গুম খুনের রাজনীতি থেকে দেশকে বেরিয়ে আসতে হবে

খুশি কবির
Published : 30 June 2013, 01:09 PM
Updated : 25 April 2012, 05:48 PM

নিখোঁজ, গুম বা হদিস না পাওয়ার ঘটনাগুলো নিয়ে দেশজুড়ে তোলাপাড় হচ্ছে। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বিরোধী দল হরতালসহ নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। সামনে আরও দেবে হয়তো। শুধু ইলিয়াস আলীর কথাই বা বলব কেন, যে কোন ব্যক্তির হঠাৎ অন্তর্ধানের বিষয়টি সারা দেশের মানুষদের চিন্তিত করছে। দায়িত্বটা তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। যে কোন অনিয়ম হলে প্রশ্ন জাগে: তারা কি ব্যর্থ হচ্ছে, নাকি দায়িত্ব পালনের ইচ্ছাই তাদের নেই?

আর এসব কিছুর মূলেই কিন্তু আছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের বিষয়টি। রাজণীতিতে ভিন্নমত, ভিন্ন পথ সবই তো থাকবে। আমাদের এখানে সবসময় ভিন্নমতের, ভিন্ন পথের লোককে হেয় করার মানসিকতাটাই দেখা যায়। ক্ষমতায় কে আছে সেটা বড় ব্যাপার নয়। যে দলই থাকুক, ঘটনাগুলো একই রকমভাবে ঘটে। ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব হল দক্ষতার সঙ্গে কাজটা করা।

আর বিরোধীদের কাজ হল দায়িত্বশীল রাজনীতি করা। এভাবে সবাই কাজ করলে প্রতিহিংসার রাজনীতির বৃত্ত থেকে দেশ বেরিয়ে আসতে পারবে। গুম বা নিখোঁজ লোকের মিছিলটাও এত বড় হত না।

বিরোধী দল টানা তিন দিন হরতাল পালন করল। আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে প্রথমদিন হরতালের আগের সন্ধ্যায় ঢাকায় বাস পোড়ানোর ঘটনাটা। নিদ্রিত বাসের চালক সেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। তার মৃত্যুর ঘটনাটা নিয়ে কাউকে একটু দুঃখ করতে পর্যন্ত দেখলাম না। না সরকার না বিরোধী দল কেউ কি ওই বাস ড্রাইভারের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

তাহলে এই হিংসা আর গুমের রাজনীতির পরিণতিটা নিয়ে কী আমরা ভাবছি? দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে। সাধারণ মানুষের রোজকার চলাফেরা, কাজকর্মেও তো সমস্যা হচ্ছে। এই ফাঁকে কেউ কেউ তৃতীয় শক্তির কথাও বলে বসেন। এই তৃতীয় শক্তি কোনটি? আমি এমন একটি শক্তিকে বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে দেখেছি। ১৯৭৫ এ, ১৯৮২ তে, ২০০৭-৮য়েও। ওরা একইভাবে ভিন্নমতের, মুক্তমনের লোকদের দমন করে। ২০০৭-এ সেনাবাহিনীর সমর্থনে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে পর্যন্ত বুলডোজার চালিয়েছে। অনিয়ম দমনের নাম করেই কাজটা করেছে। একদম সাধারণ মানুষজন এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যে কত ঘটেছে। আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে প্রচুর। তাহলে ওদের হাতে জনগণ কি নিরাপদ থাকতে পারে? রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে এই শক্তি অবশ্যই বেশি ভালো হতে পারে না।

আমরা সাধারণ মানুষজনের মধ্যে কাজ করেছি। দেখেছি তাদের বোঝালে ভালো বোঝেন। আমরা দেশের নাগরিকরাই যদি আজ বিভক্ত হয়ে না যাই তাহলে গুম খুনের রাজনীতি থেকে দেশ বেরিয়ে আসতে পারবে। আমাদের লিডারদের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তার চেয়ে দেশের স্বার্থটা বড় হতে হবে। আমরা যদি বড় একটা শক্তি হয়ে দুই দলের সঙ্গে বসি, তাহলে তারা আমাদের কথা শুনবে। নব্বইয়ের আন্দোলনের সময় কিন্তু এটা হয়েছে। এখনও এমন কিছু করা যেতে পারে।

খুশি কবির: মানবাধিকার কর্মী ও 'নিজেরা করি' সংগঠনের সমন্বয়কারী।