‘কাউয়া’ তত্ত্বের সাতকাহন

বিজন সরকার
Published : 1 August 2017, 04:06 PM
Updated : 1 August 2017, 04:06 PM

বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ । বহু চড়াই-উত্তরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন যেখানে শত শত নেতা রয়েছেন এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো সব ধরনের যোগ্যতা তাদের রয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক একজনই হন। কেন্দ্র ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার বহু নেতা দলটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

জেলা পর্যায়ের রাজনীতি থেকে উঠে এসে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এমন উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। নওগাঁর আব্দুল জলিল দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়ার লোক, এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পর্যায়ের নেতারাও যে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা রাখেন সেটি বোঝানোর জন্য উদাহরণ দুটি দিলাম।

বলা যায়, শত শত যোগ্য নেতা থাকার পরেও একজন ভাগ্যবানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে ইতিহাসে স্থান দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে ও দেশটির পঙ্কিল রাজনৈতিক পটভূমির ইতিহাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালনকারীদের স্থান সমান্তরাল রেখায় নয়। বিশেষ করে আব্দুল জলিল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলটির ইতিহাসে তাঁর পূর্বসূরিদের সমান্তরালে নেই। তাঁর আদর্শিক সাহসিকতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মানদণ্ডের বিচার্যে খুবই দুর্বল ছিল বলেই মনে করি।

আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর দল। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে চোখের সামনে নিজের জন্য করব খোঁড়া হচ্ছে দেখেও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি। জাতীয় চার নেতা পঁচাত্তরের পরে পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের সঙ্গে আপস না করে জেলখানায় বিচারহীন অবস্থায় বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেছেন। আর সেই আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদক হয়ে আব্দুল জলিল কয়েকজন বিপথগামী সেনা অফিসারের ধমকে কিংবা অস্ত্রের ভয়ে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এই ঘটনায় তাঁর সাহসিকতার পুষ্টিহীনতার দিকটি ফুটে ওঠে। বিষয়টি আলোকপাতের মূল উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত মানুষগুলোর কেমন রাজনৈতিক নৈতিকতাসম্পন্ন হওয়া উচিত, সেটি বোঝানো।

ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে গণমাধ্যমসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। এমনকি দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীদের কাছেও। বিশেষ করে তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্যে যেসব আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহারের প্রাচুর্য দেখা গিয়েছে, সেটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ডিসকোর্সে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেমন 'কাউয়া', 'হাইব্রিড' ও 'ব্রয়লারের মুরগি' জাতীয় শব্দগুলো। তবে 'কাউয়া' শব্দটির ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সি বেশি এবং বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠে। এখনও শব্দটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আলাপচারিতায় ভলোকরেই স্থান করে নেয় 'কাউয়া' শব্দটি। দেশের বাইরেও বাংলাদেশি প্রবাসীদের রাজনৈতিক সমাজে শব্দটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ওবায়দুল কাদের 'কাউয়া' শব্দটি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের বোঝাতে ব্যবহার করেছিলেন। তবে 'কাউয়া'র সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। ধারণা করা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির থেকে যেসব নেতাকর্মী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আদর্শ নিয়ে নব্য আওয়ামী লীগার সাজছেন, তাদেরই তিনি 'কাউয়া' বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

যাহোক, এখন দেখছি 'কাউয়া' শব্দটি বিএনপির নেতাকর্মীরাও ব্যবহার করছেন। অতি সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বিএনপির কমিটিতে একজন চিহ্নিত শিবিরের নেতা সহ-সভাপতি হওয়ার পরে দলটির কয়েকজন নেতা উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, বিএনপি বিরোধী দলে থাকলেও 'কাউয়া'দের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আজ পর্যন্ত কতজন কাউয়া দলটিতে প্রবেশ করেছে সেটির সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। থাকার কথাও নয়। আওয়ামী লীগের সময়ে দেশে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটে গেলেও দলটির নেতাকর্মীদের নিয়েই কোনো ধরনের ডেটাবেজ দলটির নেই, দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক আদর্শের প্রপ্রাইলিং দূরের বিষয়। অথচ একটি ডেটাবেজ করতে বড়জোর তিন থেকে চার মাস সময় লাগত। এমনকি দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের ওয়েবপেজগুলি অনেক ক্ষেত্রে আপডেট থাকে না।

যাহোক, বছর খানেক আগে ঢাকার একটি বহুল প্রচারিত কাগজে দেখেছিলাম দেশব্যাপী আওয়ামী লীগে কাউয়াদের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। যাদের অধিকাংশই স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে দলে অনুপ্রবেশ করেছে।

বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দুটি ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রাজনৈতিক শ্রেণি আওয়ামী লীগে "কাউয়া" হিসেবে দলে অনুপ্রবেশ করছে। তাদের একটি শ্রেণি স্রেফ অর্থসম্পদ ও মামলা-হামলা থেকে বাঁচার জন্য 'কাউয়া' হয়েছে। কাউয়া শ্রেণির মধ্যে তাদের সংখ্যাটি বেশি বলেই অনুমেয়।

আরেকটি কাউয়া গোত্র একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করছে। তাদের মৌলিক ও একমাত্র উদ্দেশ্য হল আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে দলটিকে 'ফ্রম উইথইন' পদ্ধতিতে দলটিকে ক্রমশ 'রেডিকালাইজ' করা। এই কাউয়া গোত্রে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী অথবা জামায়াত-শিবিরমনস্কদের সংখ্যাই বেশি।

বহু লেখায় উল্লেখ করেছি, কিশোর অবস্থায় যখন আমাদের মনন গঠন শুরু হয়, জামায়াত-শিবির তখন থেকেই তাদের রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের মননে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রায়ই বলে থাকি, যারা একবার জামায়াত-শিবিরের আদর্শে বিশ্বাসী হয়, সে বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের আদর্শ লালন করা দর্শনগত ও স্নায়বিকভাবে অসম্ভব।

জামায়াত-শিবির থেকে যেসব কাউয়া হিসেবে আওয়ামী লীগে আসছে তারা মূলত আওয়ামী লীগে ক্যামেলিয়ন, বর্ণ লুকিয়ে রেখেছে। ক্যামেলিয়নদের সংখ্যা যখন একটি ছোট সংগঠনের নেতাকর্মীর সংখ্যার পর্যায়ে চলে যায়, তখন আশ্রয়দাতার দেহে রোগটি ধরা পরে। আস্তে আস্তে আশ্রয়দাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। আশ্রয়দাতা সংগঠনের যারাই মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইবে, তাদেরকেই তারা নিজেদের কবজায় নেবে।

একটি উদাহরণ দিলে উল্লেখিত প্যারামিটারটি মিলিয়ে নিতে সহজ হবে। যেমন ধরুন, বিএনপিতে জামায়াতের প্রভাব। এটি এতই শক্তিশালী ও বিষাক্ত, বিএনপি ইচ্ছে করলেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। বিএনপির একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন যে দলটি এখন জামায়াতকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করছে। জামায়াতের চাপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। এরপর থেকে এমাজউদ্দিনের নাম আর গণমাধ্যমে শোনা যায়নি। অনেকটা আত্নগোপনে চলে গেছেন। ঠিক একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে যেসব 'কাউয়া' আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে চাইছে তারা একই স্বপ্ন বুনছে। তাদের কোনো অর্থসম্পদের লোভ নেই।

এখন প্রশ্ন হল, দ্বিতীয় 'কাউয়া' গোত্রটির শিকড় আওয়ামী লীগের কত গভীরে প্রবেশ করতে পেরেছে? সেটির যথার্থ উত্তর দিতে হলে মোটাদাগে তিনটি বিষয় আবশ্যক। গবেষণালব্ধ তথ্যউপাত্ত ছাড়া নিরেট উপসংহারে যাওয়া যাবে না। প্রথমত, আওয়ামী লীগে দ্বিতীয় গোত্রের কাউয়াদের সংখ্যা কত। দ্বিতীয়ত, জেলা ও উপজেলায় দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে কোন কোন পদে কাউয়ারা পদায়িত? তৃতীয়ত, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর আদর্শিক ও ধর্মীয় প্রভাবের আকৃতি কতটুকু?

তবে এই তিনটি বিষয় আমরা বিবেচনায় না নিয়েও রাজনৈতিক সমাজের যে প্রতিফলন তাতে দ্বিতীয় শ্রেণির কাউয়াদের প্রভাব ঢাকার বাইরে বেশি। বিশেষ করে দুটি বিভাগীয় শহরসহ প্রায় প্রতি জেলাতেই একটি অপ্রত্যাশিত স্তরে কাউয়াদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

বলা যায়, অনেক জেলাতে কাউয়াদের কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা কোণঠাসা। অনেক জেলা ও উপজেলাতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধেও জামায়াত-শিবির তোষণের সরাসরি অভিযোগ আনছে। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীরা হয়রানির ভয়ে নীরব সাক্ষী হয়ে দলে জামায়াত-শিবিরের উত্থান দেখছে।

মাওলানা আবু রেজা নদভীর স্ত্রী রিজিয়া নদভী অতি সম্প্রতি ঘোষিত মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। মাওলানা নদভী আওয়ামী লীগের টিকেটে সাতকানিয়া লোহাগাড়া থেকে এমপি হয়েছেন। তাঁর শ্বশুর মমিনুল হক চৌধুরী জামায়াতের উপরের স্তরের নেতা। যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের গায়েবানা নামাজ পড়িয়েছিলেন স্বয়ং রিজিয়া নদভির বাবা। আবু রেজা নদভী নিজেও জামায়াতের শিষ্য হিসেবে পরিচিত। এমন রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও যদি নদভী বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হতে পারেন, তাহলে রিজিয়া নদভীর মহিলা লীগের একজন কার্যকরী সদস্য হতে সমস্যা কোথায়? মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ বেগম ক্রিকের সোজাসাপটা উত্তরটি বেশ ভালো লেগেছে।

তিনি বলেছেন, "রিজিয়ার বাবা জামায়াতে ইসলামির নেতা হলেও পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তার স্বামীর পরিচয়ই গুরুত্ব পেয়েছে।"

নদভীর বর্তমান অবস্থান: তিনি এখন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তিনি আগে জামায়াত-শিবির করতেন কি না কিংবা গোলাম আজমের মুরিদ ছিলেন কি না, সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা অবান্তর। তবে দুঃখজনক হলেও এটি সত্য যে ক্রিকের যুক্তিটিতেই লুকিয়ে আছে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ভয়ানক রোগটি। এভাবেই ক্রিকদের শানিত যুক্তির আড়ালে আওয়ামী লীগে ভিড় করছে দলটির আজম্ম শত্রুরা।

দলটিকে বহুবার বাইরে থেকে আঘাত করেও যেহেতু ধ্বংস করা যায়নি, ফলে এখন 'ফ্রম উইদইন' পদ্বতিতে অনুপ্রবেশকারীরা দলটিতে ভিড় করছে। উদ্দেশ্য: দলটিকে ক্রমশ রেডিকালাইজ করে তোলা। আর আমরা এই অনুপ্রবেশকারীদেরকেই আমরা 'কাউয়া' বলে ডাকছি। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, তাদের অধিকাংশই এসব নিয়ে চিন্তিত নয়।

দেশের বাইরেও বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আওয়ামী লীগ ও নানা অঙ্গ সংগঠনে কাউয়ারা অনুপ্রবেশ করছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল আওয়ামী লীগাররা কোণঠাসা। কাউয়ারা এখন কেবল আওয়ামী লীগে নয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদের মতো সংগঠনেও প্রবেশ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়াতে একটি বঙ্গবন্ধু পরিষদ থাকার পরেও জামায়াত-শিবির থেকে আগত একজনের নেতত্বে কয়েকজন মিলে অতি সম্প্রতি আরেকটি বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। অথচ স্বঘোষিত আহ্বায়ক ৫ মে হেফাজতের সমাবেশ সময়টিতে "কোনো ভদ্র লোক আওয়ামী লীগ করে না। টাউট বাটপারেরা আওয়ামী লীগ করে" বলে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের ভর্ৎসনা করতেন। এমনকি কোরিয়ার সিউলস্থ দূতাবাসের সামনে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকিদাতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেই স্বঘোষিত আহ্বায়ক। এখন নাকি তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে গবেষণা করবেন।

এমতাবস্থায় বলা যায়, আওয়ামী লীগ এখন একটি 'ভালনারেবল' অবস্থায় আছে। বহুমাত্রিক পদ্ধতিতে কাউয়ারা দলের প্রবেশ করছে এবং বিশেষ বিশেষ পদে পদায়িত হচ্ছে। কোন ধরনের ফিল্টারিং ব্যবস্থা দলটি আজ গড়ে তুলতে পারেনি। গড়ে তোলার আন্তরিক ইচ্ছা কিংবা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করার তাগিদটুকুও মনে হয় দলটির হাই কমান্ডের নেই। অনেকেই হয়তো বলতে পারেন, কোনোভাবেই কাউয়াদের ফিল্টার শতভাগ করা সম্ভব নয়। এটি হয়তো বহুলাংশে সত্য।

সত্যিকারের কাক খুব ধূর্ত চরিত্রের হয়। কাকের রং কালো এবং এরা যে কোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলতে অভ্যস্ত। কাউরাদের অভিযোজন ক্ষমতা অনেক। গত জাতীয় সংসদে দুয়েকজন কাক তথা কাউয়াকে আমরা পেয়ে যাই। তারা খুব কৌশলে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে দলটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে চেষ্টা করে। বিরূপ পরিবেশে কাকেরা খুব বিচক্ষণভাবে পারিপার্শ্বিক পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু শেষ অবধি কতিপয় কাক তাদের ফসল নষ্ট করার প্রবণতা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি। তারা ধরা পড়ে যায়।

কাক পাখির আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হল, তাদের কণ্ঠস্বর খুব কর্কশ হয় ও উচ্চস্বরে ডাকতে পারে। আমরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কাউয়াদের মধ্যেও একই প্রবণতা দেখতে পাই।

যখন রিজিয়া নদভিরের ইসলামিক ছাত্রী সংস্থার, তাঁর স্বামী ও পিতার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে, তখনও তিনি গলার স্বর উঁচুতে নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজনকে ৫৭ ধারার ভয় দেখান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন: "প্রধানমন্ত্রী তার বাবার আদর্শ রক্ষার জন্য দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, আর আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার বাবার বিরুদ্ধে রাজনীতি করছি।"

তিনি আরও অনুযোগ করেন: "দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। উত্তরাধিকার সূত্রে আমি রাজনীতি করছি না। আমার এলাকায় নারীদের সংগঠিত করেছি। জামায়াত-শিবিরের এলাকায় প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে নারীদের নৌকা প্রতীক ও আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছি। সাংগঠনিক যোগ্যতা দেখেই আমাকে মহিলা আওয়ামী লীগের পদ দেওয়া হয়েছে।"

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম, আওয়ামী লীগ দলীয় সভানেত্রী দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য দলকে নির্দেশ দিয়েছেন। দলের সম্পাদকও জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে এখন নজর দিচ্ছেন। যাহোক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্য গ্রামের বহুল দর্শিত চিত্রের বর্ণনা দিয়েই লেখা শেষ করতে চাই।

আমাদের গ্রমাঞ্চলে কাউকে কাউকে নদীর পাড়ে, পুকুরঘাটে কিংবা খালে-বিলে গোসলের কাজটি সারতে হয়। তখন সঙ্গে আনা সাবানটি পাড়ে বা ঘাটে রেখে পানিতে নামতে হয়। দূরে থাকা কোনো কাক হয়তো ওৎ পেতে থাকে ছোবল মেরে সাবানটি নিয়ে যাবার জন্য। সাবানের মালিক পানিতে নামলে কাক সে সুযোগ নিতে যায়। কাকের পিছনে তাড়া করেও তখন আর লাভ নেই। অবশ্য কাকের সংখ্যা একটি হলে সেটা সম্ভব হলেও হতে পারে। কিন্তু ততক্ষণে কাক সাবানটি ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।

আক্রমণকারী কাকের সংখ্যা বেশি হলে সাবানের মালিককে ওটি ফেরত পাবার আশা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।