মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি: ট্রাম্পের সফরের পর জটিল হচ্ছে কি সমীকরণ?

বিজন সরকার
Published : 9 June 2017, 07:25 AM
Updated : 9 June 2017, 07:25 AM

সপ্তাহ দুয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর করলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম সফর। শতভাগ সফল একটি সফর করে গেলেন তিনি। সফরটি কেবল মুসলিম বিশ্বের নয়, সারাবিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

নির্বাচনে অংশ নেবার ঘোষণার দিন থেকেই ট্রাম্প ইসলামিস্ট জঙ্গিবাদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে দায়ী করে আসছিলেন। বিশেষ করে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের জন্য সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী করেছেন তিনি। পশ্চিমা সমাজের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সামাজিক বিদ্বেষপূর্ণ মানসিকতার বিষয়টিও তাঁর প্রতিটি নির্বাচনী বক্তব্যে ছিল। অনেক ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছেন এই ধরনের মানসিকতার নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরবের মতো দেশগুলি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন খেলাফতের সদস্যরা যে ভোগবিলাসের জন্য প্রতিদিন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, তা-ও তিনি উল্লেখ করতেন।

এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে সামরিক নিরাপত্তা ও পুলিশিং সেবার জন্য আমেরিকাকে ন্যায্য অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন।

পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের জন্য ইরানকে দায়ী করে এলেও বিশ্ব-সন্ত্রাসবাদ প্রসারের জন্য সেই অর্থে ট্রাম্প ইরানকে দায়ী করেননি, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের জন্য ইরান দায়ী, সে কথা তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন আলোচ্য সৌদি আরব সফরের সময়। আরও পরিষ্কারভাবে বলা যায়, সৌদি আরবের সঙ্গে প্রায় হাজার বিলিয়ন ডলারের নানান চুক্তি স্বাক্ষর করার পরেই ট্রাম্প সৌদিদের শত্রুরাষ্ট্র ইরানকে বিশ্ব-সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করলেন।

ঐতিহাসিক এ সফরের সময় সৌদি আরব ও আমেরিকার মধ্যে প্রায় হাজার বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির তিনশত আশি বিলিয়ন ডলার হল অস্ত্র-চুক্তি। যার আওতায় সৌদি আরব আমেরিকা থেকে অস্ত্র কিনবে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এত বড় অস্ত্র-চুক্তি আর হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যের আগামী রাজনীতি, সামাজিক জীবন ও সামরিক নীতি কেমন হবে সেটির উত্তর রয়েছে এ অস্ত্র-চুক্তির মধ্যেই। ইসলাম ধর্মের দুটি প্রধান পবিত্র স্থান সৌদি আরবে। তাদের তো মুসলিম বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধার্হ হওয়ার কথা। অথচ সৌদি আরবকে প্রতিবেশি মুসলিম দেশগুলির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অস্ত্র কিনতে হচ্ছে।

সৌদি আরব সমাজের রাজনীতি পুরোটা ইরান ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে, অনেকটা ভারত ঘিরে পাকিস্তানের রাজনীতির মতো। মুসলিম বিশ্বের যে একমাত্র রাষ্ট্র সৌদি আরবের একক নেতৃ্ত্বের জন্য হুমকি সেটি হল ইরান। ইরাককে আগেই শায়েস্তা করা হয়েছে।

ইরাক যুদ্ধের জন্য আমরা কেবল পশ্চিমা দেশগুলিকে, বিশেষ করে আমেরিকাকে দায়ী করি। আমাদের উচিত ইরাক ধ্বংসের পিছনে সৌদি আরবের শক্তিশালী ভূমিকার সঙ্গে পরিচিত হওয়া। ইরাক যুদ্ধের বছর দুয়েক আগে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সৌদি আরব কর্তৃক যুদ্ধের প্ররোচনা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দুবছর পর টেক্সাসে বুশ পরিবারের খামারবাড়িতে যুক্তরাজ্যের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার কীভাবে বুশকে রাজি করালেন সেটির উত্তর জানা দরকার। সে সময়ে ব্লেয়ারের যুক্তরাজ্যে সৌদি আরবের বিশ্বস্ত বন্ধু ও মিত্র দেশ কাতারের হাজার হাজার বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগটি সৌদি আরবের পক্ষে কী ভূমিকা রেখেছিল সেটিও বুঝতে হবে।

