যদি সংঘাত হয় তবে ধ্বংস হবে গর্ব মোদের প্রগতির

বিদিত দে
Published : 5 August 2016, 08:09 AM
Updated : 5 August 2016, 08:09 AM

জার্মানির ডেকাওএ নাৎসী আমলে একটি নির্যাতন ক্যাম্প ছিল। জাতিগত সংখ্যালঘু, সমকামী এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর অত্যাচারের বীভৎস স্মৃতি নিয়ে ক্যাম্পটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। যদিও নির্মমতা ও নৃশংসতার মাপকাঠিতে পোল্যান্ডের আশউইটজের সমকক্ষ ছিল না ডেকাও, তারপরও ৩০,০০০ মানুষ হত্যা ও লক্ষাধিক মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে আছে ক্যাম্পটি।

বেশ কিছুদিন আগে সেখানে গিয়েছিলাম। মিউনিখ শহর থেকে ১৫ মাইল দূরে। ট্রেন থেকে নেমে হাঁটা পথ ধরে এগিয়ে গেলেই ক্যাম্পটিতে পৌঁছে যাওয়া যায়। ক্যাম্পের বাইরে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে আসা ছাত্রছাত্রীদের বিশাল লাইন। আমরা সবাই ক্যাম্পের প্রধান ফটক ধরে ভেতরে প্রবেশের মুখেই দেখলাম, ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় একটি পাথরের উপর খোদাই করা কিছু শব্দ-– যার বাংলা হল 'আর কোনো দিন নয়'– নেভার অ্যাগেইন। ইউরোপ জাতিভেদ, সংঘাত, ফ্যাসিজম এবং উগ্রবাদের যে বীভৎস রূপ দেখেছে গত শতাব্দীতে, তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।

তারা চেয়েছে শতাব্দী-পুরাতন যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বেরিয়ে এসে পারস্পরিক সহযোগিতা আর সহমর্মিতার সম্পর্ক বিনির্মাণ করতে– উদার প্রগতিশীল ও সহনশীল সমাজ গড়তে। তাই প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ্বের ধ্বংসযজ্ঞ ও উগ্রবাদের মাদকতা তারা যাদুঘরে রেখেছে যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই শিক্ষা বিস্তার লাভ করে।

হিটলারের নাৎসীবাদের মাদকতা থেকে বের হয়ে প্রগতিশীল জাতি হিসেবে জার্মানদের আত্মপ্রকাশ ইতিহাসের অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। একই সঙ্গে ইউরোপের অন্য দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিক অতীত পেছনে ফেলে গড়ে তুলেছে উদার মানবতাবাদী সংস্কৃতি। কিন্তু ইউরোপের রাজনীতির সার্বিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য এতটা সরলীকৃত নয়। যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দ্বিদলীয় রাজনৈতিক কাঠামো ইউরোপের অধিকাংশ দেশে নেই। অনেক দেশেই রয়েছে বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি। আবার উগ্র-দক্ষিণপন্থী নব্য ফ্যাসিস্টরাও রাজনীতি করছে। গ্রিসের গোল্ডেন ডন, ফ্রান্সের ফ্রন্ত ন্যাশনাল, ব্রিটেনের ইউকিপ বা বিএনপির মতো ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে মধ্য-বাম সমাজতন্ত্রী বা উগ্র-বাম কমিউনিস্টদের একটি চলমান দ্বান্দ্বিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে ইউরোপের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিবর্তন হচ্ছে।

আর এ কারণেই মধ্য-ডান ও মধ্যপন্থী বা মধ্য-বামপন্থী সোশাল ডেমোক্রেটদের মাঝে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার প্রচেষ্টা দেখা যায়। যা এই অঞ্চলের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে, মূলত ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে ইউরোপের রাজনীতিতে সংঘাত ও অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

২০০৮এর আগেও ইউরোপের সমাজের ভেতরের ফাটলগুলো অল্প অল্প করে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ২০০০ সালের উত্তর ইংল্যান্ডের ওল্ডহ্যাম এবং ব্র্যাডফোর্ডে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের সংঘাত কিংবা প্যারিসের উপকণ্ঠে ফরাসি আফ্রিকানদের দাঙ্গা এই মহাদেশের অভিবাসী সমস্যার একটি প্রারম্ভিক আভাস প্রদান করে।

অভিবাসন গবেষণা থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংস্কৃতির সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অভিবাসন সংস্কৃতির একটি মৌলিক চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষিতটি জগাখিচুড়ি বা মেল্টিং পট যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ এসে একটি অভিন্ন নতুন সংস্কৃতিতে বিকশিত হতে থাকে। গত প্রায় এক বা দেড় শতক ধরে যুক্তরাষ্ট্র একটি অভিবাসী সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে-– বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ 'আমেরিকান ড্রিম'এ মোহিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর ক্রমেই আমেরিকান পরিচিতি উপলব্ধি ও আত্মস্থ করে তা প্রকাশ করে।

কিন্তু ইউরোপের অভিবাসী সংস্কৃতি অনেকটাই আমাদের ঘরের মোজাইকের মতো-– যেখানে সাদা আর কালো মোজাইকে নিজ রঙ ও পরিচিতি নিয়ে একজন আরেকজনের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বছরের পরে বছর কাটিয়ে দেয়। ব্রিটিশ কমনওয়েলথ থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের একটি লম্বা ইতিহাস রয়েছে। ফ্রান্স এক সময় তাদের উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা না দিয়ে বৃহত্তর ফরাসি জাতির অংশ হতে আহবান জানায়। আর তাই ফরাসি আফ্রিকান উপনিবেশ থেকে দলে দলে মানুষ ফ্রান্সে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।

তবে ইউরোপের অভিবাসনের ইতিহাস ঔপনিবেশিক সম্পর্কের আবর্তে বাধা থাকেনি। নব্বই দশকের পর থেকে সেখানে ভিন্ন এক ধরনের অভিবাসন ঘটতে থাকে। আর তা হল, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। উগান্ডার ইদি আমিনের সময়কালে উগান্ডানদের ওপর নিপীড়ন, পাঞ্জাবে খালিস্তান আন্দোলন-পরবর্তী শিখ-নির্যাতন, শ্রীলংকার তামিল সমস্যা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে আশির দশক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা ভিড় করতে থাকে।

নব্বইয়ের দশকে বলকান (বসনিয়া) যুদ্ধ, সোভিয়েত বাহিনীর প্রত্যাবর্তনের পর আফগানিস্তানের আদর্শিক ও জাতিগত সংঘাত, ইরাক ও তুরস্কে কুর্দি দমন এবং সাব-সাহারা আফ্রিকান দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধ ইউরোপের অভিবাসনের ইতিহাসে ও চরিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। অভিবাসীদের সংখ্যা ও বৈচিত্র্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটে। ক্রমে বাড়তে থাকা অভিবাসীদের জীবনযাপন, তাদের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, কর্মসংস্থান ইউরোপের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বড় বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে হবে এদের সংস্কৃতায়ন-– কীভাবে গড়ে উঠবে জাতিগুলোর মাঝে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া।

অভিবাসন নিয়ে গবেষণায় সংস্কৃতায়ন (acculturation) একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। সমাজতত্ত্ব ও ভোক্তা-সংস্কৃতির (consumer culture) আলোকে দেখা যায় যে, ইউরোপের জাতিগত সংখ্যালঘুদের মাঝে সংস্কৃতায়নের প্রবণতা অনেকটা কম হলেও তা ব্যবহারিক বা প্রকাশ-কেন্দ্রিক। মূলধারার সংস্কৃতি উপলব্ধি করা ও তা আত্মস্থ করার প্রক্রিয়াটি ইউরোপভিত্তিক জাতিগত সংখ্যালঘুদের মাঝে কম। অভিবাসন গবেষকরা এই সীমিত পরিসরের সংস্কৃতায়নের মাঝে এক ধরনের প্রতিরোধ বা রেসিস্ট্যান্স দেখতে পান। কেউ কেউ আবার মনে করেন, এটা এক ধরনের পৃথকীকরণ বা সেপারেশন।

ইউরোপজুড়ে গড়ে ওঠা জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘেটোগুলোতে (ghetto) আসলে এক ধরনের সমান্তরাল জীবনযাপন দেখা যায়। অভিবাসীরা মূলধারার মানুষদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া বা মূলধারার সংস্কৃতিতে অভিযোজনের চেষ্টা না করে এক ধরনের খোলসের মধ্যে বাস করে। শিক্ষা ও যোগ্যতার অভাব এবং ভাষাগত দুর্বলতার কারণে তাদের পক্ষে কর্মসংস্থান কঠিন হয়ে পড়ে। অভিবাসীদের একটি বিরাট অংশ তাই নিজের ব্যবসা শুরু করেন অথবা অভিবাসীদের মালিকানাধীন ব্যবসায় কর্মরত থাকেন। আবার যারা মূলধারার পেশায় নিয়োজিত থাকেন, তারাও দিনেশেষে বা সপ্তাহান্তে নিজের গোষ্ঠীর সঙ্গেই সামাজিকতা বজায় রাখেন।

অভিবাসীদের সংস্কৃতায়নের আরেকটি প্রবণতা দেখা যায়-– যাকে বলা যেতে পারে প্রান্তিকীকরণ (marginalisation)। এ ক্ষেত্রে অভিবাসীরা একদিকে যেমন তাদের আদি সংস্কৃতি পরিহার করেন, তেমনি তারা মূলধারার সংস্কৃতি প্রতিরোধ করেন। প্রকারান্তরে তারা একটি তৃতীয় সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইউরোপের মোজাইক সমাজে এ ধরনের সংস্কৃতায়ন সবচেয়ে বিপজ্জনক। যেমন বিলাতের বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে সেকুলার বাঙালি সংস্কৃতি এবং ব্রিটিশ সংস্কৃতির বাইরে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সালাফি সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। গান শোনা, পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা বিদাত ঘোষণা করে, ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার 'ক্যাপিটালিস্ট সংস্কৃতি' বলে এরা আরবীয় কায়দায় জীবনযাপন বেছে নেয়।

সামাজিক অবক্ষয় ও প্রান্তিকীকরণের ফলে ইউরোপের জাতিগত সংখ্যালঘুদের মাঝে একদিকে যেমন বাড়ছে মাদকাসক্তি, অশিক্ষা, দারিদ্র– অন্যদিকে তাদের একটি অংশের মাঝে ধর্মীয় উগ্রবাদ জায়গা করে নিচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে যখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সমাজ থেকে উগ্রবাদী জঙ্গিদের আসতে দেখা যায়, আমরা অবাক হলেও অনেক সংস্কৃতি গবেষক হয়তো অবাক হবেন না। কারণ মানুষের ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক সংস্কৃতায়ন তার উপলব্ধি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সব সময় প্রকাশ করে না। উচ্চবিত্ত সমাজে বেড়ে ওঠা, আধুনিক জীবনযাপন করা মানেই উদার মন ও প্রগতিশীল মূল্যবোধ লালন করা নয়। মানুষের বিশ্বাস, উপলব্ধি ও মূল্যবোধের সঙ্গে ব্যবহারের বৈপরীত্য স্বাভাবিক। সেটি ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।

ব্রিটেনের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী আক্রমণ যে কোনো সময়ে হতে পারে। গত দেড় বছরে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানিতে একাধিক সন্ত্রাসী আক্রমণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের দেশজ জঙ্গিরা। সিরিয়ার আইএসের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকুক বা নাই থাকুক, এই লোকগুলো ইউরোপের সমাজের সহনশীলতা, উদারতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ উপলব্ধি বা আত্মস্থ করতে পারেনি যদিও তারা জন্মেছে বা বড় হয়েছে সেই পরিবেশে।

লক্ষ লক্ষ অধিবাসীদের মাত্র কয়েকজন বা কয়েক শত লোক জঙ্গিবাদের দিকে গেছে। এ জন্য হয়তো আমরা বলতে পারি যে, এটি তেমন চিন্তার বিষয় নয়। কিন্তু মুলধারার সংস্কৃতিতে মিশতে না পারার যে সংস্কৃতি এই মহাদেশের অভিবাসীদের মধ্যে শেকড় গেড়ে বসেছে তা থেকে বলা যায় যে, ব্যবহারিক দিক থেকে জঙ্গি না হলেও বিশ্বাস, উপলব্ধি ও মূল্যবোধের দিকে থেকে উগ্রবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। মূলধারার সংস্কৃতিতে অভি্যোজিত না হয়ে সমান্তরাল জীবনধারা চলতে থাকলে ইউরোপের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদ বাড়তেই থাকবে।

যুক্তরাজ্যে অনেক দিন ধরেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের ডির‌্যাডিক্যালাইজেশন কৌশলের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের মসজিদে বিদেশি অনুদান বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ফ্রান্সের জোরপুর্বক সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ (assimilation) খুব একটা সফল হয়নি।

আবার যুক্তরাজ্যের বহুসংস্কৃতিবাদও (multiculturalism) পুরোপুরি সফল নয়। জোর করে মানুষের ব্যবহারিক পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু তার মনোজাগতিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফুর্ত উপলব্ধি। পক্ষান্তরে, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ অনেক ক্ষেত্রেই মূলধারা সংস্কৃতিতে অভি্যোজনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সংস্কৃতায়নের গবেষকদের মতে, acculturation একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া যেখানে স্বাগতিক দেশের অধিবাসীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। ইউরোপে আভিবাসীদের সংস্কৃতায়ন অনেক ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার অভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আবার অভিবাসীদের জঙ্গিবাদ, উদার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাহীনতা এবং সমান্তরাল জীবন ইউরোপীয়দের মাঝে অভিবাসী-বিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলছে। দক্ষিণপন্থী নব্য ফ্যাসিস্টরা সেটাই চায়। ইউকিপ, ফ্রন্ট ন্যাশনাল বা গোল্ডেন ডনদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ইউরোপের প্রগতিশীল, সহনশীল সমাজের জন্য হুমকি বহন করে।

ম্যাগনা কার্টা, রেনেসাঁ, শিল্প বিপ্লব, ফরাসি এবং রুশ বিপ্লব সমগ্র মানবসভ্যতা প্রভাবিত করেছে। আর তাই ইউরোপের উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আজ সারা পৃথিবীর জন্য আলোকবর্তিকা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক শত বছর পর সেই ইউরোপ এখন একটি সন্ধিক্ষণে। ব্রেক্সিট্, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার এবং সামাজিক অস্থিরতা-– এই সব কিছুর মাঝে ডেকাওয়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বাইরে লিখে রাখা শব্দগুলো একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। মানবসভ্যতার টেকসই বিস্তারের জন্য যে কোনো মূল্যে জাতিগত অহমিকা ও ধর্মীয় উগ্রবাদ পরিহার করতে হবে।

আমরা ইউরোপের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাই না।