শ্রম আইন সংস্কার করুন

মহিবুল ইজদানী খান
Published : 30 June 2017, 05:05 PM
Updated : 30 June 2017, 05:05 PM

বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময় দেখতে দেখতে আট বছর পাঁচ মাস পার হয়েছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার এখনও দেড় বছর বাকি। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অর্থনৈতিক উন্নতির প্রশ্নে একটি 'মাইল ফলক' হিসেবে অনেকেই আখ্যায়িত করছেন। তবে তা সম্পূর্ণভাবে সত্য নয়। কারণ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ।

দেশে ও বিদেশে আওয়ামী লীগের কোন্দল ও ক্ষমতার লড়াই বর্তমানে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অন্যদিকে কৃষি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও খাদ্যে সফলতা অর্জন করলেও অন্যান্য দিকে জনগণ সরকারের উপর আস্থা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে।

তবে বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নে পুরোপুরি লক্ষ্যমাত্রায় না যেতে পারলেও অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছে সরকার। পররাষ্ট্রনীতিতে 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়' নীতিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তির বিষয়টি জনগণ প্রশংসার চোখে দেখেছে। বিশেষ করে যারা সরকারকে অতিরিক্ত ভারতপন্থী বলে সমালোচনা করত তাদের মুখ কিছুটা হলেও বন্ধ করতে পেরেছে সরকার।

তবে তিস্তার পানিসহ আরও কয়েকটি গুতুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা না পাওয়ায় সরকার এখন সমস্যায় পড়েছে বলতে হবে। এছাড়া দেশের বিশাল আয়ের পথ বস্ত্র শিল্পে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সরকারকে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে গার্মেন্টস শিল্পে নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধি করে পাঁচ হাজার টাকা করেছে, যা ওই সময় দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। তবে মালিকের আয়ের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় বলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মনে করেন। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের দিকে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু করেনি। গার্মেন্ট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। যার কারণে ধীরে ধীরে এই শিল্প অন্যে দেশে চলে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি দেশ তাদের অর্ডার আফ্রিকায় স্থানান্তর করেছে বলে জানা গেছে।

গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারের প্রথমেই উচিত হবে দেশের ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে একটা আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা। সামরিক বাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের অস্থায়ী সরকার অতীতে এ ব্যাপারে একটা বড় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিল এবং কিছু কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছিল। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মাঝপথে সবকিছু থমকে যায়।

বর্তমান সরকার তাদের বিগত আট বছর পাঁচ মাস ক্ষমতায় থাকাকালীন এ ব্যাপারে ফখরুদ্দিন সরকারের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেনি। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

মালিক কর্তৃক শ্রমিক শোষণ বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন। প্রয়োজন শ্রম আইনের সংস্কার, প্রয়োজন রাজনৈতিক দলমুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন। গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা করতে দেখা যায়নি। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ নিজ দলীয় স্বার্থ এখানে সরাসরি জড়িত বলেই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিকে তারা এড়িয়ে যেতে চায়। অথচ এ ধরনের পরিবর্তন আনলে শ্রমিক-মালিক এবং দেশের শিল্প ক্ষেত্রে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তাই দেশে-বিদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকার পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। ফলে অতীতে মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে গাফিলতি করার সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং সরকারের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে ওই সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল পাঁচ হাজার না হয়ে আট হাজার টাকা কেন করা হল না?

এই দীর্ঘ সময়ে দেশের বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। অথচ গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন এখনও ওই পাঁচ হাজার টাকাতেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন এই সময় কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের জন্য বর্তমান বাজারে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক কিছুতেই যথেষ্ট হতে পারে না। ফলে তারা অতিরিক্ত কাজ (ওভার টাইম) করতে উৎসাহিত হয়।

অন্যদিকে চাকরি ক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট নয়। শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। দৈনন্দিন কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, সন্ধ্যা কিংবা রাতের কাজে বেতনের পরিমান বৃদ্ধি ও ছুটির দিনে কাজ করলে ডাবল বেতনের ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ম থাকলেও থাকতে পারে। তবে কোম্পানিগুলো তা কতটুকু মেনে চলে কিংবা আদৌ অনুসরণ করে কি না– এ ব্যাপারে প্রশ্ন আসতে পারে। তাছাড়া শ্রমিকদের জীবনবিমা, পেনশন ভাতা, যাতায়াত ভাতা, মেটারনেটি লিভ, চিকিৎসা ও বাৎসরিক ছুটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পরিমানমতো না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এব ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দুর্নীতি ও মালিক এবং সরকারের অবহেলা প্রধান কারণ বলে অনেকে মনে করেন।

বাংলাদেশের শিল্প নগরী সাভার, নারায়ণগঞ্জ, সৈয়দপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রপ্তানি উন্নয়ন অঞ্চলে অবস্থানরত শিল্প কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ বিদ্যমান। তবে এখানে সরকার ইউনিয়ন রাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখার কারণে শ্রমিকদের একত্রিত হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা আন্দোলন করার কোনো সুযোগ নেই। তবু অনেক সময় দেখা গেছে কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে আশুলিয়া সড়কে অবস্থান করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে।

এ কারণে বিদেশিরা এসব স্থানে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি বৈধ করার দাবি জানিয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন কারণের জন্য বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক শিল্পকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত কয়েকটি সুইডিশ কোম্পানি তাদের স্থানীয় ক্রেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

এভাবে নির্যাতিত হয়ে যারা কাপড় সেলাই করছে তাদের কাপড় পরিধান করা অমানবিক বলে ক্রেতারা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মানবিক সংস্থা শোষিত শ্রমিকদের পক্ষে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শোষণের অভিযোগ তুলে তাদের কাপড় বয়কট করার দাবিও জানিয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে বেশ আগে বস্ত্র শিল্পে উন্নয়ন ও বিভিন্ন কাঠামো পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করার কথা শুনেছিলাম। এই কমিটির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো কিছু হলেও হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কার্যকলাপের কোনো আলো জনগণের দৃষ্টিতে আসেনি।

এদিকে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে ওই সময় 'সুইডিশ হিউম্যান রাইটস' (সুয়েড ওয়াচ) ইতিবাচক হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু সেই কমিটির কোনো ফলাফল ভবিষ্যতে আদৌ দেখা যাবে কি না তা নিয়ে এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কমিটির পরামর্শে শ্রম আইনে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। তবে শোষিত শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সরকার ও দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তা না হলে এই বাজার ধীরে ধীরে অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যদিও 'সুইডিশ হিউম্যান রাইটস'-এর একজন মুখপাত্র স্থানীয় মিডিয়ায় বলেছেন: "বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা হলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় খরচ ততটা বাড়বে না। এজন্য পোশাক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া বাংলাদেশের কারিগরদের এখন অনেক উন্নত মানের কাপড় সেলাইয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে যা অন্য দেশে প্রথম থেকেই করতে হবে শুরু। সুতরাং এখন সারা বিশ্বের চোখ দায়িত্বে থাকা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপর।

বস্ত্র শিল্প রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রম আইনের সংস্কার ও রাজনৈতিক দলমুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন।

বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন আনা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের বর্তমান শ্রম নীতিমালার সংস্কার করা প্রয়োজন। নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসা উচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল যাতে নিজেদের স্বার্থে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য শ্রমিক সংগঠনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাহলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলো শিল্প কারখানায় বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

কারণ, বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা না করে তাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে নানা অজুহাতে হরতাল, ধ্বংসাত্মক কাজ, ধর্মঘট ও কারখানায় গোলযোগ সৃষ্টি করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, নেতৃত্বের লড়াইয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে বিভক্ত হতেও দেখা যায়। বড় বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে কিছু কিছু শ্রমিক নেতা নিজেদের রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে থাকেন।

অনেক শ্রমিক নেতাকে দেখা গেছে 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' হতে। মিডিয়ায় এসব শ্রমিক নেতাদের বিশাল বিশাল সম্পদের কথা প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া নিজ নিজ স্বার্থে শ্রমিক নেতারা দুর্নীতিতেও জড়িয়ে পড়েন। এরা আসলে শ্রমিক স্বার্থ না দেখে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মালিক পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে চলে।
বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কারের লক্ষ্যে এ ব্যাপারে প্রাথমিক অবস্থায় কয়েকটি প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই–

১. প্রতিটি শিল্প কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠন থাকবে মাত্র একটি। যেমন গার্মেন্টস শ্রমিক সমিতি, রিক্সা শ্রমিক সমিতি, স্কুল শিক্ষক সমিতি, কলেজ শিক্ষক সমিতি, বাস মালিক সমিতি ইত্যাদি। এব সংগঠনের একটি মাত্র কেন্দ্রীয় ও পরবর্তীতে জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে নির্বাচিত কমিটি থাকতে পারে। এসব স্থানে একই পেশায় দ্বিতীয় কোনো শাখা বা অন্য কোনো নামে শ্রমিক সংগঠন খোলা যাবে না।

২. শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে আসতে হবে। এজন্য বিভিন্ন সময় শ্রমিক নেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিটি কমিটি সরাসরি শ্রমিকদের ভোটে নির্বাচিত হবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন খোলা যাবে না। তাছাড়া সরাসরি শ্রমিকরাই হবেন শ্রমিকদের নেতা, ভিন্ন পেশায় জড়িত কেউ নয়।

৩. সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্রে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার্থে নিয়মতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করার কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। কথায় কথায় হরতাল, ধর্মঘট, মিল-ফ্যাক্টরিতে আগুন, ধ্বংসাত্মক কাজ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পথ আইন করে বন্ধ করতে হবে।

৪. শ্রমিকরা মালিক কর্তৃক শোষিত হলে কিংবা বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে হলে প্রাথমিক অবস্থায় সরাসরি ধর্মঘট না করে কীভাবে ধাপে ধাপে নিয়মতান্ত্রিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি রাখার প্রয়োজন রয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে শ্রমিক নেতাদের বেতনসহ ছুটি পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।

৫. শ্রমিকদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে যাওয়া একটি নিয়মের আওয়াতায় নিয়ে আসতে হবে। যেমন: চুক্তি অনুসারে দাবি আদায়ে প্রথম পদক্ষেপে সফল না হলে আংশিক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া যেতে পারে। এ সময় মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিক নেতারা তাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এরপরও মীমাংসা না হলে পুরোপুরি ধর্মঘটের একটা নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে মালিক পক্ষকে বড় হুমকির মধ্যে রাখা যেতে পারে। এরপরও কোনো অগ্রগতি না হয় তাহলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে পুরোপুরি ধর্মঘট শুরু করা যেতে পারে। ধর্মঘট চলা অবস্থায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতিসাধন করা যাবে না। ধর্মঘট চলাকালীন কোনো শ্রমিককে ছাটাই কিংবা নুতন শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না।

৬. আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও শ্রমিকদের এই কর্ম বিরতিতে মালিক পক্ষের লোকসান হবে। সময়মতো অর্ডার অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। ফলে ক্রেতা হারানোর ভয় থাকবে। অতএব তারাও কখনও চাইবে না সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে। তবে আন্দোলন যদি দীর্ঘমেয়াদি রূপ ধারণ করে তা হলে রাষ্ট্রের স্বার্থে সরকারকে দুই পক্ষের মধ্যে একটা মধ্যস্থতার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

৭. শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করবে শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ও মালিক পক্ষের কেন্দ্রীয় সংগঠন, কোনো আঞ্চলিক সংগঠন নয়। দুই পক্ষ একমত হলে দেশের অন্যান্য শিল্পের শ্রমিক সমিতি ও মালিক সমিতির শাখাগুলো তখন এই চুক্তি মানতে বাধ্য থাকবে। কেন্দ্রীয় চুক্তির মূল ধারাগুলো বহাল রেখে মালিক ও শ্রমিক সংগঠন চাইলে আঞ্চলিকভাবে কিছু কিছু ব্যাপারে একমত হলে পরিবর্তন নিয়ে আসা যেতে পারে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে একমত হওয়া মূল চুক্তির কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।

৮. মালিক পক্ষ ইচ্ছা করলেই যেমন খুশি তেমন কিছু করতে পারবে না। তাদেরও মেনে চলতে হবে কেন্দ্রীয় চুক্তি। এই চুক্তি ভঙ্গ করলে আইন অনুসারে মালিক পক্ষ শ্রমিক সংগঠনকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। প্রয়োজনে উভয় পক্ষকে লেবার কোর্টের সম্মুখীন হতে হবে। আন্দোলন কিংবা আলাপ-আলোচনা চলাকালে মালিক পক্ষ নুতন করে কোনো শ্রমিক নিযোগ করতে পারবে না।
এ জন্য নতুন শ্রমিক নিয়োগে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে আইন থাকতে হবে।

৯. শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিক পক্ষের প্রতি মাসে নিয়মমাফিক একবার সভা করার বিধান রাখা উচিত। এসব সভায় মালিক পক্ষ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লাভ-ক্ষতি, আয়-ব্যয়, নতুন নিয়োগ কিংবা ছাটাই এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে অবহিত করতে বাধ্য থাকবে। শ্রমিক নেতারাও এই সময় মালিক পক্ষের কাছে তাদের যাবতীয় সমস্যা তুলে ধরবেন। এখানে কোনো কিছুই গোপন রাখার প্রয়োজন নেই। সভার রিপোর্ট লেখা হবে যার নিচে দুই পক্ষেরই দস্তগত থাকবে। পরবর্তীতে এই রিপোর্ট কর্মস্থলে ঝুলিয়ে রাখা হবে যাতে করে শ্রমিকরা বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারে।

১০. পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সভাগুলোতে মালিক পক্ষ সম্ভব হলে শ্রমিক নেতাদের দাবি তৎক্ষণাত মেনে নিতে পারেন। দাবি জটিল কিংবা সমস্যাজনিত হলে পরবর্তী সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অথবা আলোচনা করার প্রস্তাব রাখা যেতে পারে। অবশেষে এই দাবি কবে নাগাদ পূরণ করা সম্ভব হবে– সে ব্যাপারে একটি তারিখ শ্রমিক নেতাদের অবশ্যই অবহিত করতে হবে। মালিক পক্ষ যদি মনে করে দাবি তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয় তা হলে তারা যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে সরাসরি নাকচও করে দিতে পারবে। সভাগুলোর মূল লক্ষ হল মালিক ও শ্রমিক সংগঠন দুপক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সন্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা।

১১. শ্রমিক নেতারা সংগঠনের শ্রমিকদের দ্বারা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচন প্রতিবছর কিংবা দুই বৎসর পর পর হতে হবে। তবে পুরো কমিটির নির্বাচন প্রতিবছর না করে কমিটিকে ভাগও করা যেতে পারে। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলোর মনোনয়ন কমিটি ও হিসাব পর্যবেক্ষক প্রতিবছর নির্বাচিত হতে হবে। নির্বাচন কোন নিয়মের আওতায় হবে, তা ঠিক হবে শ্রমিক সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে। একইসময় শ্রমিকদের ভোটে সেফটি কর্মকর্তাও নির্বাচিত করতে হবে। সেফটি কর্মকর্তা একইসঙ্গে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

১২. নির্বাচনকালে শ্রমিক ইউনিয়নের মনোনয়ন কমিটির কাছে সাধারণ সদস্যরা প্রার্থীদের নাম লিখিতভাবে প্রস্তাব করবে। পরবর্তীতে মনোনয়ন কমিটি প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম নির্ধারণ করবে। নির্বাচনের দিন মনোনয়ন কমিটি তাদের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের নাম সদস্যদের সামনে প্রকাশ করবে। কিংবা কিছুদিন আগেও প্রকাশ করতে পারে। তবে মনোনয়ন কমিটি এই সময় তাদের প্রস্তাবের বাইরে থাকা অন্য প্রার্থীদেরও নাম প্রকাশ করবে। পরবর্তীতে সম্মেলনের নির্দিষ্ট দিন সদস্যদের সরাসরি ভোটে শ্রমিক নেতারা নির্বাচিত হবেন।

১৩. শ্রমিক সংগঠন ও নির্বাচিত নেতারা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তবে কর্মস্থলের বাইরে অবসর সময় তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই সময় তারা যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবেন। এমনকি রাজনীতিও করতে পারবেন। তবে রাজনৈতিক দলের স্বার্থে শ্রমিক সংগঠনকে ব্যবহার করা যাবে না। একমাত্র শ্রমিক স্বার্থে কর্মস্থলে নির্বাচিত শ্রমিক নেতারা কাজ করবেন।

১৪. মালিক পক্ষকে শোষণের নীতি পরিহার করে শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বেতন বৃদ্ধি করার মানসিকতা থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন কেন্দ্রীয় মালিক সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের মাসিক বেতন, ওভারটাইম, দৈনন্দিন কাজের নিয়মসহ বিভিন্ন নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করবেন। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।

১৫. শ্রমিক নেতাদের কার্যকরী পরিষদের সভা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য শ্রমিকসংক্রান্ত কাজের জন্য বাৎরিক বেতনসহ ছুটির ব্যবস্থা থাকতে হবে। নির্বাচিত শ্রমিক নেতাদের বাৎসরিক কত ঘণ্টা বেতনসহ ছুটি দেওয়া হবে– এ ব্যাপারে মালিক ও স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে ঐক্যমতে আসতে হবে। শ্রমিক নেতাদের কাজ থেকে এই ছুটি দেওয়া হয় যাতে তারা কর্মস্থলে সংগঠনের কার্যালয়ে বসে সাংগঠনিক কাজ কর্ম করতে পারেন। মালিক কর্তৃক পাওয়া এই সময় কমিটির নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক কাজের জন্য পূর্ণ বেতনসহ ছুটি পেয়ে থাকেন।

১৬. শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সব শ্রমিকের প্রতিবছর কয়েক ঘণ্টা বেতনসহ ছুটির ব্যবস্থা রাখতে হবে। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবছর শ্রমিকদের সভায় যোগদানের জন্য কত ঘণ্টা বেতনসহ ছুটি দেওয়া হবে– এ ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে ঐক্যমতে আসতে হবে।

১৭. কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিয়মিত নিররাপত্তার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখার জন্য সংগঠনের বাৎসরিক সম্মেলনে কয়েকজন শ্রমিককে নির্বাচিত করতে হবে, যাদের বলা হবে নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তারা নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো দেখাশোনা করবেন।

১৮. নির্বাচিত শ্রমিক নেতারা মালিক পক্ষের কাছ থেকে ব্যক্তিগত কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শ্রমিক নেতাদের বিভিন্ন সাংগঠনিক প্রশিক্ষণে কোম্পানি চাইলে খরচ বহন করতে পারে।

১৯. ওভার টাইমের কাজ একটি নিয়মের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। চাইলেই যাকে ইচ্ছা তাকে ওভার টাইম দেওয়া যাবে না। প্রতিবছর একজন ব্যক্তি কত ঘণ্টা ওভার টাইম করতে পারবে তা দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে।

২০. শ্রমিকরা ধর্মঘট করলে মালিক পক্ষ শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের দৈনন্দিন বেতন কেটে রাখবে। কাজ না করলে বেতন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যতদিন পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে ততদিন মালিক পক্ষের বেতন কেটে রাখার সুযোগ থাকবে। এই সময় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবে শ্রমিক সংগঠন। এ জন্য প্রতিমাসে শ্রমিকদের বেতন থেকে সদস্য ফি বাবদ একটা অংশ শ্রমিক সংগঠনের ফান্ডে জমা হবে।

যখন সংগঠনের নির্দেশে সদস্যরা ধর্মঘটে অংশগ্রহন করবে তখন শ্রমিকদের দৈনন্দিন বেতনের ৮০% শ্রমিক সংগঠন থেকে দেওয়া হবে। তবে এই ভাতা শুধুমাত্র যারা সংগঠনের সদস্য তাদেরই দেওয়া হয়, অন্যদের নয়।

বেআইনিভাবে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে যদি তা আদালত পর্যন্ত গোড়ায় তা হলে তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনের অর্থ শ্রমিক নেতাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও শ্রমিকদের পক্ষে মালিকদের বিরুদ্ধে মামলায় লড়াই করাসহ শ্রমিক স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন হবে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের জন্য, সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনের সদস্য হওয়ার জন্য কাউকে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না।

সুইডেনের মতো উন্নত দেশে কখনও তেমন ধর্মঘট না হওয়ার কারণে শ্রমিক সংগঠনগুলোর অর্থের পরিমান প্রতি বছর বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরবর্তীতে শ্রমিক সংগঠনগুলো এই অর্থ দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিযোগ করে। সুইডেনের কেন্দ্রীয় লেবার অর্গাইনেজেশনকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে একজন বড় বিনিযোগকারী হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে এখনও কিছু কিছু বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন রয়েছে যারা সরাসরি শ্রমিক স্বার্থে কাজ করে আসছে। তবে বড় বড় রাজনৈতিক দল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা ততটা শক্ত অবস্থানে নেই বললেই চলে। যার কারণে তাদের কর্মতৎপরতা ততটা প্রকাশ পায় না কিংবা লক্ষণীয় নয়। মিডিয়াও তাদের তেমন গুরুত্ব দেয় না। অথচ এরাই মূলত সরাসরি শ্রমিক স্বার্থে কাজ করছে। এরাই আসলে করছে প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন। এদের আন্দোলন রাজনৈতিক দলের স্বার্থে নয়। তারা আন্দোলন করে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে জন্য, সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অবস্থানকালে '৭১ টিভি'র টকশোতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ট্রেড ইউনিয়নসংক্রান্ত এই টকশোতে আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মোশরেফা মিশু, তিনি গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি। তিনি জানালেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে আন্দোলন করতে গিয়ে তার উপর নেমে আসা নির্যাতনের কথা। তিনি শ্রমিক শোষণের যে চিত্র তুলে ধরেন তা অত্যন্ত ভয়াবহ। শুধু তা-ই নয়, মালিকদের পক্ষে ভাড়াটিয়া মাস্তানদের দ্বারা তিনি কয়েকবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে জানালেন। এ ছাড়া তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা থাকলে শ্রম আইন সংস্কারের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসা অবশ্যই সম্ভব হবে। দেশের শিল্প বাঁচাতে হলে, মালিক কর্তৃক শ্রমিক শোষণ বন্ধ করতে হলে, বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার আরও বাড়াতে হলে সরকারকে অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সরকার চাইলে এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য সুইডেনের লেবার অর্গানাইজেশনের (এলও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এলও আন্তর্জাতিক বিভাগ বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্নত দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোকে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় নিয়ে আসার জন্য প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে।