বাংলাদেশের কারাব্যবস্থা: দার্শনিক ও মানবিক রূপান্তর চাই

Published : 29 August 2016, 04:57 PM
Updated : 29 August 2016, 04:57 PM

২৯ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নবনির্মিত কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে একসঙ্গে ছয় হাজার ৪০০ বন্দী স্থানান্তর করা হয়েছে। পত্রিকার ভাষ্যমতে, পৃথিবীতে বন্দী স্থানান্তরের দিক থেকে এটি নাকি একটি রেকর্ড। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অতিরিক্ত বন্দীর চাপ, কারাগারে দুর্নীতি, সুযোগসুবিধার অপর্যাপ্ততা, অস্বাস্থ্যকর-অমানবিক অবস্থার মতো পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনায় নিলে নবনির্মিত কারাগারে বন্দী স্থানান্তর নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।

বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিককালে কারাব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি ও কারাব্যাবস্থাপনার পদ্ধতিগত উৎকর্ষ সাধনে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বোঝা যায়, সে বিবেচনার অংশ হিসেবে এ স্থানান্তর।

কারাগার-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক যে 'নীতি ও গাইডলাইন' আছে সে অনুযায়ী নবনির্মিত কারাগারে নারী ও পুরুষ বন্দীদের আলাদা সেলসহ দুর্ধর্ষ অপরাধী, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের জন্য আলাদা শাখাও রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দীদের চাপ নিয়ন্ত্রণ, কারাবন্দীদের সাধারণ সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি কারাব্যাবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কারা প্রশাসক, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের (জেলার, ডেপুটি জেলার ও কারাডাক্তার) কিংবা মানবাধিকার কর্মীদের নিঃসন্দেহে আনন্দিত করবে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শাস্তির দর্শন, শাস্তির মানবিকীকরণ, আধুনিক কারাব্যবস্থাপনার দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গিগত রূপান্তর ব্যতিরেকে শুধুমাত্র নতুন জেল নির্মাণ, বন্দীদের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি প্রকল্প দিয়ে কতটুকু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কিংবা নির্মূল করা যাবে?

আধুনিক ও শিল্পায়িত ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রথম কারাগারের উৎপত্তি হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে আধুনিক কারাব্যবস্থার বিকাশের পূর্বে জেল কিংবা লকআপের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেখানে সাধারণত বিচারকালীন অবস্থায় কিংবা বিচার শেষে নির্বাসন ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পূর্বে অপরাধীদের খুব অল্প সময়ের জন্য রাখা হত। শাস্তির একটি সুনির্দিষ্ট ধরন হিসেবে ১৭ ও ১৮ শতকে পৃথিবীতে আধুনিক কারাগার তৈরি করা হয়।

জনগণের মাঝে অপরাধ সম্পর্কে ভয়ভীতি তৈরি, নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আগেকার দিনে ভয়ানক রাজনৈতিক অপরাধীদের হাজার হাজার মানুষের সামনে শাস্তি কার্যকর করা হত। কখনও কখনও রাজনৈতিকভাবে বিবেচিত ক্ষতিকর অপরাধীদের জনশূন্য দ্বীপেও নির্বাসিত করা হত।

'সেন্ট হেলেনা' দ্বীপে নেপোলিয়ান বোনাপার্টের নির্বাসন, সাইবেরিয়ায় লেনিনের নির্বাসন কিংবা 'কালাপানির দ্বীপে' (আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে) ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবীদের নির্বাসন তেমনি একটি প্রক্রিয়া।

সেই সময়ে শাস্তি দেওয়া হত দুটি উদ্দেশ্যে মাথায় রেখে। একটি হল, অপরাধের আনুপাতিক শাস্তিক্রম যাতে ভুক্তভোগী তৃপ্ত হয়। আর অন্যটি হল, জনগণের ওপর শাস্তির প্রতিক্রিয়া তৈরি যাতে জনগণকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা যায়।

এসবের পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা উৎপাদনমূলক কাজে শ্রমের যোগান দেওয়াও ছিল কারাগার নির্মাণের একটি উদ্দেশ্যে।

সশ্রম কারাদণ্ডের ধারণা সেই সময় থেকেই বিকশিত হয়। কিন্তু এসবের সঙ্গে আধুনিককালে জেলখানা কিংবা কারাগার ব্যবস্থার বিকাশের প্রধান উদ্দেশ্যেই হল অপরাধীর 'সংশোধন', 'পুর্নবাসন' তথা 'মানবিক রূপান্তর'।

সেই সময়ে অপরাধীকে নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দী রেখে আত্ম-উপলব্ধি তৈরি, শৃঙ্খলাপূর্ণ দিনলিপির মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষাদান, বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের মাধ্যমে কর্মোপযোগী করে গড়ে তোলা এবং কাউন্সেলিং কিংবা থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ রূপান্তর বা সংশোধনই কারাব্যবস্থার মূল ভিত্তি।

এ জন্যই অনেক সময় কারাগারের প্যারালাল শব্দ হিসেবে 'সংশোধনাগার', 'পুর্নবাসন' ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

কারাগারের উৎপত্তির পর থেকেই শাস্তিবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও স্থপতিবিদেরা নিরাপত্তা, কাঠামো ও নকশা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মানবাধিকার, শাস্তিদান প্রক্রিয়া, জেল সংস্কৃতি এবং থেরাপির উৎকর্ষতা নিয়ে কাজ করেন।

শাস্তি সম্পর্কিত জ্ঞানকাণ্ডকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক মিশেল ফুকো।

ফুকো তাঁর 'ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ' বইয়ে অপরাধীদের শৃঙ্খলা, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ও দর্শন, অপরাধীর স্বাভাবিকীকরণ ও নিয়ন্ত্রিত শরীরে রূপান্তরের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

এর বাইরে সমাজবিজ্ঞানী আরভিং গফম্যান থেকে শুরু করে আধুুনিক কালের ডেভিড গ্যারল্যান্ড পর্যন্ত অনেকে কারা সংস্কৃতি, শাস্তি দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে অনেক লিখেছেন।

বাংলাদেশ কারাগারের ফটকে ব্যবহৃত শ্লোগানেও– "রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ"– একই কথার পুনরাবৃত্তি রয়েছে।

এখানে যেসব অপরাধী সাজা খাটার জন্য আসবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর, কর্মদক্ষতা তৈরি, নিয়মানুবর্তিতা, চরিত্র ও আচরণ সংশোধনের মাধ্যমে আলোর পথ দেখানোর ইঙ্গিত রয়েছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বিদ্যমান সমস্যা ও সংকটগুলো চিহিৃত করলেই বোঝা যাবে যে সে আশা পূরণের বিষয়টি অনেক দূরের ব্যাপার।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ৫৫টি জেলা কারাগারসহ মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে একটি মহিলা কারাগার। দেশের ৬৮টি কারাগারে মোট ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৭০৬ জন হলেও বর্তমানে ৭৩ হাজার ৭০১ জন বন্দী রয়েছে, যা মোট ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। (সূত্র: ডেইলি নিউজ, ২৬ জুন ২০১৬)

বিবিসির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি বন্দী রয়েছে।' এর মধ্যে বিচারাধীন হাজতি, শাস্তিপ্রাপ্ত কয়েদি ও ডিটেন্যু বন্দী রয়েছে। বন্দীর নির্দিষ্ট সংখ্যা অবশ্য প্রতিদিনই পরিবর্তন হয়। কারা অধিদপ্তরের তথ্য থেকে দেখা যায়, ৭০-৭৫ হাজার কারাবন্দীকে নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র সাড়ে আট হাজার জনবল।

জেল কোড অনুসারে, একজন বন্দীর জন্য ৩৬ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও অতিরিক্ত বন্দির কারণে দুই ফুট দৈর্ঘ্য ও দুই ফুট প্রস্থের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজনের জায়গায় পাঁচ-সাতজন ঘুমাচ্ছেন। ফলে বন্দীরা অনেকক্ষেত্রেই পালা করে ঘণ্টা হিসেবে ঘুমান।

ইদানীং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে নাকি এসব কারাগারের পরিস্থিত আরও নাজুক হয়েছে। অপরিস্কার, নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকার কারণে বেশিরভাগ বন্দী অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অপরিষ্কার-নোংরা পরিবেশের পাশাপাশি কারাবন্দীদের অসুস্থ হওয়ার আরেকটি বড় কারণ অপর্যাপ্ত খাবার।

কারাবিধিতে যেখানে দৈনিক ২৮০০ থেকে ৩০০০ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণের বিধি আছে, সেখানে সাধারণ বন্দীর জন্য মাত্র ৫৫-৬৫ টাকা ও ভিআইপি বন্দীর জন্য ১১৫ টাকা বরাদ্দ আছে।

পত্রিকার বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, বন্দীদের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দের সিকিভাগও নাকি জোটে না অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদের কারণে। সরকারিভাবে পত্রিকার রিপোর্ট অতিরঞ্জিত বলা হলেও এর অনেকগুলোই বাস্তব। অসুস্থ পরিবেশ ও পর্যাপ্ত খাদ্যর অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া বন্দীদের চিকিৎসার জন্য ৬৮টি কারাগারের ৫৬টিতেই কোনো হাসপাতাল নেই।

২০১৫ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার এক রিাপোর্ট অনুযায়ী, বন্দী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য অন্তত ৭৭টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৬ জন। ন্যূনতম ৪৪টি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন থাকলেও তখন পর্যন্ত ছিল মাত্র ৯টি। আবার যা সুযোগসুবিধা আছে তাও অনেক সময় অসাধু চিকিৎসক কিংবা সহযোগী কর্মকর্তাদের কারণে সবাই ভোগ করতে পারে না। তারা নাকি টাকার বিনিময়ে সুস্থ কারাবন্দীদের অসুস্থ বানিয়ে সেখানে থাকতে দেন।

এসব সমস্যা হয়তো নতুন কারাগার নির্মাণ, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, দুর্নীতি রোধ কিংবা সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি সাপেক্ষেই সমাধানযোগ্য।

কিন্তু শাস্তির দর্শন ও কারাব্যবস্থাপনার দর্শন পরিবর্তন না করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কিংবা কারাগার থেকে মুক্ত বন্দীরা পুনরায় অপরাধে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যাবে কি?

