মুসলিমবিরোধী হেইট ক্রাইমের বিষয়ে ট্রাম্প কী করবেন

মোহাম্মদ বাজি
Published : 27 Dec 2016, 12:53 PM
Updated : 27 Dec 2016, 12:53 PM

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরবর্তী পাঁচ দিনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর 'ঘৃণাজনিত হয়রানি এবং হুমকির' ৪০০টিরও বেশি ঘটনা রেকর্ড করেছে সাউদার্ন প্রভার্টি ল সেন্টার। এই সেন্টারটি ঘৃণাজনিত উক্তির ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। প্রকাশিত খবর, সরাসরি অভিযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের ভিত্তিতে এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে তারা।

যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর অনেকগুলোই 'ট্রাম্পের প্রচারণা ও শ্লোগানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত' বলে দেখতে পায় তারা।

অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরদিন (৯ নভেম্বর) থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মৌখিক ও দৈহিক লাঞ্ছনা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। এসব সংখ্যালঘুর মধ্যে মুসলিম, কৃষ্ণকায়, লাতিনো, ইহুদি, সমকামী এবং অভিবাসীরা অন্যতম। ঘৃণাজনিত ঘটনার হঠাৎ বৃদ্ধি পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে যে, ট্রাম্প ও তার শীর্ষ উপদেষ্টারা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছেন যেখানে তার কিছু সমর্থকরা মনে করছেন যে, তারা অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ এবং সমকামীদের প্রতি ঘৃণা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করতে পারবেন।

মুসলিমরাই বেশি হেনেস্তা হচ্ছেন, ট্রাম্পের প্রচারণার পুরোটা সময় সমালোচনার জন্য ইসলামকে বেছে নেওয়া এর আংশিক কারণ। ১৪ নভেম্বর ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য দেখিয়েছে, ২০১৫ সালে মসজিদে আক্রমণসহ মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলা ও ঘৃণাজনিত ২৫৭টি ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছে, অথচ এর আগের বছর এ ধরনের ঘটনার অভিযোগ ছিল ১৫৪টি; অর্থাৎ এক বছরে এ ধরনের ঘটনা প্রায় ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এটি ২০০১ সালের পর থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার (১১ সেপ্টেম্বর) পর মুসলিমদের ওপর ৪৮০টিরও বেশি হামলার ঘটনা রেকর্ড হয়েছিল।

এফবিআইয়ের তথ্যানুযায়ী গত বছর অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও ঘৃণাজনিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, ইহুদিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ শতাংশ এবং কৃষ্ণকায়দের বিরুদ্ধে ৮ শতাংশ।

২০১৫ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ হঠাৎ বৃদ্ধির কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে বেসামরিক লোকজনের ওপর উগ্রবাদীদের হামলা (যার অনেকগুলোর দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট ও এর সমর্থকরা) এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার 'হুল ফুটানো' ধরন। প্রচারণাকালে ট্রাম্প এবং তার কিছু সমর্থক 'মুসলিম, অভিবাসী এবং সংখ্যালঘুরা আমেরিকার জন্য একটি বিপদ' এমন একটি বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।

এসব হামলাকে ট্রাম্প গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখেন কি না তা পরিষ্কার নয়। তিনি নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তিসঙ্গত কারণেই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো উদ্বিগ্ন, এ পর্যন্ত তাদের কাছে পৌঁছাতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নির্বাচনোত্তর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিন্দাও জানিয়েছেন হালকা চালে।

তার সমর্থকরা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের হয়রানি করছে, এ ধরনের প্রতিবেদনের বিষয়ে ১৩ নভেম্বর সিবিএস নিউজের 'সিক্সটি মিনিটস্' অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন–

"এসব শুনে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, আর বলেছি 'এসব থামাও।'"

নিজের প্রশাসনের শীর্ষ পদে যাদের আগাম নিয়োগ দিয়েছেন তাতে এসব শঙ্কা হ্রাস করতে পারেননি তিনি। স্টিভেন বেননকে নিজের প্রধান কৌশলবিদ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই বেনন তথাকথিত 'চরম-ডানপন্থী' আন্দোলনের একজন নেতা, যারা শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের প্রতি ও নব্য-নাৎসিবাদের কারণগুলির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।

অ্যালাবামা থেকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে আছেন জেফ সেশনস। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। ১৯৮৬ সালে সেশনসের ফেডারেল জজ হওয়া যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস আটকে দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণবাদী মন্তব্য ও আচরণের অভিযোগের কারণে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন সংস্কারেরও ঘোর বিরোধী।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান মাইকেল ফ্লিনকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন সময় ইসলাম সম্পর্কে নানা উত্তেজক কথাবার্তা বলেছেন ফ্লিন। ইসলামকে 'ক্যান্সারের' সঙ্গে তুলনা করে 'ধর্মের আবরণে লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিক মতবাদ' বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে করা এক ট্যুইটে 'মুসলিম-ভীতিকে যুক্তিসঙ্গত' বলে দাবি করেছেন তিনি।

এই তিক্ততা চাঙ্গা করে রেখেছিলেন স্বয়ং ট্রাম্প। গত বছরের ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান বের্নারডিনোতে এক নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনার পর মুসলিম অভিবাসী ও ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়ে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেন তিনি। 'কী হচ্ছে' মার্কিন নেতারা 'তা না বোঝা পর্যন্ত' নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণাকালে মুসলিম আমেরিকানদের কমিউনিটিগুলোতে ও মসজিদে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানোর তাগাদা দেন ট্রাম্প। মুসলিম আমেরিকানদের একটি আলাদা ডেটা বেইসে রেজিস্টার করার কথা বিবেচনা করবেন অথবা মুসলিমদের বিশেষ শনাক্তকরণ কার্ড বহন করতে হতে পারে বলে আগাম মন্তব্য করেন তিনি। এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী হামলা রোধ করতে পারে বলে বিতর্ক জুড়ে দেন তিনি।

ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তার ও তার আস্থাভাজনদের প্রস্তাবগুলোর কোনো কোনোটি এবার বাস্তবায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক মুসলিম আমেরিকানের। ট্রাম্পের উপদেষ্টা কার্ল হিগবি ১৬ নভেম্বর ফক্স নিউজে জাতীয়ভাবে মুসলিমদের রেজিস্ট্রি করার বিষয়টি সমর্থন করে কথা বলেন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে বহুবার এই প্রস্তাবটির পুনরাবৃত্তি করেছেন ট্রাম্প।

এই প্রস্তাবের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও এর পক্ষে হিগবি আমেরিকার অন্যতম অন্ধকার পর্ব টেনে নিয়ে আসেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এক লাখেরও বেশি জাপানি, জার্মান ও ইতালীয় অভিবাসীকে 'শত্রুপক্ষীয়' হিসেবে চিহ্নিত করার ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের আদেশ জারির কথা উল্লেখ করেন। ১৯৪২ সালের এই নির্বাহী আদেশ, প্রায় লাখ খানেক বিদেশি ও জাপানি বংশোদ্ভূত নাগরিককে বন্দি করার পথ খুলে দেয়। ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে জাপানি আক্রমণের পর এ ঘটনা ঘটে, কিন্তু পরে সর্বোচ্চ আদালত এই আদেশ স্থগিত করে দেয়।

মুসলিমদের জন্য জাতীয় রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করা কতটা বিজ্ঞোচিত হবে, ফক্স নিউজের হোস্ট মেগ্যান কেলির এ প্রশ্নের জবাবে হিগবি বলেন–

"আমি শুধু বলতে চাই এ বিষয়ে আগের একটি নজির আছে।"

ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টে মনোনয়ন নিশ্চিত করার পর প্রশ্ন ওঠে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো নিয়ে বৃহত্তর মার্কিন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা হয়। ইরাকে নিহত এক আমেরিকান মুসলিম সেনার পরিবারকে কটাক্ষ করার পর রিপাবলিকান দলীয় অন্যান্য নেতাদের নিন্দার পরও ইসলামের সমালোচনা বন্ধ করতে রাজি হননি ট্রাম্প। ভোট টানতে এই কৌশল যে পর্যন্ত কাজে দিয়েছে সে পর্যন্ত এ থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখাননি তিনি।

মার্চে সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প খোলাখুলি বলেছিলেন–

"আমার মনে হয়, ইসলাম আমাদের ঘৃণা করে।"

ইসলাম পশ্চিমের সঙ্গে যুদ্ধ করছে কিনা, কুপারের এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন–

"প্রবল ঘৃণা আছে। আমাদের এর গভীরে যেতে হবে। আমাদের প্রতি অবিশ্বাস্য ঘৃণা আছে।"

এ ধরনের কথাবার্তার বাস্তব প্রতিক্রিয়া আছে। ২০১৫এর নভেম্বরে প্যারিসে আইএসের জঙ্গিদের হামলায় ১৩০ জন এবং ডিসেম্বরে সান বের্নারডিনোতে আইএস নেতার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা এক দম্পতির গুলিবর্ষণে ১৪ জন নিহত হওয়ার পর মুসলিম আমেরিকানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধের হঠাৎ বৃদ্ধির ঘটনা রেকর্ড করে এফবিআই ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক মার্কিন গোষ্ঠীগুলো। এফবিআইয়ের রেকর্ডানুযায়ী বেশ কয়েক বছর ধরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন ঘৃণাজনিত অপরাধের মাসিক হার ১২ দশমিক ছয় শতাংশ থাকলেও প্যারিস হামলার পর মধ্য-ডিসেম্বরের মধ্যেই এই হার তিন গুণ বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়ে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ঘৃণাজনিত অপরাধের এফবিআই প্রকাশিত পরিসংখ্যানে সমস্যাটির একটি অসম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়, এর কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো এফবিআইয়ের কাছে তথ্য পাঠিয়েছে, আবার অনেকে ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা লিপিবদ্ধেই ব্যর্থ হয়েছে। সর্ব সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করার সময় এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি ঘটনা ঠিকমতো লিপিবদ্ধ না করার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। বলেছেন–

"আমাদের সমাজগুলোতে কী হচ্ছে তা পরিপূর্ণভাবে বোঝার জন্য ও তা মোকাবিলার জন্য ঘৃণাজনিত অপরাধ লিপিবদ্ধ ও তা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে আমাদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।"

অনেক মানুষই স্থানীয় পুলিশের কাছে ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগ জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় নাগরিক অধিকার বিষয়ক গোষ্ঠীগুলো বলেছে, এফবিআইয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ ধরনের ঘটনার যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে। ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিসটিকসের করা সাম্প্রতিক এক সরকারি গবেষণার হিসাবে ২০১২ সালে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৮০০টি ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, এই সংখ্যা ওই বছর এফবিআই প্রকাশিত সংখ্যার প্রায় ৫০ গুণ। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি।

অতি তিক্ত একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার পর ঘৃণাজনিত অপরাধ ও হয়রানির ঘটনা হঠাৎ বৃদ্ধির অভিযোগ যখন পাওয়া যাচ্ছে, তখন তার নিজের ও তার উপদেষ্টাদের বাগাড়ম্বরের সুর নিচু করার দায়িত্ব ট্রাম্পের। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘৃণা ও অধিকার লঙ্ঘন করার এই হিড়িকের রাশ টানার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখাননি ট্রাম্প, যা অংশিকভাবে হলেও তার প্রচারণার কারণেই লাগামহীন হয়ে উঠেছে।

(মোহাম্মদ বাজ্জি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি নিউজডে-র মধ্যপ্রাচ্য ব্যুরোর সাবেক প্রধান। সৌদি আরব ও ইরানের ছায়াযুদ্ধ নিয়ে তিনি একটি বই লিখছেন।)

অনুবাদ: আফসার বিপুল

[মূল লেখার লিংক: