স্মৃতি তাঁর যখন প্রাণনার উৎস

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 14 August 2017, 01:06 PM
Updated : 14 August 2017, 01:06 PM

শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য বক্তৃতা দিয়েছেন। ছোট-বড় অনেক সভা-সমাবেশে তিনি তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁর সময়ে গণমাধ্যমের এত বিস্ফোরণ ছিল না। সভা-সমাবেশই ছিল মানুষের কাছে বক্তব্য পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম। শেখ মুজিবের বাচনক্ষমতা ছিল অসাধারণ। স্মৃতিশক্তিও ছিল প্রখর। একবার যে মানুষের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে তার কথা মনে রেখেছেন আজীবন। এত প্রাঞ্জল ভায়ায় তিনি বক্তৃতা করতেন যে, মানুষ আবিষ্ট হয়ে শুনত। তাঁর বক্তৃতার মধ্যে গল্প থাকত– মানুষের গল্প, মানুষের সমস্যার গল্প, মানুষের জীবনের গল্প। তাই তাঁর বক্তৃতা শুনে সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পারত না।

দুঃখের বিষয়, তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ভাষণগুলো প্রচারের তেমন উদ্যোগ নেই। এখন দেশে মুজিবপ্রেমিক যে হারে বেড়েছে সে হারে তাঁর আদর্শিক অনুসারীর সংখ্যা বাড়েনি।

স্বাধীন বাংলাদেশটা কীভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেছেন। যেমন বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার যদি কাজ না পায় তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না।

বাংলাদেশে দুর্নীতি যে একটি বড় সামাজিক ব্যাধি, নানা উপায়ে যে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে সেটা তাঁর অজানা ছিল না। তাই তো তিনি বলতে পেরেছিলেন, যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্লাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড (মজুদ) করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশ বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ।

এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু তাঁকে সময় ও সুযোগ দেওয়া হল না।

দুই.

বিবিসির জরিপে যখন শেখ মুজিবুর রহমানকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, তখন কারও কারও মধ্যে যে বিস্ময় দেখা দেয়নি তা নয়। রাজনীতি-সাহিত্য-শিল্প-অর্থনীতি-বিজ্ঞান-সমাজ-সংস্কৃতি-শিক্ষা-সংস্কারের শত শত বছরের ইতিহাসে সব বাঙালিকে ছাড়িয়ে শেখ মুজিব কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হলেন তার উত্তর অত্যন্ত সহজ-– তিনি বাঙালির ইতিহাসে প্রথম স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জনক। শেখ মুজিব একদিকে যেমন ইতিহাসের নায়ক, বরপুত্র, অন্যদিকে তিনি ইতিহাস-স্রষ্টা।

পুঁথিগত বিদ্যায়, বুদ্ধিমত্তায়, সৃজনশীলতায় তাঁর চেয়ে সেরা এমন বাঙালি হয়তো আরও এক বা একাধিক পাওয়া যাবে, কিন্তু শেখ মুজিবের মতো অসমসাহসী, দূরদর্শী এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী রাজনৈতিক নেতা বাঙালির মধ্যে খুব বেশি নেই। তিনি জীবনের পাঠশালা থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্রমাগত নিজেকে অতিক্রম করেছেন– অতিক্রম করেছেন তাদেরকেও যাদের কাছ থেকে তিনি রাজনীতির অআকখ শিখেছিলেন।

শেখ মুজিব উপর থেকে চাপিয়ে-দেওয়া নেতা ছিলেন না, তিনি ধীরে ধীরে উপরে উঠেছেন। কারও তৈরি সিঁড়ি দিয়ে নয়, নিজে সিঁড়ি তৈরি করেছেন, তারপর ধাপে ধাপে উঠেছেন। মানুষের মধ্যে থেকে, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি রাজনীতির ইমারত গড়ে তুলেছিলেন বলে মানুষকে ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন। আর তাই তাঁর সবলতা যেমন মানুষকে ভালোবাসা, দুর্বলতাও তাই।

এ তথ্য আমাদের অজানা নয় যে, শেখ মুজিব ছিলেন গ্রামের ছেলে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার মতো অজপাড়াগাঁয়ের কাদাপানিতে তাঁর বেড়ে ওঠা। নিজে একেবারে দরিদ্র পরিবারের সন্তান না হলেও তৎকালীন গ্রামীণ দারিদ্র্য দেখেছেন খুব কাছ থেকে। মানুষের অভাব-দারিদ্র্য সইতে পারতেন না। বালকবেলাতেই নিজেদের গোলার ধান চুপিসারে বিলিয়ে দিতেন গরিবদের। গায়ের চাদর খুলে দিয়েছেন শীতে কষ্ট-পাওয়া গ্রামীণ মানুষকে। থাকা এবং না-থাকার বিষয়টি তাঁকে ছোট বেলা থেকেই ভাবিত ও তাড়িত করেছে।

তাঁর মধ্যে সহজাত নেতৃত্বগুণ ছিল। সবার মধ্যে থেকে তিনি সবার থেকে একটু আলাদা থাকতেন। ফুটবল খেলতেন– তবে শুধু খেলোয়াড় ছিলেন না, ছিলেন ক্যাপ্টেন। কৈশোর থেকে যেমন হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ মানতেন না, অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে ছিলেন– তেমনি একশ্রেণির হিন্দুর অহমিকা, দম্ভ, গরিবের প্রতি জুলুমবাজিরও বিরুদ্ধবাদী ছিলেন।

জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে একটি রাজনৈতিক পথ বা আদর্শ বেছে নিয়েছিলেন, আর সেটা হল 'গরিবের মুখে হাসি ফোটানো'। এই আদর্শ কখনও ত্যাগ করেননি। গরিবের পক্ষও ছাড়েননি। সে চিন্তা কখনও করেনওনি। গরিব মুসলমান তার ভাগ্য ফেরানোর আশা নিয়ে পাকিস্তান চেয়েছেন। তাই শেখ মুজিবও সম্মুখে থেকে পাকিস্তান আন্দোলনে শরিক থেকেছেন। আবার পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই যখন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বাঙালির স্বার্থবিরোধী মনোভাব বুঝতে পারলেন, অমনি গরিব বাঙালির পক্ষে অবস্থান বেছে নিলেন। শুরু হল তার বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর জেল-জুলুম। 'কারাগারের রোজনামচা' য় তিনি নিজেই লিখছেন:

পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পরেই ১৯৪৮এ যখন আমাকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার করল, আবার ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তার করে ১৯৫২ সালে ছাড়ল, তখন আমার মা আমাকে জিজ্ঞাসা করল, "বাবা, তুই তো 'পাকিস্তান পাকিস্তান' করে চিৎকার করেছিস, কত টাকা নিয়ে খরচ করেছিস– এদেশের মানুষ তো তোর কাছ থেকেই পাকিস্তানের নাম শুনেছিল, আজ তোকেই সেই পাকিস্তানের জেলে কেন নেয়?"

[পৃষ্ঠা: ৭৯]

সহজ-সরল মাকে এই প্রশ্নের সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি অথবা দেননি। তাঁর গরিবমুখী, বাঙালিমুখী অবস্থানের কারণেই যে তাঁকে শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়েছিল এটা এখন সবারই জানা।

একাধিকবার তাঁকে ফাঁসির মঞ্চের মুখোমুখি করা হলেও তিনি আপোস করেননি। নিজের সাহস তিনি বাঙালি জাতির মধ্যে সংক্রামিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর ডাকে বাঙালি অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। মরণকে বরণ করেছে হাসিমুখে। তাই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাঁর জীবনের সেরা ভাষণে শেখ মুজিব অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পেরেছিলেন:

আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।

বাঙালিকে আসলেই আর কেউ 'দাবায়ে' রাখতে পারেনি। পাকিস্তানের শাসন-শোষণের জিঞ্জির ভেঙ্গে বাঙালি স্বাধীনতার রক্তপতাকা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে গরিবের পক্ষের রাজনৈতিক ধারার অনুকূলেই তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করে বলেছিলেন:

পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত– শোষক এবং শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।

বঙ্গবন্ধু বিশ্বরাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন এই বলে:

আমাদের পরিষ্কার কথা– আফ্রিকা হোক, ল্যাটিন আমেরিকা হোক, আরবদেশ হোক– যেখানে মানুষ শোষিত, যেখানে মানুষ নির্যাতিত, যেখানে মানুষ দুঃখী, যেখানে মানুষ সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা নির্যাতিত আমরা বাংলার মানুষ দুঃখী মানুষের সঙ্গে আছি এবং থাকব।

কিন্তু নানা বাস্তব কারণেই তিনি এই রাজনীতির সফল পরিণতি দিতে পারেননি। শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে নয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও বিভিন্ন শক্তির কাছে বিষফোঁড়ার মতো অস্বস্তিকর ছিলেন তিনি। তাই তাঁকে হত্যা করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অশুভ গাঁটছাড়ায় আবদ্ধ হয়েছিল।

তিন.

আমাদের দেশে একশ্রেণির মুজিবভক্ত আছেন যারা একদিকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও তাঁর চিন্তার স্বচ্ছতার প্রশংসা করেন– অন্যদিকে বলেন, কমিউনিস্টদের পরামর্শে একদলীয় ব্যবস্থা অর্থাৎ বাকশাল করে তিনি মৃত্যু ডেকে এনেছেন। যারা এমন কথা বলেন তারা ভুলে যান যে, এরকম কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে প্রকারান্তরে ছোট করা হয়। বঙ্গবন্ধু কমিউনিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বললে কি তাঁর বিচারবুদ্ধি ও প্রত্যুৎপন্নমতিতার ওপর আস্থা রাখা হয়? কমিউনিস্টরা যদি দাবি করে যে, তারাই বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাহলে সেটা কি মেনে নেওয়া যায়?

এক জীবনে একজন মানুষ একসঙ্গে বহু ইতিহাস রচনা করতে পারেন না। টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান– অনেকের মুজিব ভাই– মওলানা ভাসানীর মজিবর– কারও-বা শেখ সাহেব– ১৯৬৯এ এসে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে একাত্তরের যুদ্ধজয়ের পর জাতির পিতা। কম কীসে! বেঁচে থাকলে হয়তো আরও অনেকদূর যেতে পারতেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক দল তাঁকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর গতি রোধ করে দিল চিরদিনের মতো।

কারা এই ঘাতকচক্র? ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন:

বাংলাদেশ যেমন লক্ষ লক্ষ শহীদের জন্ম দিয়েছে, তেমনি বেঈমানও রয়েছে। এখানে রাজাকার-আলবদরও হয়েছে। এসব পরগাছার শিকড় তুলে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। কেউ কেউ আবার অতিবিপ্লবের নামে তলে তলে ষড়যন্ত্র করছে।

বঙ্গবন্ধু শত্রু চিহ্নিত করেছিলেন ঠিকই। 'পরগাছার শিকড় পুড়িয়ে দেওয়ার' কথা বললেও সে লক্ষ্যে খুব বেশিদূর অগ্রসর হননি কিংবা হতে পারেননি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান মানুষ। মানবিক সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বেও কি ছিলেন? অবশ্যই নয়। কোনো বাঙালির অস্ত্র তাঁর বক্ষভেদ করবে এটা ছিল তাঁর কল্পনার অতীত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি। ঘোরতর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্যও ছিল তাঁর বুকউজাড় করা ভালোবাসা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকারবৃত্তির কারণে চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী, খুলনার আবদুস সবুর খান কারাগারে থাকলেও বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে খাবার যেত ঠিকই। বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎ পেতে সমস্যা হয়নি রাজনৈতিকভাবে বিরোধী আত্মগোপনে-থাকা মোহাম্মদ তোয়াহার পক্ষেও। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে যে প্রতিহিংসার রাজনীতির সূত্রপাত হয় তা আর বন্ধ হচ্ছে না। রাজনীতিতে উদারতা ও কঠোরতার যে সমন্বয় দরকার বঙ্গবন্ধু তা করেননি। তিনি ছিলেন কেবলই উদার, মানবিক এবং সংবেদনশীল।

বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর রাজনৈতিক ব্রত থেকে কখনও বিচ্যুত হননি বঙ্গবন্ধু। সদ্যস্বাধীন দেশে গরিবের হক কেড়ে-খাওয়া 'চাটার দল'এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বলেছিলেন:

স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন কষ্টকর, তা রক্ষা করা তার চাইতেও কঠিন। দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।

চার.

স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন:

আমাদের নীতি পরিষ্কার। এর মধ্যে কোনো কিন্তু নাই। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলই সুপ্রিম বডি। আপনাদের সিদ্ধান্ত সরকারকে মানতে হবে। এটা আওয়ামী লীগের সরকার। সরকারের আওয়ামী লীগ নয়। আমার অনুরোধ, নির্দেশ, আবেদন– কাজ করতে হবে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে হবে। ক্ষমতা দখলের জন্য আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করেনি। তাই সবাইকে লোভের উর্ধ্বে, স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা সবাই কি লোভের উর্ধ্বে, স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন? আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, মানুষ কি সরকার এবং আওয়ামী লীগকে আলাদা করে চিনতে পারছে? আওয়ামী লীগ নামের ইতিহাস সৃষ্টিকারী দলটি কি এখন সরকারের মধ্যে হারিয়ে যায়নি?

বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় যেসব বক্তব্য দিয়েছেন সেসব মনে-মননে ধারণ না করে কেবল আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা আসলে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধানিবেদন নয়। ঠুনকো আবেগ দিয়ে নয়, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে তাঁর আদর্শের যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই।

পাঁচ.

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ছিল ত্যাগ ও তপস্যার। পাকিস্তানের কারাগারে তিনি এবং বাইরে তাঁর পরিবার কী কঠিন সময় কাটিয়েছেন, তার কয়েক ছত্র তারই বয়ানে:

কে বুঝবে আমাদের মতো রাজনৈতিক বন্দিদের বুকের ব্যথা। আমার ছেলেমেয়েদের তো থাকা-খাওয়ার চিন্তা করতে হবে না। এমন অনেক লোক আছে যাদের স্ত্রীদের ভিক্ষা করে, পরের বাড়ি খেটে, এমনকি ইজ্জত দিয়েও সংসার চালাতে হয়েছে। জীবনে অনেক রাজবন্দির স্ত্রী বা ছেলেমেয়ের চিঠি পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। সে করুণ কাহিনি কল্পনা করতেও ভয় হয়।

'কারাগারের রোজনামচা' , পৃষ্ঠা: ৯৪

হাজার হাজার রাজনীতিবিদের জীবনের করুণ কাহিনির ওপর ভিত্তি করে যে দেশ আমরা স্বাধীন করলাম, সে দেশ যদি পথভ্রষ্ট হয় তাহলে সে কষ্ট ও বেদনা রাখার জায়গা কোথায়?