খাদিজা হত্যাচেষ্টা: কালান্তরের অন্তর সাফ করা জরুরি

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 7 Oct 2016, 05:24 AM
Updated : 7 Oct 2016, 05:24 AM

আমরা কোন ঘটনার প্রতিবাদ কোন মাত্রায় করি? কেন করি? কোন ধরনের ঘটনায় সমাজের কোন স্তরে কোন ধরনের প্রতিবাদ হয়? প্রতিবাদের তীব্রতা কতটুকু? এবং রাষ্ট্র এ প্রতিবাদ কিভাবে অ্যাড্রেস করে? কিভাবে রেসপন্স করে? এবং আখেরে কী হয়? প্রভৃতি প্রশ্ন সামনে রেখে আমি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত এবং ঘটনা-উত্তর নানা দৌড়ঝাঁপ গভীর মনোযোগের সঙ্গে অনুসরণ এবং বিশ্লেষণ করছি। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে, ঢাবির শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের ঘটনা, বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনা, ইভটিজিংয়ের কারণে বিভিন্ন আত্মহত্যার ঘটনা, তনু হত্যাকাণ্ড, বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা থেকে খাদিজা হত্যাচেষ্টা প্রভৃতি ঘটনার পরবর্তী সামাজিক এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু চমকপ্রদ ফলাফল পাওয়া যায়। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদপত্রে আমি নিয়মিত লেখালেখি করেছি। সেসব পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে খাদিজার ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করা চেষ্টা করছি।

সিলেট মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার ওপর চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র বদরুল এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের কপাল ভালো যে, জনতা বদরুলকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। অন্যথায় পুলিশ 'সর্বাত্মক' চেষ্টা চালিয়েও আসামিকে 'গ্রেপ্তার' করতে সক্ষম হত কি না, সন্দেহ আছে। এবং আমাদের যথারীতি সেই পুরনো বটিকা খাওয়ানো হত যে, "আসামী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।"

এ ঘটনা আবার প্রমাণ করল, শেষ পর্যন্ত জনগণই ভরসার জায়গা। খাদিজার অবস্থা অপরিবর্তিত। এদিকে 'খুনি' বদরুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে এবং স্বীকার করেছে যে, প্রেমের অফারে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে খাদিজা তখনই মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু খাদিজার 'দুর্ভাগ্য' যে সে মরেনি! তবে এখন প্রায় মরমর অবস্থায় আছে। কারণ, ডাক্তাররা বলেছেন, খাদিজার অবস্থা অপরিবর্তিত এবং তার বাঁচার সম্ভাবনা পাঁচ থেকে দশ শতাংশ।

এদিকে এ ঘটনা কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রাণয়ের প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। আর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। কিন্তু এসব 'আশ্বাস' ও 'দাবি' আমজনতার কাছে তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। কারণ, এগুলো কিছু মৌসুমী 'রিচ্যুয়াল' (আচার-রীতি) ছাড়া আর কিছু নয়! কেননা প্রত্যেকটা ঘটনা ঘটনার পর আমরা এসব পদ এবং পদবীর মানুষদের নিয়মিতভাবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে এসব রিচ্যুয়ালস পালন করতে দেখি। পরবর্তীতের তার কোনো কার্যকর ফলোআপ থাকে না বলে এগুলো কিছু অর্থহীন 'বাক্য-বিলাসে' পরিণত হয়েছে!

তবে বদরুলের ছাত্রলীগের 'নেতা' হওয়াটা ঘটনাটিকে ভিন্ন একটা 'সেনসেশান' দিয়েছে। একদল বদরুল যে ছাত্রলীগের একজন নেতা সেটা প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, আরেকদল বদরুল যে ছাত্রলীগের কেউ নয় সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মিত কসরত করে যাচ্ছে। বিষয়টা যেন এ রকম, ছাত্রলীগের না হলেই যেন সরকার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে! আবার ছাত্রলীগ হলেই সব দায়দায়িত্ব ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। বদরুল ছাত্রলীগের কর্মী বা নেতা হতে পারে আবার ছাত্রদলেরও হতে পারত। এখানে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে মূল বিষয়টিই গৌণ হয়ে যাচ্ছে।

আমরা বদরুলকে 'ছাত্রলীগ' কিংবা 'ছাত্রদল'– এ রকম বাইনারির মধ্যে ফেলে না দিয়ে তার ভেতর দিয়ে সমাজের বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিকতাকে কেন দেখার চেষ্টা করছি না? এ রকম ঘটনার ভেতর দিয়ে প্রেম, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের নিত্য অবক্ষয় কেন আমরা দেখার চেষ্টা করি না? আসলে আমরা ভয় পাই, পাছে আমাদের নিজেদের চেহারাটা আয়নার সামনে চলে আসে। পাছে নিজের ভেতরেও আমরা এই বদরুলের অস্তিত্ব দেখতে পাই!

বদরুলে বিচার চেয়ে খাদিজার সহপাঠীরা আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু ভিডিওটিতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, কিছু লোক 'ও মাই গড', 'ও মাই গড' বলে দূরে সরে যাচ্ছে কিংবা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। একজন ভিডিও করছেন, কয়েকজন দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন, আর কয়েকজন হাহুতাশ করছেন। কিন্তু মেয়েটা তাৎক্ষণিকভাবে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে যাননি। একজনকে দেখলাম সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে নির্লিপ্তভাবে হেটে চলে যাচ্ছেন!

এই যে আমাদের নির্লিপ্ততা এবং দায়িত্ব নিয়ে ঘটনার সময় প্রতিরোধ না করা– এটা সমাজের অভ্যন্তরে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ। একটা ছেলে রাস্তায় ফেলে একটি মেয়েকে চাপাতি/দা দিয়ে কোপাচ্ছে আর ২০-৩০ জন লোক সেটা দূর থেকে দেখছে, এটা সমাজের কোন ধরনের মানসিকতাকে নির্দেশ করে? এটা ভাবা খুবই জরুরি। তবে ইমরানের কৃতিত্বকে এ গড়পড়তায় ফেলে খাটো করা যাবে না যে খাদিজাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত যে খাদিজা বেঁচে আছে– এটা ইমরানের জন্য।

তাই সমাজে ইমরানদের অস্তিত্ব স্বীকার করেই বলছি, আমাদের সম্মিলিত নির্লিপ্ততা এবং সমষ্টিগত উদাসীনতা সমাজে এ ধরনের নৃসংশ ঘটনা ঘটার পেছনে অনেকটা দায়ী।

সেদিন যারা খাদিজাকে উদ্ধার না-করে দূর থেকে দাঁড়িয়ে মোবাইলে রেকর্ড করছিল, তারাই এখন খাদিজা হত্যাচেষ্টার বিচার চেয়ে আন্দোলন করছে। সেদিন ভিড়িও না করে এবং দূর থেকে দাঁড়িয়ে ঘটনা না দেখে সবাই মিলে যদি ঘটনাটি ঘটতে না দিত তাহলে আজকে রাস্তায় মিছিল করে ঘটনার বিচার দাবি করতে হত না। তারপরও এ প্রতিবাদ জরুরি। খাদিজার সহপাঠীদের প্রতিবাদের প্রশংসা করি। কেননা আজ যে ঘটনা খাদিজার সঙ্গে হয়েছে, সেটা আরেকদিন আমার সঙ্গে হতে পারে। খাদিজা আমাদেরই কারো মেয়ে, কারো বোন কিংবা কারো বন্ধু।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানিয়েছে, যেগুলোর তিনটি সরকারের কাছে আর একটি দাবি বিশেষ এক পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর কাছে–

১. মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর;
২. হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা;
৩. আইনজীবীদের প্রতি হামলাকারীর পক্ষে কাজ না করার দাবি এবং
৪. সব কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

খাদিজার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ রকম ঘটনা সারা বছর ধরেই নানা জায়গায় আমাদের চোখের সামনে সংঘটিত হচ্ছে। আমাদের দেখা কিংবা না দেখার ভূবনে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে বদরুলরা নিত্য আসা-যাওয়া করে। এ কথা মোটামুটি সবাই জানে যে, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা প্রধানত 'পেট্রিয়ার্কাল' বা পুরুষাধিপত্যবাদী এবং সে কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্রের চরিত্রও পুরুষাধিপত্যবাদী।

ফলে বদরুল কোনো একজন ব্যক্তি নয়, বরং পুরুষাধিপত্যবাদী সমাজের ক্ষমতার প্রতিনিধি। আর এর বিপরীতে খাদিজা এ আধিপত্যবাদের তলায় চ্যাপ্টা হওয়া ক্ষমতাহীনের প্রতিবিম্ব।

তাই খাদিজা অসহায় রাস্তায় পড়ে থাকে আর ক্ষমতাশীল বদরুল একের পর এক দায়ের কোপ দেয়। খাদিজার ছিন্নভিন্ন দেহ নিথর হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়।

বদরুল আর খাদিজার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অসম সম্পর্ক সমাজের সর্বত্র বিরাজমান; পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, পাবলিক পরিসরে এবং রাষ্ট্রের কাঠামোয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত 'ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইম্যান সার্ভে ২০১৫' শীর্ষক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বিবাহিত নারীদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ স্বামী ও শ্বশুরপক্ষীয়দের দ্বারা কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার। সে নির্যাতন শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক বা যৌন হতে পারে। শহর এলাকায় এ হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ৪১ শতাংশ নারী স্বামীর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার।

এটা হচ্ছে ঘরের ভেতরে 'আপনার' লোক দ্বারা নির্যাতনের চিত্র। ঘরের বাইরে 'পর' লোক দ্বারা নির্যাতনের চিত্র এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। কী ঘরে কী বাইরে, নারীর অবস্থান যখন এ রকম তখন কেবল বদরুলের বিচার চেয়ে সমাজের বিদ্যমান 'বদ' রুলের (বাজে ব্যবস্থা) কোনো গুণগত পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

তাই খাদিজার ঘটনাকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে চাই। এ ঘটনায় সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যা খুবই স্বাভাবিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সবাই বদরুলকে একহাত নিচ্ছেন এবং মওকামতো ছাত্রলীগেরও মুণ্ডুপাত করছেন। এসবই ইতিবাচক আলামত। সমাজে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার বহিঃপ্রকাশ।

কিন্তু এসব প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ 'মৌসুমী দেখানোপনা' বলে মনে হয়। আমরা সবসময় প্রবণতাকে বাইপাস করে ঘটনাকে অ্যাড্রেস করি। ফলে ঘটনাটা একসময় 'বাকি' হয়ে যায় কিন্তু প্রবণতা 'নগদ' থেকে যায়। যেখানে গোটা সমাজ 'বদরুলে' পরিপূর্ণ, সেখানে একা খাদিজার জন্য বেসুমার আহাজারি আখেরে সমাজের কোনো কাজে আসবে না।

নিজেদের স্বল্পমেয়াদে মহানুভব হিসেবে জাহির করা ছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে এর কোনো নগদ লাভ নেই। খাদিজার সুস্থতা কামনা করার পাশাপাশি আর কোনো খাদিজাকে যেন ভবিষ্যতে রাস্তায় কোপানোর কেউ সাহস না পায়, তার জন্য আমরা কী করতে পারি– সেটা চিন্তা করা জরুরি। সমাজে ক্রমবর্ধমান 'বদরুল'দের কিভাবে মানুষ করা যায় কিংবা নির্মূল করা যায়, সেটা ভাবা অধিক জরুরি।

খাদিজার ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলাম, "সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করে তা দ্রুত কার্যকরে কী করা যায়, সেটার জন্য কাজ করা জরুরি। অন্যথায় জিরান (বিরতি) দিয়ে দিয়ে ঘটনা ঘটবে, আর নারীর প্রতি সহিংসতার প্রবণতা ক্রমবর্ধমানই থাকবে! এভাবে চলতে থাকলে, সমাজের কোন গুণগত পরিবর্তন না হলেও আমরা একদিন সত্যি সত্যিই পিকুলিয়ার 'আহাজারিজীবী'তে পরিণত হব।"

সিমুন দ্য বুব্যুয়ার তাঁর ১৯৪৯ সালে প্রকাশিক বিখ্যাত 'দ্য সেকেন্ড সেক্স' গ্রন্থে বলেছেন–

"নারী হয়ে জন্মায় না, সমাজ তাকে ক্রমান্বয়ে নারী করে তোলে। সামাজিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই নারী পুরুষের অধীনস্থ এক দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষে পরিণত হয়, প্রধানত তিনটি কারণে– ১. সমাজে শেখায় যে নারীর কাজ হচ্ছে পুরুষের চাহিদা মেটানো, ২. বাহ্যিকতার আবেদনে সাড়া দিয়ে সে নিজেকে সাজগোজ করে রাখে এবং সমাজের বেঁচে/টিকে থাকার জন্য নিজের ন্যায্যতা তৈরি করে এবং ৩. ঐতিহাসিকভাবে নারীর আইনগত অধিকার পুরুষের চেয়ে অনেক কম, যার ফলে সমাজে এবং রাষ্ট্রে নারীর প্রভাব পুরুষের চেয়ে অনেক কম। এসবই নারীকে সমাজে দ্বিতীয় লিঙ্গে পরিণত করে।"

খাদিজার অপরাধ আসলে বাংলাদেশের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে 'দ্বিতীয় লিঙ্গ' হওয়ার অপরাধ। তাই সমাজের চরিত্র না পাল্টিয়ে এবং সমাজে বিদ্যমান পুরুষদের মনো-ভূগোলের (মেন্টার জিওগ্রাফি) সুস্থতা নিশ্চিত না করে কেবল বদরুলের বিচার করলেই সমাজের আরও লাখো খাদিজার জীবনমানের কোনো গুণগত পরিবর্তন হবে না।

তাই বুব্যুয়াঁর তাঁর গ্রন্থে বলেছেন–

"নারীকে প্রথমেই বুঝতে হবে সমাজ এবং সমাজের বিদ্যমান ব্যবস্থা আসলে একটা নির্মাণ, সেটা পুুরুষ, রাষ্ট্র এবং ক্ষমতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীকে দ্বিতীয় লিঙ্গ বানানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটা বুঝতে পারলেই নারী তার ডেসটিনির দিকে সত্যিকার অর্থে এগোতে পারবে।"

তাই কেবল ঘটনাকেই অ্যাড্রেস করলে হবে না, ঘটনার প্রবণতার দিকেই অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে। কেননা ঘটনা কালের কিন্তু প্রবণতা কালান্তরের। সমাজে নারী সম্মানজনক, সমমর্যাদার সহাবস্থানের জন্য কালান্তরের অন্তর সাফ করা জরুরি।