আমাদের টিভি অনুষ্ঠান: যে ভাবনার শেষ নেই

খ ম হারূন
Published : 28 August 2017, 09:22 PM
Updated : 28 August 2017, 09:22 PM

১৫ আগস্ট ২০১৭। রাত ১২:০১ থেকে বিভিন্ন বাংলা টিভি চ্যানেলে ঘোরাঘুরি করতে থাকি। তখন বিটিভিতে চলছিল একটি আলোচনা অনুষ্ঠান, অজয় দাসগুপ্তর সঞ্চালনায়। দেশ টিভি, জিটিভি, একাত্তর টিভি, বাংলা ভিশন, নিউজ টোয়েন্টিফোর, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, চ্যানেল আই, এটিএনবাংলা, একুশে টিভি, এনটিভি ও আরটিভিতে দেখলাম আলোচনা অনুষ্ঠান। এছাড়া খবর চলছিল ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ডিবিসি, এটিএন নিউজ, মাছরাঙা টিভি ও সময় টিভিতে। অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে– বিজয় টিভিতে প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ও বাংলা বাণিজ্যিক ছবি, দীপ্ত টিভিতে কৃষি অনুষ্ঠান, মোহনায় বাণিজ্যিক ছবি, এসএটিভিতে লেট এডিশন নামে আলোচনা অনুষ্ঠান ও ডেইলি সোপ, মাই টিভিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বৈশাখী টিভিতে বাণিজ্যিক ছবি, যমুনা টিভিতে বিজ্ঞাপন, এশিয়ান টিভিতে ফকির আলমগীরের গান, চ্যানেল নাইনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বাংলা টিভিতে ছায়াছবি, গান বাংলায় পপ গানের অনুষ্ঠান চলছিল।

সে সময় একটি মনছোঁয়া অনুষ্ঠান দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। যা অবশ্য পরবর্তীতে পেয়েছিলাম মাত্র দুতিনটি চ্যানেলে। আমরা (চ্যানেল পরিচালকেরা) হয়তো অনেকেই ভাবছি পনেরই আগস্ট একটি রাজনৈতিক ভাব নির্ধারণ করা শোকের দিন, কিছু আনুষ্ঠানিকতা করলেই হয়। আসলেই কি তাই?

ফিরে যেতে চাই ২০০৬-২০০৭এর সময়ে। আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় নেই। অথচ ১৫ আগস্ট রাত একটার পর টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছিল হৃদয়স্পর্শী সব অনুষ্ঠান। আমি তখন একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রধান। সেখানে ৪০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান প্রচারের খেসারত আমাকে দিতে হয়েছিল। টিভি চ্যানেলটি আমি মুক্তিযাদ্ধাদের প্লার্টফর্ম করছি এই অপরাধে সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছিল। আমার পদে এসেছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। জানি না সেইসব কর্মকর্তারা এখন কোথায় আছেন।

আমি বিশ্বাস করি, মিডিয়া সবসময় নিরপেক্ষ থাকবে। একই সঙ্গে বিশ্বাস করি, মিডিয়া সব সময় দেশ, স্বাধীনতা ও বিজয়ের কথা বলবে– মুক্তিযাদ্ধাদের তুলে ধরবে– আমাদের শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্যের আলোচনা করবে। আর এসব কথা বলার জন্য থাকতে হবে সৃজনশীল মন, প্রচুর পড়াশুনা আর কাজ করার যোগ্যতা। সবার সে যোগ্যতা থাকে না।

আমরা এখন সব কিছুতে বিনোদন খুঁজি। বাস্তবে সব অনুষ্ঠানই বিনোদনমূলক হতে পারে, তবে তাতে থাকা দরকার নতুন ভাবনা, নতুন বিষয় ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। কারও টকশো ভালো লাগতে পারে, কারও নাটক। কারও-বা গানের অথবা প্রামাণ্য অনুষ্ঠান। এখনকার টিভি চ্যানেলগুলোতে কোনো পরিকল্পনা বিভাগ নেই, অথবা প্রতি প্রান্তিকে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের পরকল্পনা প্রযোজকরা করেন বলেও জানা নেই। দীর্ঘদিন ধরে একই অনুষ্ঠান চলছে গৎবাঁধা নিয়মে। এভাবেই যদি চলতে থাকে তবে আমরা (দর্শকেরা) কেন আকৃষ্ট হব বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতি?

সেদিন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল মুহিত অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, "আপনারা বলেন, পৃথিবীর আর কোন দেশে এতগুলি টিভি চ্যানেল আছে? বলেন আমাকে। অল আর রাবিশ।"

মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কথার কিছুটা প্রতিবাদ সেখানকার উপস্থিত সাংবাদিকরা করেছিলেন বলে শুনেছি। তিনি দীর্ঘসময় বিদেশে ছিলেন, তারপরও তিনি একথা কীভাবে বললেন বুঝতে পারিনি। বাংলাদেশে এখন ৪০টি চ্যানেল যে প্রফেশনালি চলছে না তার দায় কিন্তু চ্যানেল মালিকদের, প্রফেশনালদের নয়। কিছুটা দায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থারও বটে।

আশেপাশের দু-চারটি দেশের দিকে তাকালে বুঝতে পারব আমাদের দেশে এখনও চ্যানেলের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যেমন, ভারতে আছে প্রায় ১১০০ টিভি চ্যানেল, চীনে ৪০০০। বিপুল জনসংখ্যার এ দুটি দেশের কথা বাদ দিয়ে অন্য এশীয় দেশগুলোর হিসাব দেখি। নেপালর টিভি চ্যানেলের সংখ্যা ৪১ট, শ্রীলংকার ৪৫টি, পাকিস্তানের ১২৫টি এবং থাইল্যান্ডের ১২৮টি। ইউরোপ-আমেরিকার দিকে তাকালে আরও বিস্মিত হতে হবে। অথচ আমরা ৪০টি চ্যানেল চালাতেই ব্যর্থ হচ্ছি!

কেন হচ্ছি, সেটা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন।