নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

গৌতম রায়
Published : 8 May 2017, 04:54 AM
Updated : 8 May 2017, 04:54 AM

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, সংগঠনটি দেশজুড়ে নিরক্ষর ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে অক্ষরজ্ঞান দিয়ে সাক্ষর করবে। দেশের অন্যতম বড় ও প্রভাব-বিস্তারকারী সংগঠনটির ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ ধরনের একটি ইতিবাচক ঘোষণার কারণে তাদের সাধুবাদ জানাই।

ঘোষণা অনুসারে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাঁদের এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করার কথা। নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঘোষণাটি আশা করি সংগঠনটির প্রত্যেক নেতাকর্মী গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং সে অনুসারে বাস্তবায়নের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার কথা বলেছিল। ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ নিরক্ষরতামুক্ত হবে– এমন ঘোষণাও এসেছিল তখন। সেসময় সরকারের একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে তাঁরা এ কাজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঠে নামাবেন।

বিষয়টি নিয়ে ২০১১ সালে একটি ব্লগে এক লেখায় সংশয় প্রকাশ করেছিলাম যে, দেশে সাক্ষরতার হারের বৃদ্ধির যে ইতিহাস, তাতে ২০১৪ সাল তো দূরের কথা, ২০২৫ সালের মধ্যেও দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা সম্ভব নয়।

২০১৪ পেরিয়ে এখন ২০১৭ সাল। ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে দেশের সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ বলে বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবের সর্বশেষ তথ্য। সরকারি হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি হিসাবের বেশ গড়মিল পাওয়া যায়। তারপরও সরকারি হিসাবে যদি আস্থা রাখি, তাহলে বলতে হবে: দেশের ২৯ ভাগ মানুষ এখনও নিরক্ষর। প্রতি বছর যে হারে সাক্ষরতার হার বাড়ছে, তাতে দেশ ২০২৫ সালের পূর্বে নিরক্ষরতামুক্ত হবে কি না, ছয় বছর আগের সেই সংশয় আজও থেকেই যাচ্ছে।

দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করার মূল কাজটি সরকারের, কোনো শিক্ষার্থীদের সংগঠনের নয়; কিন্তু দেশ গঠনের এ ধরনের কার্যক্রমে জনতা, বিশেষত শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো সবসময়ই সরকারের সহায়ক হিসেবে সরাসরি কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান ঘোষণাটি তা-ই মনে করিয়ে দেয়।

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় থেকে শুরু করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা– প্রতিটি অর্জন ও ঘটনার পেছনে শিক্ষার্থী ও সংগঠনসমূহ সরাসরি জড়িত। দেশের দুর্যোগ ও সংকটকালীন মুহূর্তগুলোতেও শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার মতো বড় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে দেশের সবগুলো সংগঠন এগিয়ে আসবে– এ আশা অযৌক্তিক নয়।

তাদের এ ঘোষণার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তিনি যথার্থভাবেই বলেছেন:

"নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলা গড়তে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিকল্প নেই।"

তাঁর কথাই যদি ভিত্তি ধরি, তাহলে এ প্রশ্ন তোলা কি অসমীচিন হবে যে, ২০০৯ সালের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশের বিষয়টিকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের আওতায় রাখেনি, কেবল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল?

মন্ত্রী আরও বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া এত বড় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এখানেও প্রশ্ন তোলা যায়, নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকার কী ধরনের বড় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে?

দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করা কখনও সম্ভব হবে না, যদি সরকার আন্তরিকভাবে তা না চায়। এটি একটি বড় কর্মযজ্ঞ। উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও সততার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করা গেলে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করা সম্ভব। কিউবা এর উদাহরণ।

আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্র ও পরিধি বিশাল। এক প্রাথমিক স্তরেই যত শিক্ষার্থী রয়েছে, অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাও এত নয়। এত বড় শিক্ষার আয়োজনের জন্য যে পরিমাণ বাজেট থাকা প্রয়োজন, সে পরিমাণ বাজেট কখনও শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করা হয় না। এর বাইরে গিয়ে আলাদাভাবে দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণ করলে এর জন্য বাড়তি বাজেট রাখা প্রয়োজন। বর্তমান মেয়াদে সরকার এ বাবদ দৃঢ় কোনো উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি।

ছাত্রলীগ সভাপতি অবশ্য এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন:

"এই কর্মসূচির জন্য কোনো বাজেট নেই। আমরা কোনো বাজেট চাই না। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো বাজেট ছিল না। কোনো বাজেট দিয়ে আন্দোলন হয়নি, তেমনি আমাদের এই নিরক্ষরতামুক্তি অভিযান কর্মসূচিতেও কোনো বাজেট নেই।"

অত্যন্ত প্রশংসনীয় বক্তব্য। তাদের এ আন্দোলনের মাধ্যমে যতজনকে নিরক্ষরতামুক্ত করা যাবে, ততজনের বোঝা সরকারের কাঁধ থেকে নামবে। তিনি অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন:

"আমরা যদি একজন নিরক্ষর লোককেও অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি, তাহলে আমাদের অভিযান সফল হবে।"

প্রতিটি বিভাগে খুঁজে খুঁজে নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করার যে দৃঢ় ঘোষণা তাঁর কাছ থেকে পূর্বে এসেছে, এর সঙ্গে অবশ্য সর্বশেষ বক্তব্যটি মানানসই নয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বরং উৎসাহিত করব এ বলে যে, আপনারা যে ঘোষণাটি দিয়েছেন, দেশ নিরক্ষরতামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সে ঘোষণাটিই বহাল রাখুন। শিক্ষার্থীথের একটি সংগঠনের নেতাকর্মী হিসেবেই শুধু নয়, দেশের একজন নাগরিক হিসেবেও দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করতে আপনাদের ভূমিকা যতদূর সম্ভব বিস্তৃত করুন।

এখানে এটিও মনে রাখার বিষয় যে, সাক্ষরতা এমন কোনো দক্ষতা নয় যে একবার সাক্ষর হলে তা চিরদিন স্থায়ী হবে। সাক্ষরতা অর্জনের পর চর্চা না করা হলে লেখাপড়া ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়।

আমাদের নিশ্চয়ই সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলনের (Total Literacy Movement) কথা মনে আছে! 'প্রদীপ্ত পাবনা', 'উজ্জীবিত নেত্রকোনা'– এরকম বাহারি স্লোগানে দেশের প্রতিটি জেলায় ঘটা করে দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করার একটা কাণ্ড করা হয়েছিল। সেখানে টাকার অপচয় ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি। কর্মসূচি চলাকালে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং কিছুদিন পরেই সেই নিরক্ষরতামুক্ত এলাকাগুলোতে শত শত নিরক্ষর মানুষের সন্ধান পাওয়া যেত।

একটি জেলাকে পুরোপুরি নিরক্ষরমুক্ত না করে আগেভাগে ও তড়িঘড়ি করে ঘোষণা দেয়া যেমন এর একটি কারণ। পাশাপাশি যারা তখন সাক্ষর হয়েছিল, তাদের একটি বড় অংশ পরবর্তী সময়ে লেখাপড়া ভুলে গেছে। সাক্ষরতার সঙ্গে ব্যবহারিক দক্ষতার সমন্বয় না করতে পারা এবং লেখাপড়ার পরবর্তী চর্চাগুলো চালিয়ে যেতে না পারা এর অন্যতম কারণ।

গণসাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত ২০১৬ সালে প্রকাশিত 'Literacy, Skills, Lifelong Learning – SDG4 in Bangladesh: Where are We' শিরোনামে গবেষণায় দেখা গেছে, সাক্ষরতার অবস্থার সঙ্গে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ইতিবাচক সহসম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় এ-ও দেখা গেছে, পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে এমন মানুষদের ৬৭.৮ শতাংশ সাক্ষর, অষ্টম শ্রেণি পাসকৃতদের ৮৭.৭ শতাংশ ও দশম শ্রেণি পাসকৃতদের ৯৮.৪ শতাংশ সাক্ষর। তার মানে পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণি পাস করেছে এমন মানুষদের যথাক্রমে প্রায় ৩২, ১২ ও ২ শতাংশ মানুষ পরবর্তী সময়ে নিরক্ষর হয়ে গেছে।

সুতরাং সাক্ষরতা অর্জন সহজতর কোনো বিষয় নয়; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রকেই এর সার্বিক আয়োজনের দায়দায়িত্ব নিতে হয় এবং প্রক্রিয়াটি দিনের পর দিন চলমান রাখতে হয়।

তবে সরকার চাইলে জনমানুষকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করে তাদের সহায়তা নিয়ে নিরক্ষরতামুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। অংশগ্রহণমূলক এ ধরনের উদ্যোগ টেকসই হয়। জনগণ যদি কোনো উগ্যোগকে নিজস্ব বলে মনে করে, সেখানে ব্যর্থতার হার কমে যায়।

সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলনের মূল ধারণটি খারাপ ছিল না, কিন্তু এটি পরবর্তীতে লাগামহীন একটি প্রকল্প হয়ে যায়। সরকার এমনকি যথাযথ পরিকল্পনা করে দেশের শিক্ষার্থীদের এ কাজে অংশগ্রহণ করাতে পারলে দ্রুতই দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করা সম্ভব। দেশে বর্তমানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষাস্তরে লেখাপড়া করছে। সেখানে তাদের নানা ধরনের কোর্স-সম্পর্কিত অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়। অ্যাসাইনমেন্টের বিকল্প হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যদি বছরে দুজন করে মানুষকে সাক্ষর করতে বলা হয়, তাহলে বছর পাঁচেকের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নিরক্ষর ব্যক্তির সংখ্যা কমে যাবে।

সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করাও শিক্ষার্থীদের অন্যতম দায়িত্ব। সরকার এখানে কেবল সমন্বয়ের ভূমিকাটুকু পালন করলেও অনেক বড় পরিসরে কাজ করা সম্ভব।

আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অনেক চমকদার ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন হিসেবে নিরক্ষরদের সাক্ষর করার যে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সেটি আন্তরিকভাবে দিয়েছে নাকি চমক দেখানোর জন্য– সে মূল্যায়ন হবে ভবিষ্যতে। তারা যদি সত্যিকার অর্থেই কাজটি করতে পারে, তাহলে এর জন্য সাধুবাদ পাবে অবশ্যই। শিক্ষা-আন্দোলনেও আসবে নতুন মাত্রা।

আন্দোলন বলতে আমরা অনেকে কেবল মিছিল-মিটিং বুঝে থাকি, কিন্তু দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করাও একটি আন্দোলন। এ কাজে সফল হলে তো বটেই, সফল না হলেও তাদের প্রচেষ্টা যদি আন্তরিক বলে দৃশ্যমান হয়, তাহলে সংগঠনটির ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে এবং এ ধরনের কাজ তারা আরও বেশি বেশি করুক– সেটিও চাইবে মানুষ।

আর যদি তারা তাদের ঘোষণা বাস্তবায়ন না করতে পারে, তাহলেও মানুষ তাদের সেভাবেই মূল্যায়ন করবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে তাদের এরকম ঘোষণা মানুষ গুরুত্বসহকারে নেবে না।

২০১০ সালের দিকে দেশ নিরক্ষরতামুক্তকরণে ছাত্রলীগকে মাঠে নামানো হবে এমন ঘোষণা কিন্তু ছাত্রলীগ নিজেরা দেয়নি, দিয়েছিলেন মন্ত্রীমহোদয়। সেজন্য ওই ঘোষণার দায় ছাত্রলীগের নয়। কিন্তু এবার তারা নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছে, সুতরাং বাস্তবায়নের দায়ও তাদের।

প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে শিক্ষার্থীদের বাম সংগঠনের দায়দায়িত্বের কথাও। দৃশ্যমান বাস্তবতা হল শিক্ষার্থীদের নানা দাবিদাওয়া নিয়ে বামপন্থী সংগঠনগুলোই বেশি সোচ্চার। দেয়াললিখন থেকে শুরু করে প্রকাশনা বের করা, আলোচনা সভার আয়োজন করা, মিছিল-মিটিং করা– এগুলোতে বাম সংগঠনগুলোই এগিয়ে। লেখাপড়ার উপকরণের দাম বাড়লে কিংবা খাবারের মান, সিট ভাড়া, বেতন বৃদ্ধি– এসব বিষয় নিয়ে তারাই আন্দোলন শুরু করে, পরে অন্যরা যুক্ত হয়– এ সাধারণ বাস্তবতা।

পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বাম সংগঠনগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা শিক্ষা বিষয়ে দৃশ্যমান কী অবদান রাখতে পারছে বা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে? মনে রাখতে হবে, শিক্ষা-আন্দোলন আর শিক্ষার্থী-আন্দোলন কিন্তু এক বিষয় নয়। বামপন্থী সংগঠনগুলো শিক্ষার মৌলিক ও তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং মিছিল-মিটিং নিয়ে যতটা আগ্রহী, প্রায়োগিক দিকগুলোতে কাজের বিষয়ে তারা ততটাই পিছিয়ে। শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ নিয়ে তাদের প্রচুর প্রতিবাদ ও আলোচনা শোনা যায়। এসব নিয়ে কাজ করা বা আলোচনা করা ভালো বিষয়। তাদের এ ধরনের প্রতিবাদমূলক অবস্থান এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। কিন্তু দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করা বা এরকম প্রায়োগিক কোনো বিষয় নিয়ে তারা কী উদ্যোগ নিয়েছে?

সরাসরি প্রায়োগিক কাজের সঙ্গে যুক্ত না থেকে নানা বিষয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ কর্মসূচি তুলনামূলক সহজ কাজ। বাম সংগঠনগুলো অবশ্যই তাত্ত্বিক নানা বিষয়ে সোচ্চার থাকবে, কিন্তু প্রায়োগিক বিষয়গুলোতেও তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দেশ বদলাতে হলে এর বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দেখাদেখি বাম সংগঠনগুলো যদি সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিয়ে দেশের একটি ইউনিয়নকেও নিরক্ষরতামুক্ত করতে পারে, তারা বাহবা পাবে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পতনের পর বামদের বিষয়ে অনেকের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, হয়তো সেখানে আস্থা ফিরে আসতে পারে। তাছাড়া সুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো।

দেশ নিরক্ষরতামুক্ত করতে শিক্ষার্থীরাই সবার আগে এগিয়ে আসুক। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে নেতৃত্ব শিক্ষার্থীরা এর আগে দিয়েছে, দেশের সামাজিক গুণগত পরিবর্তনের নেতৃত্বেও তারা থাকুক।