প্রমাণিত হল ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ’

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 11 May 2016, 04:27 PM
Updated : 11 May 2016, 04:27 PM

দীর্ঘ ছয় বছরের বিচারিক প্রক্রিয়ার নানান ধাপ শেষে অবশেষে কুখ্যাত বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হল। জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমীর এই যুদ্ধাপরাধীকে দেওয়া ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার মধ্য দিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়ার আরও একটি অধ্যায় সমাপ্ত হল।

নিজামীর যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে যে 'জনপ্রিয় বয়ান' (বদর কমান্ডার হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যার নেতৃত্ব দেওয়া) একাত্তরের পর থেকে জনপরিসরে জারি ছিল, তা দালিলিক প্রমাণসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সত্য প্রমাণিত হল। সব ধরনের আপিল ও আপিলের পুনর্বিবেচনার শুনানির মধ্য দিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানান যুক্তিতর্ক শেষে রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হল। ইতিহাসের সত্যই প্রতিষ্ঠিত হল।

আবার এর মধ্য দিয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক সাফল্য, কৃতিত্ব ও গৌরবের পাশাপাশি রাজাকার, আল শামস ও আলবদর বাহিনীর জঘন্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার না-করতে পারার যে জাতিগত গ্লানি, রাষ্ট্রীয় দায় এবং সমষ্টিগত কলঙ্ক একাত্তর-উত্তর পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে এ দেশের মানুষ বহন করছিল, স্বজনহারা পরিবারে যে হাহাকার বিরাজ করছিল, নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে মূলত ভিকটিমদের পরিবারের সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার এবং দীর্ঘশ্বাসের যেমন একটা রাষ্ট্রীয় মূল্য দেওয়া হল, তেমনি ইতিহাসের ক্রমবর্ধিঞ্চু দায় ও কলঙ্কমোচনের ক্ষেত্রেও আমরা আরও একটি ধাপ এগিয়ে গেলাম।

২০১০ সালের আগস্টের ২ তারিখ নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম গ্রেফতার দেখানো হয়। যদিও তিনি ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের একটি মামলায় গ্রেফতার হন। এরপর দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলার পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক এবং দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপনের পর, ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

এ আটটি অভিযোগের মধ্যে চারটি অপরাধের (অভিযোগ নং ২, ৪, ৬, ও ১৬) জন্য তাকে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। একই বছরের ১৩ নভেম্বর তিনি সর্বোচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগেও তিনটি অভিযোগ ২, ৬ এবং ১৬ তে তার ফাঁসির দণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়।

২০১৬ সালের ২৯ মার্চ নিজামী আপিল বিভাগের রায়ের 'রিভিউ পিটিশান' (পুনর্বিবেচনার আবেদন) দাখিল করেন যার শুনানি হয় মে মাসের ৩ তারিখ এবং ওই দিনই ধার্য করা হয় যে, রিভিউ আবেদনের রায় দেওয়া হবে একই মাসের ৫ তারিখ।

শেষ পর্যন্ত রিভিউ আবেদনের রায়েও নিজামীর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে দেওয়া রায় বহাল রাখা হয়। অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি অপরিবর্তিত থাকে যা গত ১১/০৫/২০১৬ রাত ১২ টা ১০ মিনিটে কার্যকর করা হয়।

নিজামী হচ্ছেন পঞ্চম ব্যক্তি এ তালিকায় যারা দালিলিক প্রমাণসহ দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক 'শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী' হিসেবে প্রমাণিত এবং ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। নিজামীর আগে বাকি চারজন ছিলেন আবদুল কাদের মোল্লা (দণ্ড কার্যকর হয় ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩); মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (দণ্ড কার্যকর ১১ এপ্রিল, ২০১৫); আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (দণ্ড কার্যকর হয় ২২ নভেম্বর, ২০১৫) এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (দণ্ড কার্যকর হয় ২২ নভেম্বর, ২০১৫)। যারা যুদ্ধাপরাধী এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে যাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।

নিজামীকে বেশভুষায় অনেকটা সুফির মতো মনে হলেও একাত্তরে নিজামীর যুদ্ধাপরাধ ছিল ভয়ংকর এবং নৃশংস। ইসলাম এবং মুসলমানিত্বকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিনি একাত্তরেও জঘন্য যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম এবং ধর্মীয় ইমেজ ব্যবহার করে বাংলাদেশেও এক ধরনের পাকিস্তানি ভাবাদর্শের মওদুদিবাদ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেছেন।

ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণেই এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। তাতে বলা হয়েছে:

''মতিউর রহমান নিজামী একজন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত (আসামিপক্ষের দাবি অনুযায়ী) হওয়ার পরও কোরানের আদেশ ও মহানবীর শিক্ষার পরিপন্থী হয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিকামী মানুষদের হত্যা ও নিধন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা ও অনুমোদন আদায়।''

''আমরা ধরে নিতে বাধ্য হচ্ছি যে, মতিউর রহমান নিজামী ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সচেতনভাবে এবং স্বেচ্ছায় 'আল্লাহ' ও পবিত্র ধর্ম 'ইসলাম'এর নামের অপব্যবহার করে 'বাঙালি জাতিকে' সমূলে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।''

কে এই নিজামী যিনি একাত্তরে যেমন ভয়ংকর বদর বাহিনীর কমান্ডার হয়ে উঠেন, আবার বাংলাদেশেও জামায়াতের মতো একটি রাজনৈতিক সংগঠনের আমীর হয়ে উঠেন?

নিজামী ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) সঙ্গে যুক্ত হন। পরপর তিন বছর (১৯৬৬-৬৯) তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দুইবার তিনি গোটা পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাই বদর কমান্ডার হিসেবে তিনি এবং তার বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সকল ধরনের হত্যা, ধর্ষণ, খুন, অগ্নিসংযোগ এবং লুণ্ঠনের সক্রিয় কোলাবরেটর হিসেবে কাজ করেন। এই অপরাধের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামী এবং এর অনেক সদস্যকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এ সময় নিজামীসহ দলের আরও কজন প্রধান নেতৃত্ব বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৭ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৯৭৮ সালে শীর্ষ জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও নিজামীকে বাংলাদেশে ফিরে আসার অনুমতি দেন। তারা জামায়াতে ইসলামীকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং এটি আস্তে আস্তে দেশের একটি বড় ইসলামি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।

নিজামী দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং জামায়াতের যুব সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সংগঠিত করেন। ১৯৮৩-১৯৮৮ পর্যন্ত জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং আমীর নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত (২০০০) সে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমীরের দায়িত্ব পান। কিন্তু এ নিজামী যে একজন ভয়ংকর যুদ্ধাপরাধী এটা জনপরিসরে ব্যাপক ভিত্তিতে জানাজানি হলেও এবং একাত্তরের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজে লিখিত প্রমাণাদি থাকলেও, ইতিহাস-বিকৃতির ধারাবাহিকতায় নিজামী বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। এমনি যে রাষ্ট্রের জন্ম অস্বীকার করে যে রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করেছিলেন ১৯৭১ সালে, সেই রাষ্ট্রেরই পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে নিজামী রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশ চষে বেরিয়েছেন। এটা ছিল এ জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার।

তাই, যুদ্ধাপরাধ এবং একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে নিজামীয় কোনো দিন ফাঁসির রায় হতে পারে এবং বাংলাদেশে সে রায় আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কার্যকর হতে পারে এটা এক দশক আগেও অনেকে চিন্তা করেননি। কিন্তু পাপ কখনও বাপকেও ছাড়ে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনগণের সমর্থন থাকলে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই।

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা ইতিহাসে এভাবেই লিখিত থাকবে। লিখিত থাকবে জাহানারা ইমাম এবং ইমরান এইচ সরকারের নাম। তাই, এখন প্রয়োজন নিজামীকে কেন ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং একাত্তরে নিজামী ও তার বদর বাহিনী কী কী জঘন্য অপরাধ করেছেন, সেটা আরও ব্যাপকভাবে সর্বজনের কাছে প্রচার করা, যেন যুদ্ধাপরাধী নিজামীর চরিত্র স্পষ্ট হয় সবার কাছে।

যে তিনটা অপরাধ দালিলিক প্রমাণসহ সন্দোহীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নিজামীর ফাঁসি হয়, সেগুলো সবার জানা দরকার:

এক (অভিযোগ-২):

একাত্তরের ১০ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার পরিকল্পনা অনুসারে নিজামীর সহযোগিতায় এবং পরিকল্পনায় ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।

দুই (অভিযোগ-৬):

নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আবদুল আউয়াল ও তার আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।

তিন (অভিযোগ-১৬):

দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।

এ সময় সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যোদ্ধা রুমি, বদি, জুয়েল, আজাদকে নিজামীর নির্দেশে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। নিজামীর উৎসাহে মেধাবী এই তরুণ-যুবাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ রকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় এবং নৃশংসতার সাক্ষ্য হিসেবে জারি আছে।

নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ে আপিল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন:

''আলবদর বাহিনী যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল, তার ওপর নিজামীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি নিধনযজ্ঞে যোগ দেয় জমিয়তে তলাবা (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ)। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করার জন্য আলবদর ও আল শামস নামে দুটি আধা সামরিক জঙ্গি বাহিনী গঠন করে ছাত্র সংঘ। এর মধ্যে আলবদরে যোগ দেয় জমিয়তে তলাবার বিপুল সংখ্যক সদস্য। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিখিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ বা জমিয়তে তালাবার প্রধান (নাজিম-এ-আলা) মতিউর রহমান নিজামী। একাত্তরের ১৪ নভেম্বর জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় নিজামী 'বদর দিবস: পাকিস্তান ও আলবদর' শীর্ষক প্রবন্ধ লেখেন। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর জন্য আলবদরদের উৎসাহ দেওয়া হয়।''

এভাবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগ মূহূর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অব্যাহত রাখেন নিজামী। তাই, যতই ধর্মের লেবাস নিক না কেন, নিজামীর 'ফাঁসির দণ্ড' আরও একটি বিষয় আমাদের সামনে হাজির করে যে, ইসলামের নামে, আল্লাহর নামে যারা যুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধী।

আজকেও যারা ইসলামরক্ষার নামে, ইসলামের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, ভিন্ন চিন্তার মানুষ, ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষকে হত্যা করছে, তারাও একই কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধী। হুমায়ূন আজাদ থেকে এ পর্যন্ত যত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, এসবই মানবতাবিরোধী অপরাধ। এদেরও একইভাবে বিচার হতে পারে। কেননা, নিজামীর অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়া, বিচারের দণ্ডাদেশ এবং দণ্ড কার্যকরের ঘটনা এটাও প্রতিষ্ঠা করেছে যে, 'বুদ্ধিজীবী হত্যা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ'।