বাঙালির আত্মপরিচয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বুদ্ধিজীবীর দায়

Published : 14 Dec 2016, 05:35 AM
Updated : 14 Dec 2016, 05:35 AM

১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতি, বুদ্ধিজীবী পরিবার ও তাঁদের স্বজনদের জন্য বেদনাহত ও দুঃখজনক দিন। তবে অন্য বছরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উদযাপনের চেয়ে এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উদযাপনের একটা ভিন্ন তাৎপর্য আছে। তা হল, গত কয়েক বছরে একাত্তরে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে প্রধান সারির কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে এবং কয়েকজন জেল খাটছেন। এবারের বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন তাই দুঃখ ভারাক্রান্ত স্মৃতিচারণ ও বেদনাহত পরিস্থিতির মধ্যেও খানিকটা আনন্দের। স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মধ্যে যা একমাত্র ব্যতিক্রম।

সাধারণ বাঙালিদের মতো দিবসটির শোকাহত তাৎপর্যের মধ্যে আমিও তাই কিছুটা আনন্দিত। মনে হচ্ছে খানিকটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এখন বসবাস করতে পারছি। অনেকটা আবেগ উৎকণ্ঠার পরে এখন খানিকটা নির্ভার।

যাই হোক, বুদ্ধিজীবীরা জাতির গর্বিত সন্তান। প্রজ্ঞাবান, আলোকিত জাতি ও ঐতিহ্যময় ইতিহাস অনুসন্ধানে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অবদান সবসময়েই গবেষণাযোগ্য বিষয়। আসলে ঐতিহাসিক কাল থেকে বাঙালির ভাবমানস তৈরি, আত্মপরিচয়ের সন্ধান, জাতীয় সংস্কৃতির নির্মাণ-বিনির্মাণ এবং সামগ্রিকভাবে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অপরিসীম।

সাধারণভাবে প্রত্যেকটা স্বাধীন দেশে সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণিগত ঐক্য নির্মাণে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত 'শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ' গ্রন্থেও তার প্রতিধ্বনি আছে। সেখানে বলা হয়েছে:

"এটা অবধারিতভাবেই সত্য যে, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলীর মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নিবীর্য করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দেয়া।"

সেই উদ্দেশ্যে থেকেই হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রি থেকে শুরু করে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিংবা তার পরেও বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা চলমান রাখে। সর্বজনগ্রাহ্য কোনো পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মোটামুটিভাবে ১,১১১ জন বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন।

'সর্বজনগ্রাহ্য' শব্দটা উচ্চারণ করলাম এ কারণেই যে স্বাধীনতার পর প্রতিবছর এ দিবসটি আমরা পালন করলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে খুব বেশি মৌলিক একাডেমিক গবেষণা হয়নি। বাংলাপিডিয়ার সূত্রমতে, ন্যূনপক্ষে ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন অন্যান্য ব্যক্তিত্ব (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী ও প্রকৌশলী) ও বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার আলবদর কর্তৃক খুন হয়েছেন।

তথ্য থেকে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো যে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ। তাই বুদ্ধিজীবী দিবসকে কেন্দ্র করে গভীর একাডেমিক গবেষণা হতে পারে। সেই উদ্দেশ্যে থেকেই আমার এ প্রবন্ধের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

বুদ্ধিজীবী: সংজ্ঞা, প্রত্যয় ও শ্রেণিকরণ

'বুদ্ধিজীবী' শব্দটির বিস্তার ও ব্যাপ্তি কত গভীর তা আলোকপাত করতে গিয়ে ব্রিটিশ সমাজতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ রেমন্ড উইলিয়ামসের একটি বক্তব্য প্রথমেই আনা যায়। তিনি বলেছেন:

"বিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধিজীবিতা ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় শব্দগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক হলেও ইংরেজি ভাষায় এসবের যথেষ্ট প্রভাব ছিল, এবং সে প্রভাব এখনও বিদ্যমান।"

সাধারণভাবে 'বুদ্ধিজীবী' শব্দটির মাধ্যমে সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সংকটকালে বৌদ্ধিক পরামর্শ দান ও যথার্থ দিকনির্দেশকারী পণ্ডিত বোঝানো হয়। এঁদের বোঝাতে রাশিয়ায় উনিশ শতকের ষাটের দশকে প্রথম 'intelligentsia' শব্দটি ব্যবহৃত হত। তখন রাশিয়ার একটি গোষ্ঠী হিসেবে তাঁরা নিজেদের বিদ্বৎসমাজের সদস্য বোঝাতে এ শব্দটি ব্যবহার করতেন। তবে সেসময় বুদ্ধিজীবী মানে বিপ্লব, নিরীশ্বরবাদ ও বস্তুবাদের অনুসারীদের ইঙ্গিত করা হত। বাংলা ভাষায় বুদ্ধিজীবী প্রত্যয়ের সমার্থক শব্দ হিসেবে 'বিদ্বৎসমাজ', 'জ্ঞানী', 'বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়' ও 'সিভিল সোসাইটি' শব্দগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

যা হোক, বুদ্ধিজীবীর একটা সর্বজনীন সংজ্ঞা দেওয়া যায় এভাবে– বুদ্ধিজীবী হল এমন একজন ব্যক্তি যে বা যিনি তাঁর কাজ, চিন্তা, পড়াশুনা বা চিন্তার পদ্ধতি দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মত প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন অথবা বিভিন্ন প্রশ্ন বা উত্তরের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় কথা বলার সক্ষমতা রাখেন। বুদ্ধিজীবী প্রত্যয় নিয়ে অনেক তাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ যেমন হেগেল, মার্কস, লেনিন, গ্রামসি, এডওয়ার্ড সাঈদ ও জুলিয়ান বেন্দা আলোচনা করেছেন। তবে আমি সংক্ষিপ্তভাবে শুধু অ্যান্টোনিও গ্রামশি ও এডওয়ার্ড সাঈদের আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখব।

ইতালীয় সমাজ দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ অ্যান্টোনিও গ্রামসি তাঁর 'Selections from Prison Notebooks' বইয়ে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে লেখেন:

"সব মানুষই বুদ্ধিজীবী এ কথা প্রত্যেকেই বলতে পারে, তবে সমাজে সব মানুষই বুদ্ধিজীবীর কাজ করে না।"

একইসঙ্গে তিনি বুদ্ধিজীবীদের দুই ভাগে বিভক্ত করেন–

১. প্রথাগত বা ঐতিহ্যগত বুদ্ধিজীবী (যেমন: ইমাম, শিক্ষক, সাহিত্যিক) এবং

২. জৈবিক বুদ্ধিজীবী (যারা পেশাগত বৈশিষ্ট্যের বাইরে রাষ্ট্রের বিপরীতে কিংবা নেতিবাচক ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ভিন্নরকম কোনো বিষয়ে মতপ্রকাশ বা ভাষ্য নির্মাণের ক্ষমতা রাখেন)।

জৈবিক বুদ্ধিজীবীরা প্রধানত পূঁজিবাদী সমাজের ভাবাদর্শিক আধিপত্যবাদীতার (ঐবমবসড়হু) বিপরীতে বিপরীত ভাবাদর্শ (counter hegemo) তৈরি করতে পারেন। অন্যদিকে, এডওয়ার্ড সাঈদ ১৯৯৩ সালে বিবিসিতে দেওয়া রিথ লেকচার সিরিজে ও পরে প্রকাশিত তাঁর 'Representations of the Intellectuals' বইয়ে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তিনি গ্রামসি ও জুলিয়ান বেন্দার বইয়ের বুদ্ধিজীবী বিষয়ের আলোচনাকে উদ্বৃত করে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন:

"প্রকৃত বুদ্ধিজীবীদের কর্মকাণ্ড ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে সাধনের লক্ষ্যে নয়। তাঁরা আনন্দ খোঁজে শিল্প, বিজ্ঞান কিংবা দর্শনের মধ্যে… প্রকৃত বুদ্ধিজীবীরা সমাজ-বিচ্ছিন্নতা ও নিষ্ঠুরতার মধ্যেও ঝুঁকি নেবেন।…তাদের আপসহীন ব্যক্তি হতে হবে। বুদ্ধিজীবীদের ব্যক্তিত্ব হবে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন।"

আধুনিক ইতিহাসে প্রত্যেকটা বিপ্লব ও সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাকে চিহ্নিত করে তিনি বুদ্ধিজীবীদের 'বিপ্লবের প্রাণ' বলে উল্লেখ করেছেন।

গ্রামসি এবং এডওয়ার্ড সাঈদের মতো তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে না হলেও ভারতীয় সামাজিক ইতিহাসবিদ বিনয় ঘোষ 'বাংলার নবজাগৃতি' এবং 'বাংলার বিদ্বৎসমাজ' বইগুলোতে ভারতবর্ষের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তথা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

আত্মপরিচয়ের রাজনীতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ: বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা

বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য বা গুরুত্ব অনুধাবন করতে হলে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত বিদ্বৎসমাজের সদস্যদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড, তাদের জীবনবোধ বা ঐতিহাসিক সময়ে তাদের জীবনের বিশেষ কোন অভিঘাতকে বুঝতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে, বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা কী? পাশ্চাত্য সমাজে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় তার সামাজিক অনুষঙ্গগুলোর জীবন্ত অবস্থার কারণে। সেখানে এখনও টেলিভিশন মিডিয়াতে বিতর্ক বা টকশোর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জনপরিসরে বিদ্বৎসমাজের সদস্যগণ পাবলিক লেকচার বা কোনো বক্তব্য দেন যা সাধারণভাবে জনগণ প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান। কিন্তু প্রাচ্য দেশে বিশেষ করে, ভারতবর্ষ কিংবা বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা বা কর্মকাণ্ড নিয়ে মিডিয়াতে তেমন একটা আলোচনা হয় না। তাহলে কি আমরা মনে করব যে, ভারতবর্ষের সামাজিক জীবনাচার ও তার ব্যাখ্যায় তাহলে বুদ্ধিজীবীর কোন ভূমিকাই নেই? আসলে তা নয়।

ঐতিহাসিক কাল থেকেই ভারতবর্ষের যে কোনো সামাজিক আন্দোলন, রাজনৈতিক সংগ্রাম কিংবা সংস্কারবাদী আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা অপরিসীম। সত্যিকার অর্থে সর্বভারতীয় সমাজ থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন কিংবা বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত প্রত্যেকটা সময়ে বাঙালি জাতির চেতনা ও ভাবমানস নির্মাণে বিদ্বৎসমাজের সদস্যগণ ভূমিকা পালন করে গেছেন।

ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পটভূমি নির্মাণ, ভারতীয় রেঁনেসা বা নবজাগরণ আন্দোলনের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অপরিসীম। কুসংস্কারাচ্ছন্ন, কূপমুন্ডক ও মূক ভারতীয় সমাজে সভ্যতার ভাষা দিয়েছেন ভারতীয় সংস্কারবাদী আন্দোলনের নের্তৃবৃন্দ। সংস্কারের বাইরে সবসময়েই ইহজাগতিক চিন্তা বা কার্যক্রম লালন করেছেন ভারতবর্ষের বুদ্ধিজীবীগণ।

ইউরোপে যেমন নবজাগরণ আন্দোলন কিংবা আলোকায়নের যুগে ইহজাগতিক-ধর্মনিরপেক্ষ, উপযোগবাদী চিন্তা বিকশিত হয় ভিঞ্চি, মাইকেলেঞ্জেলো, মিল, হবস, রুঁশো, বেন্থামের সংস্কারবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে, ঠিক তেমনিভাবে ইউরোপের প্রায় সমসাময়িককালেই রাজা রামমোহন রায় কিংবা ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মাধ্যমে ভারতবর্ষে সংস্কারবাদী আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময়ে রাজা রামমোহন রায় এবং ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইহজাগতিক চিন্তার বিকাশের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাদান, ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করে গেছেন। শুধু শিক্ষাদান নয়, সংস্কারমূলক কাজ হিসেবে 'সতীদাহ প্রথা' বিলোপ করেছেন, চালু করেছেন 'বিধবা বিবাহ' প্রথা। এঁদের পাশাপাশি ডিরোজিও এবং ইয়ং বেঙ্গল গ্রুপ, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তথা জোঁড়াসাকোর ঠাকুর পরিবারের মাধ্যমেও কলকাতাকেন্দ্রিক নগরজীবনসহ ভারতবর্ষের আলোকায়নে অনেক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড গৃহীত হয়েছিল।

ভারতবর্ষকে আলোকায়নের জন্য যে কাজ উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গ করে গেছেন তার প্রধান সুবিধাভোগী দেশের ওই সময়ের হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজন। তাই তাদের বাইরে বাঙালি মুসলমানদের সামাজিক জীবনের উন্নতি ও সংস্কারের জন্য কাজ করেছেন 'শিখা গোষ্ঠী'র আবুল ফজল, আব্দুল ওদুদ, আবুল মনসুর আহমদ কিংবা আবদুল কাদির প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

