আওয়ামী লীগ কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকবে?

সাঈদ ইফতেখার আহমেদসাঈদ ইফতেখার আহমেদ
Published : 29 June 2017, 04:55 AM
Updated : 29 June 2017, 04:55 AM

১.
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বর্তমানে দীর্ঘ সময় একটানা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের উপর লিখিত নিবন্ধের এরকম শিরোনাম অনেকের কাছে অমূলক মনে হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের 'অমূলক' ঘটনাও আমরা দেখেছি; এক সময়কার বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দল, যারা দীর্ঘ সময় একটি দেশের নেতৃত্বে ছিল এবং সোভিয়েত বিপ্লব সংগঠিত করেছিল, সেই কমিউনিস্ট পার্টি ইতিহাসে বিলীন হয়ে গেছে। সেই দলের উত্তরাধিকার হিসেবে রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি আজ কোনোরকমে টিকে আছে এবং রুশ রাজনীতিতে এর প্রভাব দিন দিন কমছে।

আওয়ামী লীগ যার উত্তরাধিকার, অর্থাৎ সেই মুসলিম লীগও কিন্তু ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

উপরে উল্লিখিত রাজনৈতিক দল দুটোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই জায়গায় মিল রয়েছে। ১৯৭০-১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগের মতো মুসলিম লীগ এবং সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টিও একসময় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যেমন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তেমনি মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে রুশ সাম্রাজ্যের স্থলে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এ দুটি রাজনৈতিক দলই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেনি।

তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দাঁড়ায়: সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এ দুটো দলের মতো হারিয়ে যাবে নাকি পরিবর্তিত পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে?

মুসলিম লীগ থেকে জন্ম নেওয়া আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে কি না– এ ধরনের ক্ষীণ একটা সন্দেহ কারো কারো মনে প্রথম দেখা দেয় যখন ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমেদসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দকে ১৯৬৬ সালে এবং পরবর্তী সময়ে আটক করা হয়।

আইয়ুব খানের চরম নিষ্পেষণের সময় নেতৃত্বহীন অবস্থায় দলের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, তরুণ নেত্রী আমেনা বেগম। ১৯৬৬ সালের ২৭ জুলাই তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষণশীল পরিবেশে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীনের মতো নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে মধ্যম সারির একজন তরুণ, নারী নেতৃত্বে আইয়ুব খানের মতো সামরিক শাসকের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবে কি না– এ প্রশ্ন তখন কারো কারো মনে উঁকি দিয়েছিল।

কিন্তু দুঃখজনক হল, পরিবার বন্দনার আওয়ামী রাজনীতির ঐতিহ্যের ফলে অনেকেই আজ যে বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছেন, তা হল, ইতিহাসে সেই ক্রান্তিলগ্নে আমেনা বেগমের নেতৃত্বেই সেসময় আওয়ামী লীগ ছয় দফার আন্দোলন গড়ে তোলে। পাশাপাশি ছাত্র সমাজের ১১ দফা এবং আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, বিশেষত ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুথান সংগঠিত করার পেছনে আমেনা বেগম গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এর চেয়েও কঠিন সংকটে নিপতিত হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার পর। কেউ কেউ তখনও মনে করেছিলেন শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামনে নিরস্ত্র আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়, বিশেষত বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমেদের দক্ষ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি নতুন দেশ, বাংলাদেশের জন্ম দিতে সক্ষম হয়।

এটি অনস্বীকার্য যে, হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অধ্যায়, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, সে যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু 'আইকনিক ফিগার' হিসেবে থাকলেও সেই মুক্তির যুদ্ধের নেতা ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ।

লক্ষণীয় যে, বাঙালি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত– ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৬৯-এর গণভ্যুথান– এ দুক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় নেতৃত্ব ছিল অনুপস্থিত। ১৯৬৯-এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি আটক ছিলেন আর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি নিজে বন্দি হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যদিও বন্দি হওয়ার আগে তিনি প্রকৌশলী নুরুল হকের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা চট্রগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠালেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন বা কী প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংগঠিত করবে– এ ধরনের কোনো নির্দেশনা তিনি দিয়ে যাননি।

মুক্তিযুদ্ধের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না করতেই আওয়ামী লীগ এর চেয়েও কঠিন সংকটে নিপতিত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্রাজেডির পর। বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদসহ প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ নিহত হওয়ার পর অনেক নেতাই তখন মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন। যারা মোশাতাকের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাননি তাদের হয় জেলে না-হয় আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। এরকম নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় অনেকের মধ্যে তখন এ ধারণা জন্মে যায় যে, স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা হয়তো শেষ হয়ে গেছে, এবং দলটি অচিরেই বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।

কিন্তু এ ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সারা দেশে সামরিক শাসক, জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সারা দেশে জিয়া সরকারের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে এ প্রতিরোধ আন্দোলনে সেসময় ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নানাবিধ কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তখন তলানিতে ঠেকেছিল। আর এ তলানিই জিয়াকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্রুত জনপ্রিয়তা দিয়েছিল।

ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলিতে– যেমন ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুথান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ– দলের সর্বোচ্চ নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সফলভাবে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়েছে। আবার তেমনি দলটি প্রমাণ করেছে দলের চরম ক্রান্তিলগ্নে, যেমন ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়াই জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম।

এ সক্ষমতার মূল কারণ ছিল দলের তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য নিবেদিত নেতা-কর্মী এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের আপসহীন, সাহসী ভূমিকা। তার মানে তখন কি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিজীবনে দুর্নীতি, অসততা– এসব ছিল না, যা বর্তমানে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন? বাস্তবতা হল তখনও সবার না হলেও অনেক নেতা-কর্মীর নামে দুর্নীতি-অসততার অভিযোগ ছিল।

বস্তুত, নেতা-কর্মীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে খুব দ্রুত অজনপ্রিয় করে তোলে। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে সততা-অসততার নিরিখে যে বিষয়টা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর মাঝে ছিল, সেটা হল, নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দলের জন্য কাজ করা, যেটা বাংলাদেশের অন্য দুটি প্রধান দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে দেখা যায়নি, খুব সম্ভবত, সেনা ছাউনির আশীর্বাদে জন্ম নেওয়ার ফলে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ দুটো দলের জন্ম প্রক্রিয়ার মৌলিক পার্থক্যের ফলে যে বিষয়টা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তা হল, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন কোনো না কোনো ফর্মে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত থাকার ফলে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমানের স্বৈরশাসন বা ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের 'পরোক্ষ' সেনা-শাসিত সরকার কোনো সময়েই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা আজকের বিএনপির মতো 'ঘরোয়া রাজনীতি'-নির্ভর হয়ে উঠেনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি বিন্যাসে আস্তে আস্তে একটি গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দলটির ইতিহাসেই তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘকাল নেতৃত্বের আসনে আসীন আছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দলটি ২১ বছর পর ক্ষমতাসীন হতে পেরেছিল এবং তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশের অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ একটানা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন রয়েছে। বস্তুত, শেখ হাসিনার দীর্ঘ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের মধ্যে যে মৌলিক গুণগত পরিবর্তন সাধন করেছে সেটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য এ দীর্ঘ ভূমিকার অবতারণা।

২.
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি হলে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আর্থসামাজিক সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে এবং 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রার অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

১৯৮১ সালে যখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য দেশে ফেরেন তখন তাঁর দলেরই অনেক ভেবেছিলেন এত অল্প বয়সী এক তরুণী, যিনি অনেকটাই গৃহবধু পটভূমি থেকে এসেছেন, তাঁর পক্ষে বাংলাদেশের মতো একটি 'চরম পুরুষতান্ত্রিক' দেশে, ঐতিহ্যবাহী এ দলটির নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হবে কি না। সামান্য সময় ইডেন কলেজে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা থাকেলও ছাত্রজীবনের পর তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ফলে অনেকের মধ্য যে শঙ্কাটা ছিল, তা হল, তাঁর পক্ষে বিএনপির মতো সেনা ছাউনির আশীর্বাদপুষ্ট একটি দলের মোকাবেলা করা সম্ভব হবে কি না।

কিন্তু শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দল পরিচালনা করে শুধু যে সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন সংগঠনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন, তা-ই নয়, তিনি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারকেও আন্দোনলের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বস্তুত শেখ হাসিনা চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এসে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সেনাশাসিত সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার ফলেই বাংলাদেশ আবার বেসামরিক শাসনে ফিরে আসে।

একজন সফল আন্দোলন সংগঠক হিসেবে শেখ হাসিনার শক্তির মূল উৎস ছিল তাঁর দলের অগণিত নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী, যারা প্রয়োজনে জনগণকে সংগঠিত করে মাঠে নামানোর ক্ষমতা রাখত।

৩.
বিএনপির শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতির ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ক্ষমতায় আসবে এটি একরকম অবধারিত ছিল। তারপরও জনগণের একটা অংশের মনে এ ধারণা জন্ম লাভ করে যে, যেহেতু বিএনপি সমর্থিত 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার'কে সরিয়ে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সেনা ছাউনির আশির্বাদ লাভ করবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের পর এরকম অভূতপূর্ব 'ভূমিধস' বিজয় লাভ করে। বিএনপি কোনোরকমে বিরোধী দলের মর্যাদা রক্ষা করে।

নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্রমশ একটি পরিবর্তন জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। সেনা আমলাতন্ত্রের আশীর্বাদ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতি ছিল বলেই জনসাধারণের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকেই অনেকের মধ্যে এ প্রশ্ন জাগতে থাকে: বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে সরে গিয়ে সেনা আমলাতন্ত্রের ছায়া কি আওয়ামী লীগের উপর পড়েছে? বিষয়টি যদি এমনই হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হয় যে, ১৯৭৫-পরবর্তী সময় থেকে চলে আসা রাজনীতির যে ধারা, সে ধারায় একটি গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

অপরদিকে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এক মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে বলে অনেকের কাছেই মনে হয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী নেতৃবৃন্দ তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হিসেবে প্রাথমিকভাবে দলের তৃণমূলের অগণিত নেতা-কর্মী ও জনগণকে মনে করতেন। কিন্তু ১/১১-এর অভিজ্ঞতার পর তাদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিষয়ক উপলব্ধির ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে।

দল ও জনগণের পরিবর্তে প্রথমিকভাবে সেনা আমলাতন্ত্র এবং তারপর বেসামরিক আমলাতন্ত্রকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে তারা ভাবতে শুরু করেছে। অর্থাৎ সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের আশীর্বাদ যাদের প্রতি থাকবে তারাই ক্ষমতাসীন হবে– এ ধারণা দলটির নেতৃত্বে বদ্ধমূল হয়েছে। অনেকে তাই মনে করেন, এ ধারণা থেকেই দলটি ১/১১-এর কুশীলবদের বিচার করেনি। অপরদিকে, বিএনপি যেহেতু সব সময়ই সেনা ছাউনির কৃপাপ্রার্থী, তাই বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও বিএনপি কখনও এ দাবি তোলেনি।

তবে অনেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন সেনা-আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরতা বাড়লেও আওয়ামী লীগ আর যা-ই করুক, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানি শাসকদের মতো 'মোল্লাতন্ত্রে'র ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে না। এ বিশ্বাস অনেকের মধ্যে আরও দৃঢ় হয়েছিল যুদ্ধপরাধীদের বিচার এবং শাপলা চত্বরে হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ এ অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে হেফাজতের দাবি অনুযায়ী শুধু পাঠ্যপুস্তক সংশোধনই করেনি বরং সবাইকে বিস্মিত করে হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে স্বয়ং শেখ হাসিনা গণভবনে আমন্ত্রণ জানান।

এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নানাভাবে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলেও হাইকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য অপসারণ জনমানসে হেফাজতের দাবির মুখে আওয়ামী লীগের 'অসহায় আত্মসমর্পন' হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এ 'নতজানু' অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের প্রধানকে এমন একটি ইউনিক অবস্থানে নিয়ে গেছে যার 'নেক নজর' পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ব্যাকুল। এর পূর্বে কখনও ধর্মভিত্তিক একটি সংগঠনের প্রধান বা পীরের প্রতি বাংলাদেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দল এভাবে একসঙ্গে তাকিয়ে থাকেনি।

কখন একটি রাজনৈতিক দলকে আমলা ও 'মোল্লাতন্ত্রে'র উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়?

