মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানাতে ‘২৪ জুলাই’ এর স্বীকৃতি প্রয়োজন

হাসান মাহামুদ
Published : 12 Jan 2018, 04:00 PM
Updated : 12 Jan 2018, 04:00 PM

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় 'বাংলাদেশ' নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পায় নতুন একটা মানচিত্র। স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷ দেশের বাতাসে তাই আজ ভেসে বেড়াচ্ছে সেই গান 'তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না'৷

কিন্তু আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের সকল অবদানকে স্বীকৃতি দিতে পেরেছি এতো বছরেও?

স্বাধীন ভূমিতে ফসল ফলানোর চূড়ান্ত তাগিদ অনুভব করেছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান। কেউ হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র, কেউ করেছে মেধাভিত্তিক যুদ্ধ, কেউ কণ্ঠে-কেউ কলমে-কেউ তুলিতে আবার কেউ পায়ে ফুটবল নিয়েও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করেছে। দেশ-মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য সবার লক্ষ্য ছিল অভিন্ন।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হতে দেখছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ করার প্রকল্প হাতে নিতে হচ্ছে সরকারকে। এসব একদিকে আমাদের জন্য সুখের, অন্যদিকে দুঃখেরও। কারণ একটি জাতির পরাধীনতার গ্লানি ঘোচাতে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে, করা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের শতভাগ স্বীকৃতি আমরা আজও নিশ্চিত করতে পারিনি।

কিন্তু যে অর্জনটি বিশ্বে অনন্য, লাখ লাখ জীবন বিসর্জন আর দীর্ঘ যুদ্ধের ইতিহাস; তার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এখনো অরক্ষিত- তা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আবার এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি অর্জন রয়েছে আমাদের, যেটি বিশ্বে অদ্বিতীয়। তারও যোগ্য সম্মান আমরা দিতে পারিনি এখনো। তা হলো- বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই স্বাধীনতার জন্য একটি ফুটবল দল কাজ করেছিল।

যদি প্রশ্ন করা হয়- স্বাধীনতার জন্য ফুটবল খেলেছে কোন জাতি? এর উত্তর- 'বাঙালি জাতি'। এই ঘটনা বিশ্বে নজিরবিহীন। যে গৌরব শুধু বাঙালিদেরই আছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন এবং তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গঠিত 'স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল' বিশ্বে মাত্র একটি। আর সেটি আমাদের। ফুটবলের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখার অনন্য নজির গড়েছিল এই দল। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে তাই স্বর্ণাক্ষরে লেখা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নামও।

তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখনো কোনো জাতীয় পুরস্কার বা স্বীকৃতি মেলেনি এই দলটির। অথচ 'স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল' স্বাধীনতা পদক পাওয়ার যোগ্য দাবিদার। দলটির অবদান বিশেষ ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দিনটি হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই। এই তারিখটিও যোগ্য সম্মান পাওয়ার, স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার।

আমরা কয়েকজন সহপাঠী মিলে ২০১৪ সালে গঠন করেছিলাম 'ক্রীড়া দিবস বাস্তবায়ন ও উদযাপন পরিষদ' নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা এবং আহ্বায়ক ছিলাম আমি। কার্যক্রমের সুবিধার্থে আমরা আহ্বায়ক হিসেবে এক বড় ভাইকে নেই। আমি সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেই (বর্তমানে পুনরায় আহ্বায়ক)। আমাদের একটিই মাত্র দাবি ছিল- '২৪ জুলাইকে জাতীয় ক্রীড়া দিবস ঘোষণা করা হোক'। পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা সেমিনার করেছি, জনমত গঠন করেছি, মানববন্ধন করেছি, র‍্যালি করেছি। 'রণাঙ্গণে ফুটবল' শীর্ষক সচিত্র স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয় তখন। এ বিষয়ে বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সাথে আমরা অসংখ্যবার সাক্ষাৎ করেছি, কথা বলেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি।

আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২৪ জুলাইকে প্রাধান্য দিয়ে 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' ঘোষণার সুপারিশ করে। অর্থাৎ যে দিনটিতে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম মাঠে নেমেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা ও অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই নদীয়া একাদশের মুখোমুখি হয়েছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। সেদিন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিল ৩১ ফুটবলারকে নিয়ে গড়া দলটি, যে দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু আর সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর থেকে এ বিষয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি।

কিন্তু ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক দিবসের সঙ্গে মিল রেখেই ৬ এপ্রিলকে 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৬ এপ্রিলকে ইন্টারন্যাশনাল ডে অব স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পিস হিসেবে ঘোষণা করে। এর ব্যাখ্যায় জাতিসংঘ বলে, ক্রীড়ার মাধ্যমেই জাতিসংঘের শান্তি ও উন্নয়নের বাণী প্রচার করা সহজ। কারণ, ক্রীড়ার আবেদন সর্বজনীন।

২০১৬ সালের ২৮ মে প্রতি বছর ৬ এপ্রিল জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালনের ব্যাপারে মন্ত্রীসভার অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ পাঠায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্রীড়াকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো দিবস নেই। জাতিসংঘ ৬ এপ্রিলকে 'ইন্টারন্যাশনাল ডে অব স্পোর্টস ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পিস' হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেই আলোকে ৬ এপ্রিল জাতীয়ভাবে ক্রীড়া দিবস পালন করা যেতে পারে। এরপর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২০১৭ সালে 'শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ক্রীড়া' স্লোগানে উৎসবমুখর পরিবেশে দেশে প্রথমবারের মতো 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' পালিত হয়।

৬ এপ্রিল 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' পালনের সিদ্ধান্তের সাথে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে ২৪ জুলাই তারিখটিকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে।

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন বিশ্বের অনেক দেশই জানতো না এর ভয়াবহ সম্পর্কে, জানতো না এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত এলাকা সিওয়ানের বিহারিরা জানতো যে, বাংলাদেশে অনেক বিহারি মারা হচ্ছে। এই অভিযোগে প্রথমে তারা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সঙ্গে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতেই চায়নি। সেই অবস্থা থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন করেছে দলটি। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের শুরুর দিকে অস্ত্র কেনার জন্য বাংলাদেশের কোনো ফান্ড বা বরাদ্দ ছিল না। বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬টি ম্যাচ খেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ফান্ড সংগ্রহ করে দলটি। ম্যাচগুলো থেকে তখরকার সময়ে সাড়ে তিন লাখ রুপি সংগ্রহ করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে টাকা তুলে দেয়। সেই টাকায় কেনা অস্ত্র, যা মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।

দলটি কার্যক্রম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এতোটাই নিবিষ্ট যে, মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রেও দলটির অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কল্যাণে স্বাধীন হওয়ার আগেই বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল বিদেশের মাটিতে, তাও সেই ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই তারিখে। তখনো আমরা পরাধীন। কারণ আমরা স্বাধীন হই ১৬ ডিসেম্বরে।

১৯৭১-এর উত্তাল সেই দিনগুলোয় বাঙালি খেলোয়াড়রা শিকার হচ্ছিলেন নির্মমতার। হত্যা করা হয়েছিল পাকিস্তানের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বাঙালি পোল ভোল্টার মিরাজসহ আরো অনেককে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা আর দেশ স্বাধীন হলে তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে সে সময় বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা উল্লেখ করে মুজিবনগরে যোগ দিতে বলা হয় ফুটবলারদের। এর উদ্যোক্তা ছিলেন মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, আলী ইমাম, এন এ চৌধুরীসহ (কালুভাই) আরও কয়েকজন। সেই চিঠির কথা জানতে পেরে জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ হাজরাসহ কয়েকজন খেলোয়াড় যোগ দেন মুজিবনগরে। এরপর আকাশবাণীতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গড়ার ঘোষণা প্রচার করা হলে দেশসেরা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আগ্রহী অনেকেই চলে আসেন মুজিবনগরে। সেখান থেকেই জাকারিয়া পিন্টুকে অধিনায়ক করে ৩১ জন ফুটবলার নিয়ে শুরু হয় অসীম সাহসী এক যুদ্ধের।

সেই যুদ্ধের শুরুটা ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই থেকে। সেদিন কৃষ্ণনগরের নদীয়া স্টেডিয়ামে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রথম ম্যাচ ছিল নদীয়া জেলা একাদশের বিপক্ষে। খেলোয়াড়দের দাবি ছিল ম্যাচের আগে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে হবে। কিন্তু আপত্তি জানিয়ে বসেন নদীয়ার তখনকার ডিসি দীপক কান্তি ঘোষ। কারণ ভারত তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার আগে আরেকটি দেশের পতাকা ওড়ানোর অনুমতি নেই আর্ন্তজাতিক পতাকা উত্তোলন আইনে। কিন্তু গ্যালারিতে উৎসুক দর্শকের ভাঙচুর আর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের অনড় অবস্থানের কারণে ১০ মিনিটের জন্য পতাকা উত্তোলনের অনুমতি দেন দীপক কান্তি ঘোষ। অতঃপর এলো সেই গর্বের ক্ষণটি।

অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর হাত ধরে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। স্বাধীন একটি দেশের পতাকার পাশে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে সেদিনই বিদেশের মাটিতে প্রথম উড়ে পতপত করে। নদীয়া প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গগণবিদারী ধ্বনিতে। আবেগবিহ্বল অশ্রুসজল নয়নে স্বাধীন বাংলা দলের খেলোয়াড়রা চুমু দেন পতাকায়। গেয়ে উঠেন 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি'। আনুষ্ঠানিকভাবে অন্য একটি দেশের পতাকার পাশে নিজেদের দেশের সবুজের পটে লাল সূর্যের ভেতরে সোনালি মানচিত্র খচিত পতাকা প্রথমবার দেখতে সেদিন বাঁধ ভেঙে আসে হাজারো মুক্তিপাগল দর্শক। খেলোয়াড়রা পুরো স্টেডিয়াম পতাকা নিয়ে প্রদক্ষিণ করেন। জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত তখন নদীয়া, যা কাঁপিয়ে দিয়েছিল লাহোর-ইসলামাবাদকেও। যুদ্ধ শুধু বুলেটে নয়, ফুটবলেও হতে পারে- সেবারই প্রথম দেখল গোটা বিশ্ব।

এতো এতো অর্জনের পরেও আমরা কেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটিকে যোগ্য সম্মান দিব না? কেন আমরা তাদের ঐতিহাসিক দিনটিকে যোগ্য সম্মান দিতে পারবো না? এই প্রশ্ন সচেতন নাগরিকদের প্রতি।

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সব মিলিয়ে ১৬ ম্যাচ খেলেছিল ভারতে। জয় ১২টিতে, ড্র একটিতে আর হারতে হয়েছিল তিন ম্যাচ। হার-জয় মুখ্য নয়, ফুটবল নিয়ে যুদ্ধটাই ছিল আসল। অমানুষিক পরিশ্রমে সেটাই করে গেছেন ফুটবলাররা। ভারতের এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে কখনো ট্রেনে ভ্রমণ করতে হয়েছে টানা ৪২ ঘণ্টা। বাস ও ট্রেন ভ্রমণ ফ্রি হলেও থাকতে হতো তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রী হয়ে। তখন ভারতের যে শহরেই গেছেন জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ হাজরারা সেখানেই পেয়েছেন উষ্ণ অভ্যর্থনা। ভারতীয়রা অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখেছে স্বাধীনতার জন্য ইস্পাত কঠিন ফুটবলারদের মুখগুলো। শ্রদ্ধায় ঝুঁকেও পড়েছে। দিলীপ কুমার, উত্তম কুমার, সায়রা বানু, শর্মিলী ঠাকুর, মনসুর আলী খান পাতৌদির মতো তখনকার সুপারস্টাররা দিয়ে গেছেন উৎসাহ। শুধু সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে আমাদের কার্পণ্যতা।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বিপক্ষে অন্যদের খেলা আটকাতে যুদ্ধকালীন সময়ে ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছিল পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলা তারা আটকাতে পারেনি।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৭ সালে ফিফা বা আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থার কাছে আবারো যোগাযোগ করা হচ্ছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটির বিষয়ে। তবে এবার যোগাযোগ করছি আমরা। এরই মধ্যে আমাদের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য গঠিত বিশ্বের একমাত্র দল হিসেবে 'স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল'টির ফিফার স্বীকৃতি আদায়ে। এটি আমাদের সংগঠনের দ্বিতীয় লক্ষ্য। যোগাযোগ করা হচ্ছে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের সাথেও।

আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে- বাংলাদেশে যোগ্য সম্মান না পেলেও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বীকৃতি অর্জন করা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের। এরপর বাংলাদেশেও দলটি যোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি দাবি করতে চাই, ''৬ এপ্রিল তারিখটিকে আমরা 'ইন্টারন্যাশনাল ডে অব স্পোর্টস ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পিস' হিসেবেই পালন করতে পারি। যেহেতু 'ইন্টারন্যাশনাল ডে অব স্পোর্টস ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পিস' এর সঙ্গতি রেখেই বাংলাদেশে ৬ এপ্রিলকে 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' ঘোষণা করা হয়। আর 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' হিসেবে ২৪ জুলাই তারিখতে পালন করতে পারি কী না, তা আরেকবার বিবেচনা করে দেখতে।

এর মাধ্যমে একদিকে ক্রীড়াঙ্গনকে সম্মান জানানো হবে, অন্যদিকে সম্মান জানানো হবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটিকেও। পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধকেও।