ভূমিকম্প বিষয় গবেষণালব্ধ ফলাফলের যথাযথ প্রয়োগ

মেহেদী আহম্মদ আনসারী
Published : 18 March 2012, 05:46 PM
Updated : 18 March 2012, 05:46 PM

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বুয়েট-জিডপাস ও প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, বাংলাদেশ ভূমিকম্প সমিতি
বাংলাদেশে ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সনের মধ্যে ৭.০ মাএার ৫টি বড় ভূমিকম্প হলেও, এদেশের মানুষ ভূমিকম্পের ঝুঁকির ব্যাপারে বেশ উদাসীন; সরকারী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত অনেকগুলো উদ্যোগ নিলেও, ভূমিকম্প ঝুঁকি নিরসনে কোন সমন্বিত (স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ – কালীন) পরিকল্পনা এদেশে নেই। প্রতিটি পরিকল্পনার ক্ষেএেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা এবং সরকারের বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।

গত ১৮/০৯/২০১১ তারিখের ৬.৯ মাএার সিকিম ভূমিকম্প এবং আজকের ৪.৬ মাএার ভূমিকম্প এই সংক্রান্ত গবেষণা এবং সরকার কর্তৃক গবেষণালব্ধ ফলাফলের বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিয়েছে । বুয়েট ২০০৩ থেকে ২০১০ সন পর্যন্ত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩২টি ভূমিকম্পের ত্বরনমাপকযন্ত্র (Accelerometer) বসিয়েছে এবং তা থেকে লব্ধ তথ্য উপাও বিশ্লেষণ করছে, গত বৎসরে সংঘঠিত সিকিম ভূমিকম্পের ত্বরনের ডাটা যা ১০টি ষ্টেশনে মাপা সম্ভব হয়েছে, তা চিএ-১-এ ভূমিকম্পের উৎসস্থল (Epicenter) থেকে ষ্টেসনগুলোর মাপা দূরত্ব (কিলোমিটারে) সাথে দেখানো হলো । চিত্রানুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে উৎসস্থলের খুব কাছে ত্বরন প্রায় ২০০ cm/s2 এবং ৫০০ কিলোমিটার দূরে তা ২০ cm/s2 । এখানে বলা আবশ্যক যে ওই একই উৎসস্থলে যদি একটি ৮.০ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘঠিত হতো (১৮৯৭ সনে ৮.১ মাএার একটি ভূমিকম্প ঢাকা থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে সংঘঠিত হয়েছিল) তাহলে ঢাকায় ২০০ cm/s2 ত্বরন রেকর্ড হতো, আবার আজকের ৪.৬ মাএার ভূমিকম্পের ফলে ঢাকার শক্ত মাটিতে ২০ cm/s2 ও নরম মাটিতে ৩০ cm/s2 রেকর্ড হয়েছে।

আমাদের ১৯৯৩ সনের বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ত্বরন ২৫০ cm/s2, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ত্বরন ১৫০ cm/s2 এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ত্বরন ৭৫ cm/s2। ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিরসনকল্পে উপরের তথ্য- উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করে, ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মান এবং ইতিমধ্যে নির্মিত ভবনগুলোকে retrofitting এর মাধ্যমে ভূমিকম্প প্রতিরোধী করবার জন্য ত্বরন ও তীব্রতা নিম্নোক্তভাবে সুপারিশ করা হলো:
বাংলাদেশের সবচাইতে ঝুঁকি র্পূণ এলাকায় ত্বরন হবে ২৫০ cm/s2 ও ভূমিকম্পের তীব্রতা ৯;
বাংলাদেশের মধ্যম ঝুঁকি র্পূণ এলাকায় ত্বরন হবে ১৫০ cm/s2 ও ভূমিকম্পের তীব্রতা ৮;
বাংলাদেশের কম ঝুঁকি র্পূণ এলাকায় ত্বরন হবে ৭৫ cm/s2 ও ভূমিকম্পের তীব্রতা ৭;

মেহেদী আহম্মদ আনসারী: অধ্যাপক ও ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞ।