অ্যাটম বোমার আইনস্টাইন মিথ

আফসার বিপুল
Published : 6 August 2016, 07:29 AM
Updated : 6 August 2016, 07:29 AM

৬ অাগস্ট হিরোশিমা দিবস। ৭১ বছর আগের এ দিনটিতে মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক পর্বের সূচনা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যায়ে জাপানের হিরোশিমা শহরে ইতিহাসের প্রথম পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই একটি বোমার প্রাথমিক আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবেই তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ। এর তিন দিন পর জাপানের নাগাসাকি শহরে আরেকটি পরমাণু বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র; তাতে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হন আরো ৪০ হাজার মানুষ।

একটি বোমার আঘাতে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম; এ পর্যন্ত শেষ ঘটনাও বটে। বিভীষিকাময় এই পরমাণু বোমাকে ঘিরে মানুষের ভয়, বিস্ময় ও কৌতূহলের শেষ নেই। বিজ্ঞান আর্শীবাদ, না অভিশাপ– এই বিতর্কও জোরদার হয় এ দুটি বোমা হামলার জেরে। আর সবচেয়ে দুঃখজনকভাবে এ বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে যায় মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের অন্যতম সেরা স্তম্ভ আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম।

জনপ্রিয় ধারণা হচ্ছে, আলবার্ট আইনস্টাইন অ্যাটম বোমা তৈরির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। প্রকৃত ঘটনা কি আসলেই তাই? আইনস্টাইনই কি এ বোমা তৈরি করেছিলেন?

আজীবন শান্তিবাদী মহান এই বিজ্ঞানীকে ঘিরে এ ধরনের প্রশ্ন ও মন্তব্য প্রায়ই শোনা যায়। আইনস্টাইনকে ঘিরে এ ধরনের মন্তব্য ও প্রশ্নের উৎপত্তির প্রেক্ষাপট ও অ্যাটম বোমা তৈরির কর্মযজ্ঞে এই বিজ্ঞানীর প্রকৃত ভূমিকা সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি তা তুলে ধরা হল।

১৯৪৫ সালে বোমাটি জাপানের দুটি শহরে দুটি পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করার কয়েক মাসের মধ্যেই টাইম ম্যাগাজিনে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়। এতে বোমা বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট মাশরুম ক্লাউডের ছবি পেছনে রেখে সামনে আইনস্টাইনের ছবি ও তাঁর বিখ্যাত সূত্র E=mc2 দিয়ে প্রচ্ছদ করা হয়।

সাময়িকীটির ওই প্রচ্ছদ নিবন্ধে বলা হয়:

"…আলবার্ট আইনস্টাইন অ্যাটম বোমা নিয়ে সরাসরি কোনো কাজ করেননি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিবেচনায় তিনিই এই বোমাটির জনক: (১) তাঁর উদ্যোগের ফলেই যুক্তরাষ্ট্র বোমা বানানোর গবেষণা শুরু করে, এবং (২) তাঁর তত্ত্বই (E=mc2) এ বোমার আত্মপ্রকাশকে তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব করে তোলে।"

একইভাবে নিউজউইক সাময়িকীর প্রচ্ছদেও আইনস্টাইনের ছবি দিয়ে শিরোনাম করা হয়:

"এই সেই ব্যক্তি যিনি সবকিছু শুরু করেছিলেন।"

তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই এসব প্রতিবেদনের জন্ম। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকেও অ্যাটম বোমা প্রকল্পের একটি সরকারি ইতিহাস প্রকাশিত হয়। সেই সরকারি ভাষ্যে, প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টকে সতর্ক করে লেখা আইনস্টাইনের একটি চিঠির ওপর অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়। ওই চিঠিতে পরমাণুর চেইন রিয়্যাকশনের (ফিশন শিকল বিক্রিয়া) ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা নিয়ে প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করেছিলেন আইনস্টাইন।

সবগুলো প্রচারণাই আইনস্টাইনকে সমস্যায় ফেলে। নিউজউইককে তিনি বলেন:

"যদি আমি জানতাম, জার্মানরা অ্যাটম বোমা তৈরি করতে পারবে না, তাহলে আমি একটা আঙুলও তুলতাম না।"

প্রকৃতপক্ষে তিনি ওই বোমা প্রকল্পে কখনো কাজ করেননি– এটি উল্লেখ করেন তিনি। জাপানি একটি প্রকাশনায় তিনি দাবি করেন:

"অ্যাটম বোমা নির্মাণে আমার অংশগ্রহণ একটি মাত্র ঘটনায় সীমাবদ্ধ, তা হল প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে লেখা একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করা।"

ব্যাপক প্রচার পাওয়া ধারণা বা আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত প্রতিবাদ, কোনোটাতেই আইনস্টাইন ও অ্যাটম বোমার জটিল কাহিনির পুরো সত্য ধরা পড়েনি। সাধারণ ধারণার বিপরীতে বরং এটাই সত্য, নিউক্লীয় কণা পদার্থবিজ্ঞানের যে অগ্রগতির ফলে অ্যাটম বোমা নির্মাণের সম্ভাবনা দেখা দেয়, সে সম্পর্কে আইনস্টাইনের প্রথমে কোনো ধারণা ছিল না।

অপরদিকে আইনস্টাইন রুজভেল্টকে লেখা চিঠিতে শুধু স্বাক্ষর করেছিলেন তা-ও পুরোপুরি ঠিক নয়, চিঠিটি লেখার সঙ্গে তিনি ভালোভাবেই জড়িয়ে ছিলেন। চিঠিটি সম্পাদনা করে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থাও তিনিই করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে সেই চিঠিই সব কিছু নয়।

আর এই চিঠি-কাহিনির উদ্যোক্তা আইনস্টাইন নন, মূল হলেন হাঙ্গেরীয় পদার্থবিজ্ঞানী লিও জিলার্ড।। এই ইহুদি বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের পুরনো বন্ধু। ১৯২্০এর দশকে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে থাকাকালে তাঁরা দুজনে মিলে নতুন ধরনের একটি রেফ্রিজারেটর উদ্ভাবন করেছিলেন। দুজনে মিলে এর পেটেন্ট গ্রহণ করলেও সাফল্যজনকভাবে বাজারজাত করতে পারেননি।

১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। এপ্রিলেই জার্মানিতে ইহুদিবিরোধী প্রথম আইন জারি হয়। এই আইনে 'অনার্য' তথা ইহুদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ঘটনার পর শতাধিক ইহুদি পদার্থবিজ্ঞানী জার্মানি ছেড়ে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। পরবর্তীতে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানেই স্থায়ী হন। হিটলারের চ্যান্সেলর হওয়ার খবরে সেই সময় জার্মানির বাইরে থাকা আইনস্টাইনও আর দেশে ফিরেননি, তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

জিলার্ড জার্মানি ছেড়ে প্রথমে ইংল্যান্ড যান, সেখান থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ইংল্যান্ডে থাকার সময় তিনি 'নিউক্লিয়ার চেইন রিয়্যাকশনের' ধারণা উদ্ভাবন করে তা পেটেন্ট করে নিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এ ধরনের চেইন রিয়্যাকশন ব্যবহার করে প্রচুর বিদ্যুৎ কিংবা অকল্পনীয় শক্তিশালী বোমা উৎপাদন করা সম্ভব হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি চেইন রিয়্যাকশন নিয়ে কাজ করতে থাকেন। যখন তিনি জানতে পারেন জার্মান বিজ্ঞানী অটো হান ও ফ্রিটজ স্ট্রসম্যান ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পরমাণু ভেঙে ফেলার ফিউশন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, তখন তিনি উপলব্ধি করলেন, এই ফিউশন পদ্ধতি ব্যবহার করে চেইন রিঅ্যাকশন তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। তার অর্থ, হিটলারের জার্মানি ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে নতুন ধরনের শক্তিশালী বোমা তৈরি করে ফেলতে পারে।

এই সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন জিলার্ড আলোচনা করলেন ইউরোপ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসা আরেক হাঙ্গেরীয় ইহুদি পদার্থবিজ্ঞানী ইউজিন ওয়েগনারের সঙ্গে। তখন তাঁরা দুজনেই এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন যে, জার্মানি হয়তো বেলজিয়ামের উপনিবেশ কঙ্গো থেকে উত্তোলন করা ইউরেনিয়াম কেনার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে বেলজিয়ামকে সতর্ক করার গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন তাঁরা।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া তাদের মতো দুজন হাঙ্গেরীয় শরণার্থী কীভাবে বেলজিয়ামকে সতর্ক করতে পারেন, ভেবে কোনো কূলকিনারা পেলেন না। তখনই জিলার্ডের মনে পড়ল বেলজিয়ামের রানি আইনস্টাইনের বন্ধু। জিলার্ডের এই মনে পড়াই আইনস্টাইনকে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে টেনে নিয়ে এল।

আইনস্টাইন তখন 'গ্রান্ড ইউনিফিকেশন' তত্ত্বের গবেষণা ছাড়া অন্য কোনো কিছু নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। স্মৃতিচারণ করে জিলার্ড বলেছিলেন:

"আমরা জানতাম আইনস্টাইন লং আইল্যান্ডে আছেন, কিন্তু ঠিকানা জানতাম না।"

তাই তিনি নিউ জার্সির প্রিন্সটনে আইনস্টাইনের অফিসে ফোন করে ঠিকানা সংগ্রহ করলেন। ১৯৩৯ সালের ১৬ জুলাই তিনি ও ওয়েগনার লং আইল্যান্ডে গিয়ে উপস্থিত হলেন। এক বালকের সাহায্যে আইনস্টাইনের বাড়ি খুঁজে পেলেন। তাঁরা আইনস্টাইনকে 'গ্রান্ড ইউনিফিকেশন' তত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় মগ্ন দেখতে পেলেন।

এই সাক্ষাতেই জিলার্ড, নিউক্লিয়ার ফিউশন পদ্ধতি ব্যবহার করে কীভাবে ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে চেইন রিয়্যাকশনের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়, তার বিস্তারিত আইনস্টাইনের কাছে তুলে ধরলেন।

"এসব আমার মাথায়ই আসেনি", জিলার্ডের কথার মধ্যেই বললেন আইনস্টাইন। আরও কিছু সম্পূরক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দ্রুতই তিনি পুরো বিষয়টি বুঝে নিলেন। আইনস্টাইন বেলজীয় রানির কাছে চিঠি লেখার পরিবর্তে তাঁর পরিচিত বেলজীয় এক মন্ত্রীকে চিঠি লেখার পরামর্শ দিলেন।

ওয়েগনার বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অত্যন্ত গোপনীয় নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে তিনজন শরণার্থী বিজ্ঞানীর একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সরকারের কাছে চিঠি লেখা ঠিক হবে না।

এই পরামর্শের পর ঠিক হল আইনস্টাইনের (তিনজনের মধ্যে একমাত্র আইনস্টাইনই মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো বিখ্যাত ছিলেন) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বেলজীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি পাঠানোই সঠিক হবে। পাশপাশি সবকিছু জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একটি চিঠি পাঠাতে হবে। এই পরিকল্পনা মাথায় রেখে আইনস্টাইনের নির্দেশনায় জার্মান ভাষায় একটি চিঠি লেখা হল। পরে ওয়েগনার তা ইংরেজিতে রূপান্তর করে নিজের সহকারীকে দিয়ে টাইপ করিয়ে তা সা্ইলার্ডের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

এর কয়েকদিন পর লেহম্যান ব্রাদার্সের অর্থনীতিবিদ ও প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের বন্ধু আলেকজান্ডার স্যাকসের সঙ্গে সা্ইলার্ডের বৈঠকের ব্যবস্থা করে দিলেন তাঁর এক বন্ধু। জিলার্ডের সঙ্গে আলোচনায় স্যাকস চিঠিটি সরাসরি প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে পাঠানোর প্রস্তাব করলেন আর চিঠিটি রুজভেল্টের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।

প্রথমবারের মতো স্যাকসের সঙ্গে আলাপ হলেও জিলার্ড প্রস্তাবটি লুফে নিলেন। আইনস্টাইনকে লিখলেন:

"এই রাস্তায় চেষ্টা করলেও কোনো ক্ষতি হবে না।"

চিঠিটি নতুন করে লেখা উচিত বিবেচনায় জিলার্ডকে ফের লং আইল্যান্ডে আসতে বললেন আইনস্টাইন। ওই সময় ওয়েগনার ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকায় সাইলার্ড গাড়ি চালানোর জন্য (তিনি গাড়ি চালাতে পারতেন না) ইউরোপ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা আরেক হাঙ্গেরীয় ইহুদি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টেলারকে সঙ্গী করলেন। টেলার পরে যুক্তরাষ্ট্রের হাইড্রোজেন বোমা প্রজেক্টের পরিচালক হন।

দুই সপ্তাহ আগে আইনস্টাইনের নির্দেশনায় লেখা চিঠির মূল খসড়া নিয়ে লং আইল্যান্ডে গেলেন জিলার্ড। কিন্তু আইনস্টাইন উপলব্ধি করলেন তাঁরা এখন বেলজীয় রাষ্ট্রদূতের চেয়ে ঢের গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লেখার পরিকল্পনা করছেন। তাই কঙ্গোর ইউরেনিয়াম রপ্তানি নিয়ে সতর্ক করে লেখা আগের চিঠিতে চলবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অকল্পনীয় ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্রের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠি লেখার পরিকল্পনা করলেন আইনস্টাইন।

স্মৃতিচারণায় জিলার্ড বলেছেন:

"আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় বলেছিলেন, আর টেলার লিখেছিলেন। ওই লেখা গাইডলাইন ধরে আমি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর মতো দুটি খসড়া তৈরি করলাম।"

টেলারের নোট অনুযায়ী, আইনস্টাইনের লেখা খসড়াটি শুধু কঙ্গোর ইউরেনিয়াম নিয়েই ছিল না, চেইন রিঅ্যাকশনের সম্ভাব্যতা নিয়েও ব্যাখ্যা ছিল। চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে নতুন ধরনের বোমা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে বিষয়টি নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।

এরপর জিলার্ড ২ আগস্ট ১৯৩৯ তারিখে দেওয়া একটি ৪৫ লাইনের চিঠি এবং একই তারিখ দেওয়া আরেকটি ২৫ লাইনের সংস্করণ আইনস্টাইনের কাছে পাঠালেন। এর মধ্যে কোনটি পাঠানো হবে তা নির্ধারণের ভার আইনস্টাইনের ওপর ছেড়ে দিলেন। ছোট একটি চিরকুট যুক্ত করে আইনস্টাইন দুটি চিঠিতেই স্বাক্ষর করে দিলেন।

স্যাকসের ওপর ভরসা করতে না পেরে আইনস্টাইন ওই সময়ের বিখ্যাত ব্যক্তি চার্লস লিন্ডেনবার্গের শরণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই তিন ইহুদি শরণার্থী জানতেন না, লিন্ডেনবার্গ হিটলারের দেওয়া রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হয়ে জার্মান অনুরক্ত ও রুজভেল্টের বিরোধীতে পরিণত হয়েছেন। তাই লিন্ডেনবার্গের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পেলেন না তাঁরা। চিঠিতে বিষয়টি আইনস্টাইনকে জানিয়ে জিলার্ড লিখলেন:

"লিন্ডেনবার্গ আমাদের লোক নয়।"

এরপর সেই স্যাকসের কাছেই ফিরতে হল। তার হাতেই রুজভেল্টের উদ্দেশে লেখা আইনস্টাইনের স্বাক্ষর করা চিঠিটি পাঠানো হল। কিন্তু পরবর্তী দুই মাসেও রুজভেল্টের কাছে চিঠিটি দেওয়ার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারলেন না স্যাকস।

অাগস্টের শেষ দিকে নাৎসি জার্মানির সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনাক্রমণ চুক্তি ও পোল্যান্ড ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিশ্বপরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি পাল্টে গেল। হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

এভাবে যেটি ছিল শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা একটি জরুরি চিঠিতে পরিণত হল।

সেপ্টেম্বরের (১৯৩৯) শেষ দিকে স্যাকসের সঙ্গে দেখা করে জিলার্ড আবিষ্কার করলেন স্যাকস তখনও চিঠিটি প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করতে পারেননি। আতঙ্কিত জিলার্ড হতাশ হয়ে আইনস্টাইনকে লিখলেন:

"নিশ্চিত সম্ভাবনা আছে, স্যাকসকে দিয়ে হয়তো আমাদের কোনো কাজই হবে না। ওয়েগনার ও আমি স্যাকসকে আরও দশ দিন সময় দিয়েছি।"

১৯৩৯ সালের ১১ অক্টোবর স্যাকস সফল হলেন; আইনস্টাইনের চিঠিটি নিয়ে তিনি রুজভেল্টের ওভাল অফিসে হাজির হলেন। জিলার্ডের দেওয়া চিঠি ছাড়াও নিজের হাতে লেখা ৮০০ শব্দের এক সংক্ষিপ্তসারও তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন।

রুজভেল্ট তাঁকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেন। আইনস্টাইনের চিঠি ও অন্যান্য কাগজপত্র রুজভেল্টের কাছে রেখে আসতে ভরসা হল না স্যাকসের। প্রেসিডেন্ট হয়তো সেগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখবেন, ভাবলেন তিনি। তাই নিজেই সেগুলো প্রেসিডেন্টকে পড়ে শোনানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রেসিডেন্টের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আইনস্টাইনের চিঠির সংক্ষিপ্তসার ও জিলার্ডের মেমোর একটি অংশ পড়ে শোনালেন তিনি। সব শুনে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করলেন রুজভেল্ট।

এর পরের সপ্তাহে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি চিঠি পেলেন আইনস্টাইন। চিঠিতে রুজভেল্ট লিখেছেন:

"ইউরেনিয়ামের বিষয়ে আপনার পরামর্শের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখার জন্য আমি একটি সভা আহ্বান করেছি।"

কিন্তু এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঢিমেতাল ও অপ্রতুল তহবিলে উদ্বিগ্ন জিলার্ড ও আইনস্টাইন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ আরও গতিশীল করা যায় কি না তা বিবেচনার জন্য প্রেসিডেন্ট বরাবর আরেকটি চিঠি পাঠালেন।

এরপরও হয়তো পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হত না, যদি আর একটি ঘটনায় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি নতুন দিকে মোড় না নিত।

১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ হাওয়াইয়ের পার্ল হারবারে (বন্দরে) আকস্মিকভাবে বিমান হামলা করে জাপান। ব্যাপক ওই হামলায় পার্ল হারবার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

হামলার পরদিনই ৮ ডিসেম্বর জাপান, জার্মান, ইতালির অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অ্যাটম বোমা প্রকল্পের দিকে এগিয়ে যায়।

পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কর্পসকে দায়িত্ব দিয়ে অ্যাটম বোমার বিক্ষিপ্ত উদ্যোগকে ঢেলে সাজানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বাধীন প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর 'কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ারর্স' ম্যানহাটন ইঞ্জিনিয়ার ডিস্ট্রিক্টের হাতে চলে যায়। এখান থেকেই প্রকল্পটির নাম হয় 'ম্যানহাটান প্রজেক্ট'। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল লেসলি আর গ্রোভসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে যায়।

এরপর এ বিষয়ে আইনস্টাইনকে আর কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয়নি। বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হলেও আইনস্টাইন সরাসরি ম্যানহাটান প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন না। অ্যাটম বোমার নকশা নিয়ে গবেষণার জন্য নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামোসে একটি গোপন গবেষণাগার তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সালে গ্রোভস মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমারকে এর সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর নিযুক্ত করেন।

অন্য যেসব বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ ম্যানহাটান প্রজেক্টে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন, ফিলিপ এইচ অ্যাবেলসন, হ্যান্স বেথে, নীলস বোর, স্যার জেমস চ্যাডউইক, এনরিকো ফার্মি, রিচার্ড ফেইনম্যান, অটো ফ্রিশ, জর্জ কিসতিয়াকোওস্কি, আর্নেস্ট লরেন্স, ফিলিপ মরিসন, সেথ নেদেরমিয়ার, জন ভন নিউম্যান, রুডলফ পিয়ারলস্, লিও জিলার্ড, এডওয়ার্ড টেলার, স্তানিসল উলম, হ্যারল্ড উরে এবং ভিক্টর ওয়্যাইসকফ।

এঁদের মধ্যে পাঁচজন বিজ্ঞানী ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, বাকিদের মধ্যে আরও তিনজন পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কার পান।

জেনারেল গ্রোভসের আগে অ্যাটম বোমা উদ্যোগের সংগঠক ছিলেন জেনারেল শেরম্যান মাইলস। এই মাইলসের কাছে লেখা এক চিঠিতে তৎকালীন এফবিআই প্রধান জে এডগার হুভার আইনস্টাইনকে শান্তিবাদী আন্দোলকারী হিসেবে বর্ণনা করে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে চিহ্নিত করেন।

শেষ দিকে ম্যানহাটান প্রজেক্টে ছোট একটি ভূমিকা পালন করেন আইনস্টাইন। প্রজেক্টের অন্যতম বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ভ্যানেভার বুশ রাসায়নিক যৌগ থেকে একটি আইসোটোপ পৃথক করার সমস্যায় আইনস্টাইনের সাহায্য চান। দুদিন কাজ করেই আইনস্টাইন সমস্যাটির সমাধান করে দেন।

আইনস্টাইনের প্রতিবেদন যে বিজ্ঞানীদের হাতে গিয়ে পৌঁছায় তাঁরা সমস্যা সমাধানের নমুনা দেখে মুগ্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বুশের সঙ্গে আলোচনা করে আইনস্টাইনকে আরও বেশি তথ্য দিয়ে আরও কয়েকটি সমস্যা সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু বুশ রাজি হননি। কারণ তিনি জানতেন, এই প্রজেক্টে কাজ করার মতো নিরাপত্তা ছাড়পত্র আইনস্টাইনের নেই, আর তিনি তা পাবেনও না।

বুশ বেশ ভালো করেই জানতেন, আইনস্টাইনের পুরো জীবন-ইতিহাস তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে দেখা ওয়াশিংটনের লোকজন তাঁকে ছাড়পত্র দেবে না।

এভাবে যে বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের প্রতি বোমা বানানো কেন দরকার ও কীভাবে তা সম্ভব তা তুলে ধরেন, সেই বিজ্ঞানীর কাছেই বোমা তৈরির প্রজেক্টের তথ্য দেওয়ার প্রস্তাবকে অতিরিক্ত ঝুঁকির কাজ বলে বিবেচনা করেছিলেন সেই সরকারের কর্মকর্তারা।

এই ম্যানহাটান প্রকল্পের মাধ্যমেই বিশ্বের প্রথম চারটি অ্যাটম বোমা তৈরি হয়। এর প্রথমটির পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে। পরীক্ষামূলক এই বিস্ফোরণের নাম দেওয়া হয়, 'ট্রিনিটি'।

দ্বিতীয় বোমা 'লিটল বয়' ৬ অগাস্ট ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় ফেলা হয়। 'ফ্যাট ম্যান' নামের তৃতীয় বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ৯ অগাস্ট জাপানের নাগাসাকিতে। অবশিষ্ট বোমাটি আগস্টের শেষ দিকে জাপানের ককুরা বা অন্য কোনো শহরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তার আগেই জাপান আত্মসমর্পণ করায় সেটি আর ব্যবহার করা হয়নি।

বোমা তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় আইনস্টাইনের ভূমিকা কয়েকটি চিঠিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও তাঁকে এর নৈতিক দায় নিতে হয়। এই মনোবেদনা নিয়েই পরবর্তী দশটি বছর পার করতে হয় তাঁকে। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল প্রিন্সটনে তাঁর মৃত্যু হয়।

যে চিঠি নিয়ে আইনস্টাইনের এত মনোবেদনা এবং যা বিশ্বব্যাপী বিভ্রান্তি তৈরিতে অবদান রেখেছিল প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে পাঠানো আইনস্টাইনের স্বাক্ষরিত সেই চিঠির বাংলা তরজমা:

আলবার্ট আইনস্টাইন
ওল্ড গ্রোভ রোড
নাসউ পয়েন্ট
পেকনিক, লং আইল্যান্ড

২ অগাস্ট, ১৯৩৯

এফ. ডি. (ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট)

এনরিকো ফার্মি ও লিও জিলার্ডের করা সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র আমি দেখেছি। এটি দেখে আমার ধারণা হয়েছে, নিকট ভবিষ্যতে ইউরেনিয়াম পদার্থটিকে সম্ভবত শক্তির একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত করা যাবে।

এ বিষয় নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার ওপর নজর রাখা উচিত বলে বোধ হচ্ছে। আর পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এরপর আমি বিশ্বাস করি নিচের বিষয় ও মতামতগুলো আপনার গোচরে আনা আমার কর্তব্য।

গত চার মাসে ফ্রান্সে জোলিও এবং আমেরিকায় ফার্মি ও জিলার্ডের গবেষণায় এই সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে যে বড় ধরনের ইউরেনিয়াম সঞ্চয়ে নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া ঘটান সম্ভব হবে। আর এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শক্তি ও বিশাল পরিমাণ রেডিয়ামের মতো নতুন পদার্থ তৈরি করা যাবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এটি অর্জন করা সম্ভব– এ বিষয়টি এখন প্রায় নিশ্চিত।

নতুন এই গবেষণার ফল বোমা তৈরির দিকেও যেতে পারে, আর এটি সম্ভব। এই পদ্ধতিতে নতুন ধরনের প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমা তৈরি করা সম্ভব, এটি নিশ্চিত। এ ধরনের একটি বোমা নৌকা দিয়ে কোনো বন্দরে নিয়ে যদি বিস্ফোরণ ঘটান যায়, সম্ভবত আশপাশের কিছু এলাকাসহ পুরো বন্দরটি খুব ভালোভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে এ ধরনের বোমা আকাশপথে বহনের পক্ষে খুব ভারী প্রমাণিত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউরেনিয়ামের আকরিক নিম্নমানের আর পরিমাণও উল্লেখযোগ্য নয়। কানাডা এবং সাবেক চেকোশ্লোভাকিয়ায় ভালো কিছু আকরিকের মজুদ আছে। তবে ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল বেলজিয়ামের কঙ্গো।

এই পরিস্থিতির আলোকে আপনার মনে হতে পারে, চেইন রিয়্যাকশনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণারত বিজ্ঞানীদল ও প্রশাসনের মধ্যে স্থায়ী যোগাযোগ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আপনার জন্য সম্ভাব্য উপায় হতে পারে আপনার আস্থা আছে এমন একজনকে এই কাজে নিয়োগ দেওয়া, যিনি দাপ্তরিক দায়িত্ব ছাড়াই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।

তাঁর কাজ হতে পারে এই রকম:

ক) সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোতে উপস্থিত হয়ে পরবর্তী অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে পারেন এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে সে সম্পর্কে সুপারিশ করতে পারেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইউরেনিয়াম আকরিকের সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন করার সমস্যার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে পারেন।

খ) বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারগুলোর সীমাবদ্ধ বাজেটের মধ্যে আটকে থাকা গবেষণাগুলোতে তহবিল যুগিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমকে গতিশীল করে তোলা। যদি দরকার হয়, যারা এই কাজে অবদান রাখতে চায় স্বতন্ত্রভাবে গবেষণারত তেমন ব্যক্তিদের তার মাধ্যমে তহবিল দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনীয় গবেষণা যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ শিল্পক্ষেত্রের গবেষণাগারগুলো থেকে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রাখতে পারেন।

আমি জানি, চেকোশ্লোভাকিয়ার খনিগুলো থেকে নিয়ে আসা ইউরেনিয়াম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি। এ বিষয়ে জার্মানি ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিতে পারে। বার্লিনের কাইজার ভিলহেম ইনিস্টিটিউটের (যে প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন আমেরিকান বিজ্ঞানীও একসময় ইউরেনিয়ামের ওপর কাজ করেছিল) সঙ্গে যুক্ত থাকা দেশটির আন্ডার সেক্রেটারির ছেলে ভন ওয়েইজসেকার জানিয়েছেন, সেখানে ইউরেনিয়ামের ওপর করা পরীক্ষাগুলো নতুন করে আবার করা হচ্ছে।

আপনার একান্ত বিশ্বস্ত,

আলবার্ট আইনস্টাইন

তথ্যসূত্র:

১.   লাইব্রেরি অব কংগ্রেস

২.   Chain Reaction: From Einstein to the Atomic Bomb, Discover Magazine.com, March, 2008 (http://discovermagazine.com/2008/mar)

৩.  The Making of the Atomic Bomb: Richard Rhodes

৪.   Encarta Encyclopedia, 2009

৫.   সহস্র সূর্যের আলো: রবার্ট য়ুংক, (আবুল বাশার অনুদিত)