সাতটি রুবাই

omor_sams
Published : 24 August 2012, 03:04 PM
Updated : 24 August 2012, 03:04 PM

১ নজরুল ইসলাম

নজরুল ইসলামের স্বকণ্ঠে তাঁরই গযল শুনার জন্য নিচে ক্লিক করুন:

এতো বড়ো কলজে – তবু দুখু মিয়া – দারিদ্র্য কি দ্যায় সম্মান?
দুঃখই পেলে। তোমার প্রাতিস্বিক মৌলিক দান,
তা কি বোঝে জনতারা।–নিরঙ্কুশ উদারতা, দ্রোহ , গান , কাব্য ,সাম্য ,ভ্রাতৃবোধ ?
তোমাকে বিক্রি করে পণ্য-তেজারক, হায়! তোমার অমর্ত্য গানে বলিউডী তান ।

১.নজরুল ইসলাম বেঁচে থাকতে যে গান বেঁধেছিলেন এবং তাঁর সান্নিধ্যে আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, শচীনদেব বর্মন , জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী যে ভাবে গেয়েছিলেন, আজকাল সে ভাবে গাওয়ার মতো গুণী গাইয়ের বড়ো অভাব। ফলে একালে সুরগুলো অপভ্রংশে স্খলিত।

২ প্যার খাঁর তিলক কামোদ উদ্ভাবন

তিলক কামোদ, উস্তাদ বেলায়েত খানের সেতারে শোনার জন্য নিচে ক্লিক করুন:

গম-ভাঙ্গানিয়া কে গ্রাম্য মেয়ে, — শোনালো মধুর সুর যখন দুপুর বেলা উত্তপ্ত রোদ ;
জানে না সে সাধারণী, — কিন্তু উচ্চারণে পাই অনন্তের নকীব আমোদ —
যেমন ভাস্কর জানে খণ্ডিত মর্মরের গূঢ় সম্ভাবনা , চিত্রী পায় মানে শাদা শূন্যতায় ,
দৃপ্ত স্বরে তেমনি আমার মনে উদ্ভাসিত হলো , উচ্চকিত তিলক কামোদ ।

এক দিন প্যার খাঁ গ্রাম্যপথে বিচরণ করছিলেন – কোন কুটিরে গ্রাম্য-স্ত্রিলোক গ্রাম্যসুরে একটি ছড়া গাইতে গাইতে যাঁতাতে গম পিষছিলো । প্যার খাঁ —- সেই সহজ মেঠো সুরে বড়ো বড়ো রাগিণীর এক অযত্নসুলভ মিশ্রণ রয়েছে — তাই অবলম্বন ক'রে তিনি তিলক কামোদ রাগিণী তৈরী করলেন ।
—- বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, হিন্দুস্তানি সংগীতে তানসেনের স্থান

৩ বড়ে গোলাম আলি খানের মোনাজাত

বড়ে গোলাম আলী খানের কন্ঠে ভৈরবী ঠুমরী:

"ডর লাগে, হাওয়ার সঙ্গে খেলা – পবন কি কারো ক্রীতদাস!", বললেন গোলাম আলি খান ,
"কখন ফসকে যায় শ্রুতি কিংবা লয় ! — আল্লাহ্‌ই রাখে সম্মান ।"
তবুও আদম আমি , বেফিকির সাধনায় সদা নিয়োজিত –
গাই গান অনন্তে , রুহূকে পায় সে যেন কণ্ঠের আকুলতা — বিধান, নিধান ।

৪ ভাষার সীমা , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

"ধুয়ে যায়, ক্ষ'য়ে যায়, এমন কি মরে যায় ভাষা; ভাষায় শিল্প কি কালোত্তীর্ণ হবে?
নতুন যুগের বাণী এলে, কথ্য আদল – পুরনো চলন কি! আর তার সবে ?
শ্রুতিকল্প বদলায় – যদিই অন্তরে তার না থাকে মর্মার্থ ভাষার অতীত !"
শ্রী রাণী চন্দকে রবীন্দ্রনাথ , বললেন – মুখোমুখি – ভাষার নীরবে ।

সাহিত্য বড়ো ক্ষণস্থায়ী ; — ভাষা যে নদীর কলস্রোতের মতোই , কেবলি যাচ্ছে আর নূতন আসছে । আজকের ভাষা কাল থাকছে না । তাই আমিও মেনে নিয়েছি , দুঃখ নেই মনে । ——– আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , শ্রী রাণী চন্দ

৫ Higg's Boson

ছয় দিনে সৃষ্টি নাকি করেছিলে প্রভু , সপ্তম দিনে বিশ্রাম ।
চোখ ঠেরে কেউ-কেউ সেই মর্ম মানে , যদিও বিক্ষুব্ধ যুক্তি হানে তৃপ্তি-সুপ্তি-নিদ্রা, ঘাম
ঝ'রে যায় অনিশ্চয়তায় । Big-Bang স্বীকার্য , শেখায় কি ক'রে জন্ম নিলো স্থান-কাল-ব্রহ্মান্ড ।
Higg's Boson পেলে পরিত্রাণ , বুঝি বস্তু ক্যামনে জন্মায় – হতে জ্যোতি, বিদ্যুদ্দাম ।

Higg's Boson– পদার্থ বিজ্ঞানের প্রস্তাবিত মৌলিক কণা নিরীক্ষাগারে ধরা পড়েছে , জুলাই ,২০১২ । Big Bang-এর জ্যোতি বিস্ফোরণের পরে শক্তি থেকে কি ভাবে কণাসমূহ ভর পায় তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় Higg's Boson হেতু । সোজা ভাষায় বস্তু কি ভাবে হলো তার যৌক্তিক হদিশ পাই আমরা ।

৬ লাবণ্য দাশ


মৃত-শায়িত জীবনানন্দের পাশে লাবণ্য দাশ ও অন্যান্যরা

বাদামী সেপিয়া থেকে উঠে – বিহ্বল বেদনায় দেখে,
তখনো বিদগ্ধ তাঁর মুখ, মৃত্যুর পর – বৎসর, বৎসর একই খাটে থেকে,
একই জল, একই বায়ু, অভিন্ন অন্ন খেয়ে বোঝে নাই লাবণ্য দাসঃ
সে যে কবি, সকলেই নয়। কুড়িটি বছর পরে যদি দ্যাখা হয়! যদি কিছু শেখে!

৭ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শিল্পী হতে নয়, আগে শিল্পী হয়ে এসো — অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুধু দেখে-দেখে মকশো করো, অন্ধ হয়ে আঁকো শুধু আমার মতন, –
বলি নি তো! আত্মা আর কল্পনা – স্বগত! সক্রিয় সত্তা তো জ্বলজ্বলে হীরার মতন।
শুধু ডৌল নয়, জাড্য নয়, বর্ণ নয়, রেখা নয়! আত্মার আলোকে দেখে, দেখে-শিখে লেখ,
চৈতন্যে অবিরাম সংগ্রাম! হতে নয়, শিল্পী হে এসো – চিনে নেবে সত্তাকে স্বজন অবন ।