স্মরণের জানালায় দাঁড়িয়ে

সাব্বির হোসাইন
Published : 13 Feb 2016, 02:49 AM
Updated : 13 Feb 2016, 02:49 AM

খুব অল্প দিনের ব্যবধানে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসেই আমদের ছেড়ে চলে গেলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দুই বন্ধু, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব ও জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাও। মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর (ভারতীয়) এই দুই সিনিয়র সেনা অফিসারের অবদান অসামান্য। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তাদের অবদানের বর্ণনা ছাড়া লেখা সম্ভব নয়। মেজর জেনারেল জ্যাকব পাকিস্তান অধিকৃত-বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানের ও রেসকোর্সে নিয়াজীর আত্মসমর্পণের মূল পরিকল্পনাকারী। অপরদিকে, মেজর মেজর জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাওয়ের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) বর্বর পাকিস্তানি সেনামুক্ত হয়।

কাকতালীয়ভাবে এই দুজনেরই জন্ম হয়েছে ১৯২৩ সালে এবং দুজনেই বিরানব্বই বছর পূর্ণ করে মৃত্যুবরণ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব:

১৯৭১ সালে জে এফ আর জ্যাকব ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ছিলেন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কর্তৃক অধিকৃত-বাংলাদেশে চলমান পৃথিবীর নৃশংসতম গণহত্যা বন্ধে ও বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষে জড়িত হতে চেয়েছিল। কিন্তু অধিকৃত-বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব চাপিয়ে দিতে পারত। এমনকি পাকিস্তানের মিত্র চীনও ভারত আক্রমণ করতে পারত। এসব আশংকা থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ জেনারেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সামরিকভাবে জড়িত হবার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন।

নিজের অধিনায়কত্বে ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর মেজর জেনারেল জ্যাকবের আস্থা ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী কীভাবে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে সে জন্য তিনি একটি পরিকল্পনা করেন। সেটি ছিল এ রকম, অধিকৃত-বাংলাদেশে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সদর দফতর ও এ অঞ্চলে পাকিস্তানের সামরিক উপস্থিতির কেন্দ্র ঢাকা শহর মুক্ত করা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঢাকার পতন হলে এই অঞ্চলে পাকস্তানিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে। একই কারণে পাকিস্তানিরা ঢাকা শহরকে সামরিকভাবে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী রাখতে চাইবে।

জ্যাকবের এই পরিকল্পনা War of Movement নামে পরিচিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিত্রবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন পথে স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ঢাকা ঘিরে ফেলবে এবং ঢাকার সঙ্গে অধিকৃত-বাংলাদেশের সকল পাকিস্তানি কমান্ড এবং সারাদেশের সকল পাকিস্তানি কমান্ড পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।

মেজর জেনারেল জ্যাকবের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্য সচিব হারুন হাবিব যেমনটি বলেছেন:

"মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর যতগুলো অপারেশন হয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন জ্যাকব। দেশের বিভিন্ন মফস্বল এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করতে করতে ঢাকায় অগ্রসর হওয়ার পক্ষে ছিলেন জেনারেল অরোরা। কিন্তু জ্যাকব বলেছিলেন, প্রথমেই যদি ঢাকাকে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায় তাহলে পাকিস্তান বাহিনীকে দ্রুত আত্মসমর্পণ করানো সম্ভব হবে, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতিও অনেক কম হবে।"

জ্যাকব তাঁর এই পরিকল্পনা সম্পর্কে নিজেই বলেছেন এমনটি:

"জেনারেল মানেকশ আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের আর সব শহর দখল করতে। সে কারণে ১৬ ডিসেম্বরেও ঢাকা ছিল অরক্ষিত। মানেকশর নির্দেশ সব আঞ্চলিক অধিনায়কের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা ফোন করে তাঁর এই আদেশ উপেক্ষা করতে বলেছিলাম। জেনারেল অরোরা (তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি) উত্তেজিতভাবে আমার কক্ষে এলেন। বললেন, এসবের জন্য আমিই দায়ী। কারণ তিনি শহরগুলো দখল করতে চেয়েছিলেন এবং আমি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করিনি। উপরন্তু আমি সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর ও অন্য কয়টি শহর দখল করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছি। সুতরাং ১৩ ডিসেম্বর রাতে আমি নিয়াজীকে বেতারে পেয়ে তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, ঢাকার অদূরে থাকা আমাদের সেনাশক্তি খুবই জোরালো। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীদের একটা অভ্যুত্থান আসন্ন।"

জ্যাকবের এই পরিকল্পনায় অভিযানের সময়রেখা ছিল তিন সপ্তাহের। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী এতটাই কৌশলী হয়ে ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিল যে মাত্র দুসপ্তাহের মধ্যেই যৌথবাহিনী অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায় এবং পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করে। এই সময় ঢাকায় পাকিস্তানি সৈন্যের সংখ্যা ছিল ২৬,৪০০। সঙ্গে ছিল বিহারি ও দালালদের নিয়ে গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীর অসংখ্য সদস্য। অপরদিকে মিত্রবাহিনীর ছিল মাত্র তিন হাজার সৈন্য এবং মুক্তিবাহিনীর হাজার খানেক যোদ্ধা ও গেরিলা।

পরাজিত, ভীত নিয়াজীর সঙ্গে আত্মসমর্পণের বিষয়ে কথা বলতে ঢাকায় এসেছিলেন মেজর জেনারেল জ্যাকব। ভারতীয় সেনাবাহিনীর শুধুমাত্র একজন স্টাফ অফিসারকে নিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় নিয়াজীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে নিয়াজীকে তিনি নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণের জন্য রাজি করান।

পাকিস্তানিদের আপত্তি সত্বেও রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জ্যাকব বলেছেন:

"বাংলার জনগণকে তারা (পাকিস্তান) যে অবর্ণনীয় নির্যাতন ও দুঃখ-কষ্ট দিয়েছে, আমি চেয়েছিলাম বাঙালি জাতি পাকিস্তানিদের পরাজয়ের সাক্ষী থাকুক।"

আসলে বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু ছিলেন জে এফ আর জ্যাকব। বাঙালি জাতি ও মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে তিনি তাঁর বই ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অনন্যঅসাধারণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ২০১২ সালে তাঁকে সম্মানিত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাও:

কে ভি কৃষ্ণা রাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন ভারতীয় মেজর জেনারেল এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ০৮ মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি। এই ০৮ মাউন্টেন ডিভিশন তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।

মিত্রবাহিনীর মেজর জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাওয়ের নেতৃত্ব সিলেট তথা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলদারিমুক্ত হয়। তিনি ঢাকায় পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও সফল অধিনায়কত্বের জন্য তাঁকে ভারত সরকার 'পরম বিশিষ্ট সেবা পদকে' ভূষিত করে।

প্রদীপ বড়ুয়ার 'দ্য স্টেট অ্যাট ওয়ার ইন সাউথ এশিয়া' গ্রন্থে মেজর জেনারেল (তৎকালীন) কে ভি কৃষ্ণা রাও সম্পর্কে এ রকম বলা হয়েছে:

''মিত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্বগত সিং মেজর জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাওকে তাঁর ০৮ মাউন্টেন ডিভিশন নিয়ে শমশেরনগর বিমানঘাঁটি ও সিলেটের মৌলভীবাজার এলাকা দখলে রাখতে আদেশ দেন। মুক্তিবাহিনীসহ মিত্রবাহিনীর পঞ্চম গুর্খা ব্যাটালিয়ন ও মেজর জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাওয়ের ০৮ মাউন্টেন ডিভিশনের তীব্র আক্রমণে ২৭ পাকিস্তান ব্রিগেড ছাতক পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।

এরপরই সিলেটের ২০২ পাকিস্তান ব্রিগেড ও মৌলভিবাজারের ৩১৩ পাকিস্তান ব্রিগেড যেন ২৭ পাকিস্তান ব্রিগেডকে সহায়তা করতে এগিয়ে না আসতে পারে, সে জন্য মেজর জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাও তাঁর ০৮ মাউন্টেন ডিভিশন নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন এবং একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পিছু হটতে থাকে।

কৃষ্ণা রাওয়ের অসাধারণ অধিনায়কত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ সৈন্যদল আখাউড়া-ভৈরব বাজার পর্যন্ত অঞ্চল পাকিস্তানি দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে।''

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পাররিকর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাওয়ের ভূমিকা নিয়ে বলেন:

"দেশ (ভারত) একজন শ্রেষ্ঠ সামরিক নেতাকে হারিয়েছে; তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সফল অধিনায়ক ও একটি প্রজন্মের ভারতীয় সামরিক সদস্যদের অনুপ্রাণিত করেছেন; যিনি আশির দশকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন শুরু করেছিলেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ) তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সাথে চিরস্মরণীয়।"

জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাও ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আব্বাস আত্তারের তোলা পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সেই বিখ্যাত ছবিতে তিনি আছেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের বর্ণাঢ্য জীবন:

জেনারেল জ্যাকবের পুরো নাম জ্যাকব ফারজ রাফায়েল জ্যাকব। তিনি ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ ভারতের কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার ক্যাটাগরিতে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইরাক, উত্তর আফ্রিকা, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়ায় ব্রিটিশদের হয়ে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন।

সাতচল্লিশে দেশভাগের পর তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ তিনি বিগ্রেডিয়ার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি ভারতীয় পদাতিক বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য মরুভূমিতে যুদ্ধ করার একটি নিয়মাবলী লিখেছেন তিনি।

জ্যাকব ১৯৬৭ সালে মেজর জেনারেল হন। পরে, ১৯৬৯ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এই পদেই বহাল ছিলেন এবং মিত্রবাহিনীর একজন অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি উ্ত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্রোহ দমনে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী জীবনে ভারতের দুটি অঙ্গরাজ্যে, গোয়ায় ও পাঞ্জাবে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব ১৩ জানুয়ারি, ২০১৬ বিরানব্বই বছর বয়সে দিল্লিতে অবস্থিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর সৃত্মিচারণ করে তাঁর লেখা বিখ্যাত দুটি বই– Surrender at Dacca: Birth of a Nation এবং An Odyssey in War and Peace: An Autobiography আলোচিত হয়েছে।

ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে 'পরম বিশিষ্ট সেবা পদকে' ভূষিত করেন।

জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাওয়ের বর্ণাঢ্য জীবন:

কে ভি কৃষ্ণা রাও ১৯২৩ সালের ১৬ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার ক্যাটাগরিতে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মা ও বেলুচিস্তানে এবং সাতচল্লিশের দেশবিভাগের সময় পাঞ্জাবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৪৭-৪৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম কাশ্মির যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৪৯-৫১ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমির প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫২-৫৫ সালে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদর দফতরে ছিলেন জেনারেল স্টাফ অফিসার (গ্রেড-২)। পরে, ১৯৬০-৬৩ সালেও জম্মু-কাশ্মীরে ছিলেন জেনারেল স্টাফ অফিসার (গ্রেড-০১) এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদর দফতরে মিলিটারি অপারেশনস বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৬৯ সালে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন কৃষ্ণা রাও।১৯৭০-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের মণিপুর ও নাগাল্যান্ড রাজ্যে কর্মরত ছিলেন। এ সময়, ১৯৭১ সালে তিনি মিত্রবাহিনীর কমান্ডিং জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৪ সালে তাঁকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে, ১৯৭৯ সালে জেনারেল পদে ও ১৯৮১ সালে চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে উন্নীত করা হয়। ১৯৮১ সালের জুন থেকে ১৯৮৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৪তম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর রাও ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গর্ভনরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ বিরানব্বই বছর বয়সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু জেনারেল কে ভি কৃষ্ণা রাও দিল্লিতে অবস্থিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় বাঙালির হৃদয়ে চিরভাস্মর হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের মুক্তির বন্ধু ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই দুই জেনারেল।

না ফেরার দেশে ভালো থাকুন জেনারেল জ্যাকব, জেনারেল কৃষ্ণা।