মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা

Published : 22 April 2011, 04:55 PM
Updated : 12 Sept 2011, 05:34 PM

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তিত হয়, সংশোধিত হয়। যখন জাতি প্রয়োজন মনে করে এর পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কাজ করেছি আমি তা বলবো না। সংশোধন আরও হতে পারে ভবিষ্যতে। এভাবেই তো একটি গণতান্ত্রিক সরকার অগ্রসর হয়। এখন সংবিধানের বিধি মোতাবেক, মহাজোট দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন এনেছে। তারাতো বেআইনি কিছু করে নি। এটা রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হতে পারে কিন্তু অসাংবিধানিক কিছুতো করে নি। যেমন আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নি যখন পঞ্চম সংশোধনী আনা হলো। কিন্তু আমরাতো এটাকে ইস্যু করে আন্দোলনে যাই নি। কাজেই সংবিধানের এই পরিবর্তনটাই শেষ কথা নয়। তারা যদি কোন বিষয়ে সংশোধন চায় তাহলে জনমত সৃষ্টি করুক। এমন কি আমরাও মনে করতে পারি, যেমন আমি মনে করি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা উচিত না। কারণ তাতে অন্য ধর্মের লোকদের ছোট করা হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে সব ধর্মের লোকের সমান অধিকার থাকার কথা এবং সেটাই ধর্মনিরপেক্ষতার মূল কথা। আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণ যা চায় তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিৎ।

আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে একটা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। সে সময় আওয়ামী লীগের তথা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিলো ধর্মরিপেক্ষতা। বিএনপি যদি এই চেতনার প্রতি সৎ থাকতো তাহলে তারা বলতে পারতো যে আমরা রাষ্ট্রধর্ম চাই না, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। সেটা কিন্তু তারা বলে না বা সেটাকে তারা ইস্যুও করে না। আর একথা তো সবাই জানেন তারা রাজনীতিকে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছেন তা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

কিন্ত তারপরেও আমার দল বলছে আমি তার অংশিদার এবং তাতে ভোটও দিয়েছি সংবিধান সংশোধনের পক্ষে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত নাও হতে পারি কিন্তু তাই বলে আমি সেটা মানবো না তা তো না। তাদের উচিৎ এটা মেনে নেয়া এবং সেটা মেনে নিয়ে জনমত সৃষ্টি করুক। তারা দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনুক যদি মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে।

আমরা যা করেছি তা যদি গ্রহণযোগ্য মনে না হয় তাহলে কীভাবে তাকে গ্রহণযোগ্য করা যায় সে কথা বিরোধী দল বলতে পারে। যেমন পঞ্চম সংশোধনী যে সঠিক হয় নি– এটাতো সবাই স্বীকার করে। কিন্তু তারা তা স্বীকার করে না। এখন যদি জনগন মেনে নেয় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। তখন আমরা এটা নিয়ে আন্দোলন করতে যাবো না। আমরা জনগনের রায় মেনে নেব।

কর্নেল (অবঃ) শওকত আলীজাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার।