সবার নিরাপত্তার জন্য এই দাবি

তারানা হালিম
Published : 24 August 2011, 03:30 PM
Updated : 24 August 2011, 03:30 PM

প্রথম কথা হচ্ছে ১০ হাজার লাইসেন্স পরীক্ষাহীনভাবে দেয়া হয়েছে–সেটা বাতিল করা এবং পরীক্ষাহীনভাবে আরও যে-সব লাইসেন্স দেয়া হবে সেগুলোকে না-দেয়ার জন্য আমি সুপারিশ করেছি সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

যদি আমাদের এই আবেদন ব্যর্থ হয়, তখন আমি অনশন কর্মসূচীতে যাবো। সেই অনুসারে আমি ফোয়ারা এবং সাইফ ফাউন্ডেশন থেকে একজন সমাজকর্মী হিসেবে তিনটি চিঠি যোগাযোগমন্ত্রী বরাবর, নৌপরিবহন মন্ত্রী বরাবর, বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর এবং মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন বরাবরে আমরা পাঠাবো।

পাঠাবার পরে আমরা কিছুটা সময় দেবো, কারণ এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ১৮ বছর যাবৎ যে-অনিয়ম চলে এসেছে তা রাতারাতি পরিবর্তিত হবে–এমনটা আমরা আশা করি না। তবে আমরা সংশ্লিষ্ট এই মন্ত্রণালয়গুলো থেকে মৌখিক ঘোষণা আশা করতে পারি।

আমাদের লিখিত চিঠি পাওয়ার পর তারা অন্তত এই ঘোষণাটি দিবে যে এই অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া লাইসেন্সগুলো বাতিল করা হবে কিংবা যাদেরকে তা দেয়া হয়েছে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইসেন্সগুলো বৈধকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে।

এই পরীক্ষায় যারা পাস করবে তাদের লাইসেন্স বহাল থাকবে আর যারা পাস করবে না তাদেরগুলো বাতিল করা হবে। আর যেগুলো দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো না দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।

এরপরে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করবো এবং শ্রমিক ফেডারেশনের যারা আমার এই আবেদনের বিরুদ্ধাচারণ করছে আমরা তাদের সাথেও বসতে চাই। আমাদের সব প্রক্রিয়া যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমি আমার ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচী পালনে বাধ্য হবো।

আমি একটি বার্তা সবার কাছে পৌঁছাতে চাই, সেটি হচ্ছে এই যে আমরা সড়কে প্রশিক্ষিত চালকদেরকে লাইসেন্স দেয়ার কথাটা কেবল আমাদের নিরাপত্তার জন্যই নয়, তা একই সঙ্গে চালকদের নিরাপত্তার জন্যেও দরকার।

কারণ দুর্ঘটনায় তারাও হতাহত হয়; অথবা নিহত না হলেও দুর্ঘটনার পর যখন কোন চালক দুর্ঘটনাস্থলে ধরা পড়ে তখন সাধারণ মানুষের গণপিটুনিতে সে আহত, পঙ্গু বা নিহত হয়।

সুতরাং সব সেক্টরের মানুষের কল্যাণেই আমি এই দাবি জানাচ্ছি। সর্বসাধারণের কল্যাণমূলক এই দাবির বিপক্ষে কারোরই অবস্থান নেয়ার কোন নৈতিক যুক্তি নেই।

এটা কোন রাজনৈতিক মুনাফা লাভের জন্য নয়, এটা বিবেকের তাড়নায় একটি সামাজিক আন্দোলন। আমি সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানাই, যে তারা আমার এই দাবির পক্ষে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। যদি সরকার এই দাবি মেনে নেয় আর যদি কোন স্বার্থান্বেষী মহল এই দাবির বিপক্ষে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তখন যেন জনগণ, যাত্রীসহ সবাই এই দাবি বাস্তবায়নে প্রস্তুত থাকেন।

প্রয়োজন হলে ঈদে বাড়ি যাবো না, প্রয়োজন হলে বাস-ট্রাক কোন পরিবহনে আমরা চড়বো না, এমন কি আমাদের যাদের প্রাইভেট কার আছে তারাও পায়ে হেটে সংহতি প্রকাশ করার জন্য একত্রিত হবো। এই মনভাবটা আমাদের থাকতে হবে এবং এটা জরুরী।

যে কোন সভ্য দেশেই বৃহৎ কিছু পাওয়ার জন্য ছোট ছোট ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এটি সেরকমই একটি ছোট ত্যাগ। আমার কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। জন নিরাপত্তার জন্য এই দাবি। আমার বোনের ছেলে মারা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। আমি তাকে কোন দিনই ফেরত পাবো না। কিন্তু আমি এই হারানোর বেদনার সাথে পরিচিত।

আমার বিশাল কিছু হওয়ার ইচ্ছে নেই। আমি চাই না মানুষ অকালে মৃত্যু বরণ করুক। এই দাবির সাথে রাজনৈতিক কোন উচ্চাভিলাষ নেই। এটি নিছকই এক মানবিক দাবি।

আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ দ্বারা উদ্ধুদ্ধ। আমি তাকে চোখে দেখিনি, কিন্তু আমি তার আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। বঙ্গন্ধুর মতো স্পষ্টভাষী, আপোষহীন নেতা যার প্রেরণা হয় সে কখনো কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কিংবা বিশাল খ্যাতি পাবার জন্য কোন কাজ করেনা। আমি জনগনের জন্য এই কাজটি বিবেকের তাড়না থেকে করছি। এটা একটি সামাজিক আন্দোলন।

আমি নিজেকে প্রথমত একজন বিবেকবান মানুষ মনে করি এবং পরে একজন রাজনীতিবিদ। সুতরাং সবাই যেন এটাকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবেই বিবেচনা করেন। কেউ যেন এর পেছনে কোন রাজনৈতিক অভিলাষ বা উদ্দেশ্য খুঁজে না বেড়ান।

আপনাদের সবাইকে এই সুযোগে জানিয়ে রাখতে চাই যে সরকারের উচ্চ মহল থেকে এই দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে মৌখিক আশ্বাস পেয়েছি, আমরা এই আশ্বাসটি ঘোষিত এবং লিখিত রূপে দেখার অপেক্ষায় আছি।

তারানা হালিম: অভিনেত্রী  ও সংসদ সদস্য।