আওয়ামী লীগের সম্মেলন: বড় আয়োজন, বড় প্রত্যাশা

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 28 Oct 2016, 02:34 AM
Updated : 28 Oct 2016, 02:34 AM

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২২ ও ২৩ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। সম্মেলন উপলক্ষে শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সম্মেলন স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকার আদলে বিশাল দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর অনেক জায়গাতেই আলোকসজ্জার আয়োজন ছিল। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল তাদের সম্মেলনের প্রতি সবার নজর পড়ুক। সম্মেলন শেষে এটা বলা যায় যে, আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

এই সম্মেলন ঘিরে তৈরি হয়েছিল ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহল। সেটা কেবল দলের কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, পুরো রাজনৈতিক মহলেই ছড়িয়ে পড়েছিল। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এর বাইরেও প্রতিনিধি, আমন্ত্রিত অতিথি এবং আগ্রহী দর্শনার্থীসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের সমাবেশ ঘটেছিল বলে ধরে নেওয়া যায়।

বিশাল আয়োজন এবং বিপুল জনসমাবেশ ঘটলেও সবকিছুই ছিল সুশৃঙ্খল। আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। আওয়ামী লীগ যে দেশের সব বড় অর্জনের কৃতিত্বের দাবিদার তার যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্যই হয়তো ২০তম সম্মেলনের এত বড় আয়োজন। আওয়ামী লীগ এই সম্মেলনের মাধ্যমে সবার সামনে তাদের সক্ষমতা তুলে ধরতে চেয়েছে এবং তাতে সফলও হয়েছে।

কেউ হয়তো বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে বলেই বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে এত আড়ম্বরের সঙ্গে সম্মেলন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু কেবল ক্ষমতায় থাকলে এবং অর্থ জোগানের অফুরন্ত উৎস থাকলেই বড় ও সুশৃঙ্খল সম্মেলন করা যে সম্ভব হয় না, সেটা অতীতে ক্ষমতাসীন কোনো কোনো দলের সম্মেলনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি।

তবে আওয়ামী লীগের এমন ব্যয়বহুল সম্মেলন করা উচিত হয়েছে কি না, সম্মেলনের জন্য দুদিন ঢাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে নাগরিকদের স্বাধীন চলাফেরায় বাধা দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না– এসব প্রশ্ন কেউ কেউ তুলছেন। কিন্তু আমাদের দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির মান ও অবস্থা বিবেচনায় নিলে এসব প্রশ্ন তোলা খুব সমীচীন বলে মনে হয় না। হুট করে বা কোনো পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হলে মানুষের যতটা অসুবিধা হত, সেটা হয়নি আগে থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়ায়। তারপরও ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় জমায়াতের আয়োজন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ যাতে কম হয় সে দিকে সব রাজনৈতিক দলকেই নজর রাখতে হবে।

রাজনীতি যেহেতু মানুষের জন্য সেহেতু মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না করাই ভালো।

রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের মূলত তিনটি লক্ষ্য থাকে। এক. একটি নতুন কমিটি নির্বাচন; দুই. রাজনীতি ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলাপ আলোচনা এবং তিন. সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।

এই তিনটি লক্ষ্যের আলোকে এখন আমরা দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন কতটুকু সফল হল।

এক. আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের খুব একটা ভূমিকা থাকে না। দলীয় প্রধান যাদের নিয়ে কাজ করতে চান, তিনি যাদের পছন্দ করেন তারাই যে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন– সেটা প্রায় নিশ্চিত থাকলেও একধরনের আগ্রহ ও কৌতূহল থাকে দলীয় প্রধান শেষ পর্যন্ত কাদের বেছে নিচ্ছেন সেটা দেখার জন্য। এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনাই যে সভাপতি পদে নতুন করে দায়িত্ব পাবেন সে ব্যাপারে দলে বা দলের বাইরে কারো মনেই কোনো সন্দেহ সংশয় ছিল না। শেখ হাসিনার বিকল্প আওয়ামী লীগে এখনও তৈরি হয়নি । তিনি আওয়ামী লীগের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। তাঁকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের কথা কারো বিবেচনাতেই নেই। তাই ২০তম সম্মেলনেও তিনি টানা অষ্টমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক।

প্রথম দিকে শোনা গিয়েছিল সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন। কিন্তু সম্মেলনের দুই দিন আগেই এটা প্রচার হয়ে যায় যে, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে এবং এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের পছন্দ সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন চলাকালে সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, তা নিয়ে আগ্রহ থাকলেও কাউন্সিলরদের মধ্যে বড় ধরনের চাঞ্চল্য ছিল বলে মনে হয় না।

সাধারণ সম্পাদক কে হবেন– সেটা যেন আগে থেকেই অনেকেরই জানা ছিল, অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। তাই ওবায়দুল কাদের নতুন সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় কোনো চমক সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন না। তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন সেটা সম্ভাবনার বাইরে ছিল না। যদিও বলা হয়েছিল দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে চমক থাকবে কিন্তু বাস্তবে কোনো চমক দেখা যায়নি।

নতুন-পুরনোর সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির গঠনের যে কথা বলা হয়েছিল, সেটা রক্ষার চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। তবে নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোনোভাবেই তরুণ নন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা। মন্ত্রী হিসেবে অতি ছোটাছুটি করার কারণে তাঁর স্বভাব তারুণ্যদীপ্ত বলে মনে হলেও মধ্য পঁয়ষট্টির একজন মানুষকে নবীন বা তরুণ বলা যায় না। দলের মধ্যে তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি কর্মীবান্ধব বলেই পরিচিত। তাঁর পূর্বসুরি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চেয়ে তাঁর স্টাইল, কর্মপদ্ধতি সবকিছুই আলাদা।

সৈয়দ আশরাফ ধীর-স্থির স্বভাবের একজন স্বল্পবাক স্বজ্জন মানুষ। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির এবং বাকপটু হিসেবেও পরিচিত। তিনি যথেষ্ট 'ডায়নামিক'। তবে তাঁর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততার চেয়ে কৃত্রিমতা বেশি বলে কেউ কেউ মনে করেন। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দীর্ঘসময় তিনি ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন বলে দেশজুড়ে রয়েছে তাঁর বিরাট সমর্থকগোষ্ঠী। নতুন দায়িত্ব পালনে এটা তার জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ সভাপতিমন্ডলীতে পুরনোদের পাশাপাশি নতুন কয়েকজন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পুরনোদের মধ্যে যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে কারো কারো মধ্যে প্রশ্ন আছে। যারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চেও যাদের ঘুমাতে দেখা গেছে তারা কিভাবে সংগঠনে গতিবেগ সঞ্চার করবেন– সে প্রশ্ন তোলা দোষের নয়। তবে সভাপতিমন্ডলীতে যেসব নতুন মুখ এসেছে তাদের নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন নেই। নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খানের অন্তর্ভুক্তি অবশ্যই দলকে সমৃদ্ধ করবে।

৮১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ৪৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আরও ৩৮ জনের নাম ঘোষণা বাকি। বড় ধরনের রদবদল না ঘটলেও পরিবর্তন আছে। কয়েকজন বাদ পড়েছেন, কয়েকজনের পদোন্নতি হয়েছে, দু-চার জন নতুন যোগ হয়েছেন। এসব পরিবর্তন দলের বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

দুই. সম্মেলনে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে খুব বেশি আলাপ-আলোচনা হয়নি। সম্মেলনের প্রাক্কালে লন্ডন প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরম হিতৈষী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর একটি কলামে লিখেছিলেন–

"এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে কঠোর ও তিক্ত সত্যগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে, দল পুনর্গঠনে বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নইলে এই সম্মেলন পাকিস্তানের আইয়ুব খানের আমলের উন্নয়ন দশকের উৎসবের পরিণতি বরণ করবে। আমি এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।"

দুঃখজনক হলেও সত্য এটাই যে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে 'কঠোর ও তিক্ত' বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কিভাবে এসব দূর করে দলকে শক্তিশালী ও গতিময় করে তোলা যাবে তারও কোনো পথ বাতলানো হয়নি। আবদুল গাফফার চৌধুরী তাঁর সাম্প্রতিক একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছেন যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যতটা শক্তিশালী, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ততটা সবল নয়। বরং দল যেন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। দলের নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হচ্ছে, নাকি সরকারই দল চালাচ্ছে– সেটা সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। অথচ একটি রাজনৈতিক সরকারের সবলতার পরিচায়ক হল দলের শক্তিশালী ভূমিকা।

