হরতালে ক্ষতি হচ্ছে মানুষের

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
Published : 23 April 2012, 04:46 PM
Updated : 23 April 2012, 04:46 PM

পরপর দু'দিন হরতালের পর আগামীকাল আবার হরতালের ঘোষণা এলো। এতে বড় দুটো রাজনৈতিক দলের কী সুবিধা হলো, কী অসুবিধা হল, তা তারাই বুঝবেন, তারাই জানবেন। তারা হয়তো খেয়ালও করছেন না যে এতে জনগণের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। কিন্তু ক্ষতি যেটা হচ্ছে সেটা দেশের অর্থনীতির এবং সেটা খুবই গুরুতর। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমরা যেটা আশা করব তা হল, বড় দুই দলের মধ্যে এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা আর ঘটবে না। দেশ একটা চরম পরিস্থিতির দিকে যাবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারি দল কারণ তৈরি করে দিচ্ছে, বিরোধী দল এর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ফলে ক্ষতি হচ্ছে দেশের মানুষের। বড় দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা তো পরের ব্যাপার, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও নেই। রিরোধী দল যে হরতাল দিচ্ছে, তাদের দাবিটা তো খুব সুনির্দিষ্ট। তারা বলছেন, তাদের যে নেতা ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হয়েছেন তাকে ফেরত পেলেই তারা হরতাল প্রত্যাহার করবেন। এভাবেই আমাদের রাজনীতিতে একটা কারণ তৈরি হচ্ছে। আবার তার প্রতিক্রিয়াও তৈরি হচ্ছে। বৃহত্তর জনগণের কথা কোন পক্ষই ভাবছেন না। ভাবলে আমাদের রাজনীতিটাই অন্যরকম হত।

এটা তো সত্যি, যখন একজন লোক হারিয়ে যায়, তখন সরকারের ওপরই দায় পড়ে। সরকার সে বিষয়ে আস্থা তৈরি করতে পারছে না। বিএনপির নিখোঁজ নেতাকে উদ্ধার করা হচ্ছে বা উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে–এটা তো বিরোধী দলকে বোঝাতে হবে। আমাদের রাজনীতিতে এ ধরনের ঘটনাই ঘটে সবসময়।

এভাবেই বড় দুটো দল একটা জায়গায় আটকে আছে। আবার তারাই বারবার ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কিন্তু জনগণের পক্ষের যে রাজনৈতিক শক্তি, যেটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিকশিত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। এটাই আমাদের রাজনীতির প্রধান দুর্বলতা। আমাদের জনগণ এ ধরনের পরিস্থিতি মেনে নিচ্ছে না। তারা খুব বিক্ষুব্ধ। কিন্তু তাদের কোন মুখপাত্র নেই। তাদের সংগঠিত কোন শক্তি নেই। তারা তো বিছিন্নভাবে বলছেন। বাম শক্তিগুলোরই একটা বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর কথা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জনগণ কিন্তু একটা সামাজিক পরিবর্তনের কথা ভেবেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কত মূল্য দিতে হল। কিন্তু এরপরও পুরনো ব্যবস্থাই থাকবে এটা মানুষ চায়নি। জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আমরা একটা নতুন ধরনের সমাজ পাব যেখানে বৈষম্য থাকবে না। অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে। তা হয়নি।

নতুন প্রজন্ম এখন অনেক সচেতন। তারা নানাভাবে তাদের মতামত দিচ্ছে। আমরা দেখলাম, আরব বিশ্বে এ ধরনের জনমত ছিল, সেখানে একটা জনবিস্ফোরণ ঘটেছে। পরবর্তীতে এসব সমাজে কোন মৌলিক পরিবর্তন কিন্তু ঘটেনি। কারণ জনগণের পক্ষের কোন সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি সেখানে দাঁড়ায়নি। আমাদের দেশেও যদি জনগণের পক্ষের সংগঠিত কোন শক্তি দাঁড়াতে না পারে, তাহলে জনমত থাকলেও কোন লাভ হবে না।

ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, কলামিস্ট ও লেখক।