লাগামহীন ট্রাম্প ও কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন নীতি

বিজন সরকার
Published : 12 Dec 2017, 01:54 PM
Updated : 12 Dec 2017, 01:54 PM

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর গা-জ্বলা কথাবার্তার জন্য প্রচুর সমালোচিত– তাঁর দেশে ও দেশের বাইরে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুর মতো জটিল এবং বৈশ্বিকভাবে উদ্বেগজনক বিষয়েও ট্রাম্পকে এ ধরনের কথা বলতে দেখা যায়। উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং ঊনকে 'রকেটম্যান' বলে হাস্যরস করেছেন ট্রাম্প। তাঁর কট্টর বিরোধিতাকারীরা তাঁর এমন ধারার কথাবার্তা 'বালখিল্যতা' বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এমনকি উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে না পাওয়ার জন্য তারা দায়ী করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টেরএসব আচরণকে। পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞদের একটি অংশেরও ধারণা এটাই যে, ট্রাম্পের বেপরোয়া কথাবার্তা কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যাটি আরও জটিল করছে এবং এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে সেটি সমাধানের অযোগ্য করে তুলেছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ট্রাম্পের এহেন আচরণের সমালোচনা হয়। তাঁর ফাইভ নেশনস-এশিয়া সফরের আগে সেদেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একজন 'যুদ্ধপাগল' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার মানে, ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক ও উত্তর কোরীয় প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি একই রেখায় বিরাজমান।

এখানে দুটি প্রশ্ন আনা যায়। প্রথমত, মার্কিন প্রেসিডেন্টের লাগামহীন কথাবার্তা কি উত্তর কোরিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অংশ? আরও স্পষ্ট করে বললে, তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গি কি কোনোভাবে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিফলিত হয়?

সেটির উত্তর হবে, না। উত্তর কোরিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রেসিডেন্টের কথাবার্তার প্রতিফলন হয় না। যদি তা-ই হত, তাহলে এতদিনে এই অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধ লেগে যেত। হয়তো উত্তর কোরিয়া এতদিনে আরেকটি হিরোশিমা হয়ে উঠত।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে মেধাবী পেশাধারী কূটনৈতিক, সামরিক কৌশল প্রণয়নকারী এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা। উত্তর কোরিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে মাঠের প্রদাহী কথাবার্তার প্রভাব সামান্যতমও নয়। দেশটির অফিসিয়াল পলিসি এবং সেটির বাস্তবায়ন প্রেসিডেন্টের কথাবার্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তাহলে এসব কথার কি কোনো মূল্য নেই? তিনি কি কেবল এসব বলার জন্যই বলে থাকেন?

অবশ্যই এসব কথার নির্দিষ্ট মূল্য আছে। ট্রাম্প তাঁর কথার মাধ্যমে যে বার্তা দেন সেটি প্রতিপক্ষকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ঘায়েল করে। একই সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট বার্তাও পাওয়া যায়। তবে তাঁর এসব বক্তব্য আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অংশ নয়।

যেমন ধরুন, জাপানে নেমেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বললেন যে, উত্তর কোরিয়ার প্রতি 'কৌশলগত ধৈর্য' এখন শেষের দিকে। উত্তর কোরিয়ার প্রতি কূটনৈতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি যে সামরিক পদক্ষেপও বিবেচনায় রয়েছে, সেটি বিশ্বকে আবারও জানিয়ে দিলেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিষদে বক্তব্য দেওয়ার সময় কিম জং ঊনের উদ্দেশে তিনি বলেন,

Do not underestimate us. Do not try us.

বাংলায় অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়, আমাদেরকে ছোট করে দেখ না, আমাদেরকে পরীক্ষা কর না। তিনি জাতীয় পরিষদের বক্তব্যে বলেন,

"আমরা কোরীয় উপদ্বীপে বিশ্বের তিনটি বড় এয়ারক্রাফট স্থাপন করেছি। সেই তিনটি এয়ারক্রাফট এফ-৩৫ এবং এফ-১৮ জঙ্গি বিমান দ্বারা পরিপূর্ণ। এমনকি আমরা কয়েকটি পারমাণবিক সাবমেরিন কোরীয় উপদ্বীপে রেখেছি।"