দলের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণেই সরকারের কাজ করার কথা। কিন্তু টানা দুই মেয়াদে সরকারে থাকায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা ধরনের ত্রুটি-দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে, তার প্রকট বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা গেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যার মধ্য দিয়ে। দলের মধ্যে সর্বস্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনতে পারলে পরবর্তী নির্বাচনে বড় রকমের খেসারত দিতে হবে।

বিভিন্ন পর্যায়ে দলের মধ্যে যেমন কোন্দল আছে, তেমনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়াসহ আরও কিছু ঘটনা আছে যা দলকে ক্রমশ জনবিছিন্ন করে ফেলছে। আওয়ামী লীগের মধ্যেই আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি তৈরি হচ্ছে। যারা ক্ষমতার সুখ ভোগ করছেন, ক্ষমতায় থাকার সুবাদে যারা নানা প্রকার অনিয়মের মাধ্যমে 'আঙুল ফুলে কলা গাছ' হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে যারা সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত তারা প্রকাশ্যেই সমালোচনা করছেন, যা কার্যত সরকার এবং দলের বিরুদ্ধ শক্তিকেই উৎসাহ যোগাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অবস্থাও হয়তো থাকবে না। সম্মেলনে এই দুর্বলতাগুলো আলোচিত হলে ভালো হত।

প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সম্মেলনে যে ভাষণ দিয়েছেন– বলা যায়– সম্মেলনের সেটাই বড় প্রাপ্তি । তিনি যেমন তাঁর সরকারের অর্জন ও সাফল্য তুলে ধরেছেন তেমনি ভবিষ্যৎ স্বপ্নের রূপরেখাও তুলে ধরেছেন। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে আহবান জানিয়েছেন নিজ নিজ এলাকার বাসস্থানহীন হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করার, যাতে সরকার তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।

দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করলেও দল কি সামগ্রিকভাবে তাঁর আদর্শিক অবস্থানের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে পারছে? সরকার সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স'-এর নীতি গ্রহণ করলেও আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কি এই নীতি বাস্তবায়নে উদ্যোগী ও সক্রিয়? স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান যেথানে দৃঢ় সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াত কিভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারছে? এই অসংগতিগুলো দূর না হলে আওয়ামী লীগ মানুষের মন জয় করে পরবর্তী নির্বাচনে জয় লাভের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

তিন. ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে। সম্মেলনে উপস্থিত ১১টি দেশের ভ্রাতৃপ্রতীম পার্টিগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের যে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তা দলটিকে নিঃসন্দেহে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে কেবল বাংলাদেশের নেত্রী নয়, উপমহাদেশ তথা বিশ্বনেত্রী হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগই কার্যত বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয় নতুন নেতৃত্ব দলটিকে এই মর্যাদা ও বৈশিষ্টের ধারায় এগিয়ে নিতে নতুন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সম্মেলনের আগে গণমাধ্যমে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসা নিয়ে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে দলের নেতৃত্বে আনার দাবি তৃণমূলের নেতারাও জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় কমিটিতে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার পুত্র রাদওয়ান সিদ্দিকি ববি এবং নিজের মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনা বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। এদের এখনই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনা হলে তাঁরা সমালোচিত হতেন। তাঁদের আসার সময় এবং সুযোগ দুটোই যেহেতু রয়েছে সেহেতু তড়িঘড়ি করে তাদের দলীয় পদ দিয়ে মানুষের মনে বিরূপতা তৈরি না করাই উত্তম কাজ হয়েছে।

সম্মেলনে জেলার নেতারা তাদের বক্তৃতায় নিজ নিজ এলাকার সমস্যা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে না ধরে এতটাই নেত্রীবন্দনায় মেতে উঠেছিলেন যে একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকেই বলতে হয়েছে, "এত বেশি তেল দিয়েন না!"

শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সক্ষম হবে– এই প্রত্যাশা দেশের মানুষ করছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সাফল্য কামনা করি।