বঙ্গবন্ধু: কিছু অম্লান স্মৃতি

মোজাম্মেল খানমোজাম্মেল খান
Published : 14 August 2016, 03:24 PM
Updated : 14 August 2016, 03:24 PM

প্রায় প্রতিটি জাতির ইতিহাসে– বিশেষ করে সে জাতি যদি পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে– এমন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে তিনি সেই জাতির ইতিহাস নিয়ন্ত্রন করেন, উপনিবেশবাদের অন্ধকার থেকে জাতিকে স্বাধীনতার আলোক সমুদ্রে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি, বরং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি দীপ্যমান।

বাংলাদেশের দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে (মুক্তিযুদ্ধ যার সফল পরিণতি) যে মহান বাঙালি-সন্তান জাতিকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত সংগ্রামের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধে যিনি সশরীরে উপস্থিত না থেকেও সমগ্র জাতির অন্তরে স্ফুলিঙ্গ হয়ে প্রেরণা যুগিয়েছেন, তিনি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান; বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের 'রাখাল রাজা' তিনি।

শেখ মুজিবের কঠোর সমালোচকরাও তাঁর গভীর দেশপ্রেম এবং কিংবদন্তীতুল্য সাহসিহকতা নিয়ে কোনোদিনও প্রশ্ন তোলেননি। মানুষ হিসেবে দোষগুণ স্বীকার করে নিয়েও এ কথা বিনা দ্বিধায় বলা যায় যে, শেখ মুজিব ছিলেন এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সম্ভবত সর্বকালের। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানীর প্রতি চরম শ্রদ্ধা রেখে আমি বাঙালির ইতিহাসে এমন কাউকে জানি না যিনি শেখ মুজিবের আসন টলাতে পারেন।

আমাদের মুক্তিসংগ্রামের নিরবিচ্ছিন্ন ইতিহাসের একজন নিবেদিত পর্যবেক্ষক হিসেবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রত্যক্ষ অংশীদার হিসেবে আমি বিনা দ্বিধায় এ কথাগুলো বলছি।

ষাটের দশকের শেষার্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে শেখ মুজিবকে জানার আগ্রহ এবং সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম। দূর থেকে বা জনসভাতে তাঁকে অনেকবার দেখেছি, কিন্তু কাছ থেকে তাঁকে দেখার এবং কথা বলার সুযোগ কয়েকবার পেয়েছি– দেশে এবং বিদেশে। স্মৃতি থেকে সে কথাগুলো বলার জন্যই এ লেখার অবতারণা।

বঙ্গবন্ধুকে প্রথম কাছে থেকে দেখি ১৯৭০ সনের সম্ভবত জুন মাসে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ তখন ৬ দফার অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা শীর্ষক একটা সেমিনারের আয়োজন করছিল। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ করার জন্য আমরা চারজন– ছাত্রসংসদের সহ-সভাপতি নুরন্নবী খান (পরে কর্নেল এস আই এম নুরন্নবী খান বীর বিক্রম, জিয়াউর রহমানের সময়ে একটা সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিাযোগে সাজাপ্রাপ্ত), আমার দুই সহপাঠী ও বন্ধু হাসানুল হক ইনু (বর্তমান তথ্যমন্ত্রী) এবং শরীফ নুরুল আম্বিয়া (বর্তমান জাসদ নেতা) এবং আমি– ধানমন্ডির সেই বিখ্যাত ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে গেলাম।

আমাদের এ সাক্ষাতের ব্যবস্থা অবশ্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সেদিনের অতি স্নেহভাজন সিরাজুল আলম খান। বঙ্গবন্ধু আমাদের নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসালেন। নুরন্নবী খান নিজের পরিচয় দিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলেন। খুবই খুশি হলেন দেশের এমন একটা আদর্শনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে জেনে। সবশেষে আমরা আমাদের আসল উদ্দেশ্যের কথা বললাম। শুনে বঙ্গবন্ধু বললেন, "আমি তো খুবই ব্যস্ত, তোরা বরং কামালকে (ডঃ কামাল হোসেন) নিয়ে যা, ও খুব ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে অর্থনৈতিক দিকটা নিয়ে। এ ছাড়া রেহমান সোবহান (অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান) এবং ড. জনসনকে (বঙ্গুবন্ধুর সঙ্গে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত তুখোড় সি এস পি খান শামসুর রহমান) নিতে পারিস। ওরা সবাই ভালো বলতে পারে।"

তখন ধারণা করা হচ্ছিল, বঙ্গবন্ধু লালবাগ এলাকা থেকে শক্তিশালী মুসলীম লীগ প্রার্থী খাজা খয়েরউদ্দিনের বিরুদ্ধে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সুযোগ পেয়ে ইনু বলল, "বঙ্গবন্ধু, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু লালবাগ নির্বাচনী এলাকায়। ভোটের সময় কিন্তু আমরা এটা ভুলব না।" সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু বললেন, "ভয় দেখাচ্ছিস মনে হচ্ছে, সেটা হলে আমি ফরিদপুরে যেয়ে নির্বাচন করব।"

সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, "আমি কিন্তু ওখানকার ভোটার; আমারও কিন্তু মনে থাকবে আপনি না গেলে আমাদের অনুষ্ঠানে।" আমার কথা শুনে বঙ্গবন্ধু হেসে ফেললেন। "তাহলে দেখি রাজনীতি থেকে অবসরই নিতে হবে", বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন।

আমাদের অবশ্য সেদিন নিরাশ হয়েই ফিরে আসতে হয়েছিল। ড. কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক রেহমান সোবহান আমাদের সেমিনারে এসেছিলেন। ড. জনসন কোনো সেমিনারেই কোনোদিন অংশ নেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ভারতে বাংলাদেশের প্রথম হাইকমিশনার নিযুক্ত হয়েছিলেন।

এর পরের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের পর; সম্ভবত ৭২-এর এপ্রিল মাসে। দেশ তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। আমরা প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র প্রকৌশলী পাশ করে বেরিয়েছি, কিন্তু চাকরির অবস্থা খুবই খারাপ। সব মন্ত্রণালয়েই নিয়োগ বন্ধ। আমাদের সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। সমস্যা সমাধানের জন্য সদ্য পাশ করা ইঞ্জিনিয়ারদের একটা সভা ডাকা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রায় শ দুয়েক প্রকৌশলী এ সভায় হাজির হয়।

সভার শুরুতেই সহপাঠী বন্ধু মহিউদ্দিন (পরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন, ২০০৪ সালে ১৮ই এপ্রিল প্রয়াত) সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য আমার নাম প্রস্তাব করে বসে। আমি এ জন্য মোটেই প্র্স্তুত ছিলাম না। সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, আমরা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করব এবং আমাদের সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ করব। কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট না করে অফিসে যাওয়ার আগে বাসায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে নির্বাচিত করা হয়। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সহপাঠী মুস্তাফিজকে (মুস্তাফিজুর রহমান, পরে ঘোড়াশাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন) আমার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি।

নির্ধারিত দিনে প্রায় ৫০ জন সদ্য পাশ করা প্রকৌশলীর একটা দল নিয়ে আমি এবং মুস্তাফিজ বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে পৌঁছাই সকাল ৮ টার আগে। বাড়িতে ঢুকতে আমাদের তেমন কেউ বাধা দেয়নি। দেখলাম অভ্যর্থনাকারী এক ভদ্রলোক বসে আছেন অতি সাধারণ সেই ড্রয়িংরুমে। তাকে আমরা আমাদের পরিচয় এবং আগমনের উদ্দেশ্য বললাম। ভদ্রলোক ওই বাড়িতেই থাকেন বলে মনে হল এমন একজন বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়কে আমাদের কথা বলতেই তিনি দোতালায় উঠে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কথা জানান। সম্ভবত পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু নিচে নেমে এলেন। পরনে লু্ঙ্গি ও হাফসার্ট। পায়ে স্যান্ডেল। তখনও সেভ করেননি। হাসিমুখে আমাদের সেই প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন।

আমি ও মুস্তাফিজ সামনে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিতেই বঙ্গবন্ধু আমাকে ডান কোল এবং মুস্তাফিজকে বাম কোলে জড়িয়ে ধরে বললেন, "বাথরুমে ঢুকেছিলাম, বাইরে থেকে কে যেন বলল, নতুন ইঞ্জিনিয়াররা এসেছে, তখন ভাবলাম ইঞ্জিনিয়াররা যখন আমার বাড়িতে এসেছে তখন দেশের অবস্থা নিশ্চয়ই খুব খারাপ, তাই বাথরুম না শেষ করেই বেরিয়ে আসলাম।"

আমি এবং মুস্তাফিজ আমাদের সমস্যার কথা বললাম। বঙ্গবন্ধু বললেন, "দেশের যে কী অবস্থা সেটা তো তোরাই আমার থেকে ভালো জানিস। তোরাই তো যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিস। তোরা তো এ দেশের সেরা সন্তান। দেশ গড়বি বলেই তো স্বাধীন করেছিস। হয়তো গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।"

আমি বললাম, "বঙ্গবন্ধু আমরা দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হতে চাই, আমরা বেতন চাই না, আপাতত আমাদের কিছু ভাতা দিলেই চলবে।" আমার কথাটা বঙ্গবন্ধু খুব পছন্দ করলেন বলে মনে হল। বললেন, "আমি সব মন্ত্রীকে নির্দেশ দেব, যার মন্ত্রণালয়ে যত ইঞ্জিনিয়ারের পোস্ট খালি আছে সেগুলোতে অতি শীঘ্র নিয়োগ দিতে। তোরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সাথে দেখা করে এ কথাগুলো বলতে পারিস।"

বঙ্গবন্ধুর উপদেশ মোতাবেক আমরা কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম এবং কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের প্রত্যেকেই চাকরি পেয়েছিল। বলা বাহুল্য, আমরা সবাই বেতন নিয়েই চাকরি করেছিলাম।

এরপর বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার শেষ সুযোগ এসেছিল দেশের বাইরে। ১৯৭৩ সনের সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাস হবে; আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ম্যানিলাতে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজির ওপর গবেষণা করছিলাম। বঙ্গবন্ধু জাপানে সরকারি সফর শেষে ফেরার পথে ম্যানিলাতে কয়েক ঘণ্টার জন্য যাত্রা বিরতি করেন। ম্যানিলাতে বাংলাদেশের তদানীন্তন অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত জনাব খুররম খান পন্নী আমাদের ৫-৬ জন ছাত্রসহ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাকে এয়ারপোর্টে ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করানোর জন্য।

বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গীদের মধ্যে তাঁর কন্যা রেহানা এবং ছেলে রাসেলও ছিল। বঙ্গবন্ধুকে ভিআইপি লাউঞ্জে একে একে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন রাষ্ট্রদূত পন্নী সাহেব। আমার সঙ্গে করমর্দনের সময় বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "তোমাকে কোথাও দেখেছি মনে হয়।"

আমি জবাব দেওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী তোফায়েল আহমেদ আমার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ বঙ্গবন্ধুকে দিলেন। আমি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজির ওপর গবেষণা করছি জেনে বঙ্গবন্ধু খুবই খুশি হন। (ওই গবেষণার ফসল দিয়ে পরবর্তীতে নাসা প্যাটেন্ট তৈরি করেছে এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশেষ জার্নালে প্রকাশ করেছে)। আমাদের সবার সঙ্গে খুবই আন্তরিকতা নিয়ে গল্প করেছিলেন তিনি।

এয়ারপোর্ট থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রেসিডেন্ট মার্কোসের মালাকানিয়াং প্রাসাদে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কয়েক ঘণ্টা পরে ফেরার পথে মার্কোস এসেছিলেন বিমানবন্দরে অতিথিকে বিদায় জানাতে। আমার ঠিক পাশে দাঁড়ানো মার্কোসকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন শেখ মুজিব সম্পর্কে তাঁর অভিমত চেয়ে। জবাবে মার্কোস বলেছিলেন, "পৃথিবীতে যে কয়জন মুষ্টিমেয় নেতা তাঁদের জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করেছেন, শেখ মুজিব তাঁদের অন্যতম। তাঁর মতো মানুষের সাক্ষাৎ পেয়ে আমি নিজেকে গর্বিত এবং সৌভাগ্যমান মনে করছি। তিনি হলেন এক গৌরবময় ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক। আমরা অন্যরা স্ব স্ব দেশের ইতিহাসের এক একজন চরিত্র মাত্র।"

মার্কোসের এ কথাগুলো আমার অন্তর থেকে এখনও মুছে যায়নি, বিশেষ করে এ জন্য যে গত চার দশকের বেশির ভাগ সময়ই ইতিহাসের সেই অবিসংবাদিত নিয়ন্ত্রক তাঁর সৃষ্ট ইতিহাস থেকেই নির্বাসিত ছিলেন। সে ইতিহাসের ফসল যে বাংলাদেশ, সেখানে তাঁকে শুধু নির্মমভাবে হত্যাই করা হয়নি, আইন করে সে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এর থেকে কলঙ্কজনক ঘটনা সভ্য জগতের ইতিহাসে আর কী হতে পারে?

বহু বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বেশির ভাগ আত্মস্বীকৃত খুনিদের উম্মুক্ত বিচারের মধ্য দিয়ে, জাতির আকাঙ্ক্ষিত সাজা কার্যকরের মধ্য দিয়ে।

১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৯৬ সালে থেকে ঘোষিত এবং পালিত এ শোক দিবস ২০০১ সালে বিএনপি সরকার চরম প্রতিহিংসা পরায়ণতায় বাতিল করে। ইতিহাসের চরম ওই অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যেও ২০০৮ সালে আলোর ঝলকানির মতো বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিচারপতি এক ঐতিহাসিক রায়ে জাতীয় শোক দিবসের পুনরুজ্জীবন ঘটান। প্রকারান্তরে তাঁরা স্বাধীনতা নামের এক অমর কাব্যের কবির প্রতি নিবেদন করেন শ্রদ্ধার নৈবেদ্য। এ সুবিবেচনার জন্য সমগ্র জাতির অভিবাদন তাঁদের প্রতি।

একইভাবে সেদিনের তত্বাবধায়ক সরকার মহামান্য আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে শোকাবহ ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমগ্র জাতির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

এর আগে পাঠ্যপুস্তকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংযোজনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য সমগ্র জাতির গভীর ধন্যবাদ তাঁদের প্রাপ্য।

শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনে নয়, ভবিষ্যতে যে সরকারই দেশ শাসন করুক না কেন ইতিহাসের এ ঋণ পরিশোধের ধারা কোনোদিন ব্যহত হবে না– এ প্রত্যাশা সমগ্র জাতির। সেটা হবে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির স্বপ্নিল প্রত্যাশার প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ এক সোপান।