এশিয়া সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত প্রদাহী কথাবার্তায় কিম জং ঊন কিছুটা স্নায়ুচাপে পড়েছেন। আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিটি টুইটারের জবাব দিলেও কিম জং ঊন এখন সেটি করছেন না। আগের মতো হুমকিও দিচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলছে, তারা আপাতত উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজক বা প্ররোচক কোনো আচরণ দেখছে না। তবে তারা যদি তেমন আচরণ করে, সেটার জবাব দেওয়া জন্য আগে থেকেই সামরিক প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বারাক ওবামা প্রশাসনের মতো নীরব থাকবে না। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রদাহী কথাবার্তা যে একেবারেই অর্থহীন ও উদ্দেশ্যহীন, সে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া মানেই হচ্ছে বাস্তবতাবিবর্জিত একটি অবস্থান গ্রহণ।

তবে এখানে কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে। প্রেসিডেন্টের বক্তব্য কি কেবলই প্রদাহী? তাঁর বক্তব্যে হুমকি-ধমকির বাইরে আলাপ-আলোচনার কোনো উপাদান কি নেই? নেই কি আলোচনার কোনো ইঙ্গিত? ট্রাম্প কি সামরিক শক্তি প্রয়োগের বাইরে রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন?

প্রশ্নগুলির উত্তর হল, 'না'। এখনও ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক সমাধানের কথাই বলছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট ছিল। কিম জং ঊনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,

"আপনি যে অস্ত্র বানাচ্ছেন সেটি আপনাকে নিরাপদ রাখবে না। আমরাই বরং আপনাকে ভালো ভবিষ্যৎ দিতে পারব। তবে পিয়ংইয়ংকে অবশ্যই সম্পূর্ণ রূপে ডিনিউক্লিয়ারাইজেশন করতে হবে।"

একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার উপর জোরপূর্বক শ্রম, ক্ষুধা, যৌন ও রাজনৈতিক নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনেন। তিনি উত্তর কোরিয়াকে একটি 'দোজখ' বলে আখ্যায়িত করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুই কোরিয়ার পার্থক্য বুঝাতে আর্মিটাইজ রেখা বেছে নেন। এই রেখা শান্তি ও যুদ্ধ, সুন্দর ও দুরাচার, আইনের শাসন ও বর্বর শাসন, আশা ও হতাশার বিভক্তকারী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ অবস্থায় উত্তর কোরিয়া বিষয়ে সামরিক শক্তিপ্রয়োগের বিষযটি ট্রাম্প প্রশাসন তালিকার শীর্ষে রেখেছে ভাবা ঠিক হবে না। অধিকন্ত, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মুন জে ইনের আলোচনার মূল বিষয় ছিল কীভাবে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি সমস্যার সমাধানে দক্ষিণ কোরীয় সরকারের গৃহীত কর্মসূচি ট্রাম্প প্রশাসন মেনে নিয়েছেন।

উপরের বিশ্লেষণগুলোর মূল উদ্দেশ্য হল এটি পরিষ্কার করা যে, ট্রাম্প প্রশাসন ও মুন জে ইন প্রশাসন এখনও সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি করণীয় তালিকার প্রথমে নেননি। ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চীন যদি চায় তবেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।

তাই এটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, উত্তর কোরিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রশক্তি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উপর কোনো ধরনের হামলা পরিচালনা না করে, তবে বিষয়টি কূটনৈতিক সমাধানের দিকে যাবে। আর যদি বেপরোয়া কিম জং ঊন হামলা করে বসেন, তবে উত্তর কোরিয়াকে হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকির মতো চরম মূল্য দিতে হবে।

যাহোক, চীন সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে আরও কিছু করার আহ্বান জানান। জবাবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উভয় পক্ষকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত পদক্ষেপগুলো মেনে চলার আহ্বান করেন। চীনের এই অবস্থান এখন পর্যন্ত কৌশলী।

তবে এটি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, চীনও চাচ্ছে উত্তর কোরিয়া যেন পারমাণবিক অস্ত্রের এজেন্ডাসহ আলোচনার টেবিলে অংশগ্রহণ করে। কারণ কোরীয় উপদ্বীপ এলাকায় যদি আমেরিকার উপস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী হয়, সেটি এই অঞ্চলে চীনবিরোধী দেশগুলোকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে যাবে। বড় ধরনের সামরিক জোট গঠনও হয়ে যেতে পারে। আর যদি উত্তর কোরিয়ায় হামলা করার মতো বাস্তবতা এসে পড়ে এবং সেদেশের শাসনক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে সেটিও চীনের জন্য সুখকর হবে না। আমেরিকার নেতৃত্বে সামরিক জোট উত্তর কোরিয়ার স্থায়ীভাবে আবাস গাড়তে পারে।

অধিকন্তু, পিয়ংইয়ংএর ক্ষমতার পরিবর্তন চীনের অভ্যন্তরীন সমস্যার আগুনে ঘি ঢালবে। চীন ইতোমধ্যে কূটনৈতিক চ্যানেলে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। উত্তর কোরিয়া তাতে আগ্রহ দেখায়নি। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে কোনো ধরনের কাঠামোগত আলোচনায় যেতে চাচ্ছে না। তবে অন্য বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা কিম জং ঊন কখনও নাকচ করেননি।

উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচির এজেন্ডাসহ আলোচনার টেবিলে বসানো চীন ভিন্ন অন্য কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে লাভ হবে না। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীনের সঙ্গে সত্তর শতাংশ বাণিজ্য পরিচালনাকারী রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কিছুই করা যাবে না।

ট্রাম্পের সফরের আগেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন বহুমাত্রিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত ও অতীতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। এসবের মধ্যে একটি পদক্ষেপ ছিল উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উপরের স্তরের কজন ব্যক্তিকে কালো তালিকাভুক্ত করা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাতেও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে।

এর ফলে আবারও সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে উত্তর কোরিয়াকে কি আলোচনার টেবিলে নিয়ে যাওয়া যাবে? তবে এর সঙ্গে নতুন আরেকটি প্রশ্ন সংযোজিত হচ্ছে। সেটি হল, যদি ওরা না-ই যায়, তবে বিকল্প কোন পন্থায় তাদের আলোচনার টেবিলে নিতে হবে? নতুন প্রশ্ন উঠে আসার কারণ হচ্ছে এটাই যে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা গত কয়েক দশক ধরে বহুবার হয়েছে। কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে আলোচনার পদ্ধতি ও এজেন্ডা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বিশ্বনেতৃত্বকে।

কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা অতীতে সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কোনো ব্যক্তির আর্থিক লেনদেন হয় না। ২০১০ সালে উত্তর কোরিয়ান টর্পেডোর আঘাতে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সামরিক নৌযান ডুবে গেলে ৪৬ জন সেনাসদস্য মারা যান। সে সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন লি মিয়ং বাক। তখন যে নিষেধাজ্ঞা উত্তর কোরিয়ার উপর আরোপিত হয়েছিল, সেটি 'মে-২৪' নিষেধাজ্ঞা নামে পরিচিত। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার ব্যক্তি বিশেষের দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের বিষয়টি ছিল। তাই নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য হয় সত্তর শতাংশের মতো। যদি চীন ইচ্ছে করে, কেবল তখনই উত্তর কোরিয়ার উপর কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ইরানের উপর কয়েক দশক ধরে নানা নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিনিময় ও ইরান থেকে ভারতের জাতীয় প্রয়োজনের বার শতাংশ জ্বালানির জোগানদান সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী না হওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে।

ফলে কোন পন্থায় আলোচনা করলে উত্তর কোরিয়াকে টেবিলে পাওয়া যাবে, সেটি নিয়ে এখন কৌশল প্রণয়নকারীদের মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে চলে ব্যর্থ আলোচনার পদ্ধতি অনুসরণ না করে এখন এজেন্ডায় পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। উত্তর কোরিয়ার উপর যত নিষেধাজ্ঞেই দেওয়া হোক না কেন, কিম জং উন পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না। উত্তর কোরিয়ার কাছে এখন এটি একমাত্র আত্মরক্ষার অস্ত্র। উত্তর কোরিয়া ভালো করেই হিসাব কষেছে। তাদের ধারণা, এই অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনা করতে নানা বিষয় ভাবতে হবে। বিশেষ করে সামরিক ব্যয়ের চিন্তা করে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হামলা চালাবে না।

তবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনার মূল কারণ নয়। এটি মূল সমস্যার বাই-প্রডাক্ট মাত্র। উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যকার যুদ্ধপরিস্থিতি হল অনুঘটক। দেশ দুটির মধ্যে ১৯৫৩ সালে গৃহীত যুদ্ধবিরতি এখনও বলবৎ। আর্মিটাইজ চুক্তিটি কেবল দুটি দেশের মধ্যকার সামরিক দ্বন্দ্ব বন্ধ রেখেছে, নিরসন করতে পারেনি কিছুই। দুদেশের মধ্যকার যুদ্ধপরিস্থিতির স্থায়ী নিরসনের জন্য দরকার রাজনৈতিক সমাধান।

সেই সমাধান আসবে তখনই যখন দুই কোরিয়ার মধ্যে মৌলিক বিরোধের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে মিটিয়ে ফেলা যাবে। আলোচনা করতে হলে আর্মিটাইজ চুক্তিতে ফিরে যেতে হবে। সেটি ভিত্তি ধরে অন্যান্য রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রগুলো পরীক্ষা করে এগুনো সম্ভব।