বর্তমান সরকার নাকি অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ বন্দীদের সুযোগসুবিধা বাড়ানোর ব্যাপারে অনেক সচেষ্ট। সাম্প্রতিককালে কারা অধিদপ্তর বন্দীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি টেলিফোনে যোগাযোগের সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

সমস্যা হল, ঔপনিবেশিক কাল থেকে মানুষকে শাসন-শোষণের জন্য ব্রিটিশরা যে কারাগার, কারা-আইন ও কারা বিধিমালা তৈরি করেছিল তা ঠিক রেখে সমস্যার কতটুকু সমাধান করা যাবে– তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বর্তমানে কারাগারকে 'সংশোধনাগার' বা 'পুর্নবাসন কেন্দ্র' হিসেবে দেখা হয়। সেখানে অপরাধীদের সংশোধনের জন্য নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা, শারীরিক কসরত– ট্রেনিং, কর্মমুখী ও বৃত্তিমূলক কাজের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রেষণা দান, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, নৈতিক শিক্ষাদান ও অপরাধীর ধরন বিবেচনায় বিভিন্ন অপরাধীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দেওয়া হয়।

ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় জেলখানাগুলোতে সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানী, শাস্তিবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী, আইনজ্ঞ ও নকশাবিদ সবাই একসঙ্গে কাজ করেন।

কারাগারগুলোকে মানবিক জীবনবোধ তৈরির চেষ্টা করা হয়। শাস্তির চেয়ে সংশোধনই মূখ্য সেখানে। ফলে কারাগারের বাইরে গিয়ে অপরাধীরা যাতে আবার পুর্নবার অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত না হতে পারে, সে জন্য কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করার জন্য অনেক প্রোগ্রাম নেওয়া হয় শাস্তিপরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে।

পেরোল, প্রবেশনের পাশাপাশি মুক্ত জেল ও অনির্ধারিত শাস্তির ধারণা সেখানে অনেক আগে থেকেই ক্রিয়াশীল। কোনো একটি অপরাধের শাস্তি নির্দিষ্ট না করে 'ওপেন' রাখা হয়। যদি কোনো অপরাধী কারাগারে ভালো আচরণ করে ও পরবর্তীতে ভালো জীবনে থাকবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তবে তাকে কমিউনিটি তত্বাবধানে রাখা হয়। অনেকক্ষেত্রে মুক্তিও দেয়া হয়।

কিছু কিছু দেশে মৃত্যুদণ্ড হ্রাসের পাশাপাশি ইদানিংকালে কারাগার বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে।

কারাবন্দীদের সংখ্যা কমানো কিংবা অপরাধীদের মানবাধিকার বিবেচনায় রেখে ইউরোপে সহিংস ও ভয়ানক অপরাধী না হলে তাকে এমনকী ফৌজদারী আইনের আওতায়ও আনা হয় না।

অনেক সময় অনানুষ্ঠানিক রেস্ট্রোরেটিভ জাস্টিজের মাধ্যমে সমাধানেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আমরা যে ভয়ানক শাস্তি কিংবা জেলব্যবস্থার কথা শুনি তা সম্পূর্ণই রাজনৈতিক। যেমন: গুয়ানতানামো বে, আবু ঘারাইব কিংবা আলকাট্রেল জেল। এসব জেল 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ', 'মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' ও 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' নামের রাজনৈতিক প্রোগ্রামের ফল।

বাংলাদেশে এসব প্রোগ্রাম একেবারেই না থাকা কিংবা অর্থবোধকভাবে না থাকার কারণে এখানে ছোট্ট অপরাধীরা অনেক ক্ষেত্রেই বড় অপরাধীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। অধিকন্তু হাজতি ও শাস্তিপ্রাপ্ত কারাবন্দী, ছোট্ট অপরাধী ও অভ্যাসগত অপরাধী, নারী ও শিশুদের অনেক সময়ই একসঙ্গে রাখার কারণে তারা বড় অপরাধী কিংবা অভ্যাসগত অপরাধীতে পরিণত হচ্ছে।

তাই আমরা বলব, অপরাধীকে শুধুমাত্র শাস্তিপ্রদান ও বৃত্তিমূলক কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অপরাধীর সংশোধন ও পুর্নবাসনকল্পে শাস্তির দার্শনিক ও মানবিক রূপান্তর, কারা ব্যাবস্থাপনার উন্নতির পাশাপাশি কারাবিধির সংস্কার ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবেই অপরাধীদের প্রকৃত অর্থে "আলোর পথ দেখানো" শ্লোগান সার্থক হবে।

[সহ-লেখক:

সুমনা শারমিন, শিক্ষার্থী, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল]