ইনবক্স, আদারবক্স, স্ক্রিনশট ও নারী-পুরুষ সম্পর্কের ভেতর-বাহির

কাজল দাস
Published : 24 Nov 2016, 01:44 PM
Updated : 24 Nov 2016, 01:44 PM

বাংলা অন্তর্জালে নারী-পুরুষের গোপন সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এটি আমাদের প্রথাগত সমাজে খুবই 'লোভনীয়' বিষয়। এ ক্ষেত্রে আইকনিক কারও সম্পর্কে কিছু উন্মোচিত হলে তো সবাই 'গ্যালারি'তে বসে পড়েন! আইন দিয়েও এর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সবাই খুব উৎসুক ও আগ্রহী এসব নিয়ে। যে কোনো কিছুই দ্রুত ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা, অনলাইন পত্রিকা ও ফেসবুক পেইজগুলো এসব বিষয়ের 'এনডোর্স' বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এবারও দেখা যাচ্ছে, জনৈক তরুণ আমলা, যিনি ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার মেধা তালিকায় জাতীয়ভাবে প্রথম হয়েছিলেন, বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে তার সংলাপ এখন অনলাইনের 'হটকেক'। কিন্তু শুরুটা আসলে অন্য কিছু দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাগিং ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেছিলেন, এর সূত্র ধরেই চলে এসেছে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার সংলাপের স্ক্রিনশট।

কারও ব্যক্তিগত জীবনের চোরাগলি উঁকি দিয়ে পরখ করা নেহায়েত নিচু মানের অপকর্ম ছাড়া কিছুই হতে পারে না। এমনকি এটি একজন ব্যক্তির নিরাপত্তাজনিত বিষয়ের দিক থেকে 'ক্রিমিনাল অফেন্স'ও বটে। কিন্তু যখন একটি সংলাপের স্ক্রিনশট সামনে চলে আসে, কোনো ভিডিও ফাঁস হয়ে যায়, তখন দেখা যায় একজন পুরুষ নানাভাবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের চর্চা করছে, নিজেকে নানা দিক থেকে আড়াল করছে। আবার অনেক নারীও সেখানে জড়িয়ে যাচ্ছে, তারা কোনো বাছবিচারে যাচ্ছে না একান্ত অনুভূতি শেয়ারের ক্ষেত্রে, বা কেউ নিজেকে অন্য জনের কাছে 'ডিপ্রাইভড' ভাবছেন, বা কেউ এক্সক্লুসিভ বিষয় নিয়ে প্রতারণা করছেন। এসব ক্ষেত্রে আমাদের কাছে ওই সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির চেয়ে বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রভাবিত করছে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

আমি এখানে কোনো ব্যক্তির জীবনের গোপনীয়তা বা সততা-অসততা নিয়ে বিচার করছি না। বাংলা অনলাইন আসার পর, বিশেষ করে ২০০৬ সাল থেকে ফেসবুকের যাত্রার পর এবং এর সঙ্গে ভাইবার, মেসেঞ্জার, ইউটিউব এসব সুবিধা আসার পর কীভাবে আমাদের সমাজে ব্যক্তিগত সম্পর্কের 'প্যাটার্ন'গুলো মোড় নিচ্ছে, তার মৌলিক প্রবণতা সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল থাকা ভালো। এতে সামাজিক সম্পর্ককে আমরা ভাইরাল বা হটকেক হয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকেও সুরক্ষার জন্য 'ট্রেস' করা যাবে।

এই যে অনলাইনের ইনবক্স, আদারবক্স বা স্ক্রিনশট ফাঁস হচ্ছে, এগুলো কেন আমাদের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে? তার কারণ আমাদের সমাজ এখনও সম্পর্কের দিক থেকে রক্ষণশীল। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এখানে নিষিদ্ধ। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ। যৌনতার দিক থেকে সমাজ খুবই অবদমিত পর্যায়ে। কেবল বিয়ে এখানে একমাত্র 'লিগ্যালাইজড সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন'। এর বাইরে রয়েছে সীমিতভাবে অরক্ষিত ও অপেশাদার 'ব্রথেল হাউজ'।

