সশস্ত্র জঙ্গি হামলা: পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে করণীয়

এইচ এম মহসীন
Published : 6 July 2016, 02:36 PM
Updated : 6 July 2016, 02:36 PM

১ জুলাই ও ২ জুলাই যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার বিশ্বমিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলাদেশ। প্যারিস, অরল্যান্ডো, ইস্তাম্বুলের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কথিত 'আইএস'এর হামলার শিকার হল বাংলাদেশ। লাসভেগাস টু নিউইয়র্কের ফ্লাইটে বসে সিএনএন এবং ফক্স নিউজ চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের খবর দেখার মাঝখানেই পর্দায় ভেসে উঠল, 'ব্রেকিং নিউজ'-– ঢাকাস্থ গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা!

ডেনভারে অনুষ্ঠিত কনসারভেটিভ সামিটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে সেই যে শুরু–- পুরো দু দিন ধরে সিএনএনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বিরতিহীনভাবে গুলশানের জঙ্গি হামলার খবর প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের নেতৃত্বে 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনার মাধ্যমে প্রায় ১২ ঘণ্টার জিম্মি নাটকের অবসান ঘটলেও, রক্তাক্ত এই পৈশাচিক হামলা স্তম্ভিত করেছে পুরো জাতিকে।

গুলশানের জঙ্গি হামলা আমাদের কয়েকটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রথমত, গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় নিড়াপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছয় থেকে আটজন যুবক একটি ব্যস্ত রেস্তোরাঁয় হামলা চালাতে পারলে, দেশের যে কোনো জায়গায় জঙ্গিরা এ ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম। অর্থাৎ বেডরুম থেকে অভিজাত এলাকার রেস্তোরাঁ– দেশে কোথাও নিরাপত্তার গ্যারান্টি নেই।

দ্বিতীয়ত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে 'ক্রসফায়ারে' অভ্যস্ত হলেও কয়েকজন উগ্রপন্থী, জঙ্গিদের মোকাবেলা করা জন্য তৈরি ছিল না। প্রাথমিক অভিযানে পুলিশের দুজন কর্মকর্তার মৃত্যুই প্রমাণ করে যে, সশস্ত্র জঙ্গিদের মোকাবেলা করার মতো প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা কোনোটিই তাদের নেই।

সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছে, সেজন্য তারা ধন্যবাদ পেতেই পারে। তবে ছয় থেকে আটজন সশস্ত্র জঙ্গির মোকাবেলা করার জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো প্রয়োজন হলে, পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দীনতা খুবই নগ্নভাবে ফুটে উঠে। উদ্ধার অপারেশন কীভাবে পরিচালনা করা উচিত ছিল, কখন অভিযান শুরু করলে ভাল হত কিংবা এটি কোন বাহিনীর দায়িত্ব ছিল, সেটি বিচার করার ভার বিশেষজ্ঞদের ওপরই থাকুক।

বাংলাদেশে সম্প্রতি সংঘটিত জঙ্গি হামলাগুলোর ধরন নিয়ে আলোচনা, এ হামলার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় এবং ভবিষ্যত হামলা প্রতিরোধ সমন্ধে আমাদের কী করণীয় হতে পারে সে বিষয়ে দুচারটি কথা বলাই এ লেখার উদ্দেশ্য।

গত প্রায় দুবছরে বাংলাদেশে অসংখ্য টার্গেটেড সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে যার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্লগার, লেখক, এলজিবিটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক অথবা বিদেশি নাগরিকগণ। এ সকল হত্যাকাণ্ডের টার্গেট নির্বাচন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পদ্ধতি দেখে এগুলোকে বিপথগামী, উগ্রপন্থীদের কাজ বলেই মনে হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ হত্যাকাণ্ডগুলোর দায় স্বীকার করেছে আইএসসহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠন।

তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ওই হত্যাকাণ্ডগুলোকে সরকারবিরোধী, দেশের উন্নয়নবিরোধী পক্ষের কাজ বলে দাবি করেছে এবং দেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের অস্তিত্বের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব প্রচার করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে দেওয়ার আবর্ত থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। গুলশানের নৃশংস হামলা সমন্ধে ইতোমধ্যেই ফেইসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচুর ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের কথা এসেছে। কেউ বলছেন, বাংলাদেশে পশ্চিমা প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোই (মূলত যুক্তরাষ্ট্র) আইএসএর মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটায়। কেউ বলছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে ঈর্ষাকাতর হয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করছে। আবার কেউ নিশ্চিতভাবেই দেশের বিরোধী শক্তি, বিশেষ করে জামায়াত-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন।

বাস্তবতা হচ্ছে, এভাবে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মধ্য দিয়ে আসলে জঙ্গিবাদকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। অন্যের ওপর দোষ চাপানোর মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আমাদের তো কোনো দোষ নেই, ভুল নেই। অতএব আমাদের কিছুই করার নেই।

ইতোমধ্যেই সরকারের দায়িত্বশীল কেউ কেউ বলেছেন, যেহেতু হামলাকারীরা সবাই বাংলাদেশের, তাই গুলশানের হামলায় আন্তর্জাতিক বা 'আইএস'এর সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকার যখন অপারেশনের প্রস্তুতির অজুহাতে ঘটনাস্থলে ইন্টারনেট, মিডিয়া কাভারেজ নিয়ন্ত্রণ করছিল, তারই মধ্যে নিহতদের সংখ্যা, মৃতদেহের ছবি ও হামলাকারীদের ছবি যখন 'আইএস' প্রকাশ করে। তারপরও আইএসএর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার সুযোগ কোথায়? বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসে 'আইএস' বা অন্য কোনো সংগঠনে যে যোগদান করা যায় বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যায় সেটি বুঝতে কি বিশেষজ্ঞ হতে হয়?

খবরে প্রকাশ, হামলাকারীরা জিম্মিদের সুরা পড়তে বলেছিল এবং যারা সূরা পাঠ করতে সক্ষম হয়েছিল, তাদেরকে তারা হত্যা করেনি। আরও জানা যায় যে, তারা বলেছে তারা বাংলাদেশিদের হত্যা করতে চায়নি, বরং বিদেশিদের হত্যা করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। অর্থাৎ এটি পরিস্কার যে, অমুসলিম বিদেশিরাই তাদের হামলার মূল লক্ষ্য।

কেউ কেউ হয়তো এ ভেবে তৃপ্ত হয়েছেন যে, এ হামলা তো আমাদের (বাংলাদেশি, মুসলিমদের) লক্ষ্যে করা হয়নি। কী ভয়ংকর! ভাবখানা এমন যে, যারা সূরা জানেন না তাদের বাঁচা-মরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধুই জঙ্গিদের। এ ধরনের ভাবনা যাদের মনে এসেছে তাদের বলছি, আপনিও লালন করছেন উগ্রপন্থী, জঙ্গি-চেতনা। সাধু সাবধান।

জিম্মিকারীদের সূরা পড়তে বলে এবং বাংলাদেশিদের হত্যা না করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে হামলাকারীরা অতি সূক্ষ্ণভাবে তাদের এই পৈশাচিকতায় বাঙালি মুসলমানদের নৈতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিপথগামী, উগ্রপন্থী ওই হামলাকারীরা ইসলাম এবং বাংলাদেশ উভয়েরই শত্রু।

'হোলি আর্টিজান' রেস্তোরাঁয় নিরীহ ব্যক্তিদের ওপর হামলাকারীরা যে মুসলান সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদিও আমি ধর্মবিদ নই, তবে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যতটুকু শিখেছি, নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি যে, আহাররত একদল নিরীহ মানুষের ওপর পবিত্র রমজান মাসে হামলা করা শান্তির ধর্ম ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। নিজের বিশ্বাস বা ধর্ম অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া মোটেই ইসলামের আদর্শ নয়। তাই ধর্মীয় লেবাসের আড়ালে তথাকথিত জঙ্গিরা আসলে ইসলামেরই শত্রু।

'আল্লাহু আকবর' বলে যারা কোরবানির পশুর মতো মানুষের গলায় ছুরি চালাতে পারে তারা মুসলমান তো নয়ই, বরং বিপথগামী, মানসিক ভারসাম্যহীন 'অমানুষ'।

বিদেশি নাগরিকদের দেশের কূটনীতিকপাড়ার অভিজাত রেস্তোরাঁয় হত্যা করে বিশ্বমিডিয়ায় বাংলাদেশকে অনিরাপদ, অকার্যকর দেশ হিসেবে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন যারা করে, তারা যে বাংলাদেশের শত্রু সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আমরা জানি, নিহত জাপানিদের প্রত্যেকেই জাইকার বিভিন্ন উন্নয়নশীল প্রজেক্টে যুক্ত ছিলেন। আর নিহত ইতালির নাগরিকরা মূলত গার্মেন্টস শিল্পে জড়িত ছিলেন। এদেরকে হত্যা করে বিশ্বমিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ওপর যে এক বিশাল আঘাত সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই হামলাকারীরা মুসলিম বাংলাদেশিদের সহানুভূতি চাইলেও তারা আসলে দেশ ও ধর্ম উভয়েরই শত্রু।

আগেই বলেছি, জঙ্গি বা উগ্রপন্থী যা-ই বলি না কেন, আমাদের মেনে নিতে হবে যে, দেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের উপস্থিতি রয়েছে। গুলশানের পৈশাচিক হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে পরিস্কার হয় যে, হামলাকারীরা তীব্র ঘৃণা এবং প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা থেকেই 'হোলি আর্টিজান' রেস্তোরাঁয় বিদেশিদের ওপর হামলা করেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, অমুসলিম ও অবাঙালিদের ওপর এই ঘৃণা কোথা থেকে জন্ম নেয়?

অনেকে হয়তো বলবেন এ ঘৃণার মূল কারণ হচ্ছে, যুগে যুগে ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর পশ্চিমাদের সামরিক হস্তক্ষেপ, বা সন্ত্রাস দমনের নামে ড্রোন পরিচালনা করা যার মাধ্যমে এ সকল দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। যদিও এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, তবে শুধু এগুলোই ঘৃণা জন্মানোর মূল কারণ নয়।

গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পুরোহিতদের ওপর আক্রমণের কথাই ধরুন, অথবা এলজিবিটি অ্যাকটিভিটিস্ট জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধুর হত্যাকাণ্ড কিংবা প্রফেসর রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের কথাই ভাবুন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের প্রচলিত ধারণার বাইরে এমন কিছু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন যেটি তথাকথিত ধর্ম রক্ষাকারীদের মতাদর্শের সঙ্গে 'বেমিল'। আর এই মতাদর্শের ভিন্নতাই যেন দিয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের নায্যতা!

নিজের বিশ্বাস বা ধর্মকেই একমাত্র স্বীকার্য ভেবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ঘৃণা করা এবং তাদেরকে শাস্তি(!) প্রদান গ্রহণযোগ্য মনে করার মানসিকতা প্রতিরোধ করতে না পারলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

উগ্রপন্থী বা জঙ্গি মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নির্মূল করার ব্যবস্থা নিতে হবে। গুলশানের হামলাসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্পৃক্ততা থাকার পর ঢালাওভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করার সুযোগ নেই। অন্য ধর্ম বা মতাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা তৈরিতে পরিবার ও সমাজের ভূমিকাও কম নয়।

এ প্রসঙ্গে দুটি উদাহরণ দিই। ছোটবেলায় কোরআন শিক্ষার জন্য যখন মক্তবে যেতাম, পাঞ্জাবি না পরে গেলে হুজুর ইহুদি-খ্রিস্টান বলে বকা দিতেন। একটি ছোট শিশুকে যদি পোশাক পরার জন্য ইহুদি বা খিস্ট্রান বলে বকা দেওয়া হয়, তাহলে ওই শব্দ বা ধর্মের প্রতি ওই শিশুর বিরুপ মনোভাব তৈরি হওয়া কি স্বাভাবিক নয়?

এবারে আসি পরিবারের কথায়। অনেকে খাবার টেবিলে বসে বাচ্চাদের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা ধর্মের আলোচনায় জড়ান। এ সময়ে বিভিন্ন খবরের ওপর ভিত্তি করে অনেকেই পশ্চিমাদের 'চৌদ্দগুষ্ঠি' উদ্ধার করে ছাড়েন। পশ্চিমা কোনো রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পুরো দেশ বা ধর্মের ওপর সর্বজনীন মন্তব্য করে কোমলমতি শিশুদের মনে ঘৃণা তৈরিতে ভূমিকা রাখার জন্য কিন্তু আমাদের অনেকেই দায়ী। আপনার একটি ছোট মন্তব্য আপনার সন্তানের মধ্যে উগ্রপন্থী মনোভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা না বলেই পারছি না। গত শনিবার এক বন্ধুর বাসায় ইফতারের আগে দোয়া করার সময়, এক ভদ্রলোক অনুরোধ করলেন যেন যারা গুলশান হামলায় নিহত হয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করা হয়। এরই মধ্যে পাশ থেকে অন্য এক ভদ্রলোক বললেন, ''ওরা তো বিদেশি, আল্লাহকেই মানে না। ওদের জন্য দোয়া করার কী আছে?''

মানুষ হিসেবে নিহতদের জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রেও যদি এহেন মানসিকতা থাকে এবং এ ধরনের মন্তব্য শিশুদের সামনে কেউ করেন, তাহলে সেই শিশুদের মধ্যে অন্যের ধর্মকে সম্মান করার মানসিকতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি সেটি বিচারের ভার পাঠকের ওপরেই থাকল।

দেশের জঙ্গি সংকট সরকারের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব আবিস্কার না করে উগ্রপন্থীদের অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে এদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি পরিবারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য।

পরিশেষে আবার বলতে চাই, গুলশানের হামলায় জঙ্গিরা বাংলাদেশি মুসলমানদের প্রতি কৃপা দেখালেও তারা আসলে দেশ এবং ধর্ম উভয়েরই শত্রু। নিরীহ মানুষকে যারা পৈশাচিকভাবে হত্যা করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই। দেশের প্রত্যেক পিতামাতার কাছে অনুরোধ, আপনার সন্তান যেন অন্যের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করতে শেখে, মানুষকে ঘৃণার পরিবর্তে ভালোবাসতে শেখে। আমার সন্তানদের অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মকে ঘৃণার পরিবর্তে শ্রদ্ধা করার শিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমি করলাম। আপনিও করছেন তো?