হিলারির দিকে তাকিয়ে খালেদা-মমতা

সুখরঞ্জন দাশগুপ্তসুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
Published : 30 Sept 2011, 04:04 PM
Updated : 15 Sept 2016, 03:56 PM

আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনের দিকেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তাঁর দোসর জামায়াত এবং এপার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দুই বাংলার দুই নেত্রী যা চাইবেন, তা-ই উপুড়হস্ত হয়ে দেবেন হিলারি ক্লিনটন। ওবামা মন্ত্রিসভার বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ছুটে এসেছিলেন ঢাকা ও কলকাতায়। কলকাতায় বঙ্গেশ্বরীর সঙ্গে একান্তে ঘণ্টা দুয়েক আলোচনা করেছিলেন।

পরে তাঁর দলের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, হিলারি মমতাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, "মার্কিনিরা গত শতকের আটের দশকের গোড়ায় গর্ভাচভের সাহায্যে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্টদের মুছে দিয়েছে। আর আপনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৪ বছরের 'জগদ্দল পাথর' সরিয়ে দিয়েছেন।"

মমতা নাকি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, "আপনাদের সাহায্যেই এটা সম্ভব হয়েছে।"

৯/১১ ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ ঘোষণা করেছিলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা 'ওয়ার অন টেরর'। গোটা বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতারা সেদিন ওয়াশিংটনে ছুটে গিয়েছিলেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে গিয়ে বলেছিলেন, "আমরাও এই যুদ্ধের শরিক।"

ইসলামাবাদ থেকে গিয়েছিলেন জেনারেল পারভেজ মুশারফ। তিনিও এই যুদ্ধের সমর্থনে ছিলেন। তার কিছুদিনের মধ্যেই ঘটে যায় মুম্বাইয়ের ২৬/১১ বিস্ফোরণ। সন্ত্রাসের ঘটনার কোনো বিরাম ভারত বা বাংলাদেশ কোথাও নেই। সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে আমেরিকাই। বিন লাদেনকে তারা একদা তোল্লাই দিয়েছিল। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লাদেনকে আমেরিকাই সন্ত্রাসবাদী বানায়।

একুশ শতকে আমেরিকা, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত– সর্বত্রই সন্ত্রাসবাদীদের দাপট বাড়ছে বৈ কমছে না। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সঈদদের মদদ দিচ্ছেই-বা কারা? ভারতের কাশ্মীরসহ একের পর এক ঘটনা যখন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে, ইরাক, সিরিয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বকে বিচলিত করে রেখেছে।

ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মমতার আমলেই। তিন বছর আগে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে বহু লোক মারা যায়। ভারত সরকারের গোয়েন্দারা যৌথভাবে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে তদন্ত করে দেখেছেন, বিষয়টি নেহাত ছোট নয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদেরই একটি অঙ্গ। আর সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাচ্ছা ছেলেরা কালিপূজোর পটকা বানাচ্ছিল!

বিষয়টি তিনি সেদিন হালকা করে দেখার ফল যা ঘটার, তা-ই ঘটছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ডায়মন্ড হারবারে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধার হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা খবর দেওয়ার পরে। তা নিয়ে তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।

ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করছে, এই কারখানার খবর তিন সপ্তাহ আগে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন। তাঁরা আরও বলেছেন, এখানে তৈরি অস্ত্রশস্ত্রই যেত বাংলাদেশে জামায়াতদের হাতে। কদিন আগেই মালদহের সীমান্তে এই ধরনের বেশ কয়েকটি কারখানার খোঁজ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের ঘটনাবলীর নিন্দা গোটা দুনিয়া যখন করেছে, তখন পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী টুঁ শব্দটিও করেননি।

এবার একটু ইতিহাস খুঁজে দেখা যাক। বিগত শতকের ৯৮-৯৯ সালে কেন্দ্রের জোট সরকারের শরিক হিসেবে কংগ্রেস ছেড়ে মমতা মন্ত্রী হন।

ভারতের গোয়েন্দা দপ্তর এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা দপ্তরের পুরনো ফাইল খুঁজে দেখলেই এমন সব তথ্য প্রকাশ্যে এসে যাবে, যাতে রহস্য উদ্‌ঘাটন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ২০০১ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায়, তখন ঢাকায় সম্ভবত সিআইএর দায়িত্বে ছিলেন ন্যান্সি পাওয়েল। এই মহিলা ছিলেন হিলারির খুব ঘনিষ্ঠ। ঢাকা থেকে কলকাতায় আসেন মার্কিন কনসাল জেনারেল হয়ে। প্রথমবার মমতা নির্বাচনে জেতার পর ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত করে কিছুদিনের জন্য তাঁকে দিল্লিতে পাঠানো হয়। ২০০২ সালে জামায়াত-বিএনপি এবং মমতার মধ্যে সেতুবন্ধন করেন এই ন্যান্সি পাওয়েলই। কিন্তু কীভাবে?

সে সময় কলকাতায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ছিলেন একজন জামায়াত নেতা। ৯ নম্বর সার্কাস এভিন্যুতে কনসাল জেনারেলের অফিসে ছুটির দিনে এক গোপন বৈঠক হয়। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, সেখানে ন্যান্সি পাওয়েল বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ থেকে আপনাকে কম্যুনিস্টদের সরাতে হবে।' ঢাকা থেকে কয়েকজন জামায়াত নেতাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন পাওয়েল। সেদিন মমতাকে বলা হয়েছিল, যত টাকা লাগে তারা সরবরাহ করবেন। মমতাকে দেওয়ার জন্য ট্রাংকে করে ১৬ কোটি টাকাও তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন।

সে সময় থেকেই ঠিক হয়, জামায়াতের কিছু লোক পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেবে এবং তার জন্য যত টাকা লাগে সেটা জামায়াত সরবরাহ করবে। সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলে আসছে। বরং এখন তা আরও বেড়েছে। কারণ, মমতা সেদিন ছিলেন বিরোধী নেত্রী, আর এখন তিনি রাজ্যের প্রধান।

উপরোক্ত ঘটনাটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে থেকে পাওয়া। বস্তুত ওই জামায়াত নেতাদের প্রেপ্তার করার জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা কনসাল জেনারেলের দপ্তরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। বাইরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সেদিন পিছনের দরজা খুলে দেওয়া হয়। সেই পিছনের দরজা দিয়েই ওই টাকা উধাও হয়ে গিয়েছিল। খোঁজ মেলেনি ওই জামায়াত নেতাদেরও।

এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট খালেদা সরকারকে জানানো হয়েছিল। তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ওই কনসালকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন। অবসরের কিছু আগে তাকে দুমাসের জন্য নেপালে পাঠিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে ন্যান্সি পাওয়েলও ঢাকা থেকে কলকাতায় বদলি হয়ে আসেন।

কিন্তু ইদানিং যা ঘটছে তা আরও মারাত্মক। মমতা ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই শত শত জামায়াতপন্থী, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগণা এবং কলকাতার খিদিরপুর, পার্ক শার্কাস, রাজাবাজার এবং বন্দর এলাকায় এসে জড়ো হয়েছে। তারা আছে তৃণমূল সরকারের আশ্রয়েই। ঢাকা এবং দিল্লির দুই সরকারই জানে কে কীভাবে কোথায় আছে। আর মমতা সরকারের পুলিশ তাদের শুধু নিরাপত্তাই দিচ্ছে না, উল্টো তাদের থেকে টাকা-পয়সাও নিচ্ছে। ইউপিএ আমল থেতেই দিল্লির গোয়েন্দারা বার বার পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনকে বলেছে আত্মগোপন করে থাকা জামায়াত নেতাদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু প্রত্যেকবারই তাঁরা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।

প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সব জেনেও নরেন্দ্র মোদি কেন মমতা বন্দ্যোপাথ্যায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন না। পশ্চিমবঙ্গ যে জামায়াতদের 'দ্বিতীয় ঘর' হয়ে উঠেছে তা স্বয়ং মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তিন-চারটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু তাদের কেন বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন কূটনীতিক এবং সেনাকর্তারা। হতাশ হয়ে পড়ছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারাও।

তারা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী বসিরহাট অঞ্চলে অর্ধেকের বেশি লোক এখন জামায়াত বা জামায়াতের আশ্রয়দাতা। এদের অনেকেই ভারতের নাগরিকত্বত্ত নিয়ে নিয়েছে। যেখান যেখানে জামায়াতের আস্তানা হয়েছে, সেখানে তারা বাড়ি কিনছে, ফ্ল্যাট কিনছে এবং গোপনে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সবই জানে। কিন্তু জামায়াতদের ফেরত দেওয়ার কথা উঠলেই তারা বলেন, 'আমাদের কাছে এমন কোনো অর্ডার নেই।' তারা বিনামূল্যে এই সমাজসেবা করছেন না। জামায়াতের থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েই এ কাজ করে চলেছেন। কিন্তু এই টাকা আসছে কোথা থেকে?

একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি। বছর খানেক আগে বসিরহাট খোজাডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফেরর হাতে কজন নেতা ৪৫ কিলোগ্রাম সোনাসহ ধরা পড়ে। তার তিন দিন পরে চোরাচালানকারী জামায়াতিদের যখন আদালতে তোলা হয়, সে সময় পুলিশ আদালতে জানায়, ওসব সোনা নয়, তামা ছিল। তাহলে ধরার সময় কেন সোনা দেখানো হয়েছিল? কোথায় উধাও হয়ে গেল সেই সোনা? এ ধরনের ঘটনার পেছনে কে বা কারা কলকাঠি নাড়েন?

বসিরহাটের বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য রাখঢাক না করে সরাসরি বলেন, 'বসিরহাটের অর্ধেক মানুষই জামায়াতপন্থী।' তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, 'আমাদের কিছুই করার নেই। সবই ভোট ব্যাংকের রাজনীতি।'

মমতা ক্ষমতায় এসেই ইমাম ভাতা ঘোষণা করেছিলেন। পরে আদালতে মামলা হওয়ায় বিষয়টি এখনও ঝুলে রয়েছে। সব ব্যাপারেই দ্বিচারিতা করছেন মমতা! একদিকে বাঙালি মুসলমানদের বলছেন, 'আপনারা বামফ্রন্টকে শেষ করে দিন। আমি আপনাদের নিরাপত্তা দেব'– বাস্তবে তিনি নিরাপত্তা দিচ্ছেন জামায়াত আর রাজাকারদের। এরাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে ৩০ লক্ষ বঙ্গভাষীকে হত্যা করেছিল। মমতা হয়তো সে সবের খবরও রাখেন না!

এদিকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, খাগড়াগড় কাণ্ডের দুই মূল চক্রী পশ্চিমবঙ্গেরই বাসিন্দা। খাগড়াগড়ের ঘটনার ৯ বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে ঢুকে ধারাবাহিক নাশকতা ঘটিয়েছিল। খাগড়াগড় কাণ্ডের এই দুই চক্রীকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, বর্ধমানের কৃষ্ণবাটী গ্রামের ইউসুফ গাজি এবং মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের লাল মহম্মদ ওরফে ইব্রাহিমই ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দেওয়া ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। আর খাগড়াগড় কাণ্ডের আরেক চক্রী বাংলাদেশের নাগরিক কাওসর ওরফে বোমা মিজানই তাদের সঙ্গে করে চোরাপথে সীমান্ত পার হয়।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দিনই জানা যায় এই কাওসরের নাম। উল্লেখ্য, কাওসর, ইউসুফ গাজিসহ ৫-৬ জন চক্রী এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গোপন আস্তানার খবর পেতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বহু পুরনো এক সদস্যকে সম্প্রতি জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। মুর্শিদাবাদের এই ব্যক্তির আর জঙ্গি-সংস্রব নেই বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের। ২০০৭ সালে সন্দেহজনক কাজকর্মের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে। জেএমবির এ রাজ্যে তৎপরতা সম্পর্কে এমনই প্রথম জানা যায়। পরে তার বয়ান সমর্থন করে লাল মহম্মদও।

জামায়াত-বিএনপি সন্ত্রাসবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় নাগরিক হওয়ার যাবতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে যাচ্ছে। কী করে তারা এগুলো পাচ্ছে তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞারা। শুধু কি টাকা বা ভোট ব্যাংক? নাকি এর পেছনে আরও বড় কিছু আছে? বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শুরুতেই বলা হয়েছে মমতা, খালেদা এবং জামায়াতের সুসম্পর্কের ব্যাপারে। আরেকটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা দরকার। ২০১২ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একগুচ্ছ প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়েছিলেন। তাঁর কর্মসূচির মধ্যে ছিল দীর্ঘদিনের বকেয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি এবং তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি। মনমোহন ঢাকা যাওয়ার আগে দিল্লি থেকে প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেমন, প্রাক্তন বিদেশ সচিব এবং কেন্দ্রের সেচ সচিব কলকাতায় ছুটে এসে তিস্তা চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে মমতাকে বোঝান।

মনমোহন সিং তাঁকে ফোন করে বলেন, উত্তরপূর্বের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাঁর সঙ্গে ঢাকা যাচ্ছেন। মমতাও যেন যান। চুক্তির খসড়াও দেওয়া হয় মমতাকে। কিন্তু মমতা রাজি না হয়ে শেষ পর্যন্ত ঢাকা যাননি।

মমতা কেন মনমোহনের সঙ্গে গেলেন না, কেনই-বা তিস্তা চুক্তিতে বাগড়া দিলেন, সে ব্যাপারে দেশের গোয়েন্দারা যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তা হল, খালেদা তৃণমূলের দুজন সাংসদের মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় এলে তাঁর সঙ্গেই যেন চুক্তি করেন মমতা, যা ভারতীয় আইনের বিরোধী।

মনমোহন সিং ফিরে আসার পর একাধিক টিভি চ্যানেলে তাঁর সফর নিয়ে আলোচনা হয়। সে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন মমতার মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী নেতা ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তিস্তা চুক্তিতে কেন বাধা দিলেন? উত্তরে তিনি বলেন, "আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনে (২০১৪) হাসিনাকে জেতানোর জন্য কি তিস্তা চুক্তি করব? আর তা দেখিয়ে তিনি ভোট পাবেন? আমরা তা কিছুতেই হতে দেব না।"

দু-চার দিনের মাথায় অন্য একটি চ্যানেলে একই বিষয়ে আলোচনায় ফিরহাদ হাকিমও ছিলেন, আমিও ছিলাম। কথা প্রসঙ্গে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, "তিস্তার পানি চুক্তি হলে হাসিনা জিতে আসবে। তাহলে আপনারা বাংলাদেশে কাকে জেতাতে চান। আপনারা কার পক্ষে?"

এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় মমতা ও খালেদার মধ্যে আসল সম্পর্কটি।

বিজেপি এবং মমতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ হল, পরবর্তীকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার সীমান্ত চুক্তির সময় বাংলাদেশে সদলবল হাজির ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশ থেকে মন্ত্রী, সংসদ বা ভিআইপিরা কলকাতায় এলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা এলেই মমতা বলেন, "আমাদের ইলিশ মাছ দিন।"

তাঁরা যখন উল্টো তিস্তার জলচুক্তির কথা বলেন, তখন স্পিকটি-নট হয়ে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন, মমতা হয়তো সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন, যতদিন না খালেদা জিয়া নতুন করে ক্ষমতায় আসেন।