নস্টালজিয়া

মুহম্মদ জাফর ইকবালমুহম্মদ জাফর ইকবাল
Published : 6 Oct 2017, 06:48 AM
Updated : 6 Oct 2017, 06:48 AM

পুরো বাংলাদেশ গত কয়েক সপ্তাহ থেকে এক ধরনের বিষণ্নতায় ভুগছে। খবরের কাগজ খুললেই প্রথম পৃষ্ঠায় রোহিঙ্গাদের কোনো একটি মনখারাপ করা ছবি দেখতে হয়। খবরের কাগজের একটা বড় অংশজুড়ে রোহিঙ্গাদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের কোনো না কোনো খরব থাকে। যারা টেলিভিশন দেখেন তারা স্বচক্ষে রোহিঙ্গাদের কষ্টটুকু আরও তীব্রভাবে দেখতে পান। ইন্টারনেটের সামাজিক নেটওয়ার্কে যেহেতু অনেক কিছু সরাসরি দেখানো সম্ভব হয়, অনুমান করছি, সেখানে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ছবি কিংবা ভিডিও আরও অনেক বেশি নির্মম। এই অমানুষিক নির্যাতনের শিকার মানুষগুলোকে যখন বাংলাদেশের কোনো একটি ক্যাম্পে দেখি তখন একটিমাত্র সান্তনা যে, এখন তাদেরকে আর কেউ মেরে ফেলবে না। কষ্ট হোক যন্ত্রণা হোক মানুষগুলো প্রাণে বেঁচে গেছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও ছোট শিশুদের মুখের হাসিটুকু দেখে মনে হয় পৃথিবীটা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।

আমি প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে এই দেশের অনেক পত্রপত্রিকায় লিখি, কেন লিখি নিজেও জানি না। আমি কোনো বিষয়েরই বিশেষজ্ঞ নই। তাই দেশ, সমাজ কিংবা পৃথিবীর কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার নেই। নিজের দুঃখ-কষ্ট বা আনন্দটুকু পাঠকদের সাথে ভাগাভাগি করে নিই। রোহিঙ্গাদের এই কষ্টটুকু শুরু হওয়ার পর মনে হচ্ছিল এখন থেকে শুধু তাদের নিয়েই লিখতে হবে, অন্য কিছু লেখার মতো মানসিক অবস্থা হয়তো কখনোই আসবে না। কিন্তু আজ সকালে খবরের কাগজে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের খবরটি পড়ে মনে হল, একবার হলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয় নিয়ে একটুখানি লিখি।

২০১৫ সালে যখন প্রথমবার গ্র্যাভিটি ওয়েভ বা মহাকর্ষ-তরঙ্গ বিজ্ঞানীরা তাদের ল্যাবরেটরিতে দেখতে পেয়েছিলেন সেটি বিজ্ঞানের জগতে অনেক বড় একটি খবর ছিল। সাধারণ মানুষেরা হয়তো খবরটি পড়েছেন, কিন্তু খবরটার গুরুত্বটুকু নিশ্চয়ই ধরতে পারেননি। এই মহাবিশ্বে কোটি কোটি গ্যালাক্সির একটি গ্যালাক্সি আমাদের ছায়াপথ। সেই ছায়াপথের কোটি কোটি নক্ষত্রের একটি নক্ষত্র সূর্য। সেই সূর্যের আটটি গ্রহের একটি গ্রহ পৃথিবীর এবং সেই পৃথিবীর অসংখ্য প্রাণির একটি প্রাণি হচ্ছে মানুষ! এই অতিক্ষুদ্র মানুষ এই পৃথিবী নামক নীল গ্রহটিতে থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির গোপন রহস্য বের করতে পেরেছেন সেটি আমার কাছে অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার মনে হয়।