বাঙালির আত্মপরিচয়ের শিকড় সন্ধান করতে গিয়ে ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি সংস্কৃতির সীমারেখা নির্ধারণ করেন। এখানে বিশেষ করে নীহাররঞ্জন রায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিনয় ঘোষ এবং সুভাস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ লেখক ও ইতিহাসবিদগণ চর্যাপদ থেকে শুরু করে আজকের যুগের বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালিত্বকে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন রকম ঐতিহাসিক উপাদান যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সাহিত্য, বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ পর্যবেক্ষণ করে বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিশ্বাস-প্রথা, রাজনীতি, চারু-কারুশিল্পসহ লোকসংস্কৃতিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। তাঁরা বাঙালি সংস্কৃতি হাজার বছরের বলে মত প্রকাশ করেন ও ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে বাঙালি সংস্কৃতিকে পৃথক করেন। লেখকবৃন্দের বাঙালি সংস্কৃতিকে চিহ্নিত করার প্রয়াস বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ বলেই মনে করা হয়।

এসব লেখালেখি পড়ার সময় আমার বারবার বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান লেখক অ্যালেক্স হ্যালীর রুটস বইয়ের কথা মনে পরে যেখানে তিনি একজন নিগ্রো কুন্টা-কিন্টোর জাতিগত শিকড় সন্ধান করেন।

ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ যেমন বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরে হয়েছিল ঠিক তেমনি পাকিস্তান সৃষ্টির পর পশ্চিম পাকিস্তানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর শোষণ ও ভাষা কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ হিসেবে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরেই সেই সময়ে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। নাজিমুদ্দিন সরকারের বাংলা ভাষাবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ হিসেবে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শহীদ ড. মুনীর চৌধুরী কাজ করে গেছেন।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে শহীদ ড. মুনীর চৌধুরী ১৯৫৩ সালে লিখলেন বিখ্যাত 'কবর' নাটক। শুধু লিখলেনই না, কারা অভ্যন্তরে তা মঞ্চায়নও করলেন। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে মানুষের স্বতঃর্স্ফূত জাগরণের জন্য গীতিকার ও সুরকার আবদুল লতিফ লিখলেন প্রতিবাদী গান:

"ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়
ওরা কথায় কথায় শিকল পড়ায় আমাদেরই হাত-পায়।"

ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে পটভূমি রচিত হয়েছিল উল্লেখিত বুদ্ধিজীবীদের লেখায় বা গানে তারই ফল বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। এঁদের মধ্যে রক্তাক্ত একাত্তরে রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুনীর চৌধুরী এবং গীতিকার ও সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ অনেককে পাকিস্তানি বাহিনী ও এদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসরা হত্যা করেছে।

একইভাবে বাঙালি বুদ্ধিজীবীগণ তাঁদের প্রত্যক্ষ চিন্তা-লেখালেখি, প্রাত্যহিক সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ আশ্রয় করে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি সংস্কৃতির বিনির্মাণ করেন। তাঁরা শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটা বিষয়ে দিকনির্দেশ করতে চাইলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ কোনো বিশেষ ধর্মের অনুষঙ্গ নয় এবং কোনোভাবেই তা প্রথাগত ধর্মীয় আচার-বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয় নয়। ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির বিকাশের জন্য সেই সময় থেকেই শিল্পী-সাহিত্যিক তথা বুদ্ধিজীবিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ধর্মনিরপেক্ষ গান-কবিতা-উপন্যাস-নাটক রচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

দিন হিসেবে পয়লা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনসহ বিভিন্নভাবেই 'লোক' ও লোকায়ত সংস্কৃতির বিকাশ, লালন ও চর্চার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীগণ অগ্রণী ভূমিকা নেন। ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত 'কাগমারী সন্মেলন'-এ রাজনৈতিক বক্তৃতার পাশাপাশি লোকসংস্কৃতির প্রদর্শন ও চর্চা বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতিকেই নির্দেশ করে। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে নিহত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানসহ অনেক বুদ্ধিজীবীই ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধের প্রতিবাদ করেন। বুদ্ধিজীবীরা সেই সময় পাকিস্তানি সামরিকতন্ত্রের নাকের ডগায় বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাঙালিত্বের প্রতিকৃতি বলে ঘোষণা করেন এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধের প্রতিবাদে সেই সময় 'রবীন্দ্র সঙ্গীত সন্মেলন' করেন।

শুধু তা-ই নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি কেমনভাবে মানুষকে প্রভাবিত করেছিল তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা একটি গানের বাণী দিয়ে–

"বাংলার হিন্দুু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রীষ্টান
বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালী।"

সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার দাবিতে যে আন্দোলন বিদ্যায়তনিক পরিবেশে গড়ে উঠে সেখানেও রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইয়ুব শাসনামলে শিক্ষাবিরোধী 'শরীফ কমিশন'-এর যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ছাত্রদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীরাও তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। যার কারণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন অনেক বুদ্ধিজীবী। বিশেষভাবে সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার বিচার, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনে সহযোগিতার জন্য ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে।

পাকিস্তানবিরোধী স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাষণের দাবিসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র অধিকার আদায়ে সহযোগিতার কারণে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন ড. শামসুজ্জোহা। শহীদ ড. শামসুজ্জোহার হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট হিসেবে ভাষা আন্দোলনসহ পরবর্তীকালে যত রাজনৈতিক আন্দোলন আছে সর্বক্ষেত্রে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বাঙালির কাছে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের প্রাথমিক দলিল বলে পরিচিত ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা আন্দোলন কর্মসূচি তৈরি ও পাঠের ক্ষেত্রে সেই সময়ের বাঙালি জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা সহযোগিতা করেন।

জাতীয়তাবাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার নির্মাণ-বিনির্মাণে বাঙালি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-ভাস্কর-সাংবাদিক ও অর্থনীতিবিদ তথা বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

পাকিস্তানি শাসক কর্তৃক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর শাসন-শোষণ অত্যাচারকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে সেই সময় বিভিন্ন জন বিভিন্নমূখী ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনীতিতে মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব, মনি সিংহের পাশাপাশি চিন্তাগত দিক থেকে সরদার ফজলুল করিম, বদরুদ্দীন উমর, হায়দার আকবর খান রনো; অর্থনীতিতে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের যে 'দ্বৈত অর্থনীতি', তার অনুপুঙ্খ খতিয়ান তুলে ধরেন রেহমান সোবহান, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, আসহাবুর রহমান, আবু আবুদুল্লাহ প্রমুখ অর্থনীতিবিদ।

রাজনীতি ও অর্থনীতির পাশাপাশি বাঙালির আত্মপরিচয়ের উৎস সন্ধান ও সাংস্কৃতিক বাউন্ডারি নির্মাণে কাব্য ও সাহিত্যে শহীদুল্লাহ কায়সার, মেহেরুন্নেসা, আনোয়ার পাশা, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরিফ, জহির রায়হান, শামসুর রাহমান; দর্শন ভাবনায় গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও সরদার ফজলুল করিম; সঙ্গীতে আলতাফ মাহমুদ ও আবদুল লতিফ; সাংবাদিকতায় সেলিনা পারভীন, সিরাজুদ্দীন হোসেন; এবং চিত্রকলায় শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন, কামরুল হাসান ও কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান যখন পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের বিশাল প্রতিকৃতি এঁকে লিখে দেন– "এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে", তখন বুঝতে পারি তিনিই বাংলাদেশের মানুষের বিবেক ও সংগ্রামের প্রতীক।

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আলতাফ মাহমুদসহ 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র'-এর শিল্পীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঘুরে ঘুরে গান করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার জন্য সাহায্য তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কেমন ভূমিকা পালন করেছেন তা আমরা বুঝতে পারি রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত 'স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' এবং রঙ্গলাল সেন ও অন্যান্য সম্পাদিত 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: ঢাকা ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা' বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধ থেকে। এখানে অধ্যাপক অজয় রায়ের একটি প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে নিহত হওয়ার পরদিন থেকেই প্রথম যে যেখানে ছিলেন সেখানেই অসংগঠিত প্রতিরোধ করেন। পরবর্তীতে একদল শিক্ষক বাংলাদেশের ভেতরে থেকেই সক্রিয়ভাবে নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আরেক দল কলকাতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণাসহ মুক্তিযুদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। এর বাইরেও আরেক দল শিক্ষক ছিলেন যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে বিদেশি প্রশাসন ও দূতাবাস, এমনকি বিভিন্ন সরকারকে চিঠি লিখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য ভূমিকা নিতে চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন শিক্ষকদের বাইরে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী ছিল তা আমরা বুঝতে পারব শহীদপত্নী পান্না কায়সার রচিত 'মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে' বইয়ের একটি কথোপকথন হতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ভারতে যাওয়া নিয়ে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার পান্না কায়সারকে বলছেন:

"আমি ভারতে যাব না…আমরা দুই ভাই চিরকাল দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আজও নিলাম। ও সীমান্তে থাকবে। সেখানে ওর প্রকৃত কাজ আছে। আমার কাজ এখানে… যেসব বাঙালি ভারত যেতে পারবে না… প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকবে। আতঙ্কে রাত কাটাবে… তাদের সে যন্ত্রণার কথা লিখব আমি… আমার স্বাধীনতার সূর্যকে নিজের চোখে দেখব। মরতে হয় তাও নিজের দেশেই মরব।"

আমরা দেখতে পাই শহীদুল্লাহ কায়সার মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য অর্থ ও খাদ্য সাহায্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য ডা. ফজলে রাব্বীর চেম্বার থেকে প্রায়ই ওষুধ নিয়ে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাঠাচ্ছেন। সংবাদে প্রতিদিনই লিখছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার খবর। শেষ পর্যন্ত জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য। প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর রোজনামচা লিখলে এমনিই হয়তো পাওয়া যাবে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখিত বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড পরাক্রমশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সমগ্র বাঙালিকে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

শুধু কি তাই? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংবিধান রচনাসহ স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার কর্মসূচি থেকে শুরু করে ও জাতীয় সংস্কৃতির বিনির্মাণে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এমনকি '৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্যু এবং তার ফলাফল হিসেবে পরবর্তীতে জেলহত্যা ও কর্নেল তাহের হত্যাসহ বিভিন্নমুখী ক্যু-প্রতি ক্যু-এর মাধ্যমে দেশে যে দীর্ঘ অন্ধকার যুগ বিস্তৃত হয়েছিল তার প্রতিবাদ করেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা। সেই সময় সামরিকতন্ত্রবিরোধী যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের ভিত রচিত হয়েছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি তার কারিগরও বুদ্ধিজীবীগণ। সাহিত্যিক কবির চৌধুরী, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, শাহরিয়ার কবির, পেশাজীবি ডাক্তারদের পক্ষে ডা. মিলন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও পথ নাটক পরিষদ প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করেছে। বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণেই তখনকার স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

বুদ্ধিজীবীর সংকট

আজ বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা বহুধা বিভক্ত। বিভিন্ন ধারা-উপধারায়, দল-উপদলে বিভক্ত আজকের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিশেষ করে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও শোষণমূলক সামরিকতন্ত্রকে অস্বীকার করে যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের লেখায় তারাই আজ জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি, যুদ্ধাপরাধ-মৌলবাদ, দলীয়করণ, ক্ষমতা কাঠামো ও উন্নয়ন প্রশ্নে বিভক্ত। স্বাধীনতার আজ ৪৪ বছর পরেও ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়বাদী চেতনা ও সংস্কৃতির বিপরীতে ক্ষুদ্রভাবে জাতীয়তাবাদকে শুধুমাত্র ভৌগোলিক ও সাম্প্রদায়িক মানদণ্ডে সংজ্ঞায়িত করার অপচেষ্টা চলছে।

কথিত বাংলাদেশি ও ইসলামি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে তথাকথিত অপবুদ্ধিজীবীরা বাঙালি জাতির সজীব প্রাণসত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতিকে খাটো করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরাও আজ রাজনৈতিক দলের মতো বিভিন্ন কম্পার্টমেন্টে বিভক্ত। বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করতে আজ বহু 'প্রত্যয়', 'অভিধা' ও 'পদবি' যুক্ত হচ্ছে। সমসাময়িক কালে বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যে প্রত্যয় বা অভিধাগুলো যুক্ত হয় তা হল, বাম/ডান/অতি বাম বুদ্ধিজীবী; আওয়ামী/বিএনপি কিংবা জামাতপন্থী বুদ্ধিজীবী; প্রগতিবাদী/দক্ষিণপন্থী বুদ্ধিজীবী; পাহাড়ী/বাঙালি বুদ্ধিজীবী; সরকার পক্ষ/সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী।

বুদ্ধিজীবীদের এই শ্রেণিগত ও অবস্থানগত ভিন্নতার কারণে আজ জাতীয়তাবাদ বিতর্কের পাশাপাশি তাঁরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার, মৌলবাদী রাজনীতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রশ্নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একত্রিত হতে পারছেন না। বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় একটি উক্তি আছে–

"বুদ্ধিজীবী রুদ্ধ ঘরে সঙ্গীহীন
আত্মরতির সম্মোহনে কাটায় দিন।"

রাষ্ট্রিক দায়িত্বের বাইরে আজ অনেক বুদ্ধিজীবীই নিজ ঘরে বসে আত্মকেন্দ্রিকতার জীবনচক্রে আবর্তিত। অনেক ক্ষেত্রেই কথিত বুদ্ধিজীবীরা আজ 'পরজীবীর পরজীবী' হিসেবে আভির্ভূত হচ্ছেন। বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের এই বহুধা বিভক্তি ও উপদলীয় কোন্দলের কারণে বাংলাদেশে বর্তমান বুদ্ধিজীবীরা ইতালীয় সমাজ দার্শনিক অ্যান্তোনিও গ্রামশি কথিত 'প্রথাগত বুদ্ধিজীবিতা'র বাইরে সমাজ সচেতন ও দায়িত্বশীল জৈবিক বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা নিতে পারছেন না। বুদ্ধিজীবী দিবসে তাই আমাদের প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা, দায় ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বুঝতে হবে।

বুদ্ধিজীবীর দায়

প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রের সংকট, আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবাধিকার বিকাশের জন্য কী ভূমিকা পালন করতে পারেন তা আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের জীবনী ও কর্মকাণ্ড দেখলে বুঝতে পারব। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট বিষয়ে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জনপরিসরে বুদ্ধিজীবীর দায় নিয়ে আজকের যুগে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল, মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ও জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাংককে নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী মেনিফেস্টো প্রকাশ করেন। সেই সময় মহান এ দার্শনিক যুদ্ধবিরোধী ভূমিকা, হিটলারীয় ফ্যাসিবাদ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকেও পদচ্যুত হয়েছিলেন।

আলজেরিয়ায় ফ্রান্স কর্তৃক জাতিগত নিপীড়ন ও উপনিবেশের বিরোধিতা করে বিখ্যাত দার্শনিক ফ্রান্স ফাঁনো রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, লিখেছিলেন নিপীড়নবিরোধী বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ 'The Wretched of the Earth''Black Skin, White Mask'

ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের নিপীড়নের ভূমিকার বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ পল সার্ত্র নিজের দেশের বিরোধিতার পাশাপাশি নোবেল পুরস্কার পর্যন্ত গ্রহণ করেননি।

নাজিম হিকমতের মতো কবিরা রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন ও জাতি-জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরোধিতা করতে গিয়ে জেল পর্যন্ত খেটেছেন।

তবু লেখকগণ যুদ্ধ, শোষণ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিতে একবারের জন্যও ভুল করেননি। এ পথচলা এখনও শেষ হয়নি। আজকের যুগের বুদ্ধিজীবীরা এখনও যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন।

২০০১ সাল-পরবর্তী সময়ে একমেরু বিশ্বের প্রতিভূ আমেরিকা যখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদে ইরাক-আফগানিস্তানে হামলা করেছে, নিষ্পাপ নারী-শিশু-পৌঢ়ের উপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে, নিপীড়ন করছে সমগ্র জনগণকে, তখন মার্কিন মুলুকে বসে নোয়াম চমস্কি, মাইকেল প্যারেন্টি, রামজে ক্লার্ক যুদ্ধবিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ও অ্যাকটিভিষ্ট এরিক হবসবমের মতো পশ্চিমের মানুষেরা পশ্চিমে বসেই যুদ্ধবিরোধী কণ্ঠস্বর হচ্ছেন, জাগিয়ে তুলছেন বিশ্বমানবতাবোধ। বিপরীতে প্রাচ্য দেশেও রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন, জাতিগত নিপীড়ন, সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-নির্যাতনের বিপক্ষে ভূমিকা নিচ্ছেন এডওয়ার্ড সাঈদ, একবাল আহমেদ, কেনজাবুরো ওয়ে, মাহমুদ দারবিশ, চিনুয়া আচিবি ও অরুন্ধুতী রায় প্রমুখ সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীগণ।

উপনিবেশিক শোষণ, বৈষম্যে, নির্যাতন ও গণহত্যার প্রতিবাদে শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণ ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ বলে মনে করি। বাঙালির আত্মপরিচয়, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির শেকড় অনুসন্ধানকারী প্রবাদপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ১৯১৯ সালে ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের দেয়া সম্মানজনক 'নাইটহুড' উপাধি বর্জন করেছিলেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও ভারতবর্ষের জনগণের উপর অত্যাচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। কবি নজরুল ব্রিটিশবিরোধী গান, কবিতা ও উপন্যাস রচনা করেছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতোই এখনও বহু যশস্বী লেখক-কবি-বুদ্ধিজীবী ভূমিকা নিচ্ছেন যে কোনো আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। হত্যাকাণ্ড, জনগণের মৃত্যু নিয়ে কিছুদিন আগে মারা যাওয়া ভারতীয় কবি নবারুন ভট্রাচার্য লিখেছিলেন:

"এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এ জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না।"

অতিসম্প্রতি ভারতে উগ্র জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদের উত্থান ও সাম্প্রদায়িক রায়টে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে প্রখ্যাত সাহিত্যিক অরুন্ধুতী রায় ও শোভা দে'র মতো মানুষজন রাস্তায় নামছেন। বেশ কয়েকজন সাহিত্যিক-সঙ্গীতজ্ঞ-চলচ্চিত্রকার-কবি- বুদ্ধিজীবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদে মর্যাদাকার জাতীয় পুরস্কার ও পদক পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন।

অথচ বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রত্যেক সরকারের সময়েই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী এমনকি ব্লগার হত্যা, উগ্র জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থাকলেও প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিজীবীরা সঠিক ভূমিকা নিতে পারেননি। এমনকি ফিলিস্তিনে ইজরাইল ও ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী কর্তৃক যে জায়নবাদী আগ্রাসন চলছে, ইরাক-আফগানিস্থান, লিবিয়া-সিরিয়ার উপর যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-নির্যাতন চলছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫(গ) ধারায় রাষ্ট্রীয়ভাবে যুদ্ধবিরোধী ভূমিকা নেওয়ার কথা থাকলেও, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের দলগত মানসিকতার কারণে এসব বিষয়ে দুয়েকজন বুদ্ধিজীবী ছাড়া কেউ বক্তব্য-বিবৃতি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত আনছেন না। যা আমাদের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে সমগ্র জাতির কাছে অনেক সময়েই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, হুমায়ুন আজাদ, মুনতাসীর মামুন, হাসান আজিজুল হকের মতো কিছু বুদ্ধিজীবী এখনও বাঙালির জীবনে সংকট-সমস্যায় 'চেতনার বাতিঘর' হলেও মোটাদাগে বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী উগ্র সাম্প্রদায়িক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মৌলবাদী রাজনীতির বাইরে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির লালন ও চর্চা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সাংস্কৃতিক ঐক্য নির্মাণ, রাজনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধি, জাতীয় সম্পদ ও দেশীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং নিজস্ব সংস্কৃতি নির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি।

উপর্যুক্ত বিষয়ে সমসাময়িক বাংলাদেশে প্রথাগত বুদ্ধিজীবিতার বাইরে জনপরিসরে গ্রামসীয় অর্থে জৈবিক বুদ্ধিজীবীতার চর্চা বাড়েনি। আড়ষ্টতা ও ভয়ের সংস্কৃতির বিপরীতে কথা বলা ও মতামত প্রকাশের সংস্কৃতির বিকাশে জনপরিসরগুলো আলোচনা-বিতর্ক-ডিসকোর্স সৃষ্টির কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি বর্তমান বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়।

অথচ তাত্ত্বিক এডওয়ার্ড সাঈদ বুদ্ধিজীবীদের অবশ্য করণীয় ভূমিকা সর্ম্পকে বলছেন:

"The intellectuals role generally is to uncover and elucidate the content, to challenge and defeat both an imposed silence and the normalied quiet of unseen power. Where ever and whenever possible."

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা শক্তি-ক্ষমতা ও আধিপত্যবাদী নিঃশব্দতার বিরুদ্ধে জাগবেন– এটাই প্রত্যাশা। প্রতিবছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস আসবে। বাঙালি জাতি স্মরণ করবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির অকৃত্রিম বন্ধু ও বাঙালি-সত্তার আদি পথপ্রদর্শক, অগ্রজদের। বুদ্ধিজীবী দিবসের চেতনা আমাদের আলোকিত করবে। আন্দোলিত করবে বর্তমান প্রজন্মকে।

ফিনিক্স পাখির আয়ু নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যুগ যুগ ধরে ফিরে আসবে বাঙালির মানসপটে।