উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সুবিধাবাদের মার্কিন নির্বাচন

সাব্বির আহমেদ
Published : 14 August 2016, 05:14 AM
Updated : 14 August 2016, 05:14 AM

আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং অর্থনীতির অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। প্রথমবারের মতো আমেরিকার কোনো বড় রাজনৈতিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন হিলারি।

আমেরিকার সাবেক ফার্স্ট লেডি, সিনেটর এবং ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা অনেক। বিপরীতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেই কোনো সরকারি পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা। রিয়েল এস্টেট মোঘল ট্রাম্প রিয়েলিটি শো করে জনপ্রিয় হয়েছেন নিজ দেশে; দুবার মনোনীত হয়েছেন অ্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য।

হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট স্বামীর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে আট বছর কাজ করা হিলারি ক্লিনটন ওয়াশিংটনের হাঁড়ির খবর রাখেন। জনকল্যাণ এবং উত্তর আমেরিকান দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার সময় স্বামী বিল ক্লিনটনের সঙ্গে কাজ করে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্যদের সমর্থন আদায় করে কংগ্রেসে বিল পাশ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। হিলারি নির্বাচিত হলে বিতর্কিত ইস্যুতে দুদলকে এক ঘাটে জল খাওয়াতে সবচেয়ে বেশি সমর্থ হবেন বলে ধারণা করেন অধিকাংশ রাজনীতি-বিশ্লেষক।

মার্কিন রাজনীতির অলিগলিতে ২৫ বছর ধরে বিচরণ করা হিলারির রাজনৈতিক আদর্শ ঠিক কী তা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। তাঁর বক্তব্যে যেমন প্রগতিশীল রাজনীতির পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি পাওয়া যায় ডানপন্থী-ছোঁয়া; রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইস্যুতে তাঁকে মধ্যপন্থা অর্থাৎ সুবিধাবাদ গ্রহণ করতে দেখা যায়। পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, তিনি না রিয়ালিস্ট, না আইডিয়ালিস্ট; বরং 'আইডিয়ালিস্টিক রিয়ালিস্ট'।

অর্থনীতির বিষয়ে তিনি একদিকে আমেরিকান ধারণা– 'মুক্ত মানুষের জন্য মুক্ত বাজার'এর গুণকীর্তন করেন– অন্যদিকে, ব্যক্তি ও কর্পোরেট উভয় কর বৃদ্ধির পক্ষে আছেন; নিম্নতম মজুরি ঘণ্টায় ১২ ডলারে নির্ধারণ করার কথা বলেন। হিলারির সাবেক সহকর্মী ও নিউ ইয়র্কের সিনেটর চার্লস শুমার হিলারি সম্পর্কে বলেছিলেন, "তাঁর মতো একজন অস্বচ্ছ মানুষের সঙ্গে তোমার কখনও সাক্ষাৎ হয়নি।"

হিলারির সমালোচকরা তাঁকে একজন 'ক্ষমতালোভী' হিসেবে বিবেচনা করেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সময় প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, গোল্ডম্যান স্যাক্স ব্যাংক তাঁকে তিনটি বক্তৃতার জন্য ৬ লাখ ৭৫ হাজার ডলার দিয়েছে। বামপন্থীরা তাঁকে ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তিনি বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে ১১২টি দেশ পরিভ্রমণ করা হিলারির রয়েছে পররাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার বিশদ অভিজ্ঞতা। ২০০১ সালে সিনেটর থাকাকালীন তিনি ইরাক যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় তিনি মুসলিম বিশ্বে 'আরব বসন্তের' নামে মার্কিনবিরোধী নেতাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য কাজ করেছেন।

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফিকে হত্যা এবং সেখানে আমেরিকার আগ্রাসনের জন্য তাঁকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাতের জন্য বিরোধীদের অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করার কাজ শুরু হয় তাঁর আমলেই।

অন্যদিকে পর্ন স্টারসহ বিনোদন জগতের তিন স্টারকে বিয়ে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুরুতে অনেকেই ভাঁড় হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। যুগের ধারা অনুসারী ট্রাম্প দলের মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে বাঘা বাঘা প্রার্থীদের ঠিক দুর্বল জায়গায় সময়মতো ছুরি চালিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন।

তিনি দলনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে কথা বলেছেন যে, তিনি নিজে ছাড়া আর সবাই ভুল। সমর্থকদের মধ্যে তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করে নিয়েছেন সফলভাবে। শুরুতে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে তাঁকে নিয়ে চরম বিভেদ দেখা দিলেও আস্তে আস্তে সবাই তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখেছে।

প্রভাবশালী নেতা পল রায়ান, জন ম্যাককেইন, মিচ ম্যাক্কন্নেল তাঁর পক্ষে। নিউট গিংগ্রিচের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ তাঁর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ধারাবাহিকভাবে চরম ডানপন্থার দিকে ধাবিত হওয়া রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট এমনকি রাজনীতিবিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয়।

৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্প 'মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' শ্লোগান দিয়ে একদিকে বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন আধিপত্য কমে যাওয়ায় হতাশ আমেরিকানদের অনুপ্রাণিত করেছেন। অন্যদিকে, বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে 'দেশজবাদ' ও 'বর্ণবাদ' উসকে দিয়েছেন। তিনি কম শিক্ষিত ও ধর্মীয়ভাবে গোঁড়া সাদা আমেরিকানদের ভোট টানার জন্য মেক্সিকান ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে মেক্সিকোর খরচে দেওয়াল তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। এক কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে দেশ থেকে বের করতে চান, মুসলিমদের দেশে ঢুকতে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।

ট্রাম্পের সমর্থনকারীদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকার বৃহত্তম নিউ-নাজি সংবাদ ওয়েবসাইট, 'দ্য ডেইলি স্টর্মার'। ট্রাম্প-সমর্থকদের মধ্যে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, তাদের ৬৬ শতাংশ বিশ্বাস করে য, ওবামা একজন মুসলিম এবং ৬১ শতাংশ মনে করে ওবামা আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেননি।

হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ। তাদের মধ্যে মিল রয়েছে শুধু ধনী লোকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে। বিলিওনিয়রদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে ট্রাম্প কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। তিনি ব্যাপকভাবে কর কর্তনের কথা বলছেন।

আমেরিকার দ্য ট্যাক্স ফাউন্ডেশন এবং ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের মতে, ট্রাম্পের কর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী দশ বছরে জাতীয় আয় বাড়বে ১১.৫ শতাংশ, সৃষ্টি হবে ৫৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান, আমেরিকা আরও ১০ ট্রিলিয়ন ডলার বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এতে কর্মজীবী মানুষের জীবন কিছুটা উন্নত হবে, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়বে; সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন উচ্চ আয়ের লোকেরা।

পক্ষান্তরে, হিলারির কর পরিকল্পনার অন্যতম হচ্ছে আয়কর বৃদ্ধি যার প্রায় পুরোটাই বর্তাবে ধনী লোকদের কাঁধে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে– ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের মতে– আগামী দশ বছরে নিম্ন আয়ের ৯৫ শতাংশ লোকের ওপর করের বাড়তি প্রভাব থাকবে না; রাষ্ট্র ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত আয় করবে; জাতীয় আয় ১ শতাংশ কমে যাবে এবং ৩ লাখ ১১ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হবে।

ট্রাম্প কর কেটে অর্থনীতি সচল করার মাধ্যমে একদিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে, শ্রমিক শ্রেণির জীবনে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ এবং ধনীদের আরও অধিক ধনী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের বর্তমান ১৭ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের সঙ্গে আরও ১০ ট্রিলিয়ন যোগ করবেন। অর্থাৎ 'ধার করে ঘি খাওয়ার নীতি গ্রহণ' করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বর্তমানে আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ঋণ রয়েছে জাতীয় আয়ের ৯৬ শতাংশ। ট্রাম্পের কর-নীতির বাস্তবায়ন হলে আগামী ১০ বছর পর জাতীয় ঋণ হবে জাতীয় আয়ের ১৫০ শতাংশ। ট্রাম্পের কর-নীতি দেশকে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে যাবে। সে তুলনায় হিলারির কর-পরিকল্পনা অনেক সহনশীল। তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছু কম সৃষ্টি হলেও একদিকে ধনী-গরিবের বৈষম্য কিছুটা কমে আসবে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ঋণ কমে হবে জাতীয় আয়ের ৯০ শতাংশ।

হিলারি অভিবাসন বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে মুখে কিছু না বললেও তাঁর কর পরিকল্পনা ইঙ্গিত করছে যে অভিবাসন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে তাঁকে কর্মহীন মানুষের হাহাকার শুনতে হবে।

বিল ক্লিনটনের আমলে কানাডা ও মেক্সিকোর স্বাক্ষরিত 'নাফটা' এবং চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে দেশীয় উৎপাদন কমে গিয়ে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। ফলে বেশি মজুরির আমেরিকায় কারখানা না বানিয়ে কম মজুরির মেক্সিকো ও চীনে কারখানা বানিয়েছে আমেরিকান বিনিয়োগকারীরা। এতে সংকুচিত হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ; কমেছে শ্রমিকের মজুরি।

ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী স্যান্ডার্স ও রিপাবলিকান ট্রাম্প দুজনেই মনোনয়ন প্রতিযোগিতার সময়ে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন জনসমক্ষে; বিরোধিতা করেছেন মুক্ত বাণিজ্যের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উদারতার সমর্থক হিলারি ক্লিনটন এবং অর্থনৈতিক রক্ষণশীল ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই ১২টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (টিপিপি) বিরোধিতা করছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন টিপিপি চুক্তির জন্য কাজ করা হিলারি স্যান্ডার্সের কঠোর সমালোচনার মুখে টিপিপির পক্ষ ত্যাগ করেছেন। নভেম্বরের নির্বাচনে মধ্যপন্থী হিলারি জিতে গেলে চুক্তিগুলো টিকে থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের শাসনে এগুলো বাতিল বা নিদেনপক্ষে পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ট্রাম্পের আমেরিকার সঙ্গে মিত্রদের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। শুধু বাণিজ্য চুক্তিই নয়, নিরাপত্তা চুক্তিতেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন ন্যাটো সদস্যদের সমান হারে চাঁদা দেওয়ার কথা। জানিয়ে দিয়েছেন সৌদি আরব ও জাপানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত মার্কিন সেনাদের খরচ তাদেরই দিতে হবে। এসব কথাবার্তার ফলে আমেরিকার শত্রু-মিত্র সব দেশই ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নির্ধারণে এখনই মাথা ঘামাতে শুরু করেছে।

স্থিতাবস্থায় বিশ্বাসী হিলারিকে নিয়ে এসব দুর্ভাবনা নেই শত্রু-মিত্র কারও মধ্যে। ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক যে নতুন মাত্রা পাবে তাতে এখন আর কেউ সন্দেহ করছে না। তবে মাত্রাটা ঠিক কোথায় নির্ধারণ হবে তা বলা যাচ্ছে না। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ক্রাইমিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার উপর চাপানো অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়া হতে পারে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির কম্পিউটার সার্ভারে রাশিয়ার সরকার-সমর্থিত হ্যাকাররা আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হিলারি ক্লিনটন। এসব বিষয়ে এমন ধারণা হচ্ছে যে, রাশিয়া ট্রাম্পের বিজয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তি করার চেষ্টা করবেন। হিলারি এই চুক্তির জন্য কাজ করেছেন।

আফগান প্রশ্নে দুজনেরই রয়েছে অভিন্ন অবস্থান। সিরিয়ায় সেনা মোতায়নের ঘোরতর বিরোধী ট্রাম্প, হিলারি সামান্য মাত্রায় সেনা মোতায়েন করে আসাদবিরোধীদের শক্তি যোগাতে চান। ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ভোট দেওয়া হিলারি পরবর্তী সময়ে সেনা কমিয়ে আনার পক্ষে ছিলেন। পক্ষান্তরে নিজেকে ইরাক যুদ্ধবিরোধী বলে প্রচার করছেন ট্রাম্প। বাস্তবে দেখা গেছে, তিনি দ্বিধান্বিত অবস্থায় ইরাক যুদ্ধ সমর্থন করেছেন।

ট্রাম্প নির্বাচিত হলে পৃথিবী আরও বেশি যুদ্ধংদেহী হবে নাকি যুদ্ধ বর্জন করে অভ্যন্তরীন বিষয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করবে– এমন প্রশ্নের উত্তর নেই তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায়। তবে উগ্র জাতীয়তাবাদী ট্রাম্পের আমেরিকা বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব বাড়াতে চেষ্টা করবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

কর্তৃত্ববাদী ট্রাম্প এ বিষয়ে নিজের ভাবনা ঢেকে রেখে হিলারিকেই বরং যুদ্ধংদেহী হিসেবে প্রচার করছেন। তিনি ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়া যুদ্ধের জন্য হিলারিকে দায়ী করে চলেছেন। তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট ওবামার সবচেয়ে খারাপ পছন্দ হচ্ছেন হিলারি। তিনি বলেছেন, হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে সিরিয়া ও লিবিয়ায় যুদ্ধ ছিল না; পৃথিবীতে ছিল না আইএস নামের কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব।

এবারের মার্কিন নির্বাচনে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটিয়ে, বর্ণবাদ এবং ঘৃণা ছড়িয়ে আমেরিকানদের ভোট নিতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে বার্নি স্যান্ডার্সের ব্যাপক জনপ্রিয়তার চাপে গণমানুষের সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদে কাজ করার মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে, কথার ফুলঝুরি ফুটিয়ে মধ্যপন্থী ও প্রগতিশীল আমেরিকানদের ভোট টানতে সচেষ্ট রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পররাষ্ট্রনীতি ও সামাজিক বিষয়ে সুবিধাবাদী হিলারি ক্লিনটন।

রয়টার্স এবং ইপসসের সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী হিলারি ৪ শতাংশ বেশি জনসমর্থন নিয়ে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। এই জরিপ অনুযায়ী সম্ভাব্য ভোটারদের ৪৩ শতাংশ রয়েছে হিলারির পক্ষে। বিপরীতে ৩৯ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে। ৯ শতাংশ ভোট দেবেন অন্যান্য প্রার্থীদের, ৪ শতাংশ ভোট দেবেন না এবং ৬ শতাংশ কাকে ভোট দেবেন সে সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত না নেওয়া ৬ শতাংশ ভোটার নিয়ে টানাহেঁচড়া চলবে আগামী তিন মাস। এদের মধ্যে থেকে দুজনের মধ্যে যে বেশি ভোটার টানতে পারবেন তিনিই জিতবেন।

হিলারি বা ট্রাম্প যিনিই জিতুন না কেন, বদল হবে না আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের; ভাগ্য বদল হবে না সে দেশের কর্মজীবী মানুষের।