লাব্বায়েক

হাসান মাহমুদহাসান মাহমুদ
Published : 2 Sept 2017, 07:52 AM
Updated : 2 Sept 2017, 07:52 AM

দুই ছেলে হজ্বে যাবে, তাই নিয়ে মাহবুব সওদাগরের বাড়ি খুব ব্যস্ত। নুতন বিয়ে ওদের। এখনই সময় হজ্ব করার, পরে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেলে কঠিন হয়ে পড়বে। লোকে মনে করে, হজ্বটা বুড়ো বয়সের ব্যাপার। বড্ড ভুল ধারণা। কারণ হজ্বে খুবই শারীরিক পরিশ্রম হয়। বড় ছেলে ছোটাছুটি করে যোগাড়যন্ত্র করছে, কিন্তু ছোটকে নিয়ে মহাসমস্যা। ছোটবেলা থেকেই তার রহস্যের শেষ নেই, তার রঙ্গরসের পাল্লায় পড়ে চিরকাল সবাই অস্থির। বাবা প্রস্তুতির কথা জিজ্ঞেস করলেই সে বলে: "হচ্ছে, বাবা, হচ্ছে, চিন্তা কোর না। এ বছর যাদের হজ্ব কবুল হবে তাদের মধ্যে আমরাও থাকব ইনশাআল্লাহ্।"

বাবা আশ্বস্ত হন, কিন্তু ছোটবৌ হয় না। তার বাবাও হজ্ব করেছেন। সে জানে হজ্বে যেতে হলে কী হুলুস্থুল আয়োজন করতে হয়, কত জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। সে দিব্যি দেখতে পাচ্ছে স্বামী তার মহাআরামে গা এলিয়ে আছে– যোগাড়যন্ত্রের কোনো খবর নেই। জিজ্ঞেস করলেই হেসে বলে: "আমারটা আমি করছি। তুমি তোমারটা গুছিয়ে নাও তো। শেষে তোমার জন্য দেরি না হয়।"

বৌ ত্রস্তে এটা-ওটা গোছায়, কিন্তু মনে গেঁথেই থাকে সন্দেহটা। তার ওপর সেদিন স্বামী মাহবুব সওদাগরের কাছ থেকে হজ্বের নাম করে আরও এক লাখ টাকা চেয়ে নিল। কেন নিল?

তারপর একদিন বড় চলে গেল হজ্বের ক্যাম্পে, বৌয়ের হাত ধরে। বাবা ছোটকে জিজ্ঞেস করলেন: "তোর হজ্ব-ক্যাম্প, ফ্লাইট, এসবের কিছুই তো বললি না?"

ছোট হেসে বলে: "ক্যাম্পে কেন যাব? বাড়ি থেকে সোজা হজ্বে যাব। ব্যবস্থা সবই হচ্ছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাক তো, বাবা।"

বাবা নিশ্চিন্ত হলেন, ছেলে তাঁর জীবনে কখনও মিথ্যে বলেনি।

যাবার দিন এল। রওনা হবার সময় বাবা বুকে জড়িয়ে দোয়া করলেন। মা অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলে-বৌয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কী বললেন বোঝা গেল না। গাড়ির ড্রাইভার ডিগ্গির মধ্যে স্যুটকেস পুরে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে ছোট বলল: "মা, দশ দিন পর ফিরব। দোয়া কর আর শুটকি রান্না করে রেখ।"

বাবা অবাক হলেন: "দশ দিন পর ফিরবি?"

"ফিরব বাবা, কথা দিচ্ছি হজ্ব করেই ফিরব। ঠাট্টা নয়, বাবা– সত্যি বলছি।"

বৌয়ের কানে গেল কথাটা। সে জানে দশ দিনে হজ্ব করে ফেরা যায় না। কিন্তু সে এ-ও জানে স্বামী যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে কথাটা বলেছে নিশ্চিন্ত হয়েই বলেছে। যা সে বলেছে তা করবে। কিন্তু কী করে করবে? পেছনের সিটে বসল দুজন। গাড়ি চলা শুরু করলে সে স্বামীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে: "আমরা কোথায় যাচ্ছি গো? হ্যাঁ?"

"কোথায় আবার? হজ্বে যাচ্ছি।"

"এভাবে কেউ হজ্বে যায়? আসলে কোথায় যাচ্ছি সত্যি করে বল না।"

ছোট হেসে বলে: "হজ্বেই যাচ্ছি। সবুর কর, একটু পরেই দেখতে পাবে।"

বৌ খুব সবুর করল। তারপর আর পারল না। একটু পরেই বলল: "বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা বেশি নিলে কেন?"

ছোট আবারও হেসে বলল: "সবুর কর, একটু পরে সেটাও দেখতে পাবে।"

বৌ আবারও খুব সবুর করল। গাড়ি এসে দাঁড়াল বাস স্টেশনে। বৌ বলল: "এ তো বাস স্টেশন!"

"হ্যাঁ, বাস স্টেশনই তো।"

"বাসে করে হজ্বে যাচ্ছি?"

"হ্যাঁ, পথে কিছু কষ্ট করতে হবে, পারবে তো?"

"আমরা হজ্বে যাচ্ছি না। বাসে করে কেউ হজ্বে যায় না। সবাইকে এভাবে ঠকালে?"

"কাউকে ঠকাইনি। এ বছর যাদের হজ্ব কবুল হবে তাদের মধ্যে আমারাও থাকব ইনশাআল্লাহ্। ওখানে গিয়ে বলবে, 'লাব্বায়েক্'।"

"মানে কী?"

"'লাব্বায়েক' মানে হল 'আমি হাজির'। অর্থাৎ, 'হে আল্লাহ, তুমি ডেকেছ, এই যে আমি হাজির হয়েছি'।"

ড্রাইভার ডিগ্গি থেকে বাসে তুলে দিল স্যুটকেসগুলো। মৃদু হেসে বলল: "আপনেরে হাজার সালাম, সার। আপনেরে হাজার হাজার সালাম, সার। অ্যামতেই ধীরে ধীরে মুসলমানের চৌক্ষু খুইলা দিব আল্লায়।"

ছোট গম্ভীর স্বরে বলল: "সব রওনা হয়ে গেছে ঠিকমতো? পরের এক লাখ টাকারটাও?"

"হ, সার। শ্যাষের চালান নিজের হাতে রওনা করাইয়া দিছি পরশু।"

এসব শুনে রমণীয় কৌতূহলের চাপে বৌয়ের অজ্ঞান হবার অবস্থা। কিন্তু স্বামীকে মনে হচ্ছে অচেনা। ওই বুকে কী এক অস্থির ঝড় চলছে তা তার চোখ দেখলে বোঝা যায়। তার সদাদুরন্ত কৌতুকময় চোখ দুটো এখন যেন ফ্রেমে-বাঁধা ঝড়ের ছবি। বাস চলা শুরু করলে বৌ বলল: "কোথায় যাচ্ছি আমরা?"

"দিনাজপুর।"

"দি-না-জ-পু-র?"– আঁৎকে উঠল বৌ– "দিনাজপুর কেন? ওখানে তো আমদের কেউ নেই!!!"

স্বামী শক্ত করে চেপে ধরল বৌয়ের হাত। গভীর নিঃশ্বাসে শুধু বলল, "আমার হাত ধরে থাক। আমি একা পারব না।"

এবার বৌয়ের হাতও আঁকড়ে ধরল স্বামীর হাত। বুঝল কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে যা আগে কখনও ঘটেনি। বাস চলছে সাভার পার হয়ে। স্বামী হাতের ব্যাগ খুলে বের করল কিছু খবরের কাগজ। একটা একটা করে খুলছে আর সেই সঙ্গে শক্ত দৃঢ় হয়ে আসছে তার চিবুক– ঠোঁটে শক্ত হয়ে চেপে বসছে ঠোঁট। একেটা কাগজের কী যেন খবর পড়ছে, ছবি দেখছে আর ঘন হয়ে আসছে তার নিঃশ্বাস। রাস্তার দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত মাঠের সমস্ত ফসল ডুবিয়ে ছলছল করছে বন্যার পানি। ডুবে গেছে মানুষের মুখের আহার, জীবন আর স্বপ্ন।

দুপুরে দিনাজপুরে বাস থেকে নেমে ঘটঘটে বেবিট্যাক্সিতে গ্রামের পথ। বিকেলে দুরগ্রামের কাছাকাছি আসতেই কানে এল জনতার হৈহৈ। কাছে এসে এসে বৌ দেখল, চারধারে পানির মধ্যে বিশাল এক মাঠের ওপরে অনেকগুলো তাঁবু বা অস্থায়ী বসবাসের আয়োজন আর কয়েক হাজার মানুষের ফ্যাকাশে মলিন উদ্বিগ্ন মুখ। ভয়ংকর বন্যা চলছে সারাদেশে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে। কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে ভেসে একাকার– মাথার ওপরে ছাদ নেই– ক্ষুধার দাউদাউ আগুনে পুড়ছে মানুষ।

শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু চোখে লুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে হাড্ডিসার শিশুকন্যা, ছোট্ট বালক। চারদিকে অনাহার=জর্জরিত নিরুপায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দিশাহীন যুবক। অন্য এক ভয়ংকর আতঙ্কে বিবর্ণ মুখের ক্ষুধার্ত যুবতী। গত বন্যায় শুধু দুটো নুন-ভাতের জন্য নোংরা ফড়িয়ার বিছানার দুঃসহ স্মৃতি আবার তার সামনে কালনাগিনীর ছোবলের মতো দুলছে। খবরের কাগজে সেসব পড়ছে আর ছবি দেখছে দেশের মানুষ, কিন্তু চিনতে পারছে না। ওরা এদেশের নয়। ওরা পরিত্যক্ত, ওদের কেউ নেই।

পলকের জন্য টলে উঠল বৌয়ের মাথার ভেতর। কিন্তু এখন জনতার ক্ষুধিত আর্তনাদ বদলে হয়েছে উৎসবের চীৎকার। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজভর্তি তিনটে ট্রাক। ট্রাকের ওপর থেকে তরুণ-কিশোরের দল মহাউৎসাহে ক্ষুধার্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করছে চাল-ডাল-আলু-লবণ-তেল।

ওড়নাটা কোমরে আচ্ছা করে পেঁচিয়ে ট্রাকের ওপরে দাঁড়িয়ে তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মাতবরের মেয়ে ফারহানা, গ্রামের বুড়ো-বাচ্চা সবার আপুমণি। তার মায়াময় চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। বৌ মুগ্ধ চোখে দেখল মানুষের আনন্দ। তারপর দুষ্টুমি করে বলল: "ওহ! হজ্বের টাকায় দান-ধ্যান হচ্ছে তাহলে?"

"দান?" চকচক করে উঠল স্বামীর দুচোখ– "কীসের দান? কাকে দান? আশরাফুল মাখলুকাত ওরা, আপাতত একটু কষ্টে পড়েছে। আমি তো শুধু উপহার দিচ্ছি, মানুষের প্রতি মানুষের উপহার।"

মুগ্ধ বৌয়ের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল: "তুমি একটা ফেরেশতা!"

"না, আমি ফেরেশতার চেয়েও বড়, আমি বনি আদম। কোরান পড়ে দেখ– সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৬২।"

তারপর সে তার সেই পুরনো পরিচিত দুষ্টুমিভরা চোখে বলল: "আসলে কী জান? ব্যবসায়ীর ছেলে তো আমি– উপহারের নামে আমি আসলে ব্যবসা করছি। ধারের ব্যবসা। শ-শ-শ-শ… কাউকে বল না যেন!"

"ধারের ব্যবসা? এই দুর্ভিক্ষের দেশে?"

বিষ্ময়ে বৌয়ের কথা আটকে গেল গলায়। বাকচাতুরি ও দুষ্টুমিতে স্বামী তার অনন্য, কিন্তু একের পর এক এত বিস্ময়ের ধাক্কা সে আর সামলাতে পারছে না।

"কীসের ধার? কাকে ধার?"

"বুঝলে না? আল্লাহকে ধার দিচ্ছি, প্রচুর লাভ হবে, বৌ!"

"আল্লাহকে ধার দিচ্ছ? তওবা তওবা!"

"তওবা মানে? আল্লাহ নিজেই তো মানুষকে ডেকে ডেকে ধার চাচ্ছেন।"

"আল্লাহ মানুষকে ডেকে ডেকে ধার চাচ্ছেন? তওবা তওবা!"

"কীসের তওবা? খুলে দেখ কোরান শরীফ– "এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম কর্জ, আর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ বহুগুণ বেশি করে দেবেন। সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৫।"

"কী আশ্চর্য! এই বন্যা-দুর্ভিক্ষের সময়ে কেউ এ আয়াতের কথা দেশের সবাইকে বলে না কেন?"

"বলা দরকার, রেডিও-টিভি-খবরের কাগজ সব জায়গায় বলা দরকার। ঢাকায় ফিরে পড়ে দেখ সুরা মুয্যাম্মিল ২০, আত্তাগাবুন ১৭ আর আল হাদীদ ১১। 'আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও… যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দেবেন। …. কে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে উত্তম ধার দেবে, এরপর তিনি তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরষ্কার'। এই দশ ট্রাকের ধার দিচ্ছি, রোজ হাশরে বিশ ট্রাকেরও বেশি সওয়াব পাব। তার সবটাই তোমাকে দিয়ে দেব যাও।"

হেসে ফেলল বৌ, মনে মনে স্বামীগর্বে আবার গরবিনী হল সে। স্বামী চলে গেল ট্রাকের কাছে। ছুটে এলেন মাতবর আর ইমাম। অনেক কথা হল তাদের মধ্যে। বৌ মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগল মানুষের আনন্দ। ক্ষুধার্তের মুখে অন্ন তুলে দেবার মতো আনন্দ আছে? এর চেয়ে বড় ইবাদত কোনটি? দিগন্তে তখন সূর্য ডুবুডুবু, মন্দমন্থরে সন্ধ্যা নামছে। ঝোপের ডালে উড়োউড়ি করছে ফড়িং, মাটিতে ঘোরাঘুরি করছে নামহীন দুটো পোকা আর পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে একদল পিঁপড়ে। কী যেন কী নিয়ে ওরা খুব ব্যস্ত। পলকের জন্য বৌয়ের মনে হল, ওদের কেউ কি কখনও না খেয়ে তিলেতিলে মরেছে?

চমক ভাঙ্গল যখন স্বামী এসে বলল: "জান, আমার দেখাদেখি অন্যেরাও কিছু পাঠাচ্ছে।"

"আমার কিছু গয়না আছে। তা থেকে কিছু না হয়…।"

"গুড! আমি চাই আমার বৌ বাচ্চাদের কোলে বসিয়ে হাত দিয়ে মুখে তুলে খাওয়াবে, আর আমি ছবি তুলব।"

"তা খাওয়াব, কিন্তু ছবি তুলবে না।"

"আশ্চর্য! ছবি তুলবে না, কেমনধারা মেয়েমানুষ তুমি?"

"এসব ছবি তারাই তোলে যারা পত্রিকায় ছাপায় প্রচারের জন্য।".

"তথাস্তু, ছবি ক্যানসেল। প্রচারের জঞ্জাল আমাদের দরকার নেই। শোন। মন দিয়ে শোন।"

বৌ মন দিয়ে শুনল, অশরীরী এক দৃঢ়কণ্ঠে স্বামী তার ফিসফিস করে উঠল: "আমাদের বাড়িতে এক কণা দানা থাকা পর্যন্ত মানুষের বাচ্চাকে না খেয়ে মরতে দেব না আমি।"

গভীর মমতায় বৌ বলল: "এত অস্থির হইও না, নিজেকে এত কষ্ট দিও না। বন্যা চিরদিন থাকবে না। মানুষ আবার উঠে দাঁড়াবে, ফসল ফলাবে, বৌ-বাচ্চা নিয়ে ভালোই থাকবে। তখন আমরা আসল হজ্ব করতে যাব।"

"নিশ্চয়ই। হজ্বের তো বিকল্প নেই, সামনে বছর হজ্বএর বুকিং আমি দিয়েই এসেছি।"

স্বামী দৃঢ়পদে চলে গেল ট্রাকের কাছে। সামনে ধু ধু বন্ধ্যা জমি। ওপরে অবারিত আকাশ। বৌ কল্পনায় দেখল, এয়ারপোর্টে সাদা কাপড়ে মাথা-কামানো হাজার হাজার আনন্দিত হজ্বযাত্রী হুড়োহুড়ি করে প্লেনে উঠছেন আর বুকভরা তৃপ্তিতে বলছেন, 'শুকুর আলহামদুলিল্লাহ!' ওদিকে, দূরে দাঁড়িয়ে ছোট্ট দুটো ক্ষুধার্ত ভাই-বোন হাত ধরাধরি করে করুণ চোখে তা দেখছে।ভাইটা আস্তে করে বলল, 'বড় হইয়া তরে হজে লইয়া যামু'।

দ্বিধাগ্রস্ত ছোট্ট বোনটা কী যেন ভাবল। তারপর ফিসফিস করে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল "ওইহানে ভাত আছে?"

আবারও পলকের জন্য বৌয়ের মাথাটা টলে উঠল।

হরিৎ-সোনালী কোলাজের আঁচলপ্রান্তে তখন ধীরে নামছে মায়াময় সন্ধ্যা। চমক ভাঙল যখন পেছন থেকে স্বামী এসে তার পাশে দাঁড়াল। বৌ চোখ তুলে দেখল স্বামীর দুচোখে জ্বলছে হাজার জোনাকি। সেই চোখ বৌয়ের দুচোখে গেঁথে স্বামী বলল: "জান, নবীজি বলেছেন যার প্রতিবেশি না খেয়ে থাকে সে মুসলমান নয়। যে মুসলমানই নয় তার আবার হজ্ব কী? চল, আমরা আগে মুসলমান হই।"

বৌর হাত ছেড়ে সে সোজা হয়ে থমকে দাঁড়াল। পুরো নিঃশ্বাস বুকের ভেতরে টেনে একটু আটকে নিল যেন। তারপর দুহাত সোজা ওপরে তুলে আকাশের দিকে মুখ তুলে সর্বশক্তিতে চীৎকার করে উঠল: "লাব্বায়েক!"

সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ভেতর থেকে কাঁপিয়ে দিল বৌয়ের শরীর। দুচোখে অঝর অশ্রুর সঙ্গে অস্ফুট কণ্ঠে তারও মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল: "লাব্বায়েক! লাব্বায়েক!"

সুদূর পশ্চিমে দিগন্তবিস্তৃত মরুকেন্দ্রে তখন জলদমন্দ্রে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে লক্ষ কণ্ঠের আকুতি: "লাব্বায়েক!" 'লাব্বায়েক!"