একজন মৌমিতা আফরিন সীমা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি

সাঈদ ইফতেখার আহমেদসাঈদ ইফতেখার আহমেদ
Published : 21 March 2017, 04:40 AM
Updated : 21 March 2017, 04:40 AM

গত বছরের কোনো এক সময় এমিরাটসের একটি ফ্লাইটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছিলাম। ঢাকা থেকে পরবর্তী গন্তব্য দুবাই। বিমানে ওঠার পর আমার পাশের সিটে এক তরুণী বসলেন। বয়স আনুমানিক ২৩-২৪ হবে, মাথায় হিজাব। আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছি আমি? জানালাম, যুক্তরাষ্ট্রে। পাল্টা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি? জানালেন, সৌদি আরব।

সৌদি আরব শুনে আগ্রহী হয়ে উঠলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, "কেন যাচ্ছেন ওখানে, চাকরি নাকি পরিবার ওখানে থাকে?"

বললেন, "কোনটাই না, প্রথমবার যাচ্ছি।"

একটু অবাক না হয়ে পারলাম না। বললাম, "যদি কিছু মনে না করেন, জিজ্ঞাসা করতে পারি, কেন যাচ্ছেন?"

উত্তর দিলেন, "না ভাই মনে করব কেন, আমি যাচ্ছি জেদ্দাতে একটি পরিবারের গৃহকর্মের সাহায্যকারী হিসেবে, এটি হবে আমার নতুন চাকরি।"

কথায় কথায় জানালেন এর আগে তিন বছর কাজ করেছেন জর্দানে। জিজ্ঞাসা করলাম, জর্দানে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? বললেন, "কাজের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল। বাড়ির 'গৃহকর্ত্রী' খুব ভালো মহিলা ছিলেন। বাড়ির লোকজনের সাথে এক টেবিলে বসে খেতাম, কোথাও বেড়াতে গেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেত। এমনকি আমার মুখে দেয়া চামচেও ওরা খেত। বাড়ির বাচ্চাদের সাথে আমার খুব ভাব হয়েছিল।"

"তাহলে ওখান থেকে চলে আসলেন কেন?", আমার প্রশ্ন।

বললেন, "বাড়ির গৃহকর্ত্রী হটাৎ মারা গেলেন, তারপর উনার মেয়ে যখন সংসারের হাল ধরলেন, তখন সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। 'কত্রী' বেঁচে থাকতে আমাকে বেশি কাজ করতে হত না; কিন্তু বাড়ির মেয়ে পরিবারের দায়িত্ব নেবার পর আমাকে অনেক কাজ করতে হত; একপর্যায়ে আর নিতে পারছিলাম না, তাই চাকরি নবায়ন না করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।"

কথায় কথায় জানালেন ওনার বাড়ি যশোর জেলার এক উপজেলার সীমান্তবর্তী এক গ্রামে। ওখানে ওনার পক্ষঘাতগ্রস্ত বাবা (যাকে উনি 'আব্বু' বলে ডাকেন) থাকেন, আর থাকেন মা এবং এক মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই। ফলে সংসারের জোয়াল টানার দায়িত্ব পড়ে তরুণীর ঘাড়ে, তিনি সেটা হাসিমুখেই নিয়েছেন। আর এ নেওয়ার ফলে প্রথম দফায় জর্দান যাওয়া। তবে দেশে ফেরার পর ভাগ্য উনার খুব বেশি সহায় হয়নি। বললেন, "দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি। অপারেশন করাতে হয়; আর নিজের আর আব্বুর চিকিৎসা বাবদ জর্দানে কাজ করে যে টাকা জমা করেছিলাম তা শেষ হয়ে যায়। আর সব টাকা শেষ হয়ে যাবার ফলেই এবার সিধান্ত নিই সৌদি আরব যাব, তিন বছর সেখানে কাজ করব।"

তারপর, আমার করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, "জমানো টাকা নিয়ে দেশে ফিরব, দেশে এসে সে টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করব। এরপর আর কোথাও কাজ করতে যাব না… বাংলাদেশের খুব দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। তিন বছর পর বাংলাদেশে আরও উন্নত পর্যায়ে চলে যাবে, তখন দেশের বাইরে গিয়ে কাজ না করলেও হবে।"

বললাম, "সৌদি আরব যাচ্ছেন, ভয় পাচ্ছেন না, ওখানে গৃহশ্রমিকদের উপর নানা ধরনের অত্যাচারের কথা শোনা যায়।"

বললেন, "ভয় একটু পাচ্ছি না তা না, তবে আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন, কারণ আমি দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ি, প্রতিদিন কোরান পড়ি। আল্লাহ আমার সাথে সবসময় আছেন, উনি সাথে থাকলে ভয় কি বলেন?"

আরও বললেন, "দোয়া করবেন যেন একটা ভালো বাসায় কাজ পড়ে।"

তিনি আরও যা জানালেন তা হল তিনি দুবাই থেকে জেদ্দাগামী ফ্লাইট ধরবেন, এবং জেদ্দাতে কোম্পানির লোক এসে ওনাকে নিয়ে যাবেন। সেখানে পাসপোর্ট তিন বছরের জন্য রেখে দেওয়া হবে, যেদিন কাজ শেষ করে দেশে ফিরবেন সেদিনই শুধু পাসপোর্ট ফেরত পাবেন।

আলাপচারিতায় দুবাই চলে আসল। বিমান থেকে নামার আগে জিজ্ঞাসা করলাম, "এত কথা হল, আপনার নামটা তো জানা হল না।"

তরুণী বললেন, "আমার নাম মৌমিতা আফরিন সীমা।"

আমি একটু অবাক হয়ে তাকালে বললেন, "কেন বিশ্বাস হচ্ছে না, এই দেখেন" বলে পাসপোর্ট দেখালেন।

আরও বললেন, "মধ্যপ্রাচ্যে কিন্তু আমি একা যাচ্ছি না, বিমানে খেয়াল করে দেখেছেন, কী পরিমাণ মহিলা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে।"

আমি একবার বিমানের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম, দেখলাম বিমানভর্তি পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিকও যাচ্ছেন কাজ করতে।

বিমান থেকে নামার আগে তরুণীর হাতে আমার একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বললাম, "এখানে আমার যুক্তরাষ্ট্রের ফোন নম্বর এবং ইমেইল আছে। কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে আপনি যে কোনোভাবে ফোন বা ইমেইল করার চেষ্টা করবেন, কিছু যদি করার থাকে চেষ্টা করব করতে।"

তিনি বললেন, "অনেক ধন্যবাদ, সমস্যায় পড়লে অবশ্যই যোগাযোগ করব।"

যদিও তিনি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, কোনো সমস্যা হবে না।

না, সীমার কাছ থেকে কোনো ইমেইল বা ফোন আমি পাইনি। তিনি বলেছিলেন, তিনি যখন জর্দানে ছিলেন তখন সে বাড়ির 'কর্ত্রী' তাঁকে মাসে একবার ফোন করতে দিতেন। যেহেতু তাঁর কাছ থেকে কোনো ফোন বা ইমেইল আসেনি আমি ধরে নিতে চাই সীমা ভালো বাড়িতে আছেন, তাই তাঁর ফোন করার দরকার হয়নি। আমি এটা ভাবতে চাই না যে, সীমা এমন বাড়িতে আছেন, যেখান থেকে ফোন করারই কোনো সুযোগ নেই।

বিমান থেকে নেমে দুবাই এয়ারপোর্টে ট্রানজিটের সময় যখন এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছিলাম তখন এ রকম অনেক মৌমিতা আফরিন সীমাকে দেখছিলাম, যারা দেশ থেকে ছুটে চলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে তাদের শ্রমে-ঘামে, এমনকি মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের বিনিময়ে তিলে তিলে তাদের মায়ের ভূমিকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে।

শুধু কি মধ্যপ্রাচ্যেই সীমারা কাজ করছেন? এ রকম লাখ লাখ সীমা দেশে ফরমাল নানা অর্থনৈতিক সেক্টরে দিনরাত কাজ করে চলেছেন, দেশটাকে গড়ে তুলছেন একটু একটু করে। আর অর্থনীতিতে নারীদের এ ব্যাপক ভূমিকার ফলে হাজার বছর ধরে ফরমাল অর্থনীতির যে প্যাটার্ন চলে আসছে এত বছর ধরে, সেটিই বদলে গেছে মৌলিকভাবে।

বাংলা অঞ্চলের গত এক হাজার বছরের ফরমাল অর্থনীতির যে প্যাটার্ন সেটির দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে আমরা দেখব ফরমাল অর্থনৈতিক কাঠামোতে মূখ্য ভুমিকা পালন করে আসছে পুরুষ, যার ফল হল পুরুষতন্ত্রের জন্ম। নারীর মূল ভূমিকা ছিল গৃহস্থালিসহ 'ইনফরমাল' সেক্টরে। ইউরোপ-আমেরিকার দিকে তাকালেও মোটা দাগে একই চিত্র। ফলে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারানির্ভর অর্থশাস্ত্রের জন্ম হয়েছে পাশ্চাত্যে, যার প্রভাব পড়েছে আধুনিক অর্থনীতিবিদদের চিন্তাধারাতেও।

জিডিপি, জিএনপি, জিএনআইসহ অর্থনীতি পরিমাপের যতগুলো সূচক রয়েছে, সবগুলোতেই গৃহস্থালিসহ 'ইনফরমাল' সেক্টরসমূহে নারীদের যে ভূমিকা তা বাদ দিয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিমাপ বা সামগ্রিকভাবে একটি দেশের অর্থনীতিকে পরিমাপ করা হয়। ফলে ফরমাল অর্থনৈতিক সেক্টরের দিকে তাকালে যে বিষয়টা এতদিন ফুটে উঠত, তা হল অর্থনীতিতে পুরুষদের একচেটিয়া আধিপত্যের চিত্র।

ধ্রুপদী অর্থনীতির চর্চা যারা করেন তাদের চিন্তার বাইরে যে বিষয়টা ছিল তা হল একটি দেশের ম্যাক্রো অর্থনীতিতে পুরুষ আধিপত্যের এ চিত্রটি কখনও বদলাবে, এবং পুরুষের পরিবর্তে নারীশ্রম হয়ে উঠবে অর্থনীতির মূল নিয়ামক।

শ্রমজীবীসহ সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নারীসমাজ এমনই এক অভাবনীয় কাণ্ড করে বসেছেন বহু ঝানু অর্থনীতিবিদের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝে ওঠার আগেই। অর্থাৎ হাজার বছর ধরে চলে আসা অর্থনীতির যে ধারা তা ভেঙে বাংলাদেশে তারাই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছেন। অথবা এককথায় বলতে গেলে ইংরেজিতে যাকে বলে 'Feminisation of economy', সেটিই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের বাস্তবতা। অর্থনীতিতে এই যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটে গেছে এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই রয়ে গেছি অজ্ঞ।

জিডিপি, জিএনপি বা জিএনআই যেভাবেই পরিমাপ করা হোক না কেন জাতীয় অর্থনীতিতে সিংহভাগ অবদান আজ নারীরাই রাখছেন, যেটি আমাদের দেশে অতীতে কখনও ঘটেনি। এর মানে, সহজ কথায় আজকে যে ২২৬.৭৬ বিলিয়ন ডলারের যে জিডিপি (নমিনাল) বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে তার সিংহভাগের পেছনে অবদান হল নারীর। এর সঙ্গে যদি গৃহস্থালিসহ নানা ইনফরমাল সেক্টরকে যোগ করা হয় তাহলে শুধু যে জিডিপির পরিমাণ বাড়বে তা-ই নয়, অর্থনীতিতে নারীর আনুপাতিক অবদানের পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যাবে। আর নারী সমাজের মধ্যেও এর মূল কৃতিত্ব হল মৌমিতা আফরিন সীমাদের মতো নারীদের, যারা নিজেদের শ্রমে আর ঘামে প্রতিনিয়তই বড় করে তুলছেন জিডিপির আকার।

বাংলাদেশে আজ যে সাত শতাংশের উপরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এর সিংহভাগ কৃতিত্ব তৈরি পোশাক শিল্প আর প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনদের পাঠানো রেমিট্যান্স। গত বছর আমাদের ৩২ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রিক রপ্তানির ২৫ বিলিয়ন ডলারের উপরেই এসেছে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। পোশাক খাতের ৮০ শতাংশ শ্রমশক্তিই হল নারীর। এ নারী শ্রমিকদের প্রতিটি সুচ-সুতার ফোঁড়েই গড়ে উঠছে এক নতুন বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি অনান্য শিল্প ও কৃষি খাতেও নারীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

মৌমিতা আফরিন সীমাদের গল্প, বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পটা যদি এখানেই শেষ করা যেত তাহলে হয়তো অনেকেই খুশি হতেন। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ করা যাচ্ছে না। একটা সমস্যা রয়ে গেছে গল্পটা এখানে শেষ করার ক্ষেত্রে।

হাজার বছর ধরে যেহেতু মনে করা হত ম্যক্রো অর্থনীতিতে পুরুষরা বেশি অবদান রাখেন, তাই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সম্পদবণ্টনের আইনগুলি গড়ে উঠেছিল এমনভাবে যা পুরুষদের সম্পত্তির ভোগের উপরে অধিক অধিকার প্রদান করেছিল। আর বণ্টনের ক্ষেত্রে পুরুষদের এ অধিকারের পাহারাদার হিসেবে কাজ করত রাষ্ট্রযন্ত্র আর রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তাকারী হিসেবে সব দেশেই ছিলেন ধর্মবেত্তাগণ।

সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে পুরুষরা মূল ভূমিকা পালন করে– এ পুরনো ধারণার উপর ভিত্তি করে রচিত আইনগুলি এখনও বাংলাদেশে রয়ে গেছে। তাই সিংহভাগ অবদান রেখেও যখন সম্পদবণ্টনের প্রশ্নটি আসছে, তখন পুরনো আইনের কারণে সে সম্পদের খুব অল্প অংশই পাচ্ছেন নারীরা। বাস্তবক্ষেত্রে আইন থাকা সত্ত্বেও সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রবল প্রভাবের কারণে সম্পদের সে অংশটিও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা সেটা পান না।

বাংলাদেশে সম্ভবত সবচেয়ে কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছেন সনাতন (হিন্দু) ধর্মালম্বী নারীরা। একদিকে তাদের উপর যেমন রয়েছে সাম্প্রদায়িকতার চাপ, আরেকদিকে রয়েছে তাঁদের স্বধর্মালম্বী পুরুষ কর্তৃক বিনির্মিত পুরুষতন্ত্রের ভয়াবহ চাপ। ফলে ভারত ও নেপালে থাকলেও বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের আজও 'বিবাহ বিচ্ছেদ'এর অধিকার নেই। তেমনি স্বামী বা পিতার সম্পত্তিতেও নেই তাদের কোনো অধিকার। অপরদিকে যে কোনো সরকারই হিন্দু নারীদের জন্য আইন করতে দ্বিধাগ্রস্ত। কেননা তারা মনে করে এতে হয়তো 'অন্য' ধর্মে হস্তক্ষেপ করা হবে। যদিও সব সরকারের লোকজনই হিন্দু জনগণের উপর নানাভাবে হস্তক্ষেপ করতে সিদ্ধহস্ত।

মুসলিম নারীসমাজের বিবাহ বিচ্ছেদের যে সীমিত অধিকার 'মুসলিম পারিবারিক আইনে' রয়েছে সেটি প্রবর্তন করেছিলেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান, যার জন্য তখন ইসলামপন্থী দলগুলোর পাশাপাশি অনেক তথাকথিত আলেম 'আইয়ুব খান ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছেন' বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের মুসলিম নারীদের পক্ষে সবচেয়ে 'বৈপ্লবিক' আইন যেখানে কাবিননামাতে যদি নারী বিচ্ছেদের অধিকার চেয়ে নেন তাহলেই তিনি বিচ্ছেদের অধিকার পাবেন।

কিন্তু পুরুষের যে কোনো সময় 'কারণ বা অকারণে' নারীকে তালাক দেওয়ার অধিকার রয়েছে। অপরদিকে সম্পত্তিতেও নারীর অধিকার রয়েছে অত্যন্ত সীমিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সামরিক শাসক আইয়ুব খান-পরবর্তী বাংলাদেশের কোনো সরকারই সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নারী সমাজের পক্ষে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যা নারীদের নায্যতা এবং সমধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।

আজ যদি সমাজে নায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে নারীর সম্পত্তিতে অধিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয়। কারণ সার্বিকভাবে ম্যাক্রো অর্থনীতিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি অবদান রাখছেন। কিন্তু নারীরা নায্যতা চাইছেন না, তাঁরা চাইছেন সম-অধিকার।

বিবেক এবং মানবিকতা বোধসম্পন্ন প্রত্যেকের আজ তাই সম্পত্তি, বিবাহ বিচ্ছেদসহ সব পারিবারিক আইনে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে 'ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড' চালু করার দাবিতে সোচ্চার হওয়া উচিত, যা কিনা সব ধর্মালম্বী নারীর আইনগত অধিকার নিশ্চিত করবে। নিশ্চিত করা উচিত সমান মজুরির বিষয়টিও।পাশাপাশি, সিডো সনদের (CEDAW) যে সব ধারায় বাংলাদশের কোনো সরকারই অণুস্বাক্ষর করেনি শুধুমাত্র সমাজে নারী-পুরুষের আপেক্ষিক সম-অধিকারের প্রতিফলন থাকায়, সে সব ধারায় অণুস্বাক্ষর করার বিষয়টি নিয়েও জোর দাবি তোলা উচিত।