তুরস্কে অভ্যুত্থান: কারণ, ব্যর্থতা ও পরিণতি

সাব্বির হোসাইন
Published : 26 July 2016, 02:48 PM
Updated : 26 July 2016, 02:48 PM

তুরস্কের সামরিক বাহিনীর একদল অফিসার ও সেনা ১৫-১৬ জুলাই জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ানের সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান পরিচালনা করে, যা ব্যর্থ হয়।

১৫ জুলাই মধ্যরাতের আগে তুরস্কের স্থলবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সামরিক পুলিশের অভ্যুত্থানকারী দল ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার মূল পয়েন্টসমূহ, বিমান বন্দর, টার্কিশ জেনারেল স্টাফের সদর দপ্তর, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তর, প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সংসদ ভবন ও বসফরাস প্রণালির মূল ব্রিজে অবস্থান নেয়। অভ্যুত্থানকারীরা জাতীয় টেলিভিশন থেকে অভ্যুত্থানের খবর প্রচার করে এবং অভ্যুত্থানের কারণ হিসেবে এরদোয়ান সরকারের গণতন্ত্রের অপব্যবহার ও ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে।

অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান ঠেকাতে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। এরদোয়ানের এই আহ্বান মসজিদ ও একেপি পার্টির অফিসগুলো থেকে প্রচার করা হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একেপি পার্টির কর্মী-সমর্থকরা ইস্তাম্বুল-আঙ্কারার রাজপথে নেমে আসে। পরবর্তীতে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা নাগাদ এরদোয়ান সরকার পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

সরকারি হিসাবমতে, অভ্যুত্থানের ফলে সংঘটিত সংঘর্ষে ১৬১ জন বেসামরিক মানুষ ও ১০৪ জন অভ্যুত্থানকারী সেনাসদস্যসহ মোট ২৬৫ জন প্রাণ হারায় এবং আহত হয় ১,৪৪০ জন। অভ্যুত্থানের দায়ে সামরিক বাহিনীর প্রায় ছয় হাজার সদস্যকে বন্দি করা হয়েছে; এর মধ্যে চারজন জেনারেল ও ২৯ জন কর্নেল। অভ্যুত্থানে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রায় তিন হাজার বিচারপতিকে দায়িত্বচ্যুত করা হয়েছে।

কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত তুরস্ক রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র পরিবর্তন করে ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে ইসলামিজমের দিকে ঝুঁকে পড়া, ইসলামি সালাফি জঙ্গিসংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে বাণিজ্য-অস্ত্র সরবরাহ, একেপির কর্মী-সমর্থকদের প্রশাসনে চাকরি প্রদানসহ দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে বর্তমান ক্ষমতাসীন ডানপন্থী রাজনৈতিক দল একেপির সরকারের বিরুদ্ধে। অভ্যুত্থানকারীরা মোটাদাগে এসব বিষয়কে অভ্যুত্থানের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছিল।

তাহলে প্রশ্ন আসে, আধুনিক তুরস্ক রাষ্ট্রের মূলনীতির পক্ষেই যদি অভ্যুত্থান হয়, তবে তা ব্যর্থ হলো কেন?

এর পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। শুধু যদি অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার গুণগত দিকের কথা বলি, তবে বলতে হয়, সামরিক বাহিনীর কর্তা-ব্যক্তি, বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ ও আন্তর্জাতিক প্রভাববিস্তারকারী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে অভ্যুত্থানকারীদের সেভাবে যোগাযোগ বা সমর্থন ছিল না। অর্থাৎ অভ্যুত্থানকারীরা ছিল এরদোয়ানবিরোধী বিভিন্ন পক্ষ হতে বিচ্ছিন্ন। অনেক পক্ষই এরদোয়ানের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে, তাঁর পতন চায়; তবে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তুরস্কের সরকার পরিবর্তন সবাই চায় গণতান্ত্রিকভাবেই।

সামরিক বাহিনীর নিম্ন হতে মধ্য পদের অফিসাররাই মূলত এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল। অভ্যুত্থানকারীদের মূল নেতৃত্বে ছিলেন তুর্কি বিমানবাহিনীর সাবেক কমান্ডার জেনারেল আকিন অজতুর্ক ও তুর্কি সামরিক বাহিনীর আইন উপদেষ্টা বিভাগের সাবেক প্রধান কর্নেল মুহররম খোসে।

তুর্কি সামরিক বাহিনীরর ঊর্ধ্বতম অংশ বস্তুত এই অভ্যুত্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল, যার ফলে অভ্যুত্থানটিকে ঠিক সুসংহত বলা যায় না। তুর্কি সামরিক বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল হুলুসি আকর, তুর্কি ফার্স্ট আর্মি কমান্ডার জেনারেল উমিত দুনবার, জেনারেল জেকাই আকশাকালিসহ সিনিয়র অফিসাররা– যাদের সেক্যুলার বলে পরিচিতি আছে– তারা সবাই এই অভ্যুত্থানের বিষয়ে অন্ধকারে ছিলেন।

তুরস্কের সেক্যুলার বলে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোও বলা যায় অভ্যুত্থান সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল না। রিপাবলিকান পিপলস পার্টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি হলো এরদোয়ানের একেপির বিরোধী প্রধান তিন রাজনৈতিক দল; এ তিন দলই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে।

অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পেছনে ডানপন্থী ইসলামিস্ট এরদোয়ান ও তাঁর পূর্বসূরিদের বেশকিছু পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধ থেকে সামরিক বাহিনীতে ধীর গতিতে একটি পরিবর্তন আনা হচ্ছিল। সামরিক বাহিনীতে ডানপন্থী মানসিকতার ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হচ্ছিল। ফলে অতি সেক্যুলার অবস্থান থেকে সামরিক বাহিনীকে ধীরে ধীরে ডানপন্থার দিকে ধাবিত করার একটি প্রক্রিয়া চালু ছিল।

এই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার ফলাফল এই অভ্যুত্থানের সময় দেখা গেছে। সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায় অভ্যুত্থানের সময় এরদোয়ানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে এবং অভ্যুত্থানের সমর্থনে কোনো সামরিক অফিসারকেই অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, তুর্কি সামরিক বাহিনীতে সেক্যুলাররা দুর্বল হয়েছে।

সেক্যুলার সামরিক বাহিনীর বিপক্ষে ডানপন্থীরা দীর্ঘমেয়াদে আরো একটি কাজ সফলভাবে করেছিল; তা হলো, তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানের ইসলামি চেতনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা। এরদোয়ানের ডানপন্থী একেপি জনগণকে এটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, কামাল আতাতুর্কের সেক্যুলার তুরস্কে ইসলামি ভাবধারা বজায় রাখতে হলে একেপির কোনো বিকল্প নেই। একেপির প্রতি সমর্থন করা বর্তমান বাস্তবতায় তুরস্কে ইসলামের ভাবধারা পুর্নবহালের জন্য অপরিহার্য।

আর এর প্রয়োগ এরদোয়ান যথাযথভাবে করেছেন। অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর এরদোয়ান একেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের রাজপথে আসার আহ্বান জানান। স্থানীয় পর্যায়ে একেপির নেতা-কর্মীরা আমজনতাকে এটি বোঝাতে সক্ষম হয় যে, তুরস্কে ইসলামি ভাবধারার বাহক একেপিকে টিকিয়ে রাখা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব! এ জন্য একেপির নেতা-কর্মীরা মসজিদের মাধ্যমে ও ধর্মীয় ব্যাক্তিদের মাধ্যমে আহ্বান জানায়। এর ফল হিসেবে আমরা দেখতে পাই, অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথে তুরস্কের আমজনতার ঢল। এই আমজনতার ঢলই মূলত অভ্যুত্থানের ফল নির্ধারণ করে দেয়, ডানপন্থী ইসলামিস্ট এরদোয়ানের গদি রক্ষা পায়।

এরদোগান ও ডানপন্থীরা এই অভ্যুত্থানের ব্যর্থতাকে পুরোদমে কাজে লাগাবে। ব্যর্থ এই অভ্যুত্থান তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আঘাত হানবে। এরদোয়ান নিজেই এর একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন, "এই অভ্যুত্থান আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের জন্য আর্শীবাদ হিসেবে এসেছে; বিচারবিভাগ, প্রশাসন ও সামরিকবাহিনীকে শুদ্ধ করা হবে।"

১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থান ছিল তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতিতে ফিরে যাওয়ার একটি প্রয়াস। কিন্তু জনগণের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে না থাকার কারণে ইসলামি ভাবধারার আমজনতার চাপের মুখে ব্যর্থ হয় অভ্যুত্থান। আর এর ফলে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ধরে রাখার অভিভাবক হিসেবে পরিচিত সামরিক বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

এর আগে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধরে রাখার জন্য ১৯৮০ ও ১৯৯৭ সালে সামরিক বাহিনী তুরস্কের সরকার কাঠামোয় হস্তক্ষেপ করেছিল। ডানপন্থীরা এ দুই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছিল আর এই শিক্ষার সফল প্রয়োগ করল ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার কাজে এবং এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়।

উপরে সামরিক বাহিনীতে সেক্যুলারদের প্রভাব থেকে ডানপন্থীদের প্রভাব বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়ার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল; এই প্রক্রিয়াটি এরদোয়ান সরকার এখন আরো স্পষ্টভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ পেল। সামরিক বাহিনীর সেক্যুলার নেতৃত্ব অচিরেই কাঠামোগত প্রক্রিয়ায় ডানপন্থীদের হাতে চলে যাবে– এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। শুধু সামরিক বাহিনী নয়, বিচারবিভাগ ও প্রশাসনে সেক্যুলারদের পরিবর্তে ডানপন্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে বিরোধীদের দমনে এরদোয়ান ও ডানপন্থীরা এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে, তা ইতোমধ্যেই এরদোয়ান সরকারের নানা কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তুরস্কে এরদোয়ান ও ডানপন্থী তথা ইসলামিস্টদের একটি বড় বিপক্ষ হলো বহুত্ববাদ ও উদারপন্থায় আস্থাশীল মুসলমানরা; বিশেষ করে, এখানে ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী হিজমেতিদের কথা বলা হচ্ছে।

হিজমেতি একটি মুসলিম ধর্মীয় গ্রুপ, কিন্তু প্রথাগত ইসলামি সংগঠন হতে এর অনুসারী বা সদস্যরা আলাদা। কারণ, এরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও আদর্শগতভাবে বহুত্ববাদ ও উদারপন্থায় আস্থাশীল এবং প্রকারান্তরে ধর্মীয় ভাবধারার রিভিশানিজমে সমর্থন করে। এই হিজমেতিরা একেপির মতো ডানপন্থী তথা গণতন্ত্রের চাদরে থাকা প্রথাগত ইসলামিস্টদের মূল বিপক্ষ শক্তির একটি।

ধারণা করা হয়, ২০১৪ সালে এরদোয়ান ও ডানপন্থীদের দুর্নীতির যে চিত্র জনসন্মুখে আসে, তার পেছনে হিজমেতিদের ভূমিকা ছিল। এরপরই এরদোয়ানের একসময়ের মিত্র হিজমেতি আন্দোলনের নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন তুরস্ক ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান।

১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের জন্য এরদোয়ান ফেতুল্লাহ ও হিজমেতিদের দায়ী করে আসছিল শুরু থেকেই। এটি স্পষ্ট যে, এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে কাজে লাগিয়ে হিজমেতিদের শায়েস্তা করতে পিছপা হবে না এরদোয়ান ও ডানপন্থীরা। এরই ফলে গুলেনের হিজমেতি আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রায় ২,৭৪৫ জন বিচারপতিকে দায়িত্বচ্যুত করা হয়েছে এবং ১৮৮ জন বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যর্থ এই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ডানপন্থীরা বিচারবিভাগে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে।

সেক্যুলার ভাব-বলয়ে থাকা তুরস্ক অনেক বছর ধরে ডানপন্থী তথা ইসলামি ভাবধারায় ফিরে আসার যে ধীর-প্রক্রিয়ায় ছিল, তা এবার বেশ গতি পাবে। এই প্রক্রিয়ায় এরদোয়ান ও ডানপন্থীরা তাদের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন সংসদীয় পদ্ধতি হতে 'এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্সি'-এর মতো গণতন্ত্রের পোশাকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে সাংবিধানিকভাবে তুরস্ককে নিয়ে যেতে পারে।

সেনা-অভ্যুত্থানের বিপরীতে গণতন্ত্রকে রক্ষার অজুহাতে সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও বিচারবিভাগে প্রচুর রদবদল করা হবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আসীন হবে এরদোয়ন ও ডানপন্থার সমর্থকরা। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ওপর প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়াস চালানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যমান সন্ত্রাসদমন আইন সংস্কার করার কথাও উঠে এসেছে। কিন্তু এতে ডানপন্থী উগ্ররা তথা ইসলামী জঙ্গিদের বদলে সেক্যুলার ও গণতন্ত্রকামীরা পড়বে বিপাকে। এবং এসবই এরদোয়ান ও ডানপন্থীরা করছে ব্যর্থ এই অভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিণতি ও পদক্ষেপ হিসেবে।

তুরস্কে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি যে এরদোয়ান ও তাঁর ডানপন্থী গংদের হাতে এ বার চূড়ান্তভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। সবচেয়ে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এসবই হবে গণতন্ত্রের চাদরে।

তবে তুরস্কের এই পরিণতির জন্য শুধুমাত্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নয়; এর পেছনে মূল কারিগর হলো তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগণ, যারা ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ মনন গড়ে তুলতে পারেনি। আর এই চক্রে তুরস্কের সেক্যুলার শাসক-প্রশাসক শ্রেণি তাদের দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, তারা রাষ্ট্র কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন।

১৫ জুলাইয়ের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে এরদোয়ান ও তাঁর ডানপন্থী সহচররা তথা ইসলামিস্টরা ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতিকে কৌশলগতভাবে এক পাশে সরিয়ে রেখে ইসলামি ভাবধারা পুনঃপ্রবর্তনের কাজে ব্যবহার করবে।

রাষ্ট্রকাঠামোতে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চার জন্য তুরস্ক ছিল মুসলিম বিশ্বে অগ্রগামী ও পথিকৃৎ।প্রায় সব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ইসলামিস্টদের আগ্রাসনের শিকার; তুরস্ক এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে দীর্ঘমেয়াদে এই আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হলো। আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রভাবশালী তুরস্ক ইসলামি জঙ্গিদের স্পন্সর ও বেনেফিশিয়ারি ইসলামিস্ট এরদোয়ান তথা একেপির হাতে পড়ার পরিণতিতে বৈশ্বিকভাবে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটবে, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।