‘পেশাদার’ বাস-ড্রাইভার বলতে বাংলাদেশে আমরা কী বুঝি?

সুমন রহমান
Published : 26 Jan 2012, 03:13 PM
Updated : 26 Jan 2012, 03:13 PM

সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যু, সেই উপলক্ষে প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রীর বাণী, পরীক্ষা পাশ ছাড়াই কয়েক হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নৌ-মন্ত্রীর তদবির, সেইসাথে 'পেশাদার' গাড়িচালকের 'দরকারি' যোগ্যতা সম্পর্কে তার বিখ্যাত বয়ান, মীরের সরাই ট্রাজেডি, ইত্যাদি সব মিলিয়ে একটা লেখার প্রণোদনা অনেকদিন ধরেই বোধ করছিলাম। কিন্তু না আমি সড়ক বিশেষজ্ঞ, না পরিবহন-ব্যবস্থায়। এই ভেবে এ বিষয়ে লেখার কাজটা তুলে রেখেছিলাম বিশেষজ্ঞদের জন্য। কিন্তু মুশকিল হল,  আমাদের পরিবহন কিংবা দুর্ঘটনা-বিশেষজ্ঞদের অনেকেই তৃণমূল পর্যায়ে গণপরিবহনের দৈনন্দিন চেহারাটির সাথে পরিচিত নন। আমি সেটা একটা সময় নিবিড়ভাবে দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কিভাবে আমাদের যোগাযোগ-(অ)ব্যবস্থার ভেতরে একটি "ভাল" এবং "পেশাদার" ড্রাইভারের ধারণা তৈরি হয়। এই অত্যন্ত বিপজ্জনক ধারণাটি যে শুধু বাংলাদেশের বাস ড্রাইভাররাই পোষণ করছেন তা তো নয়, বরং মন্ত্রী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এর প্রচুর সমর্থকও আছে। আজকে যখন আমরা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বাস ড্রাইভারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হচ্ছি, তখন এসব ধারণার বিনির্মাণকে খুঁটিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

বেশিদিন আগের কথা নয়, চাকরিসূত্রে ঢাকা-কুমিল্লা করতে হত। হপ্তা ফুরালে ফিরি ঢাকায়, কখনো কখনো প্রতিদিনই আসাযাওয়া করতে হয়। যারা প্রতিদিনের যাত্রী, তাদের বাস কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়া নিতান্ত বিলাসিতা। হাইওয়েতে গিয়ে দাঁড়াই, বাস এসে থামে স্টপেজে, হেল্পারকে শুধাই সীট ফাঁকা আছে কিনা, থাকলে উঠে পড়ি। সেরকমই একদিন, চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা এক বাস থামল ক্যান্টনমেন্টে। হেলপার বলল সীট ফাঁকা আছে, শুনে উঠে পড়লাম, গাড়ি ছেড়ে দিল। উঠে দেখি কেবল ইঞ্জিন-কভারে জায়গা খালি, আর কোথাও সীট নেই বসার। সেখানেই বসলাম, কিন্তু কেমন বিচিত্র এক অস্বস্তি হতে থাকল। শেষে বাসের কনডাক্টরকে বললাম, সীট নাই তো উঠাইলেন ক্যান, নামায়ে দেন, যাবো না এই বাসে।

এমন কিন্তু নয় যে ইঞ্জিন-কভারে বসে এর আগে কোথাও যাই নি। কিন্তু কী যেন ঠেলা দিয়ে আমায় সেই বাস থেকে নামিয়ে দিল, নেমে পড়লাম নিমসারের মত ছোট্ট এক স্টপেজে। সেখান থেকে অন্য বাসের নাগাল পেতে-পেতে আরো প্রায় আধা-ঘণ্টা। সেই বাসে উঠে চান্দিনা পেরুতেই দেখি লম্বা লাইন। শোনা গেল, সামনে ট্রাকে-বাসে মুখোমুখি, মারা গেছে অনেক। নিয়মিত প্যাসেঞ্জারদের জন্য এটাও নৈমিত্তিক সংবাদ। কেউ বিচলিত হয় না। আমিও না।

লাইন ঠেলে-ঠেলে আমাদের বাস যখন দুর্ঘটনার জায়গায় পৌঁছাল, দেখলাম সেই চাঁদপুর থেকে আসা বাসটিই ওটা। আমি যেটি থেকে নেমে গিয়েছিলাম। বাসের সামনের অংশ একেবারে চিড়াচ্যাপ্টা হয়ে গেছে, চাপ চাপ রক্ত সেখানে রাস্তায়। পরে সংবাদপত্র থেকে জেনেছিলাম ঐ বাসের ড্রাইভারসহ সামনের আটজন যাত্রী দুর্ঘটনায় মারা গেছিল। আমি সেই বাসের ইঞ্জিন-কভারে বসেছিলাম। নিমসার নেমে না গেলে মৃতের সংখ্যা ৯ লেখা হত। এক বিচিত্র অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কী যেন কী তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম আমি ঐ বিধ্বস্ত বাসটির মধ্যে! আমার লাশ?
এমন নয় যে, ঐ একবারই হাইওয়েতে মরণের খুব কাছাকাছি গিয়েছি! নিয়মিত ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতায় এরকম অগুণতি ঘটনা থাকে, আমারও তাই আছে। দাপ্তরিক জরুরি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হরতালের মধ্যে বাস না-পেয়ে এক ট্রাকচালককে ধরে টাকার বিনিময়ে লিফট নিয়েছিলাম। সেই ট্রাক উল্টে গেলে রাস্তায়, লোকজন ঠ্যাং ধরে টেনে বের করল। সৌভাগ্যবশত বড় রকমের কোনো ইনজুরি হয় নি, এ জায়গায় ও জায়গায় ছিলে-ছড়ে যাওয়া ছাড়া। কিন্তু সেসব সামান্য আঘাতের জন্য থেমে থাকার উপায় তো নেই। ট্যাংকি ফেটে বেরিয়ে আসা ডিজেলে ভিজে চুপসে যাওয়া আমি, পেট্রোল-ভেজা শরীরেই ভ্রমণ করলাম আরো দেড় ঘণ্টা। কিংবা আরেকদিন, শীতকুয়াশার এক ভোরে যখন দাউদকান্দি মেঘনাব্রিজের ওপর দিয়ে বাস চালাতে-চালাতে ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়ল! পাশের যাত্রী হঠাৎ ফিসফিস করে বলেন, দ্যাখেন ভাই দ্যাখেন, ড্রাইভার ঘুমায়! রিয়ার ভিউ মিররে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তাই। এ শুধু মুহূর্তের ঝিমানি নয়, আক্ষরিক অর্থে ঘুমিয়ে গেছে ড্রাইভার। আর ভোর বেলাকার সোজা নির্জন হাইওয়েতে গাড়ি চলছে তীব্র বেগে। সে এক যাদুবাস্তব দৃশ্য, যে না দেখেছে তাকে বলে বিশ্বাস করানো কঠিন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এস আলম পরিবহনের ড্রাইভারদের "খ্যাতি" আছে। কোনো এক শীতের বিষ্যুদবার সন্ধ্যায় সেরকমই এক বাসে ঢাকা ফেরার পথে বসলাম ড্রাইভারের ঠিক পেছনে। দেখি কি, বিপরীত দিক থেকে যখনি হেডলাইট না-নামিয়ে কোনো বাস বা ট্রাক যায়, আমাদের ড্রাইভার তার ডান হাতে ধরা পানির বোতল থেকে ঐ গাড়ির ড্রাইভারের শরীরে পানি ছুঁড়ে দেয়। পুরো ঘটনাটা ঘটে যখন গাড়ির স্পিড একশ-র ওপরে। আর এটা করতে গিয়ে স্টিয়ারিং-এ রাখা ড্রাইভারের একমাত্র বামহাতটিও ঢিলা হয়ে যায়, আর বাসটাও ঝাঁকি খায় প্রতিবার। উঠে গিয়ে ড্রাইভারকে এর হেতু জিজ্ঞেস করল আমাদের এক আতঙ্কিত সহকর্মী। ড্রাইভার জানায়, যেসব গাড়ি ক্রস করার সময় নিয়ম মোতাবেক হেডলাইট নিচু না করে, সে তাদের একটু 'ওয়াটার-ট্রিটমেন্ট' দিচ্ছে! আমরা বললাম, ঠিক আছে শিক্ষণীয় উদ্যোগ। কিন্তু একহাতে দুই কাজ করার দরকারই কি, যেখানে বাসের মধ্যে আমরা 'অবসর' বসে আছি! ড্রাইভার একনজর তাকায় আমাদের রিয়ারভিউ মিরর দিয়ে। বলে, কিন্তু আপনেরা তো সই কৈরা দিবার পারবেন না। আমার অভ্যাস আছে আমি পারি। ভয় পাইয়েন না, পাঁচ বছর ধৈরা পানি মারতেছি।

ততদিনে ভয় হাইওয়েতে নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। চেনাপরিচিত, সহকর্মী, সহযাত্রীদের কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় হয় পঙ্গু না হয় পরপারে। সংসার ও জীবিকা এসব মানুষদের দুই পাশ থেকে টানতে টানতে হাইওয়ে-বাসী করে রেখেছে। মৃত্যু না হয় পঙ্গুত্ব তাদের এই টানাপোড়েন থেকে রেহাই দেয়। তবু আমরা বাঁচতেই চাইতাম। রুটের সবগুলো বাস ইতিমধ্যে চেনা হয়ে গেছে। ভাড়ার হার, দ্রুততা, বাসের কন্ডিশন ও ঐ সার্ভিসের ড্রাইভারদের অ্যাভারেজ অ্যারোগ্যান্সের ইন্ডিকেটরের সম্মিলিত হিসাবনিকাশের ভিত্তিতে ভ্রমণযোগ্য বাসের একটা তালিকাও মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করত। কিন্তু বুঝতাম এ-সবই আসলে 'মন্দের ভাল' বাছাই করার কাজ।

এ তো গেল বাসের কথা, কিন্তু এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি যে দেশের হাইওয়েতে ডিভাইডার নেই! আবার এই জবুথুবু ছাল-ওঠা হাইওয়ে হয়ে উঠেছে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের উপায়! হাইওয়ে নিজেই যেন একটা মুক্তবাজার অর্থনীতি! যাবতীয় আদানপ্রদানের পসরা, দোকানপাট, লোকালয়, স্কুল-কলেজ সবই হাইওয়ের দিকে মুখ করা। অন্যান্য দেশে দেখেছি হাইওয়ে একটা নির্জন ব্যবস্থা, যেখান থেকে এক্সিট নিয়ে লোকালয়ে আসতে-যেতে হয়। আর আমাদের হাইওয়েটাই হয়ে উঠেছে মানুষের মিলনমেলা, আবার অন্যদিকে মরণমেলাও!

একদিকে যেমন হাইওয়ে 'সামাজিক' হয়েছে, অন্যদিকে ড্রাইভার হয়ে ওঠেছে ফ্যান্টাসি-হিরো! 'ভাল' ছুরি বলতে আমরা বুঝি যে ছুরি 'ভাল' কাটে, কিন্তু 'ভাল' ড্রাইভার বলতে আমরা কী বুঝি? আমাদের অভিধানে 'ভাল' ড্রাইভার হল গতজন্মের ফর্মুলা-ওয়ান ড্রাইভার যারা এই বিপুল পরিমাণ খানাখন্দ-ভরা অপরিসর সড়কব্যবস্থায় একটা প্রায়-মুমূর্ষু ফিটনেসবিহীন গাড়ি ভিডিও গেমসের গতিতে চালাতে পারঙ্গম! তাদের শুধু গতির সেবক হলেই চলবে না, নিরাপোষ ওভারটেকারও হতে হবে। এই উপলব্ধি যেমন ড্রাইভারের, তেমনি বহু বাসমালিকের, এবং অনেক বাসযাত্রীরও। একবার ঢাকা থেকে পরিবারসহ বাড়ি ফিরছিলাম বাসে। বাসের বেপরোয়া গতি আর মুহুর্মুহু ওভারটেকের প্রবণতা মনে কাঁপন ধরিয়ে দিল। দুই দফা ড্রাইভারকে অনুরোধ পাঠালাম সুপারভাইজার মারফত, গতি কমানোর জন্য। প্রতিবারই সুপারভাইজার ফিরে এসে বলে, ভাই একজন কয় আস্তে যাইতে আবার অন্যরা কয় জোরে যাইতে, আমরা কী করুম? এগিয়ে গিয়ে দেখি সামনের সীটে একজন প্রৌঢ় ভুড়ি বাগিয়ে বসে। গাড়ির বেপরোয়া গতি স্পষ্টতই তার বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে, দেখে বুঝলাম। নিরুপায় হয়ে একটা দুর্নীতি করতে হল। সুপারভাইজারকে ডেকে নিচুগলায় বললাম, গাড়ির স্পিড পুরা রাস্তায় আশি-র ওপরে যদি না-ওঠে, তবে বাড়তি দুইশ' টাকা পাবে তুমি। সনির্বন্ধ অনুরোধে যে ঢেঁকি মাননীয় ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার গিলেন নাই, বাড়তি দুইশ' টাকার লোভে গিললেন। পৌরুষ, ফ্যান্টাসি আর বিপজ্জনক বিনোদনের জগত থেকে মাটিতে নেমে এলেন! প্রৌঢ় ভদ্রলোকের বিনোদন মাঠে মারা গেল, আর আমরা সহি-সালামতে বাড়ি পৌঁছাতে পারলাম। আশা করি দুর্নীতিদমন কমিশন আমায় ক্ষমা করবেন।

যদি কোনো একটা ভাল বাস (ধরা যাক হিনো মডেলের) একটা তুলনামূলক খারাপ বাসের (ধরা যাক টাটা) পেছন পেছন যায়, হিনোর যাত্রীরা ক্ষেপে ওঠে এবং ড্রাইভারকে গালাগাল দিতে থাকে। একই জিনিস ঘটে যখন কোনো লং রুটের বাস লোকাল বাসকে ওভারটেক না করতে পারে। পৃথিবীর অপরাপর সড়কব্যবস্থার অভিধানে যখন ওভারটেক নামক ক্রিয়াটি বিলুপ্তপ্রায়, তখন বাংলাদেশের লেনবিহীন ডিভাইডারবিহীন জনাকীর্ণ হাইওয়েতে ওভারটেক যেন এক ম্যাজিক রিয়েলিজম! স্ট্যাটাস ক্যু বহাল রাখার এক মোক্ষম পদ্ধতি! অর্থাৎ ওভারটেক করা হয় নিতান্ত প্রয়োজন থেকে নয়, বরং এর মাধ্যমে যানবাহনের হায়ারার্কি মহাসড়কে পুনরুৎপাদিত হয়। আবার সেইটা এত সহজে যে হয় তাও না। দুর্বলের প্রতিরোধও সেখানে জারী হয়, অর্থাৎ সাইড দিব না যা থাকে কপালে! সেই অর্থে, ওভারটেক প্রথমত একটি বিনোদন, এবং দ্বিতীয়ত একটি আত্মপরিচয় উৎপাদী ক্রিয়া। এটা শুধু বাস সার্ভিসের ও ড্রাইভারেরই নয়, কখনো কখনো প্যাসেঞ্জারেরও। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থায় যদি কার্তেসীয় নীতিকে অনুবাদ করা হয় তবে তা দাঁড়াবে: আপনি তাইই, যাহাতে আপনি চড়েন! ওভারটেক করতে-না-পারা বাসের প্যাসেঞ্জার যখন 'অথর্ব' ড্রাইভারকে খিস্তি খেউর করে, তখন স্পষ্টতই তার মনোবেদনার পরিধি বোঝা যায়।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনার জন্য দুনিয়াতে বাংলাদেশের বিশেষ সুনাম আছে। কিন্তু এই দুর্ঘটের পাপচক্কর একদিনে তৈরি হয় নি। প্রথমত, আমাদের হাইওয়েতে একদিকে যেমন ডিভাইডার নেই, অন্যদিকে তার নির্বিচার সামাজিকীকরন ও বাণিজ্যিকীকরনের ফলে এটা হয়ে উঠেছে অবস্থানের জায়গা, চলাচলের নয়। আবার, বাসমালিকদের বেপরোয়া মুনাফাপ্রেম, যথাযোগ্য পলিসির অভাব, প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসততা এবং হাইওয়ে পুলিশের দুর্নীতি মিলিয়ে তৈরি হয়েছে ঐ পাপচক্করের দ্বিতীয় পর্যায়। এই পর্যায়টিই সরাসরি ভূমিকা রাখছে ড্রাইভারদের পেশাদারি 'ভাবমূর্তি'র বিকাশে। যে যত ওভারটেকে ওস্তাদ, ট্রাফিক সার্জেন্ট 'ম্যানেজমেন্টে' পারঙ্গম, যাত্রীলোডে উৎসাহী আর দুর্ঘটনা-উত্তর  গ্যাঞ্জাম থেকে বাসমালিককে বাঁচানোর ক্ষেত্রে দক্ষ, সে তত 'পেশাদার' ড্রাইভার এই বাংলাদেশে!  কিন্তু পাপচক্করের ষোলকলা পূর্ণ হয় যখন সেবাগ্রহীতাও নিরবে 'পেশাদার' ড্রাইভারের যোগ্যতা-সম্পর্কিত এই হেজিমনির অসচেতন অংশীদার হয়ে ওঠে।

দূর থেকে যখন আমরা দেখি, তখন বাসচালককেই যাবতীয় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মনে হয়। কিন্তু প্রতিদিনের হাইওয়েতে লক্ষ লক্ষ আমজনতার একজন হয়ে জিনিসটাকে দেখলে বোঝা যায় দারিদ্র, মুনাফা ম্যাক্সিমাইজেশন, দুর্নীতি আর অবকাঠামোগত সমস্যা মিলিয়ে আমাদের যোগাযোগব্যবস্থাকে আমরা কিভাবে পরোয়াহীন একটা মৃত্যুফাঁদ করে তুলেছি। এই সামগ্রিক অব্যবস্থার চেহারাটি ফুটে ওঠে বাস ড্রাইভারের বেপরোয়াপনার মধ্যে, কিন্তু তাকে টানেল ভিশনে ধরতে গিয়ে আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায় অপরাপর সহায়ক-গোষ্ঠী, যাদের সম্মিলিত উদ্যোগে দুর্ঘটনার এই পাপচক্করটি বাংলাদেশে আরো বহু বছর বেঁচে থাকবে।

সুমন রহমান: কবি ও প্রাবন্ধিক।