আমরা কেবল বিশ্বাসগত কারণে বাস্তবায়নকারীদের দায় দিব আর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের দায়মুক্তি দেব এই অনুশীলন থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

যাহোক, সাদ্দাম হোসেন ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির স্বৈরশাসন শেষ হওয়ার পর সৌদি আরবের আধিপত্যবাদী চেতনায় বেশ স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু সমস্যা হিসেবে এখন সামনে ইরান। বর্তমানেে এই দেশ ছাড়া সৌদি আরবের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নেই। মোটা দাগে তিনটি কারণে সৌদি আরবের কাছে ইরান বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রথমত, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে ইরান রক্ষণশীল সৌদি আরবের চেয়ে বহু এগিয়ে। দেশটি কেবল প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ নয়, নিজেদের মানবসম্পদও কাজে লাগিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের বহু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর সংখ্যক ইরানি অধ্যাপক ও গবেষক পাওয়া যাবে, যেখানে সৌদি আরবের কাউকে পাওয়া দুষ্কর। ইরানের চলচ্চিত্র যেখানে বিশ্বখ্যাত, সেখানে সৌদিরা মাত্র মাসখানেক আগে সিনেমা হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ইরানে ইসলামিক শাসনতন্ত্র থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্বাচন হয়। জনগণ ভোট দেয়। একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে জনগণের চিন্তা-চেতনা লালন করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সম্ভাব্য ভয়ানক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য সৌদি আরব এখন পরিবর্তনে আগ্রহী। দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতি থেকে যদি তেল ও পর্যটনের অবদান বাদ দেওয়া হয়, তাদের অবস্থা সুদানের চেয়েও খারাপ হয়ে যাবে।

তাছাড়া সৌদিদের তেল-নির্ভরশীলতা থেকে বিশ্বঅর্থনীতির ক্রমশ উঠে আসার ইঙ্গিতও তাদের ভাবাচ্ছে। ফলে অন্যান্য খাত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সৌদি রাজতন্ত্রের কাছে বিকল্প নেই। সেটি করতে গেলেই আগে রাষ্ট্রটির সামাজিক অনুষঙ্গে পরিবর্তন আনা আবশ্যক। রাজতন্ত্র ঠিক রেখে তেমন পরিবর্তন আনাও আবার ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ইরানের গণতান্ত্রিক অনুশীলন সৌদি আরবের জনগণকে গণতন্ত্রের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি ইরানের প্রতি ততটা নাখোশ নয়, কেবল জোটের স্বার্থেই ইরানকে এড়িয়ে চলছে। যেমন, ফ্রান্স ও ইতালি। ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তির পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রর কাছ থেকে পাওনা টাকার একটি অংশ দিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে এয়ারবাস ক্রয়ের বড়সড় চুক্তি করে। ইতালির সঙ্গেও নানান বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে দেশটি। এমনকি আমেরিকাসহ অন্য অনেক দেশের সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, বহু গণতান্ত্রিক দেশ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ভারতও এ বিষয়ে আমেরিকার অনুরোধ বারবার উপেক্ষা করেছে। ভারত তার বার শতাংশ জ্বালানি ইরান থেকে ক্রয় করে থাকে। রাশিয়াও ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ফলে ইরানের প্রতি সৌদি আরবের আগ্রাসী ইচ্ছার প্রতিফলন বহুভাবেই বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তবু সৌদিরা হাল ছেড়ে দেয়নি। ইরান রাষ্ট্রটি শিয়াঅধ্যুষিত হওয়ার কারণে সৌদি আরবের রাজতন্ত্রের জন্য সুবিধাই হয়েছে। তারা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ও আধিপত্য স্থায়ী করতে ইরানের সঙ্গে ধর্মীয় গোত্রভিত্তিক বিভাজনটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে দশকের পর দশক ব্যবহার করে আসছে। শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র ইরানের বিপক্ষে ধর্মীয় উন্মাদনা দিয়ে নিজের জনগণকে যত দিন ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারবে সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব, রাজতন্ত্রের জন্য তা ততটাই নিরাপদ।

