শত ভাষার ফুল ফুটুক

জাহান-ই-গুলশান
Published : 27 Feb 2017, 03:23 AM
Updated : 27 Feb 2017, 03:23 AM

শৈশবে-কৈশোরে কেউ ঢাকায় থাকে জানলে আমি তাকে খুব সমীহ করতাম। সে সময় চারপাশ থেকে আমার ধারণা জন্মেছিল যে, যারা ঢাকায় থাকে তারা অনেক 'স্মার্ট' হয়, সুন্দর করে কথা বলে। তাদের চেয়ে আমরা 'পিছিয়ে-থাকা, কম-জানা' মানুষ। কেননা আমরা ছোট্ট উপজেলায় থাকি। রংপুরের টোনে কথা বলি। শিক্ষকরাও ক্লাসে বলতেন, "তোমরা তো রাস্তাকে 'আস্তা', রংপুরকে 'অমপুর' বল।"

এ নিয়ে অন্যরা হাসাহাসি করত। যদিও আমি 'রাস্তা' আর 'রংপুর'ই বলতাম। তবু গ্রাম থেকে কেউ বাসায় এলে বা দাদাবাড়ি গেলে যখন কেউ 'আস্তা' বলত, ভীষণ রাগ হত আমার। ওদের 'গেঁয়ো' উচ্চারণের জন্য খুবই বিরক্ত হতাম– সেই কৈশোরেই।

আবার ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া কাউকে দেখলে আমার বুকের ভেতর ধুকপুক করত; দূরে দূরে থাকতে চাইতাম– ভয়ে আর লজ্জায়। যদি ঠিকঠাক ইংরেজি বলতে না পারি! অবশ্য সেই আমিই আবার দাদাবাড়ি গেলে মাদ্রাসা-পড়ুয়া আমার চাচাত বা পাড়াত ভাইবোনদের কেমন 'খ্যাত' মনে করতাম।

সে সময় ভাষা বলতে ছয়টা ভাষার নাম জানতাম। নিজেদের বাংলা, বিদেশি ভাষা ইংরেজি, মুসলমান হিসেবে কায়দা পড়ার ভাষা আরবি। সাদা-কাল টেলিভিশনে অ্যানটেনা ঘুরিয়ে ঘরিয়ে ভারতীয় 'দূরদর্শন' চ্যানেলে 'রামায়ণ' দেখার সুবাদে হিন্দিটার সঙ্গেও পরিচয় হয়েছিল। আর 'শত্রুর' ভাষা উর্দুর নাম জানতাম। কেননা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকতসহ রক্ত দিয়েছেন আরও কয়েকজন।

সে সময় বাবার চাকরির সুবাদে দিনাজপুরের নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় থাকার সময় সাঁওতালদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। প্রতিদিন আমাদের বাসার সামনে দিয়ে পরিপাটি খোঁপায় ফুল গেঁথে সাঁওতাল নারীরা কাজে যেত। মাঝে মাঝে বারান্দায় খেলতে থাকা আমার ছোট বোনকে কোলে নিয়ে আদর করত, কথা বলত। তখন তাদের 'বাংলা' কেমন যেন লাগত। ভাবতাম, 'গরিব তো, আর ওপর লেখাপড়া জানে না, তাই শুদ্ধ করে বাংলা বলতে পারে না– যেমন আমার গ্রামের মানুষরা পারে না।' তখন কোথাও কেউ জানায়নি যে, সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষা আছে।

আমাদের বাসার ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যেই সাঁওতালপল্লী। প্রতিদিনই তাদের দেখেছি অথচ তাদের ভাষার কথা জানতে হল আরও অনেক পরে। আর হাজার কিলোমিটার দূরের ভাষা আমাকে সেই আট বছর বয়সেই শেখানো শুরু হয়েছে।

নিজের এসব কথা আসলে বলছি এ কারণে যে, এখনও পরিস্থিতিটা আমার শৈশব-কৈশোরের সময়ের মতোই আছে। তিন পার্বত্য জেলা বা শ্রীমঙ্গলে ঘুরে অনেক বছর পর আমার কৈশোরের সমস্যার খানিক আবার যেন দেখতে পেলাম।

খাগড়াছড়িতে আমার এক পাহাড়ি বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। ওর ছয় বছরের বাচ্চার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করতে চাইলাম। শুরুতেই তার নাম জিঞ্জেস করলাম। আমার বন্ধুটি চাকমা ভাষায় অনুবাদ করিয়ে দেওয়ার পর সে নাম বলল। সে সময় বন্ধু আমার আক্ষেপ করে জানাল যে, ছেলে তার চাকমা আর হিন্দি পারে। বাড়িতে সবাই চাকমা ভাষায় কথা বলে, সে জন্য মাতৃভাষাটা শিখেছে। আর বাবা-মা দুজনই চাকরি করে, তাই বাচ্চার বেশিরভাগ সময় কাটে হিন্দি কার্টুন বা চ্যানেল দেখে। সে জন্য হিন্দিটা নিজে থেকেই শিখে ফেলেছে। আর বাংলার তেমন ব্যবহার না হওয়ায় আমার বন্ধুর ছোট্ট শিশুটি তা শিখতে পারেনি। ওর মা দুশ্চিন্তায় আছে, স্কুলে কী করবে তার ছেলে তা নিয়ে।

তথ্য সংগ্রহের কাজে খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে হয়েছিল। মারমা ভাষা না পারার জন্য সঙ্গে নিতে হয়েছিল দোভাষী। সেখানে অনেক পাহাড়ি অভিভাবকের কাছে শুনেছি যে, তাদের শিশুদের অনেকের কাছে বাংলাটা কঠিন লাগে বলে স্কুলে যেতে চায় না। এই তো গেলবার গিয়েছিলাম প্রবারণা উৎসবে ফানুস ওড়াতে। সেখানেও ভাষা না জানায় পুরোপুরি একাত্ম হতে পারিনি পাহাড়ি মানুষের সঙ্গে। শুধু মানুষের আদি অনুভূতির ভাষাটা এক বলে রক্ষা!

নভেম্বরের ২৪ তারিখ খাসিয়াদের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের শেষ দিন। সেদিন পুরনো বছরের বিদায় জানাতে তারা উৎসব করে। লাউয়াছড়ার পাশে খাসিয়াপল্লীর মাঠে দিনব্যাপী লোকজ মেলা ও খেলাধূলার আয়োজন ছিল। বছর তিনেক আগে গিয়েছিলাম সে উৎসবে। গাছের পাতা দিয়ে তৈরি স্টলে ঘাসের ওপর বসে কত রকম পসরা নিয়ে বসেছিল খাসিয়া নারী-পুরুষ। সেই একই সমস্যা– ভাষা। উৎসবমুখর বয়স্ক বা শিশুদের সঙ্গে কথা সরাসরি ভাষায় ভাববিনিময় করতে পারিনি। সেখানে ঢাকার ইডেন কলেজে পড়ুয়া এক খাসিয়া শিক্ষার্থীর সাহায্য নিয়ে কথোপকথন চালাতে হয়েছিল।

কাজ করার সুবাদে খাগড়াছড়িতে এমনও দেখেছি যে, কোনো গ্রামের সাধারণ কোনো পাহাড়ি কিছু একটা দরকারি কথা বলতে চাইছেন, কিন্তু বাংলাটা ঠিকমতো না গুছিয়ে নিতে পারায় খানিকটা বলে আর বললেনই না।

একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ একদল শিক্ষার্থী খাগড়াছড়ির একটি উপজেলায় ভলান্টিয়ার হিসেবে ব্লাড গ্রুপিং, সুগার টেস্ট করাতে গিয়েছিল। মেধাবী এবং এ কাজে দক্ষ এসব শিক্ষার্থীর সময় বেশি লেগেছিল টেস্ট করতে আসা মানুষদের নাম লিখতে। কেননা, মারমা ভাষার উ ক্রা বা সুইনু প্রু, হ্লা প্রু ইত্যাদি নাম তারা আগে শোনেনি কখনও। তাই উচ্চারণের সঙ্গে বানান করে লিখতে হিমশিম খেতে হয়েছে। শেষে স্বেচ্ছাসেবীরা স্থানীয় একজনকে নাম-ঠিকানা লিখে দেওয়র প্রস্তাব দেয়। অথচ ইংরেজি ভাষার নাম হলে কোনো সমস্যাই হত না, সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।

খাগড়াছড়িতে কাজের জন্য বাহন হিসেবে একবার চালকসহ মোটরবাইক পেয়েছিলাম। বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার পথে আমি যতই ২২-২৩ বছরের মারমা চালকের সঙ্গে কথা বলতে চাই, সে ততই নির্লিপ্ত থাকে। খানিক রুষ্ট হয়েছিলাম তার ওপর। সরল মারমা তরুণ বোধহয় সেটা বুঝতে পেরে আসল ব্যাপারটা আমায় খোলসা করে। বাংলা ঠিকমতো বলতে না পারাটা তার চুপ থাকার কারণ।

এই যে আমি– আমি কিন্তু তাদের কাছে বাংলাটাই দাবি করছি। তখন থেকে চাকমা ভাষা শেখার জন্য প্রতিষ্ঠান খুঁজেছি। কিন্তু পত্রিকায় ইংরেজি ছাড়াও জাপানি, ফরাসি, জার্মান বা স্প্যানিশ ভাষার বিজ্ঞাপন দেখলেও আজ পর্যন্ত নিজ দেশের চাকমা, মারমা বা খাসিয়া, গারো ভাষা শেখানোর কোনো বিজ্ঞাপন অন্তত আমার চোখে পড়েনি।

আদিবাসী বা ভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই তাদের ভাষা সম্পর্কে কিছু ধারণা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কাজের জন্য বাংলাভাষীদের আদিবাসী এলাকায় পাঠানোর আগে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। যদিও বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানোর আগে আইএলটিএস স্কোর থাকা দরকারি।

প্রতিবার ২১ ফেব্রুয়ারি এলে এসব কথা বেশি বেশি মনে পড়ে। আমরা এমন সব ভুল ধারণা বেড়ে উঠি যে, মনেই রাখতে পারি না সরকারি হিসাবেই এদেশে ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন জাতি রয়েছে (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। যদিও বিতর্ক রয়েছে সংখ্যা নিয়ে। কেউ বলছেন ৪৯টি, কেউ-বা ৫১টি জাতি রয়েছে বলে দাবি করেন। সে বিতর্কে না গিয়েও জানা যায়, সমতল ও পাহাড় মিলিয়ে বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা ১৬ লাখ। আর এসব জাতির প্রত্যেকেরই নিজস্ব মাতৃভাষা রয়েছে।

বাংলা রাষ্ট্রভাষা এবং সেই সঙ্গে এদেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। তবে একমাত্র মাতৃভাষা নয়। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইন্সটটিউট বাংলাদেশের প্রায় ৪০টি ভাষার সন্ধান পেয়েছে। ২০১৪-১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি এদেশে প্রথম Ethno-linguistic Survey of Bangladesh সম্পন্ন করেছে। এ জরিপের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট জরিপের প্রধান প্রধান ফলাফল সম্পর্কে কিছু তথ্য পত্রিকায় বেরিয়েছিল। সে তথ্য থেকে দেখা যায় যে, ৪০টি ভাষার মধ্যে ১৪টি ভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে। সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে– মুন্ডারি, মালদ্রো, খেয়াং, খুমি, কোল, লুসাই, চাক, পানখোয়া, পাত্র, খরিয়া, সৌরা প্রভৃতি।

বিপন্ন রেংমিতকা ভাষায় মাত্র ৪০ জন কথা বলে। আর মাত্রোতে কথা বলে আট হাজার। আবার এক হাজার সৌরাস জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র চারজন নিজ ভাষায় কথা বলে। টিপরারাও নিজ ভাষার চেয়ে বাংলাতেই কথা বলে।

ইউনেসকো একটি ভাষা তখনই বিপন্ন বলে ঘোষণা করে যখন সে ভাষায় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের কথা বলতে শেখায় না। জনসংখ্যা কম হওয়ায় এবং ভাষার সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজন না থাকায় মূলত পূর্বসূরীরা উত্তরসূরীদের নিজেদের ভাষা শেখাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিপন্ন ভাষার নিজস্ব লিপি নেই বলেও ওই ভাষাতাত্ত্বিক জরিপে জানা গেছে।

চরম বিপন্ন অবস্থায় থাকা এসব ভাষা রক্ষার ত্বরিত কোনো উদ্যোগ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। তবে ভাষারক্ষার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের 'শিক্ষানীতি' অনুযায়ী সরকার চলতি বছর থেকে পাঁচটি ভাষায় শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন করেছে। এগুলোর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং সমতলে গারো ও সাদ্রি ভাষা। এতে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের যে অধিকার সব শিশুর রয়েছে তা পূরণ হবে। একই সঙ্গে শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পর্যায়ক্রমে ব্রিজিং পদ্ধতিতে মানে ওপরের ক্লাসগুলোতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়িয়ে ধীরে ধীরে সব মাতৃভাষার ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। সে জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।

অন্যদিকে, আদিবাসী নেতাদের অনেকে ভাষা সুরক্ষিত রাখতে কেবল এ উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন না। তাদের অভিমত– ভাষা গতিশীল বিষয় বলে সমাজে-প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। অনেকে আদিবাসীদের ভাষা-বিপন্নতার পেছনে দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থাও দায়ী বলে মনে করেন। যেহেতু একটি সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর সে সমাজের উপরিকাঠামো গড়ে ওঠে, তাই আদিবাসীদের মাতৃভাষা রক্ষা অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে আদিবাসী নেতাদের মত। এ জন্য তাঁরা আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে নানা অজুহাতে উচ্ছেদ না করার এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ না দেখানোর ওপর গুরুত্ব দেন।

অনেকে হয়তো বলবেন, আমরা তো বাংলাটাই ঠিকঠাক চর্চা করছি না, আমরা মেতেছি 'বাংরেজি' চর্চায়। সেটা থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের নানা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসন যেমন বাংলা ভাষার ওপর আধিপত্য বিস্তার করছে তেমনি বাংলাও এখানকার অন্যসব মাতৃভাষাকে কোণঠাসা করেছে। যা মহান একুশের চেতনার একেবারেই বিপরীত। বরং একুশের রক্তাক্ত লড়াই আমাদের সব জাতির মাতৃভাষার প্রতি সম্মান দেখানোর এবং সব জাতির মাতৃভাষা রক্ষার শিক্ষাই দেয়।

আদিবাসীদের ভাষা সুরক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নানা টেকসই উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে। এ জন্য নেওয়া যেতে পারে আরও কিছু উদ্যোগ। যেমন: বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আদিবাসীদের নিজ নিজ ভাষায় চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রাখা। গ্রামের মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজন ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে; সেখানে আদিবাসীদের জন্য ভাষা ব্যবহারের সুযোগ রাখা যেতে পারে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় কমিউনিটি রেডিও চালুসহ টেলিভিশনে প্রতিদিনই আদিবাসীদের ভাষায় খবর ও অনুষ্ঠান প্রচার করলে প্রত্যেক জাতি নিজ নিজ মাতৃভাষায় সংস্কৃতিচর্চায় আগ্রহী হবে। অবশ্য রাঙামাটি ও কক্সবাজারে রেডিওতে কয়েকটি আদিবাসী ভাষায় খবর পাঠ করা হয়।

তবে 'বাংলাদেশ বেতার' এবং 'বিটিভি' ৪০টি মাতৃভাষা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আয়োজন করতে পারে। এতে করে কেবল সংশ্লিষ্ট জাতির মাতৃভাষাই গতিশীলতা পাবে না, বাংলাভাষীরাও অন্যভাষা সম্পর্কে জানতে পারবে। এভাবে বাংলাদেশের সব জাতি ও ভাষার মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হবে যা বৃহত্তর ঐক্য দৃঢতর করবে।

সরকারিভাবে আগ্রহীদের জন্য আদিবাসী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করলে তা আদিবাসীদেরও নিজ ভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেবে। প্রতি বছর বই মেলায় আদিবাসী ভাষায় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এমনকি মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানিগুলো বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি আদিবাসী ভাষায় তাদের 'ভয়েস সার্ভিস' চালু করতে পারে।

নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভাষা সুরক্ষায় বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনামুক্ত হবে।

প্রত্যাশা রাখি, আজ না হোক কাল ভাষা আন্দোলনের বাংলাদেশে শত ভাষার ফুল ফুটবে। আর তখন হয়তো কবীর সুমনের কথায়– 'সাঁওতাল তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে।'