কিন্তু সমাজ আটকে থাকছে কি? তার সাহিত্য-শিল্প-কবিতা-গান এখন মুখরিত অবারিত প্রেম ও যৌনতায়। সিনেমাগুলো নান্দনিক প্রেমের পসরা সাজাচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু সিনেমা স্থূল যৌনতার সুড়সুড়িতে ভরা। বিদেশি অনেক টিভি চ্যানেল এখন উন্মুক্ত। হিন্দি-তামিল আর কোরিয়ান সিনেমার 'খুল্লামখুল্লা' নাচগানে বাজার ভরপুর। 'পাইরেটেড' নীল মুভি বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। পর্ন সাইটে ভীড় বাড়ছে। গুগলে সার্চ দিলেই অশ্লীল কন্টেন্ট আগে 'হাইলাইটেড' হচ্ছে। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনগুলো ছেয়ে আছে নারীদেহের অপ্রয়োজনীয় প্রদর্শনীতে। নারীর শারীরিক উপস্থিতি এখন আমাদের বাংলা বদ্বীপের বিজ্ঞাপনগুলোর মুখ্য কন্টেন্ট!

এ থেকে কি বোঝা যায় না যে, আমাদের সমাজ 'উন্মুখ' হয়ে আছে উন্মুক্ত হওয়ার জন্য? খোলস থেকে বের হওয়ার জন্য? স্বাভাবিক নারী-পুরুষের সম্পর্কের দিকে যাবার জন্য, যৌনতাকে 'মোরালিটির' হাত থেকে 'ইরেলিভেন্ট' করার জন্য। এইসব বিষয়ের অনিয়ন্ত্রিত প্রকাশই আসলে তারই লক্ষ্য। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের সমাজের 'এসেন্স' খুব দুর্বল।

আমাদের সামাজিক সম্পর্ক বোঝার জন্য একটি ভালো মাপকাঠি এখন সোশ্যাল মিডিয়া– সোশ্যাল কমিউনিকেশনের সঙ্গে হিউম্যান রিলেশন। ইনবক্স, আদারবক্স, স্ক্রিনশট, ভিড্যু এগুলো মানবসভ্যতার এক মহাবিস্ময়। কোথা থেকে একটা করে ফাঁস হয়, আর উন্মোচিত হয় ব্যক্তির মনোজগতের অজানা অধ্যায়। এগুলো বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বাংলাদেশের নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্কের এক্স-রে কপি। এখান থেকে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভালো করে অনুধাবন করা যায়।

এই যে উন্মোচিত কন্টেন্ট, যেগুলো প্রকাশিত হওয়া মাত্র হৈচৈ শুরু হয়ে যায়, তার কারণ কী? কারণ হল, আমাদের 'অবদমিত' কামনার প্রকাশ। এই বিষয়গুলো আমরা নিজেদের জীবনে প্রায় সবাই করে থাকি; কিন্তু প্রকাশ করি না কিংবা করার মতো সামাজিক অবস্থান বিদ্যমান নেই। সে জন্য এই স্ক্রিনশট বা ইনবক্স-আদারবক্স থেকে আমাদের সম্পর্ক বোঝা ও ব্যাখ্যার কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যায়। এটি আমাদের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত করে দিচ্ছে। আমাদের 'পার্ভাশন'এর নানা দিক দেখিয়ে দিচ্ছে।

আমাদের যৌনজীবনের যে জিঘাংসা, অস্থির বিবমিষা– এসব সোশ্যাল নেটের জালে আটকে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের চোখের সামনে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ব্যক্তির মনের গভীরতম ক্ষত, বিক্ষিপ্ত যৌন-ভাবনা, অপরিতৃপ্ত কামনার অবদমন থেকে জন্ম নেওয়া 'বিকৃতি' কতটা। আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা আমাদের আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কগুলোর জন্য এক নতুন বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি তুলে ধরা এ লেখার মূল উদ্দেশ্য।

মোটাদাগে আমাদের রক্ষণশীল সমাজে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই অবিকশিত– আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক, যেমন প্রেম বা ভালোবাসা বা বিয়ে-পরবর্তী সম্পর্কগুলো খুবই আড়াল করা। বলছি না যে, এগুলো 'পাবলিকলি ডিসপ্লে' করে দেখাতে হবে। কিন্তু যা হচ্ছে না তা হল, এই সম্পর্ক চর্চার ক্ষেত্রে সঠিক কোনো মার্জিত দিক দিয়ে এগুনোর বিষয়টি প্রকটভাবে অনুপস্থিত আমাদের সমাজে। এখানে ভাবার বিষয় আছে।

ধরে ধরে সবার ইনবক্স বিশ্লেষণ করে সম্পর্ক বিচার সুস্থ কাজ নয়। কিন্তু যেসব ইনবক্স মাঝেমধ্যে প্রকাশিত হয়ে জনসম্মুখে চলে আসে তা থেকে আমাদের সম্পর্কের অনেক অসঙ্গতি বোঝা যায়। তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমাজের গভীরের ক্ষত। একইভাবে দেখা যায়, ইনবক্সে যে আদারবক্স থাকে সেখানেও আটকে পড়ে অনেক কিছু। বিশেষ করে অনেক নারীর আদারবক্স তারা মাঝেমধ্যে ওপেন করে দেখেন সেখানে পুরুষের অশ্রাব্যতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কেউ কেউ তাদের সেক্সের অফার করছে, কেউ তোষামোদ করে সুন্দরী বলছে, কেউ-বা তার স্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে, কেউ জিজ্ঞেস করছে তার 'রেট' কত। এই রকম নানান মন্তব্যে অনেক আতঙ্ক প্রকাশ করেন রীতিমতো।

এ থেকে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পাচ্ছে। পরিচয় নেই, সম্বোধন নেই, কিন্তু খুব সহজেই পুরুষরা নারীকে বিভিন্ন মন্তব্য করে যাচ্ছেন। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকা, নারীকে শরীর হিসেবে দেখার পুরুষতান্ত্রিক মজ্জাগত সংস্কৃতি খুব সুন্দরভাবে আটকা পড়ে যাচ্ছে এই অন্তর্জালে। এ জন্য এটা সমাজবিজ্ঞানী বা মনোবিজ্ঞানীদের কাছে আগ্রহের বিষয় বৈকি।

নারী-পুরুষের একান্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা যে এ ধরনের আচরণ করছি, সেটা কেন ঘটছে? এর সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক জায়গাটা আসলে কোথায়? এসব দেখা জরুরি।

একটা বিষয় সোশ্যাল মিডিয়া করে দিচ্ছে, সেটা হল পলায়নবাদিতা। আমরা ইনবক্স বা আদারবক্সের গোপন দরজা দিয়ে নানা কিছু করে বেড়াছি। আমাদের বাইরে এক, ভেতরে আরেক। এই ডুয়ালিটির জায়গা অবশ্যই অন্তর্জালের কারণে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির মূল্যবোধসম্পন্ন ক্রিয়াটাই মূল নিয়ামক।

ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট আপনার, এ জগতের অধীশ্বর আপনি, আপনার ইনবক্স দিয়ে আপনি কী করছেন, তা আপনার একান্ত বিষয়। তবু এখানে নিজস্ব ইচ্ছার সঙ্গে উচিত-অনুচিতের যোগ থাকা দরকার।

অন্যদিকে এখানে কিছু বিষয় ভাবা যায়। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা (রক্ষণশীলতা অর্থে) রক্ষার বিষয়টি আধিপত্য বিস্তার করে আছে। পরিবার, ধর্ম, সমাজ এমনকি কাছের বন্ধু-বান্ধবদের কাছেও প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্ক প্রকাশ করার মতো নির্ভরযোগ্যতা কম। কিন্তু সম্পর্ক সবসময় স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে। এই যে গোপনীয়তার চর্চা, এটি ব্যক্তির মনোজগতে ক্রিয়া করে দৃঢ়ভাবে। এখানে ব্যক্তি অনেক দ্বন্দ্বে ভোগে। সেজন্য তার আচরণ অপ্রত্যাশিত হয় এবং সে খুব দ্রুত গোপন সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারে, এড়িয়ে চলতে পারে। আর এ কারণেই অনেক নারী বা পুরুষ প্রতারণার শিকার হয়।

অভ্যস্ততা আরেকটি বিবেচ্য বিষয়। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সাধারণ সুন্দর সম্পর্ক দেখে বা তাদের একসঙ্গে অন্তরঙ্গ দেখে আমরা অভ্যস্ত নই। সেজন্য দুজন নারী-পুরুষ দেখলেই আমরা সবার আগে তাদের প্রেম বা ভালোবাসায় সম্পর্কিত বলে চিহ্নিত করি। আবার ধরুন নারীদের ইচ্ছামতো পোশাক পরা– এটি আমরা দেখে এতটাই অনভ্যস্ত যে, যদি গ্রামে কোনো মেয়ে জিনস প্যান্ট পরেন তাহলে আমরা যেমন তার দিকে দলবেঁধে তাকাই বা মন্তব্য করি। তেমনি শহরে যদি কোনো নারী স্লিভলেস জামা পরেন তার দিকেও আমরা লক্ষ্য করি বিশেষভাবে।

এটা আমাদের অবচেতনে নেই যে, একজন নারী তার ইচ্ছামতো কাপড় পরতে পারেন। যে কোনো দুজন নারী-পুরুষ একসঙ্গে ঘুরতে পারেন; আড্ডা দিতে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। আমাদের এই অভ্যস্ততা আসলে গড়ে ওঠেনি। সেজন্য নারী-পুরুষ সম্পর্ক কোনো 'অ্যাডাপ্টিবিলিটি' অর্জন করছে না আমাদের সমাজে। এই অভ্যস্ততটা বাড়া দরকার আমাদের।

ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আত্মমূল্যবোধের বিকাশ দরকার। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যক্তিগত মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অপ্রতুল। এমনকি এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা গড়ে ওঠার জন্য শিক্ষা মাধ্যম নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে না। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক যেমন নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেন, হত্যা করেন, ছাত্রী ধর্ষণ করেন– একই বিষয় কিছু ছাত্রের মধ্যেও কাজ করে।

আমরা সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গায় শ্রদ্ধা দেখাতে পারছি না। অন্য একজন ব্যক্তির সম্পর্কে'স্পেস' দিচ্ছি না; রক্ষণশীলভাবে দেখছি। যে কারও সম্পর্ক, তা যতদিন পর্যন্ত কারও ক্ষতি বা সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, তাকে সম্মান জানাতে শিখছি না। কেউ প্রেম করছে, একে তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার হিসেবে দেখতে হবে। এটি না থাকলে ব্যক্তি নানা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় পড়ে। আবার ব্যক্তিসত্তার দুর্বল বিকাশ থাকলে একই ব্যক্তি নানাজনের সঙ্গে প্রতারণা করে বেড়ায়। সে সম্পর্ককে সম্মান জানাতে পারে না। এ জায়গা থেকে একজন একাধিক জনের সঙ্গে প্রতারণা ও মিথ্যাচার করে।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানুষের বাঁক বদল হতেই পারে; কিন্তু একে প্রকাশ করার জন্য বা কারও সঙ্গে আর থাকা যাচ্ছে না বা অনেক দিনের সম্পর্ক আর টেনে নেওয়া যাচ্ছে না বা ভালোবাসা চলে গেলেও পূর্বের ব্যক্তিটির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা– এগুলোর চর্চা আমাদের সমাজে হচ্ছে না। সেজন্য জন্ম নিচ্ছে সন্দেহ, মিথ্যাচার, পার্ভারশন, এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনাও। এটা সার্বিক অর্থেই আমাদের সম্পর্ক চর্চার ক্ষেত্রে অবিকশিত মূল্যবোধের প্রকাশ।

তবে এটা ঠিক, আমরা অনেকটা এগুতে পেরেছি। কেউ কেউ আমরা ভাবছি, চিন্তা করছি, লিখছি। সবচেয়ে বড় কথা হল, সামাজিক পরিসরে এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা, বিতর্ক হচ্ছে। নারী-পুরুষ সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে।

যদি সামাজিক সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উদারনৈতিকতা বাড়ানো যায়, সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে শিখি আমরা, প্রেম বা ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে পারি, যৌন সম্পর্ককে 'ট্যাবু'র বাইরে থেকে দেখতে পারি, তাহলে এভাবে ধীরে ধীরে একটা প্রত্যাশিত নারী-পুরুষ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।