আওয়ামী লীগের পূর্বসূরি মুসলিম লীগ বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যৌ গণবিচ্ছন্ন হয়ে আমলা ও 'মোল্লাতন্ত্রে'র উপড় নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়াস চালায়। তাহলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও কি নিজেদের গণবিছিন্ন ভাবতে শুরু করেছেন, যার ফলে উপরোক্ত দুই তন্ত্রের প্রতি তাদের নির্ভরতা ক্রমশ বেড়ে চলছে?

আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন না হলেও শেখ হাসিনা একটা বিষয় বুঝতে পেরেছেন, তা হল, যে নিবেদিত নেতা-কর্মীদের উপর নির্ভর করে তিনি অতীতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, দীর্ঘদিন একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে তাদের মধ্যে ভোগবাদিতা জন্ম নিয়েছে। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে যে ডাকসাইটে নেতৃবৃন্দ জিয়া ও এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা বৃদ্ধ হয়েছেন। কিছু ব্যতিক্রম বাদে তাদের অনেকে শুধু ভোগবাদিতা নয়, আকণ্ঠ দুর্নীতিতেও নিমজ্জিত।

এর পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে ক্যানসারের মতো। দলের নাম ভাঙিয়ে জন্ম লাভ করেছে অসংখ্য ভুঁইফোড় সংগঠনের, যাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নেই। নিবেদিত থেকে সদ্য দলে যোগ দেওয়া সব নেতাকর্মীর একটাই লক্ষ: কীভাবে 'মূল্যায়িত' হবেন, অর্থাৎ ক্ষমতার 'হালুয়া-রুটি'তে কতটা ভাগ বসাতে পারবেন।

দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরছেন যে, দুর্নীতির ক্যানসারে আক্রান্ত ভোগবাদী দল দিয়ে ভবিষ্যতে আন্দোলন গড়ে তোলা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি জনমানসেও এ ধরনের নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে কোনো ইতিবাচক মনোভাব নেই। ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকেই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলকে যেমন সেনা-আমলাতন্ত্র ও 'মোল্লাতন্ত্র'– এ দুটো প্রতিষ্ঠানের 'নেক নজর 'র উপর নির্ভর করতে হয়, তেমনি আওয়ামী লীগকেও সেই একই পথে বর্তমানে হাঁটতে হচ্ছে– এমন ধারণা জনমানসে গড়ে উঠছে।

পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ দুটো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। ফলে দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঋদ্ধ আওয়ামী লীগ আজ হয়তো এ উপলব্ধিতে পৌঁছেছে যে, জনগণের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে হলে এ দুটো প্রতিষ্ঠানের উপরে নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

তবে ইতিহাসের ট্রাজেডি বোধ হয় এটাই যে, জন্মলগ্ন থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দলটি দীর্ঘ সংগ্রাম করলেও আওয়ামী লীগ তার নিজের অভ্যন্তরেই আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সেই ১৯৮১ সাল থেকে দলের নেতৃত্ব এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত রয়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে যদি ধরা হয়, সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত হননি। দলের ও দলের অঙ্গসংগঠনসমূহের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রায় সব কমিটিই চাপিয়ে দেওয়া হয় উপর থেকে। একটি 'গণতান্ত্রিক' দলে, দলের সভাপতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা বা সভাপতির সঙ্গে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি।

এ কথা বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না যে, ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে এক ব্যক্তির চিন্তা বা ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, যেমনটা হত স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি। দীর্ঘকাল এক ব্যক্তিনির্ভর দলের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা তৈরি না হওয়া। এ নেতৃত্ব তৈরি না হওয়ার ফলেই সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টিসহ এসব রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব পরবর্তীতে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বস্তুত এ চিন্তা মাথায় রেখেই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি একদলীয় শাসন বজায় রাখলেও এক ব্যক্তির শাসনে পার্টি ও দেশ যাতে চলে না যায় এবং দলের মধ্যে যাতে নেতা তৈরি হয় সে জন্য পার্টির সর্বোচ্চ পদে কোনো ব্যক্তির দুবারের বেশি নির্বাচিত হওয়ার পথ রাখা হয়নি।

বর্তমান আওয়ামী প্রজন্ম আগামী দিনে দলটির সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করার জন্য তাকিয়ে রয়েছে একজন ব্যক্তির দিকে; তিনি হলেন দলীয় প্রধানের সু্যোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। যারা জয়ের বক্তৃতা বা বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞান আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতার চেয়ে অনেক বেশি।

তবে জয়ের মা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জয়ের বড় দাগে যে পার্থক্য রয়েছে, তা হল, ১৯৮১ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালে হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে, শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ শেখ হাসিনা সফর করেছেন সব উপজেলাসহ বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। কিন্তু জয় যখন দেশে আসেন তখন তিনি মূলত ব্যস্ত থাকেন পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনার ধরনের রাজনৈতিক অনুষ্ঠান অথবা টেলিভিশনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রোগ্রামে।

জয়ের রাজনীতির ধরনটি হচ্ছে– ইংরেজিতে যাকে বলে 'গ্লাস প্যালেস'– সেই 'প্ল্যালেস' বা প্রাসাদে বসে রাজনীতি করা। এ কথার বলার অর্থ এই নয় যে, জয় আগামীদিনে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। তবে এ কথা বোধ হয় অনস্বীকার্য যে, সে নেতৃত্ব গুণগতভাবেই বর্তমান নেতৃত্বের চেয়ে ভিন্ন হবে। অবশ্য নেতৃত্বে এ গুণগত ভিন্নতা দেশ এবং দলের ভবিষৎ চ্যালেঞ্জ কতটুকু সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবে, সেটা বলবার সময় বোধ হয় এখনও আসেনি।

৪.
আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন কর্মীর সঙ্গে নানা সময়ে আলাপচারিতার সময় সবাই একবাক্যে আমাকে জানিয়েছেন, জয় বা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাইরের কাউকে তারা তাদের ভবিষৎ নেতা হিসেবে মেনে নেবেন না।

গণতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক যে কোনো রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল যখন এক ব্যক্তি বা পরিবারের বাইরে আর কোনো ব্যক্তিকে ভবিষৎ নেতা হিসেবে তৈরি করতে না পারা, বা আর কাউকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে পারার মানসিকতা গড়ে না ওঠা। এ মানসিকতা গড়ে না ওঠার ফলেই দলীয় প্রধানের পাশাপাশি জয়ের বিরুদ্ধেও কোনোরকম গঠনমূলক সমালোচনা করার চর্চা দলের কাঠামোর মধ্যে গড়ে ওঠেনি। এ ধরনের একক নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রধানকে দেশ সম্পর্কে সব সময় ইতিবাচক ধারণা দিতে থাকেন, যা পরিণতিতে নেতা ও দলকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

জয় তাঁর সাম্প্রতিক একটি লেখা "Facts Refute the So-Called 'Bangladesh Paradox'"-এ খুব সঠিকভাবেই বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মালয়শিয়া ও সিঙ্গাপুরের মডেল অনুসরণ করছে। এ মডেলের মূল বৈশিষ্ট্য হল সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া একটি দল শুধুমাত্র আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভর করে জনগণকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বাইরে রেখে 'উন্নয়নে'র নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তবে জয় যে বিষয়টি এখানে উল্লেখ করেননি, সেটি হল, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির রাজনৈতিক-সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতিগত পার্থক্যের দিকটি। ওইসব দেশের রাজনৈতিক-সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য হল সরকারের প্রতি আনুগত্য ও আস্থা, অপরদিকে, নানাবিধ রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক কারণেই বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূল বিশিষ্ট্য হল সরকারের প্রতি সমালোচনা এবং সন্দেহপ্রবণতা। ফলে অতীতে এ দেশে জনগণকে আস্থায় না নিয়ে যারাই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেছিল তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছে।

৫.
এ নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না, সেটি নয়। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে জনমানসে সাধারণ ধারণাটি হল যেভাবেই নির্বাচন হোক না কেন আওয়ামী লীগ আগামীতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় আসবে।

আওয়ামী লীগের সামনে এ মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হল ভবিষ্যতে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং 'মোল্লা' ও সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে গণনির্ভরতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। বস্তুত এ চ্যালেঞ্জ আগামীদিনে আওয়ামী লীগ কতটা সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবে তার উপরেই নির্ভর করছে দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।