পহেলা বৈশাখ: একদিনের বাঙালিয়ানা

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 16 April 2016, 07:57 AM
Updated : 16 April 2016, 07:57 AM

এ নিবন্ধটি হচ্ছে পহেলা বৈশাখ নিয়ে আমার কিছু বিক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণ, অপ্রথাগত অনুভূতি এবং খুচরা চিন্তা-ভাবনার কোলাজ। নানান আয়োজনের দেখাদেখির ভেতর কিছু অ-দেখা ভুবন আমি যেভাবে দেখার চেষ্টা করেছি, এটা তার কিছু অছন্দোবদ্ধ আলেখ্য। এ নিবন্ধ কিছু খণ্ড খণ্ড উপলব্ধির অখণ্ড গাঁথুনি যা পহেলা বৈশাখ এবং বৈশাখ-কেন্দ্রিক আমাদের বহুমাত্রিক আদিখ্যেতা উন্মোচনে সাহায্য করবে। পাশাপাশি এ নিবন্ধ হচ্ছে আয়োজন বনাম আনুষ্ঠানিকতা, দেখানো-পনা বনাম আপনা-পনা এবং ভোগ বনাম উপভোগের বাইনারির (বিপ্রতীপ) গভীর অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির লেখ্য-চিত্রায়ন।

এক.

বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ নানান কারণে বেশ আলোচিত। প্রজনন-পিরিয়ড বিবেচনায় পান্তা-ইলিশ-কেন্দ্রিক বিতর্ক, গত বছরের নারীনির্যাতনের ঘটনা সামনে রেখে নিরাপত্তার জুজুর ভয়, একই অজুহাতে বৈশাখের অনুষ্ঠান শেষ করার সময়ের সীমানা নির্ধারণ এবং বৈশাখের অনুষঙ্গ হিসেবে সুদীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত নানান মুখোশ ও বাঁশি-বিষয়ক সরকারি (অ) দরকারি বিধি-নিষেধ প্রভৃতির কারণে বৈশাখের তীব্র দাবদাহ আগেই শুরু হয়ে যায়।

এত আলোচনা-সমালোচনার পরও বরাবরের মতোই আমি পহেলা বৈশাখের দিনটি নিয়ে বেশ আমোদে থাকি। ভেতর থেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি এটি। নানান প্রস্তুতি নিই। এক ধরনের প্রস্তুতি চলে এপ্রিলের শুরু থেকেই। সংবাদপত্রের বিশেষ সংখ্যার জন্য লিখি। বিজু, সাংগ্রাই, বিষু, বিসু, বৈষু বিহু, চাংক্রেন, চানক্রাই প্রভৃতি উপলক্ষে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রকাশনার জন্য লিখি। এবারও লিখেছি। বৈশাখের নানান অনুষ্ঠানাদি আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকি। অন্যদের অনুষ্ঠান এবং আয়োজনে অংশ নিই। মনোযোগ দিয়ে দেখি এবং উপভোগ করি। এবারও অন্যথা হয়নি।

এবারের বৈশাখের নানান অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমার একটা সাধারণ পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এত বিধি-নিষেধ এবং নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি কিংবা নিরাপত্তার নানান জুজুর ভয়ের পরও অন্যবারের সঙ্গে এবারের পহেলা বৈশাখের আয়োজনের মধ্যে তেমন পার্থক্য ছিল না। সব কিছুই নিয়মমাফিক এবং গড়পড়তা বলে মনে হয়েছে।

এত উত্তাপ সত্বেও মানুষের মধ্যে বরঞ্চ স্বতস্ফূর্ততা অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মঙ্গল শোভাযাত্রায় জনসমাবেশের যেমন কমতি ছিল না, দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো মানুষের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনা বটমূলে ছায়ানটের সংগীত পরিবেশনা কিংবা চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের কম্পাউন্ডে সুরের ধারার সহস্র কণ্ঠের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে নববর্ষের অনুষ্ঠানের শুরুর রীতি ছিল যথারীতি। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও বৈশাখের নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে যথারীতি।

তবে, এবারে বাংলাদেশ টেলিভিশন, যার অনুষ্ঠানের মান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলোচনারই অযোগ্য, একটা চমৎকার অনুষ্ঠান করেছে। আফজাল হোসেনের উপস্থাপনায় 'জলের গান'র চমৎকার পরিবেশনা। সঙ্গে আবদুল হাই আল হাদী, ইমদাদুল হক মিলন, মাসুম রেজা, আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, ফাহমিদা নবী ভগ্নিদ্বয়, পান্থকানাই ও অর্নব, ফেরদৌস আরা প্রমুখের উপস্থিতি, আলাপচারিতা, আবৃত্তি এবং জলের গানের বাজানোর সঙ্গে গান গাওয়ার আইডিয়াটা ছিল অভিনব। বেসরকারি চ্যানেলের বৈশাখ এবং বাঙালি সংস্কৃতি-বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানগুলো ছিল গড়পড়তা। গানের অনুষ্ঠানগুলো মোটামুটি দেখার মতো ছিল।

বেসরকারি চ্যানেলগুলো সারাদেশের বৈশাখ উদযাপনের খবর যেভাবে প্রচার করছিল তাতে ঘরে বসেও বৈশাখের আনন্দ অনুভব করা গেছে। তাই, পহেলা বৈশাখ এবং বৈশাখের নানান আয়োজন ঘরের ড্রয়িংরুমে এনে হাজির করে গোটা বাংলাদেশের মানুষকে, এমনকি ঘরকুনো মানুষকেও, 'পহেলা বৈশাখ'র সঙ্গে সম্পৃক্ত করানো এবং বৈশাখের অনুষ্ঠানের সঙ্গে শরিক করানোর কৃতিত্ব বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে দিতেই হবে। তবে, নানান আনুষ্ঠানিকতায় বিজ্ঞাপনের/স্পন্সরশিপের উপস্থিতি ছিল বাড়াবাড়ি রকমের অসুন্দর। অনুষ্ঠান আয়োজকদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না কিন্তু পণ্যের লগো এবং স্পন্সরের নামে ব্যাক-স্ক্রিন ভর্তি। ফ্রন্টেও স্পন্সরদাতার আধিপত্য।

তাই, কর্পোরেট দুনিয়ার বেপরোয়া 'পাবলিসিটি' এবং নানান রকমারি 'পণ্যে'কে একেবারে প্রাইভেট স্পেসে (ব্যক্তিগত পরিসরে মানে ড্রয়িংরুম এবং বেডরুমে) অনুপ্রবেশ করানোর কৃতিত্বও বেসরকারি চ্যানেলগুলোকেই দিতে হবে!

দুই.

আমি নানান জায়গায় বৈশাখের নানান অনুষ্ঠানে যাতায়াত করেছি। প্রায় পুরোটা দিন বৈশাখের নানান প্যারেড এবং অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। লাল-সাদা রঙের আধিপত্যশীল সমাবেশ থাকলেও এবার সাদার সঙ্গে গোলাপী রঙের শাড়ি এবং পাঞ্জাবি চোখে পড়েছে। মাথায় কাঁচা ফুলের মালা পরার একটা প্রবণতা ছিল মেয়েদের যা পুরো আনুষ্ঠানিকতায় ভিন্ন মাদকতা দিয়েছে। সঙ্গে ছিল গালে গালে বৈশাখী আল্পনা।

তবে, সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য ছিল ছেলেমেয়েদের অসাধারণ সুন্দর বন্ধুত্ব। একটা ছেলে এবং একটা মেয়ের সম্পর্ক মানেই 'প্রেম' নয়; বরঞ্চ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কত সুন্দর বন্ধুত্ব হতে পারে, তা আমি এবার আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। অনেক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে কথা বলে এবং মিশে, নতুন করে উপলব্ধি করলাম, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ রকম বন্ধুত্ব প্রেমের চেয়েও আস্থাশীল, শ্রদ্ধাশীল এবং 'মিউচুয়াল কেয়ারিং'এর হতে পারে। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের সমন্বয়ে দলে দলে নানান রঙ্গিন বৈশাখী পোশাকে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো ছিল এবারের বৈশাখের সবচেয়ে সুন্দর দিক।

সপরিবারে দলবেঁধে বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা করা একটি নিয়মিত দৃশ্য হলেও পরিবারের বয়স্ক সদস্য-সদস্যাদেরও সঙ্গে নিয়ে বৈশাখের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কিছু চমৎকার নজির দেখেছি এবার। তবে, সবচেয়ে অস্বস্তিকর ছিল ছবি তোলার বাড়াবাড়ি। যখন তখন যেখানে সেখানে হুট করে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ছিল একটা কমন প্রবণতা। আর 'সেলফি' নামক ভয়ানক রোগটি আশেপাশের মানুষকে মোটামুটি বিরক্ত করে ছেড়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, ছবি তোলার প্রবণতা একটা রোগ বা ফোবিয়ার আকার ধারণ করেছে। মানুষ ছবি তুলবে, কিছু সুন্দর মুহূর্ত মানুষ স্থিরচিত্র করে রাখতে চাইবে– এটা মানবসমাজের একটি ঐতিহাসিক প্রবণতা। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বৈশাখের মতো বিরাট জনসমাবেশের মাঝখানে হুট করে দাঁড়িয়ে মিনিটে তিনবার ছবি তোলার চেষ্টা একটা রোগাক্রান্ত অনুশীলন ছাড়া আর কিছুই নয়।

মানুষের দোষ দিয়ে আর লাভ কী! বহুজাতিক মোবাইল কোম্পানিগুলো আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে কীভাবে 'স্মার্ট' হতে হয়! তাই তো, সবার হাতে 'স্মার্ট' ফোন, আর সেলফি হবে না তা কী হয়!

তিন.

বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের সম্পর্ক নিয়ে বৈশাখের আগেই বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বৈশাখ একটি জাতীয় উৎসব। তাই, জাতীয় মাছ হিসেবে এর সঙ্গে ইলিশের একটা সম্পর্ক যদি কেউ খুঁজতে চেষ্টা করে, তাতে দোষের কিছু নেই। সঙ্গে 'পান্তা'ভাতের বিলাসিতা দিয়ে যদি সাময়িক 'গরিবিয়ানা'র স্বাদ নেওয়া যায়, সেটাকে ব্যক্তি পর্যায়ের একটি খায়েশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে যারে। কিন্তু এর সঙ্গে কুৎসিৎ বেনিয়াবৃত্তি যুক্ত হওয়ায় ঘটেছে বিপত্তি। সরকার ইলিশের প্রজননের সময়ে এভাবে গণহারে ইলিশ খাওয়া বিপুলভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে, আমি দেখার চেষ্টা করেছি এর অত্যন্ত অরুচিকর বাণিজ্যিক দিকটি।

ইলিশ-কেন্দ্রিক এ বিতর্ক নিয়ে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছি:

"ইলিশের কেজি ৪,৫০০ টাকা', 'এক জোড়া ইলিশের দাম ১৫,০০০ হাজার টাকা', 'ছোট সাইজের এক হালি ইলিশ ২০,০০০ টাকা'– এসব কোনো সুস্থতার লক্ষণ বলে আমার মনে হয় না। ফলে, পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ইলিশ-কেন্দ্রিক এ বড়লোকি-পনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যে দেশে এখনও হাজার হাজার লাখ লাখ পরিবার ১৫,০০০-২০,০০০ টাকায় সারা মাসের সংসার চালায়, সেখানে বৈশাখ উদযাপনের নামে একটা/এক জোড়া/এক হালি ইলিশ ১৫,০০০-২০,০০০ টাকায় কিনে ভুরিভোজনের আয়োজন একটি অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ কাজ। প্রজনন সমস্যার বিজ্ঞান-পনার জন্য নয় কিংবা জাতীয় মাছ হিসেবে ইলিশ রক্ষাই শুধু নয়, একটি অসুস্থ দেখানো-পনা এবং বিকৃত বড়লোকী-পনা রোধ করার জন্যই পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ হিসেবে 'ইলিশ' বর্জন করা উচিত।"

ফেইসবুকসহ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় খাবারের যে সব পোস্ট আমি দেখেছি, তাতে আমার নিজের কাছেই এক ধরনের দম-বন্ধ করা অবস্থা হয়েছে। এক টেবিলে একবেলা ৫০ প্রকারের ভর্তা/ভাজি/মাছের খাবার আইটেম করে বৈশাখ উদযাপন করার প্রবণতাতে আমার কাছে এক ধরনের মৌসুমী 'খাদ্য-রোগ' বলে মনে হয়েছে। কারণ ৩৬৪ দিন 'মনিব' থেকে একদিন 'চাকর-বাকর'এর খাওয়া খেয়ে (এসব বাড়ির চাকর-বাকররা সারা বছর ধরে এ ধরনের খাবার খায়!) যদি বৈশাখ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা আমরা করি, তবে তাকে 'খাদ্য-রোগ' ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। এ রোগের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন!

চার.

সন্ধ্যার সময় আমি যখন বাসায় ফিরছিলাম, দেখলাম অনেকগুলো ছোট ছোট পিক-আপ ভ্যান অনুষ্ঠান শেষে সাউন্ড-সিস্টেম নিয়ে ফিরে যাচ্ছিল। তিনটি ভ্যানের দুটিতে গান বাজছিল। একটিতে বাজছিল হিন্দ্রি 'ফানা' ছবির গান আর আরেকটিতে হিন্দি 'গুন্ডে' ছবির গান। সঙ্গে কয়েকটা ছেলে। গাড়িতে যারা ছিল, তারা গানের সঙ্গে 'ঋত্বিক'-মার্কা নাচ করছিল। আমি প্রথমে একটু অবাক হলাম। কারণ একটু আগেই এ সিস্টেমগুলো এবং এ মানুষগুলো (ইন্সট্রোমেন্ট প্লেয়ারস) 'বাংলা' গানের অবতার হয়ে আমাদের সামনে স্টেজে হাজির হয়েছিল!

পরক্ষণে মনে হল, 'এখন তো ৭ টা বাজে। সরকার তো ৫/৬ টা পর্যন্ত বৈশাখের অনুষ্ঠান করতে বলেছে! বৈশাখের অুনষ্ঠান তো শেষ'। সূর্য ডুবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাঙালিয়ানা শেষ! এই 'একদিনের বাঙালিয়ানা' দিয়ে আমরা কী করব!

যারা সাদা-লাল পোশাকে বৈশাখ রাঙিয়ে রাখেন, তারা বছরের কদিন বৈশাখের আবেগ এবং বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গগুলো ধারণ করেন, তা নিয়ে আমার গুরুতর সন্দেহ আছে। কিংবা যেসব টিভি চ্যানেল 'একদিনের বাঙালিয়ানা' পরিবেশনের জন্য সব ধরনের আয়োজনে সচেষ্ট থাকে তারা সারা বছর কয়টি অনুষ্ঠান করে যা বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা দেয়! কিংবা যারা নানান ভর্তা-ভাজি দিয়ে বৈশাখের খানা-খাদ্য তৈরি করেন এবং সদলবলে ভোজন করেন, তারা বছরের কয়টা দিন এসব খাবার স্পর্শ করেন!

আমার তো মনে হয়, যারা এসব করেছেন তারা এসব খাবার সারা বছর তাদের 'কাজের লোক'দের জন্যই বরাদ্দ রাখেন। নিজে কখনও খেয়ে দেখেন না!

তাই, আমার কাছে মনে হয়েছে, এন্তার বৈশাখের আয়োজন মূলত একটি 'একদিনের বাঙালিয়ানা'র জাতীয় প্রদর্শনী এবং তা-ও তাতে যতটা 'উপস্থাপনা' থাকে ততটা 'আন্তরিকতা' থাকে না। যতটা 'আয়োজন' থাকে, ততটা 'আবেগ' থাকে না। তাই, আমি বৈশাখের শুভেচ্ছা দিতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলাম:

"পহেলা বৈশাখ একটি সর্বজনীন উৎসব বলা হলেও এটা এখনও সর্বজনীন নয়। চতুর্দিকে যে-হারে বাহারি আয়োজন চলছে, তাতে উচ্চবিত্তের যতটা একদিনের আমুদে-পনা আছে, মধ্যবিত্তের যতটা মৌসুমী দেখানো-পনা আছে, সমাজের নিম্নবিত্তের মানুষের ততটা আত্মিক অংশীদারিত্ব বা অংশগ্রহণ নেই। তাই, বাংলা নববর্ষ ১৪২৩এর আকাঙ্ক্ষা হোক, 'পহেলা বৈশাখ' সত্যিকার অর্থে 'একটি সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠুক"।

'একদিনের বাঙালিয়ানা' যদি নিত্যদিনের চর্চা এবং অনুশীলনে রূপান্তরিত হয়, তখনই পহেলা বৈশাখ তার আসল চেহারা নিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হবে। কারণ, এখন পহেলা বৈশাখ আমরা যতটা 'উপভোগ' করি, তার চেয়ে অনেক বেশি 'ভোগ' করি!

[পুনশ্চ: এখানে যে ছবিটা চিত্রিত হয়েছে, সেটা মূলত শহুরে নাগরিক কোলাহলের পহেলা বৈশাখ, কিন্তু এর বাইরেও এদেশের হাজার হাজার গ্রামে একেবারেই নিজস্ব ঘরানায় নানানভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। সেখানে পহেলা বৈশাখ সত্যিকার অর্থেই হয়তো একটা বিশেষ ধরনের সর্বজনীনতা নিয়ে প্রাণের উৎসব হিসেবেই পালিত হয় যার খোঁজ আমরা খুব একটা পাই না বা আমরা তার খোঁজ করার চেষ্টাও করি না। মিডিয়ার চোখও সেখানে পড়ে না।]