সেটি করার জন্যে বিজ্ঞানীরা গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সির দিকে তাকিয়েছেন, সেখান থেকে যে আলো এসেছে সেটি দেখেছেন। টেলিস্কোপে শুধু আলো দেখে সন্তুষ্ট থাকেননি, রেডিও তরঙ্গ দেখেছেন, এক্স রে দেখেছেন, গামা রে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, নিউট্রিনো নামে রহস্যময় কণা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন। একটি পরমাণুর ভেতরে কী আছে বা নিউক্লিয়াসের ভিতরে কী আছে সেটি দেখার জন্যে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বড় বড় এক্সেলেটর তৈরি করেছেন এবং সেগুলোর ব্যবহার করে তার ভেতরের রহস্য ভেদ করেছেন।

কিন্তু এই মহাবিশ্বের গ্যালাক্সি কীভাবে তৈরি হয় কিংবা নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু কীভাবে হয় কিংবা ব্ল্যাকহোল কীভাবে স্থান-কাল পাল্টে দেয় সেগুলো বোঝার জন্যে তারা ল্যাবরেটরিতে সেগুলো নিয়ে আসতে পারেন না। সেটি করার জন্যে তাদেরকে মহাকাশের দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। পর্যবেক্ষণ করেন আলো কিংবা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ, কখনও কখনও নিউট্রিনো।

বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে নূতন একটি পদ্ধতি বের করেছেন, প্রায় অর্ধশতাব্দী চেষ্টা করে তারা গ্র্যাভিটি ওয়েভ বা মহাকর্ষ তরঙ্গ নামে সম্পূর্ণ নূতন এই তরঙ্গ দেখতে সক্ষম হয়েছেন যেটি পদার্থ বিজ্ঞানের জগতের জন্যে একেবারে নূতন একটি দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২০১৫ সালের প্রথমবার যখন তারা মহাকর্ষ তরঙ্গ দেখেছেন সেটি ছিল দুটো ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ। দুটো ব্ল্যাক হোল কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দুরে একটি আরেকটিকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাদের ঘুরপাকের কারণে মহাকর্ষ তরঙ্গ তৈরি হয়েছে এবং সেই তরঙ্গ তাদের শক্তি সরিয়ে নিচ্ছিল বলে একে অন্যের কাছাকাছি চলে এসে এক সময় দুটো মিলিত হয়ে নূতন একটা বড় ব্ল্যাক হোল তৈরি করেছে।

১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তার জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন এবং যেটি বিশ্লেষণ করে প্রথম মহাকর্ষ তরঙ্গের ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল। তখন তিনি নিজেও হয়তো বিশ্বাস করেননি যে, ঠিক একশ বছর পর পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এটি নিজের চোখে দেখতে পাবেন। বিষয়টি কত কঠিন ছিল সেটি অনুমান করাও কঠিন। কারণ এটি দেখতে হলে বিশাল পৃথিবীর আশার যদি একটি পরমাণুর আকারে সংকুচিত হয় সেটি দেখার ক্ষমতা থাকবে হবে। একটি পরমাণ কত ছোট সেটি যারা না জানে তাদেরকে অনুভব করানো প্রায় দুঃসাধ্য!

বিজ্ঞানীরা সেই অসাধ্য সাধন করেছেন এবং এখন পর্যন্ত চারবার তারা সুনিশ্চিতভাবে মহাকর্ষ তরঙ্গ দখেতে পেয়েছেন এবং চারবারই কয়েক বিলিওন আলোকবর্ষ দূরে দুটি ব্ল্যাক হোল একটি আরেকটির সাথে পাক খেতে খেতে এক সময় একক্রিত হয়ে একটি বড় ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ২০১৬ সালেই তাদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে, কিন্তু নিশ্চয়ই নোবেল পুরস্কার দেওয়ার আগে একটুখানি যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়। তাই ২০১৬ সালে না দিয়ে এই বছর দেওয়া হল।

নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন, একজন এম আইটির প্রফেসর অন্য দুইজন ক্যালটেকের। নোবেল পুরস্কারের ঘোষণাটি দেখে আমি ভিন্ন এক ধরনের আনন্দ পেয়েছি। কারণ ক্যালটেকে আমি পোস্ট ডক হিসেবে কাজ করেছি এবং যে দুজন প্রফেসর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাদের আমি চিনি! সত্যি কথা বলতে কী, এই দুইজন অধ্যাপকের একজন, কিপথর্ণের অফিসটি ছিল আমার অফিসের খুব কাছে। প্রায় প্রতিদিন ওনার সাথে আমার দেখা হত। তাঁর অফিসটি অন্য যে কোনো প্রফেসরের অফিস থেকে ভিন্ন। তিনি বাজি ধরতে খুব পছন্দ করতেন এবং পৃথিবীর অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে তিনি নানা বিষয়ে বাজি ধরতেন। সেই বাজির বিষয়বস্তু ছিল খুবই চমকপ্রদ। স্টিফান হকিংসের সাথে তিনি বাজি ধরেছিলেন যে, সিগনাস এক্স ওয়োন নামের একটি নক্ষত্র আসলে একটি ব্ল্যাক হোল।

দুজনের স্বাক্ষরসহ ১৯৭৫ সালের বাজির কাগজটি ছোট একটা ফ্রেমে কিপথর্ণের অফিসের সামনে টানানো ছিল। সেখানে লেখাছিল বাজীতে যে হেরে যাবে তাকে অন্যজনকে এক বছরের জন্যে পেন্টহাউস নামে ম্যাগাজিনটি কিনে দিতে হবে। (যারা জানে না তাদেরকে বলে দেয়া যায় প্যান্টহাউস, প্লেবয় এগুলো হচ্ছে নগ্ন নারীদের ছবি পরিপূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্কদের ম্যাগাজিন) ১৯৯০ সালে স্টিভান হকিংস এই বাজীতে হেরে গিয়েছিলেন তিনি সত্যি সত্যি কিপথর্নকে এক বছরের জন্যে পেন্টহ্সা কিনে দিয়েছিলেন কী না কিংবা কিনে দিয়ে থাকলে তার স্ত্রী ব্যাপারটা কীভাবে নিয়েছিলেন সেটা আমি জানি না।

কিপথর্ন তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী, মহাকর্ষ তরঙ্গ দেখা এবং মাপার বিষয়টি যতটুকু না তাত্ত্বিক সমস্যা তার থেকে অনেক বেশি এক্সপেয়িমেন্টাল সমস্যা। কাজেই নোবেল পুরস্কার যে তিনজনকে দেওয়া হয়েছে তার ভেতর দুজন হচ্ছেন এক্সপেরিমেন্টাল পদার্থ বিজ্ঞানী। এর ভেতর একজন এমআইটির প্রফেসর, অন্যজন ক্যালটেকের।

ক্যালটেকের প্রফেসর ব্যারি ব্যারিসের নামটি দেখে আমার এক ধরনের দুঃখবোধ হয়েছে। কারণ এখানে ব্যারি ব্যারিসের নামের পাশে আরও একটি নাম থাকার কথা ছিল, সেই নামটি হচ্ছে রোনান্ড ড্রেভার। মহাকর্ষ তরঙ্গের নোবেল পুরস্কারটি যদি এই বছর ঘোষণা না করে গত বছর ঘোষণা করা হত তাহলেই হয়তো আমরা তাঁর নামটিও দেখতে পেতাম। কারণ এই বছর পুরস্কার ঘোষণা করার মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি মারা গেছেন। নোবেল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী কেউ মারা গেলে তাকে আর পুরস্কারটি দেওয়া যায় না। নিয়মটি ভালো না, পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে একজন মানুষের নাম থাকতে পারল না। কারণ ঘটনাক্রমে তিনি মারা গেছেন এটি মেনে নেওয়া যায় না। (আমাদের বাংলা একাডেমির পুরস্কারেও মনে হয় এই ঝামেলাটি আছে, অনেক হেজিপেজি চেষ্টাচরিত্র করে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছে কিন্তু আহমদ ছফাকে কখনো বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়নি এটা মেনে নেয়া কঠিন।)

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে তাদের নিয়মের ভেতর পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার নিয়মটিও থাকা উচিৎ ছিল। তাহলে এখন মিয়ানমারের ফটোজেনিক নেত্রী অং সান সুচির অন্যান্য পুরস্কার এবং সম্মাননা কেড়ে নেওয়ার সাথে সাথে নোবেল পুরস্কারটিও কেড়ে নেওয়া যেত।

আমি যখন ক্যালটেকে ছিলাম তখন আমি সদ্য পিএইচডি শেষ করা তরুণ একজন পোস্টডক। ক্যালটেকে পৃথিবীর সেরা সেরা বিজ্ঞানীরা রয়েছেন, কাফেটেরিয়াতে লাঞ্চ করার সময় পাশের টেবিলে ফাইনম্যানের মতো বড় বিজ্ঞানীদের দেখি এবং মোটামুটি হতবুদ্ধি হয়ে যাই। প্রায় নিয়মিতভাবে বড় বড় বিজ্ঞানীরা সেমিনার দেন আমরা যারা খুব আগ্রহ নিয়ে সেগুলো শুনি। আমি পৃথিবীর অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীর বক্তৃতা শুনেছি। কিন্তু আমার স্মৃতিতে যে বক্তৃতাটি সবচেয়ে দাগ কেটে আছে সেটি হচ্ছে মৃত্যুর কারণে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হওয়া রোনাল্ড ড্রেভারের বক্তৃতা। আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা মহাকর্ষ তরঙ্গ দেখার জন্যে বিশাল দঙ্গযঙ্গ শুরু হয়েছে এবং তার নেতৃত্বে রয়েছেন এই রোনাল্ড ড্রেভার। উচ্চতা খুব বেশি নয়, ঢিলেঢালা শরীরের গঠন, মুখে সবসময় এক ধরনের হাসি, দেখলেই মনে হত তিনি বুঝি এই মাত্র খুব মজার কিছু শুনেছেন।

যেদিন তাঁর বক্তৃতা আমরা সবাই এই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্টটি কীভাবে দাঁড় করানো হচ্ছে সেটি শুনতে গেছি। আজকাল সব বক্তৃতাই দেওয়া হয় ভিডিও প্রজেক্ট দিয়ে, তখন দেওয়া হত ওভারহেড প্রজেক্টর দিয়ে। স্বচ্ছ ট্রান্সপারেন্সির উপর কলম দিয়ে লিখতে হত এবং সেগুলো ওভারহেড প্রজেক্টরে রাখা হলে পিছনের স্ক্রিনে দেখা যেত।

প্রফেসর প্রেভার আমাদেরকে তাঁর এক্সপেরিমেন্টের হেড প্রজেক্টর রাখছেন। কথা বলতে বলতে একসময় উত্তেজিত হয়ে উঠলেন এবং কিছুক্ষণের মাঝে তার ট্রান্সপারেন্সিগুলো ওলট পালট হয়ে গেল এবং দেখলাম সারা টেবিলে তার ট্রান্সপারেন্সিগুলো ছড়ানো ছিটানো এবং তিনি যেটা দেখাতে চাইছেন সেটা খুঁজে পাচ্ছেন না! প্রায় পাগলের মতো বিশাল টেবিলের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে যাচ্ছেন, তাঁর মুখে বিব্রত হাসি, অপ্রস্তুত ভঙ্গি।

গল্প-উপন্যাসে বিজ্ঞানীদের যে বর্ণনা থাকে হুবহু সেই দৃশ্য! এক সময় ছাল ছেড়ে দিয়ে তিনি এমনিতেই তাঁর বক্তৃতা দিলেন! যখন বলার অনেক কিছু থাকে তখন স্লাইভ কিংবা ট্রান্সপারেন্সি খুঁজে না পেলেও চমৎকার বক্তৃতা দেওয়া যায়।

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণাটি দেখে আমি একটুখানি নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও শুধু ছাত্র পড়ানো হয়। পড়ানোর পাশাপাশি যখন সত্যিকার গবেষণাও করা শুরু হবে, শুধুমাত্র তখনই সত্যিকার অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারবে।

সারা পৃথিবী জ্ঞান সৃষ্টি করবে, আমরা শুধু সেই জ্ঞান ব্যবহার করব, নিজেরা কিছু সৃষ্টি করব না, সেটা তো হতে পারে না।