স্বদেশি উপাদান আলবৎ রয়েছে

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 1 Dec 2015, 03:20 AM
Updated : 1 Dec 2015, 03:20 AM

বগুড়ার শিয়া মসজিদে মুখোশধারীদের গুলিবর্ষণের পরদিন ছিল শুক্রবার, জুমার দিন। এ দিন দেশের কয়টি মসজিদে ওই ঘটনার নিন্দা করে এবং তাকে 'ডিসঅউন' করে বক্তৃতা হয়েছে, আমার জানা নেই। আপনাদের কারও জানা থাকলে জানাবেন। ওই শিয়া মসজিদে সুন্নিরাও নাকি নামাজ পড়তে যেতেন। সে ক্ষেত্রে এমনটি হতেই পারত যে, নামাজ চলাকালে গুলিতে মারা গেলেন একজন সুন্নি মুসলিম। রাজধানীতে এবারের মহররম ঘিরে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিপর্বে যে হামলা হয়, তাতে এ পর্যন্ত নিহত দুই ব্যক্তিই নাকি সুন্নি। তবে এ কথা ঠিক, শিয়া ভেবেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। এতে কে মারা যাচ্ছে, সেটা মুখ্য নয়। এখানে হামলার বার্তাটি খেয়াল করতে হবে।

বগুড়ার শিবগঞ্জের যে গ্রামে নতুন ধরনের এ হামলা হয়, সেখানে শিয়া-সুন্নিরা নাকি মিলেমিশেই ছিল। একই পরিবারে কেউ শিয়া, কেউ সুন্নি। এ নিয়ে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ নাকি কখনও ঘটেনি। যে শিয়া মুয়াজ্জিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিহত হলেন, নিরীহ সে মানুষটির জন্য সবাই নাকি কেঁদেছেন। মিডিয়ায় এটা এসেছে। আমাদের মিডিয়া এসব খবর দিতে ভালোবাসে। পাশাপাশি এ তথ্যেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কারা নাকি ওখানে এসে সমাবেশ করে শিয়াদের বিষয়ে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রেখে গেছেন। নৃশংস যে হামলা ঘটে গেল, তাতে ওইসব প্রচারণার প্রভাব তো থাকতেই পারে।

এক সময় আমরা দেখেছি, অপর মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আহমদিয়াদের ওপর নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ বলতে না দেওয়ার দাবি জোরের সঙ্গে তোলা হতো তখন। এ অবস্থায় সরকারকে তাদের মসজিদ ও বাসস্থানের নিরাপত্তা দিতে হয়েছে। কোনো কোনো দৈনিক পত্রিকাকে পর্যন্ত দেখা যেত এসব উস্কে দেওয়ার মতো কাজ করে যেতে। উপযুক্ত মিডিয়া কমিশন থাকলে ওটা থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করা হত নিশ্চয়ই?

এ পর্যন্ত কোনো সরকার অবশ্য এমনতরো দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেনি; যেমনটা ঘটেছে পাকিস্তানে। তবে এখানে কিন্তু আহমদিয়া মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে গেছে আগেই এবং সেটি ছিল আরও ভয়াবহ। ওই ঘটনার গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি হয়েছিল কী? না হয়ে থাকলে তাতেই বা কী বার্তা পেয়েছে ক্ষুদ্র ও শান্তিপ্রিয় এ মুসলিম সম্প্রদায়? তারা কি নিজেদের আরও গুটিয়ে নেওয়ার বার্তাই পায়নি?

এর পাশাপাশি টার্গেট করে হিন্দু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ঘটনা দেশে ঘটে গেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন এমনকি আওয়ামী লীগ শাসনামলে থেমে যাওয়ার বিষয়টিও এখানে আসতে পারে। বৌদ্ধ সম্প্রদায় এদেশে এক রকম স্বস্তি নিয়ে ছিল বলা যেতে পারে। দেশের একটি বিশেষ অঞ্চলে হলেও তাদের ওপরও নারকীয় হামলা ঘটে গেছে। তাতে 'সর্বদলীয় অংশগ্রহণ' বিস্মিত করেছে অনেককে। এর সঙ্গে খুব অন্যায়ভাবে জড়িয়ে ফেলা হয়েছিল রোহিঙ্গা ইস্যু।

পাশের দেশ মিয়ানমারে গণতন্ত্রে উত্তরণের একটা প্রক্রিয়া চলছে অবশ্য। সেটি এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওখানে রোহিঙ্গা প্রশ্ন কীভাবে 'অ্যাড্রেস' করা হবে, কে জানে। তবে সেখানকার গণতান্ত্রিক শক্তিরও আমাদের মতো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ, বিশেষত এর আগ্রাসী অংশটিকে তাঁবে রেখে চলাটা নিরাপদ মনে করে। তবে এ কথা ঠিক, ওখানে নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্ব বাড়লে আমাদের সুবিধা হবে রোহিঙ্গা প্রশ্নে তার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার।

আলোচনাটা করতেই হবে, কেননা রোহিঙ্গা সমস্যা এখানে জঙ্গি উত্থানে বাড়তি শক্তি জোগাচ্ছে। একটি চরম ডানপন্থী দল তাদের মধ্যে গিয়ে কাজ করেছিল বলে অনেক খবর বেরিয়েছিল একটা সময়। মুসলিম হিসেবে মিয়ানমারে নির্যাতিত ও বিতাড়িত হয়ে এখানে আসা রোহিঙ্গাদের একাংশ সাধারণের সঙ্গেও মিশে গেছে। 'বাংলাদেশি' হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধানত সুন্নি বেল্টে গেছে এসব ভাগ্যান্বেষী। তাদের কেউ কেউ ফিরে এসে কোথায় কী করছে, কে জানে।

মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নিপ্রধান দেশগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি পাঠানোর কী প্রভাব পড়েছে আমাদের সমাজে, কী ধরনের সাংস্কৃতিক রূপান্তর ঘটেছে এ সূত্রে, তা নিয়ে দেশে কোনো অর্থপূর্ণ গবেষণামূলক কাজ হয়েছে কি? কেউ জানলে জানাবেন। মনে হয়, প্রবাসী আয়ের স্ফীতি নিয়ে বেশি আনন্দিত থেকেছি আমরা। এর মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক কঠোরতা আমদানির দিকে বড় একটা দৃষ্টি দিইনি। ধর্মের একটা প্রভাব আমাদের সমাজে তো ছিলই। তার মধ্যে বহুত্ব ও উদারতা চর্চার ধারাও লক্ষণীয়ভাবে উপস্থিত ছিল। আমাদের সাহিত্য, বিশেষত সঙ্গীতে এর প্রতিফলন দেখতে পাই। কিন্তু কালক্রমে সেসব ধারা হয়ে পড়েছে দুর্বল।

শিবগঞ্জে যেখানে কয়েক দশক ধরে একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীতে শিয়া মতধারা বিস্তার লাভ করছিল, সেখানে কারা এসে তাদের বিষয়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিতেন– এ প্রশ্ন উঠেছে ওখানে একটি মসজিদে পাকিস্তানি স্টাইলে হামলা হয়ে গেল বলে। সারা দেশেই কিন্তু দশকের পর দশক ভিন্ন মত ও পথের মানুষের বিরুদ্ধে ধর্মের দোহাই দিয়ে বক্তব্য রাখা হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে সেসব শুনেছে। ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশময় তথা ঘরে ঘরে। এটাও কি সমাজের বহুত্ব ও উদারতার ধারা দুর্বল করেনি?

সমস্যা হল, এ ধারাটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে বা অন্তত বাধার সম্মুখীন হয়নি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যাতে সাম্প্রদায়িক মনোভাব বা কোনো ধরনের উগ্রবাদ না ছড়ায়, সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার পরপরই এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার একটা সুযোগ ছিল বলে অনেকে মনে করেন। কেবল পৃথক নয়, বরং নতুন ধরনের দেশ গড়ে তোলার একটা মনোভাব তখন ছিল বলেই দাবি করা হয়। যে কারণেই হোক, সেটি হয়নি। আর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তো ঘোষণা দিয়েই অন্যদিকে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

কী সামরিক, কী নির্বাচিত সরকারের আমল– কখনও এ ধারা বিপরীতমুখী করার প্রয়াস নেওয়া হয়নি। নব্বইয়ের পর গণতন্ত্রে উত্তরণের ফলে যারা ক্ষমতায় আসেন, তারা আবার ছিলেন পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের সুফলভোগী। তাদের আমলেও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে প্রতিবেশি দেশের অপঘটনা ইস্যু করে। সংখ্যাগুরু মুসলিম সেটা কীভাবে নিয়েছিল, জানা যায় না। তবে রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য আওয়ামী লীগ সংখ্যাগুরুর মনস্তত্ত্ব বোঝার কৌশল নিয়েছিল। ১৯৯৬এর নির্বাচনী প্রচারণায় এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়।

আওয়ামী লীগ সরকার যে 'নারী উন্নয়ন নীতি'র মতো কাজে হাত দিয়ে নতুন ধারায় কিছু করতে চায়নি, তা অবশ্য বলা যাবে না। কিন্তু ফলটা পেয়েছিল হাতেনাতে। দেশে ততদিনে পুঁজিবাদী রূপান্তর ঘটে গেলেও সমাজ ও তার মনস্তত্ত্ব হয়ে পড়ে সাধারণভাবে প্রতিক্রিয়াশীল। সেটা শুধু নারীবরোধী নয়, সব ধরনের সংখ্যালঘুর বিরোধী। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে হিন্দুরা সেটা তখনই অনুভব করতে শুরু করেছিল নতুনভাবে। ২০০১এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের বিপুল বিজয়ের পর এর অভিঘাত তীব্রভাবেই এসে পড়ে তাদের ওপর।

এ কালপর্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেছে সংখ্যাগুরুর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া নিয়ে, দলবাজিতে পরস্পরকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে এবং স্বভাবতই সুশাসন নিয়ে নয়। অর্থনীতিতে একটা স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির মধ্যেও এ সময়ে আমরা দেখি শাসন পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি, বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় আর মত ও পথের মানুষের মধ্যে হিংসা ও রেষারেষি বেড়ে যেতে। সুশাসনে ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষে মানুষে সদ্ভাব ধরে রাখতেও ব্যর্থ হন তারা।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উত্থানে। টুইন টাওয়ারে হামলাসহ বেশ কিছু জঙ্গি কর্মকাণ্ডে বিচলিত হয়ে পড়ে পশ্চিমা শক্তিগুলো। এর কারণ উপলব্ধি ও তা 'অ্যাড্রেস' করার বদলে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তারা জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে। মিডিয়াসহ নিজেদের প্রচারযন্ত্র এতে জড়িয়ে ফেলার মতো কাজও তারা করে ফেলেন নির্বিকারভাবে। সম্পদশালী মুসলিমপ্রধান দেশগুলোয় তাদের দ্বিমুখী নীতিও থাকে অব্যাহত। এটা সর্বশেষ আমরা দেখি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেনে।

কিছুটা দেরিতে সিরীয় যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে রাশিয়াও। ওখানে আইএস নামক সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানে বিবেকবান বিশ্ব বিচলিত। আল কায়দার চেয়েও তারা সহিংস এবং চিন্তাধারার দিক দিয়ে একরৈখিক। সিরিয়া ও ইরাকে পাল্টা হামলার শিকার হয়ে তারা এখন রোষাগ্নি নিক্ষেপ করছে প্যারিসে। বাংলাদেশের মতো দেশেও নতুন ধরনের নাশকতায় নাম আসছে আইএস কিংবা তার সহযোগীদের। এমন তত্ত্বও রয়েছে যে, আল কায়দা ও আইএসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে এখানকার জঙ্গিবাদীদের সমর্থন লাভের।

বাংলাদেশে আইএস আছে কী নেই, এ প্রশ্ন তুলে আমরা আসলে মূল প্রশ্ন অবহেলা করছি বলে মনে হচ্ছে। সেটা হল, এখানে জনগণের একটি অংশের মধ্যে জঙ্গিবাদী চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটেছে। একাধিক প্রক্রিয়াতেই ঘটেছে এটা, দীর্ঘদিনে। দশকের পর দশক এ বিষয় কিছুটা উদাসীন ছিলেন এমনকি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। শহুরে শিক্ষিত পেশাজীবী সম্প্রদায় ব্যস্ত ছিল নিজেদের ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়ায়। আর রাজনৈতিক কোনো দলই এটা চ্যালেঞ্জ করেনি। এরই মধ্যে আবার মুখ থুবড়ে পড়েছে নতুন সমাজ গড়ার সংগ্রাম। আমাদের দেশে এটি ঘটেছে আরও শোচনীয়ভাবে।

সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদ নাকি অনেক ক্ষেত্রে শ্রেণিসংগ্রামের লাইন ধরে এগোয়। বাংলাদেশে আমরা যখন 'মৌলবাদের অর্থনীতি' নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি, তখন বিশেষত উন্নয়নবঞ্চিত অঞ্চলগুলোয় রক্ষণশীলতা ও উগ্রবাদে ঝোঁকার প্রবণতার দিকে দৃষ্টি দেওয়াও জরুরি মনে হচ্ছে। রাজধানীর ব্যাংকপাড়ায় এসে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন, সমাজে তাদের সিংহভাগের অবস্থান কিন্তু প্রান্তিক। এদের দাবিগুলোও বলে দেয়, বাংলাদেশে এতদিন ধরে গড়ে ওঠা পুঁজিবাদী সমাজকে তারা কত নেতিবাচকভাবে দেখেন।

এ অবস্থায় সহিংস ঘটনাগুলো ঠিক কাদের ভেতর থেকে ঘটছে, সেটা অবশ্য চট করে বলে দেওয়া যাবে না। সরকার ও তার এজেন্সিগুলোর মধ্যে ঝটপট বলে দেওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। পশ্চিমাদের সঙ্গে এ নিয়ে মতভেদ করতেও দেখা যাচ্ছে তাদের। এক ধরনের ভীতিও রয়েছে যে, এ সুযোগে না পশ্চিমা কোনো অপশক্তি দেশে ঢুকে পড়ে! সেটি না ঘটলেও যেসব ঘটে চলেছে, প্রশাসনকে তা মোকাবলায় ব্যর্থ দেখা যাচ্ছে। সরকারকে মনে হচ্ছে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এদিকে প্রধান দুই দলে এটা মোকাবেলায় নেই কোনো ঐকমত্য।

রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে অপসৃয়মাণ শক্তি হিসেবে জামায়াতের লোকজন এসব করছে কিনা, সে প্রশ্ন রয়েছে। তারা সুন্নিভিত্তিক ও আগ্রাসী চিন্তার বটে। তবে জামায়াতের চেয়েও সহিংস গোষ্ঠীর উত্থান দেশে ঘটেছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এখনও কম নেই; কিন্তু তাদের মধ্যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা। প্রশাসনের ওপরও আঘাত হানছে এরা। বিচারেও তারা জব্দ হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, ধর্মের নাম করে যত ভয়ঙ্কর ঘটনাই ঘটাক, সমাজে তার দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।

তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিপর্বে হামলা কিংবা নামাজের সময় শিয়া মসজিদে গুলিবর্ষণের মতো ঘটনার পর এদেশের সুন্নি মুসলিমদের ভেতর থেকে একটি বড় প্রতিবাদ সমাবেশ কিন্তু হল না। বিপন্ন হিন্দু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা বৌদ্ধের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারিনি এর আগে। এদেশে যারা এখনও মানুষে মানুষে বিভক্তি, বিদ্বেষ ও নিশ্চিহ্নকরণের বিরুদ্ধে বহুত্ব ও উদারতার পথে রয়েছে, তাদের ডাক দিয়ে জড়ো করার মতো একটি রাজনৈতিক দলও কি নেই? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবশ্য দাবি করে যাচ্ছে, তারা 'অসাম্প্রদায়িকতা'র পথে রয়েছে এখনও।

রাষ্ট্রকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' করার কথাটা তারা আগেও স্পষ্ট করে বলতেন না– সংবিধানে যেটাই লেখা হোক। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সব মানুষের অধিকার যেভাবে নিশ্চিত করে বা করতে চায়, সেটা এখানে আর হবে বলে প্রত্যয় জন্মাচ্ছে না। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে মুসলমানের মধ্যেও ক্ষুদ্র ও দুর্বল সম্প্রদায়কে চাপে ফেলে কাবু করতে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। এর পুরোটাই 'বিদেশি' বলে মনে হচ্ছে না। এতে স্বদেশি উপাদান আলবৎ রয়েছে।

আইএসের মতো গোষ্ঠী বাংলাদেশকে টার্গেট করে থাকলে বুঝতে হবে, এদেশে অন্তত একটি জনগোষ্ঠীর জঙ্গিবাদী চিন্তাভাবনা বা রূপান্তর সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছে এরই মধ্যে।