমাত্র অগ্রাধিকার পায়নি। এ নিয়ে নেহরু – প্যাটেল দ্বন্দ্ব দানা বাঁধবার আগেই প্যাটেল লোকান্তরিত হন ১৯৫০ সালে।প্যাটেলের মৃত্যুর পর তাঁর একান্ত অনুগত কে এম মুন্সী (যাঁর অনুপ্রেরণাকে নিজের ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির একটি অনুঘটক হিসাবে স্বীকার করেন লালকৃষ্ণ আডবাণী) সেই সোমনাথ মন্দিরটি পুনর্নিমাণের কাজটি সমাধা করেন। পুনর্নিমিত সোমনাথ ভন্দিরের দ্বারোদঘাটনের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদকে।

পণ্ডিত নেহরু ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নেই চাননি যে, রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ যান পুনর্নিমিত সোমনাথ মন্দিরের উদ্বোধনে। এ নিয়ে উভয় ব্যক্তিত্বের ভিতরে বেশ কিছু চিঠিপত্রেরও আদান-প্রদান হয়। প্রধানমন্ত্রী নেহরুর অনুরোধ খানিকটা জেদ আর পদাধিকার দিয়েই অগ্রাহ্য করেন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ।

রাষ্ট্রীয় পদে আসীন ব্যক্তির প্রকাশ্যে ব্যক্তি ধর্মাচারণ নিয়ে আপত্তি ছিল পণ্ডিত নেহরুর।তিনি কিন্তু নাস্তিক ছিলেন না। তবে ধর্মের প্রকাশ্য কারবারীও ছিলেন না।পত্নী কমলা নেহরু ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের পরম ভক্ত। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদ স্বামী শিবানন্দের ( মহাপুরুষ মহারাছ) মন্ত্র শিষ্য ছিলেন। স্বামী অভয়ানন্দ ( ভরত মহারাজ) যখন দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশনের দায়িত্বে ছিলেন তখন তাঁর সংস্পর্শে এসে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেহরু। কন্যা ইন্দিরার জীবনে ব্যক্তিগত সঙ্কটকালে পিতা হিসাবেই কন্যার মানসিক শান্তির জন্যে পূজ্যপাদ ভরত মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন এই নেহরুই। কিন্তু তাঁকে কোনোদিনও একটি বারের জন্যেও দৌহিত্র পুত্র রাহুলের মতো মন্দিরে মন্দিরে ভোটের আগে বা পরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় নি।