সঙ্গত কারণেই বাকি বিশ্ব থেকে ইরানকে আলাদা করার জন্য সৌদি আরব এহেন কোনো নীতি নেই যা গ্রহণ করেনি। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে চুক্তি করার সপ্তাহ দুয়েক পরেই সৌদি আরব রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র-চুক্তি করে। ওই চুক্তি আমেরিকার রাজনৈতিক সমাজকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। ইরানের প্রতি ওবামা প্রশাসনের নরম-নীতিতে সৌদি প্রশাসন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল তখন। এমনকি প্রয়োজনে আমেরিকার পুঁজিবাজার থেকে সৌদি আরবের প্রায় লক্ষ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল।

বহু চেষ্টা করেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সিরিয়ার মাটিতে মার্কিন সেনাদের বুট নামাতে পারেনি সৌদিরা। ওবামা প্রশাসন মিশরের উগ্র সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান মুহাম্মদ মুরসী এবং লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুহাম্মদ গাদ্দাফিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সমর্থন দেওয়া ছাড়া এমন কিছু করেনি যেটি সৌদি আরবের পক্ষে যায়।

ওদিকে, আইএসকে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে ফলপ্রসূভাবে ব্যবহার করা যায়নি। বরং সেটি সৌদি আরব ও তার মিত্রগুলির জন্য ব্যাকল্যাস হয়ে দেখা দিয়েছিল। সৌদিরা বিশ্বাস করে, পশ্চিমা বিশ্ব যদি সিরিয়ায় সামরিক বুট পাঠিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আসাদকে সরিয়ে দিত পারত তাহলে আইএস সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ত না।

এ অবস্থায় সৌদিরা হোয়াইট হাউজে একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করছিল। ট্রাম্পের প্রতি মুসলিম বিশ্বের মনোভাব ধনাত্মক কিংবা ঋণাত্মক যাই হোক, সৌদি শাসকদের আস্থা রয়েছে তাঁর প্রতি। ট্রাম্পের বিদেশনীতি নিয়ে নিজ দেশে তাঁর কট্টর বিরোধী শিবির সরব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের হাজার বিলিয়ন ডলারের চুক্তি ট্রাম্পকে কেবল স্বস্তি এনে দিচ্ছে না, সেটি বরং বিদেশনীতিতে তাঁর প্রশাসনের বড় ধরনের সক্ষমতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এ সুযোগে সৌদি আরবও মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে কাছে লাগানোর চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।

হঠাৎ করেই কি সৌদি আরব কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল? সঙ্গে নিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন, মিশর এবং মালদ্বীপকে? কাতারের বিরুদ্ধে তারা যে অভিযোগ এনে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তা হল, সন্ত্রাসবাদে সমর্থনদান। বিশেষ করে ইয়েমেনে হুতিদের এবং মিশরের উগ্র সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয়।

বিশ্ব-সন্ত্রাসবাদে কাতারের একটি কৌশলী ভূমিকা রয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। যেমনটি রয়েছে অভিযোগকারী সৌদি আরবের বিরুদ্ধেও। বরং কাতারের মতো ছোট দেশগুলি সৌদি আরবের ইচ্ছার কারণেই সন্ত্রাসবাদে মদদ দিয়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বে বিনিয়োগের পাশাপাশি উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ কাতারের বিরুদ্ধে অনেক পুরাতন। যুক্তরাজ্যে কাতারের বড় ধরনের বিনিয়োগ থাকলেও উগ্রবাদ প্রসারের শঙ্কায় ফ্রান্স কাতারের বিশাল বিনিয়োগ ফিরিয়ে দেয়।

কেবল সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের কারণে একসময়ের নিজের সতীর্থকে তখন সৌদি আরব ছেড়ে দেয়নি। এখন ছেড়ে দেওয়ার পিছনেও রয়েছে আধিপত্যের লড়াই। সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক তেলের খনিটিতে কাতার ও ইরান অংশীদার। কৌশলগত বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমশ ইরান ও কাতারকে কাছে নিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর কাতার ও ইরানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। কাতার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখন ইরানের রিপাবলিকান গার্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন।

অধিকন্তু, কাতারভিত্তিক বিশ্বখ্যাত আল-জাজিরা সংবাদ মাধ্যমকেও সৌদি আরব হুমকি হিসেবে দেখছে। সংবাদ মাধ্যমটির নানা সমালোচনা সৌদি রাজতন্ত্রকে শুনতে হচ্ছে প্রায়শই। সৌদি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা তাই আল-জাজিরার অবস্থান পছন্দ করছেন না।

তাছাড়া কাতার এখন বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির অফিস রয়েছে সেখানে। উন্নত বিশ্বের বহু দেশে দেশটির রয়েছে হাজার হাজার ডলারের বিনিয়োগ। ওদিকে সৌদি আরবও নিজের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য একটি বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার ছেড়ে সৌদি আরবের পরিকল্পিত বাণিজ্যিক পরিবেশে কোম্পানিগুলির যাবার সম্ভাবনা কম। দেশটির রক্ষণশীল সামাজিক চরিত্রের কারণেই এটি আরও অসম্ভব।

অধিকন্তু, কাতার ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এটি তাদের মতো ছোট একটি দেশের জন্য বিশাল গর্বের বিষয়। ফুটবল বিশ্বকাপ উৎসব দেশটির অর্থনীতি ও সামগ্রিক অবস্থান আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে।

মজার বিষয় হল, সৌদি আরবের পাশাপাশি যে কয়েকটি রাষ্ট্র কাতারের সঙ্গে বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সকল ধরনের সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, সেসব দেশের প্রত্যেকটির রয়েছে নিজস্ব লাভ-লোকসানের হিসাব। মিশরের উগ্রবাদী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সৌদি আরব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। উপহার হিসেবে মিশরের সামরিক সরকারকে নানা অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে তারা। এ অবস্থায় মুসলিম ব্রাদারহুডকে কাতারের সমর্থনদান সৌদি আরবকে ক্ষুব্ধ করবেই। আবদেল ফাতা এল–সিসির সরকার কাতারের কাছ থেকে আগেকার মতো অর্থনৈতিক সহযোগিতাও পাচ্ছে না।

ওদিকে ইয়েমেনে থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আল হাদি সরকার কাতারের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাণিজ্যিক কারণে ও সৌদি আরবের প্রভাবে কাতারের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোর তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্পের জমানায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নতুন এক সমীকরণে প্রবেশ করতে চলেছে। বহু দশক ধরে চলে আসা মার্কিনিদের মধ্যপ্রাচ্য নীতিটির পরিবর্তন লক্ষণীয়। ট্রাম্প আমেরিকার আগেকার রাষ্ট্রপ্রধানদের মতো মধ্যপ্রাচ্য নীতি চালিয়ে নিতে ইচ্ছুক নন। কোনো রাষ্ট্র যদি আমেরিকার সুপার পাওয়ার ব্যবহার করতে চায়, সে ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রকে সঠিক অর্থনৈতিক মূল্য দিয়েই তা কিনতে হবে।

কেবল বন্ধুত্ব কিংবা বন্ধুকে টিকিয়ে রাখার মূল্যে নৈতিক দায় নিতে ট্রাম্পের আমেরিকা প্রস্তুত নয়।