বাঙালি-বিরোধী জাতিবৈরিতা

শুভাশীষ দাশ
Published : 15 July 2011, 09:35 AM
Updated : 15 July 2011, 09:35 AM

১৯৭১ সালে মাত্র নয় মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একটা সুপরিকল্পিত গণহত্যার পেছনে জাতিবৈরিতার কথাটুকু পাকিস্তান কখনো স্বীকার করতে চায় না। পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের আত্মজীবনীতে একাত্তরে হত বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা ছাব্বিশ হাজার বা তার চেয়ে কম বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে শর্মিলা বসু গবেষণার কল্পজগৎ তৈরি করে জাতিবৈরিতার দায়টুকু উল্টো চাপিয়ে দেন ১৯৭১ এর আশপাশের সময়কালের পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ঘাড়ে। পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে বর্বর, হিংস্র হায়েনা, রক্তলোলুপ, দস্যু বলে ডেকে তাদের প্রতি রেসিস্ট আচরণ করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামীদের মুক্তি বা মিসক্রিয়েন্টের বেশি কোনো গালিগালাজ পাকিস্তানি সেনারা করতো না বলে তাঁর দাবী। শর্মিলা বসুদের এসব প্রচারণা এড়িয়ে আসল ইতিহাসটুকু জেনে নেয়ার দায় আমাদের।

এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে ত্রিশ লক্ষ বনাম তিন লক্ষের দ্বন্দ্ব। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে একাত্তরের গণহত্যায় বাংলাদেশে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিদেশের পত্রিকাগুলোতে নানা রকম তথ্য আসতে থাকে। তবে কোনো সংখ্যাই দশ লাখের কম ছিল না। রাশিয়ান পত্রিকা 'প্রাভদা'য় (১৯৭২ সালের তেসরা জানুয়ারি) প্রথম সরেজমিনে নানা হিসাবপত্র করে একটা গ্রহণযোগ্য সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। সেখানে ছাপানো হয়- এই গণহত্যায় হত হয়েছেন ত্রিশ লক্ষ বাঙালি। শেখ মুজিব স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সনে; হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য তাঁর অজানা ছিল না। তিরানব্বই হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের (কিছু বেসামরিক পাকিস্তানি সহ) সাথে সাতশ শান্তি কমিটির পঞ্চাশ হাজার রাজাকার ও বিহারিরা দুইশ সাতষট্টি দিনে বাংলাদেশে গণহত্যার জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল। বাইরের পত্রিকাগুলো নানা রিপোর্টে প্রকাশ করেছিল- যুদ্ধের প্রথম ত্রিশ দিনেই পূর্ব পাকিস্তানে হত হয়েছেন তিন লক্ষের বেশি বাঙালি। জাতিসংঘের রিপোর্টে এসেছিল- পূর্ব পাকিস্তানের ৭০% গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছে পাকিস্তানি হানাদার ও শান্তি বাহিনীর লোকজন। পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে বাঁচতে প্রায় এক কোটির মতো লোক সীমানা পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান তাই বিদেশী সাংবাদিকের সাথে গণহত্যায় নিহতদের সংখ্যা বলার ক্ষেত্রে যৌক্তিকতার বিচারে প্রাভদার সংখ্যাটি ব্যবহার করেন। আর এটাও বোঝা প্রয়োজন, ত্রিশ লক্ষ কমে এসে তিন লক্ষ হলেও যুদ্ধাপরাধ কোনো অংশে লঘু হয় না।

পাকিস্তানিদের উন্মত্ত হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা অনেক বইতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রকাশিত অজস্র বই বাদ দিয়ে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিদেশে প্রকাশিত বইগুলোতে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানের জাতিবৈরী আচরণের তথ্য একত্রে করলে অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

অমিতা মালিকের দা ইয়ার অফ দা ভালচার গ্রন্থে পাকিস্তানিদের অমানুষিক নির্যাতনের নানা উদাহরণ দেয়া আছে। পাকিস্তানিদের এই অমানবিক আচরণের কারণ জানতে চেয়ে কিছু প্রশ্ন করেছেন বইয়ের প্রায় শেষ পর্যায়ে।

মগজ-ধোলাই করার মাধ্যমে কি পাকিস্তানি সেনাদের সমস্ত মানবিক বোধবুদ্ধি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে? চীনাদের হান্নানাইজেশনের মতো করে কি তারা জাতিগত শুদ্ধি চালাতে পূর্ব পাকিস্তানে গণধর্ষণের বন্যা বইয়ে দিয়েছে? নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কারণেই কি তারা তাদের অবদমিত সব বাসনা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে? হিটলার ইহুদিদের প্রতি যেরকম জাতিবৈরিতা দেখিয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তানিরা কি বাঙালিদের থেকে নিজেদের উঁচুজাতের মনে করে এই কাজে মেতেছে? টিক্কা খান কি একারণেই বাঙালিদের মশা বলে আখ্যায়িত করেন? (মালিক ১৯৭২:১৫৭)

হিটলার যেভাবে ইহুদি নিধনে নেমেছিল, ইয়াহিয়া বাঙালিদেরকে মশা মনে করে পিষে মারতে চেয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। নিয়াজি বাঙালিদের অভিহিত করতেন চিকেন বা মাঙ্কি হিসেবে। জাতিবৈরী এইসব বিশেষণ হরদমই প্রয়োগ করেছেন পাকিস্তানি সেনা বা জেনারেলরা। নিয়াজির এইসব বর্ণবাদী নেম কলিং-এর কথা বর্ণিত আছে আর. জে. রামেলের ডেথ বাই গভর্নমেন্ট বইতে। রামেল তাঁর বইতে বিভিন্ন গণহত্যায় হতাহতদের সংখ্যা নির্ধারণে একটি গাণিতিক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৭১ সালের গণহত্যা নিয়ে তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে এইরকম কিছু রেফারেন্সের উল্লেখ করে (হতাহতদের সংখ্যা তিন লক্ষ থেকে শুরু করে ত্রিশ লক্ষের কিছু কিছু তালিকা প্রকাশ করে) পনের লক্ষের প্রতি তাঁর গাণিতিক সিদ্ধান্তের কথা বলতে চেষ্টা করেছেন। যদিও রামেল স্বীকার করেছেন- বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও তাঁর দেয়া রেফারেন্সের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহমুক্ত নন। বাংলা ভাষায় রচিত বইগুলোর তথ্য তিনি তাঁর গাণিতিক হিসেবে ব্যবহার করেননি। পরবর্তীতে নতুন নতুন গণকবরের সন্ধান পাওয়ার তথ্য রামেল সংগ্রহ করেছেন বলে তাঁর বই বা গবেষণায় কোনো উল্লেখ নেই। ফলে তাঁর বইতে প্রকাশিত পনের লক্ষের হিসাব গ্রহণযোগ্য বলে একেবারেই মানা যায় না। তবে রামেল তাঁর বইতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কিছু কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। পাকিস্তানিরা যে বাঙালিদের প্রতি জাতিবৈরী আচরণ করেছে- এই তথ্যও বইতে যোগ করেছেন।

পাঞ্জাবি সেনারা হত্যাকাণ্ডের সময় বাঙালিদের মানুষ বলে গণ্য করতো না। ভেবে নিতো সাব-হিউম্যান বা অবমানব বলে। তাই তাদের ভাগ্যে জুটতো অমানুষিক নির্যাতন আর মৃত্যু। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ডাকে বানর বা মুরগি বলে। নিয়াজি বলেন, 'এরা নিচু এলাকায় থাকা নিচু জাতের সব লোক'। নাৎসিদের কবলে ইহুদিদের যে অবস্থা হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদেরকেও সেইরকম কীটপতঙ্গ ভেবে মেরে ফেলার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মুসলমানেরা যে রক্ষা পাচ্ছে তা কিন্তু নয়, তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে পাকিস্তানি সেনাদের মর্জির ওপর। সন্দেহের কিছু ঘটলেই তাদের ভাগ্যে মৃত্যু। পাকিস্তানি সেনাদেরকে বাঙালি হত্যার বৈধতা দেয়া হয়েছে। ড্যান কোজিন নামের এক সাংবাদিকের বরাতে আমরা এক পাকিস্তানি সৈন্যের আস্ফালনের কথা জানতে পারি- 'আমরা যে কাউকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখি। এইজন্য আমাদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হবে না'। ক্ষমতার কি অপরিসীম ঔদ্ধত্য! (রামেল ১৯৯৬: ৩৩৫)

রামেল ও নারায়নের তথ্য অনুসারে বোঝা যায়, বাংলাদেশের মানুষদের নিচু অঞ্চলের লোক, নিচু জাতের লোক, বেঁটে, কালো এইসব মনে করে পাকিস্তানিরা তাচ্ছিল্য করতো। হিন্দুদের সাথে থেকে থেকে এই অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে হিন্দুয়ানি ঢুকে গেছে মনে করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মুসলমানদের সাচ্চা মুসলমান বলে গণ্য করতো না।

পশ্চিম পাকিস্তান নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করে আসছে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে ছিল সমস্ত ক্ষমতা। পূর্ব পাকিস্তানের জনতাদের গণ্য করা হতো কমবুদ্ধির, খাটো, কালো মানুষ হিসেবে। হিন্দুদের সাথে মেশার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের সাচ্চা মুসলমান বলে মনে করা হতো না। জেন্ডারসাইডের তথ্য অনুসারে, হিন্দু সংখ্যালঘুদের সাথে সাথে বাঙালি মুসলমানদের প্রতি পাকিস্তানিরা জাতিবৈরিতা বোধ করতো বলে গণহত্যায় নেমে পড়া তাদের জন্য অসম্ভব হয়নি। (নারায়ন ২০০৯: ২১২)

পাকিস্তান তার সৈন্য ও সাধারণ জনতাকে বাঙালি জাতির প্রতি হীন মনোভাব তৈরি করাতে এক ধরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল। ফলে পুবে ঘটে যাওয়া বিশাল গণহত্যা পশ্চিম পাকিস্তানি জনগণের ওপর কোনোপ্রকার প্রভাব ফেলেনি। অশোক কাপুর তাঁর পাকিস্তান ইন ক্রাইসিস বইতে ইয়াহিয়া আমলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছক আকারে দিয়েছেন। সেখানে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের রেইসিস্ট আচরণ একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে। বাঙালিদের ক্ষেত্রে বিরোধের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতি বিদ্বেষ।

(কাপুর ১৯৯১: ৮৩)

পাকিস্তানিদের 'অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজম' সম্পর্কিত তথ্য আছে আরো কয়েকটি বইতে। প্রাসঙ্গিক দুটি রেফারেন্স নিচে দেয়া হলো। অ্যান্থনি মাসক্যারেনহাসের বরাত দিয়ে জানা যায় পাকিস্তানি সৈন্যদের অভিপ্রায় ছিল- গণহত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচার ইত্যাদির মাধ্যমে এথনিক ক্লিনজিং করা।

পাকিস্তানি সৈন্যদের একটা উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুদের সাথে থেকে থেকে হিন্দুয়ানিপ্রাপ্ত মুসলমান বাঙালিদের রক্তশোধন। তাদের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের জনতা মানেই হয় অবিশ্বাসী না হয় হিন্দু। স্বায়ত্তশাসনের দাবী করায় বাঙালিদের কাছ থেকে একটা সশস্ত্র বিপ্লবের আশংকা তারা করছিল। যুদ্ধের শুরুর দিকে একজন পাঞ্জাবি সৈন্যের মুখ থেকে শোনা গেছে- 'আল্লাহর নামে একটা অখণ্ড পাকিস্তানের জন্য আমরা যুদ্ধে নেমেছি'। অ্যান্থনি মাসক্যারেনহাস কুমিল্লার ১৬ ডিভিশন হেড-কোয়ার্টারে থাকাকালীন সময় বারবার একটা কথা শুনতে পেয়েছেন- 'আমরা পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবেলার প্রয়োজনে বিশ লক্ষ লোককে মেরে ফেলবো। এমনকি দরকার হলে পূর্ব পাকিস্তানকে আরো ত্রিশ বছর কলোনি হিসেবে ব্যবহার করবো'। পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খান থেকে শুরু করে পাকিস্তানিদের আচরণে অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজমের আভাস মেলে। (গার্লাক ২০১০: ১৩০)

শুরুর দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের খায়েশ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর হিন্দুদের প্রভাব কমানো। বাঙালিদের সাংস্কৃতিক আইকন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচারের ওপর পাকিস্তান নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ১৯৬০ সালের দিকে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাধিক্য লোকের ধর্ম একই ছিল। কিন্তু তাও জাত্যাভিমান ও ইতিহাসের জ্যাঠামি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নাসিকতা এই দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করে। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খান দাবী করেন- পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ভারতীয়দের বংশধর। তিনি তাঁর ধারণা থেকে একবিন্দু না সরে আরো জানান- 'এই অঞ্চলের লোকের ভাষা ও সংস্কৃতিতে হিন্দুদের প্রবল প্রভাব। এদের সমস্ত কাজকারবারে নিচুজাতের লোকজনের উৎকটতা। এদের মনস্তত্ত্ব জটিল ও এরা প্রবল রকমের কলহপরায়ণ। এদের এইসব আচরণের কারণ তাদের ঐতিহাসিক পশ্চাদপদতা'। (কেইমার ২০০৭: ৫৭৩)

ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করানোর পেছনে নিয়াজির প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল। এই জঘন্যতম লোকটির বিকৃত মানসিকতার কথা বিস্তারিত আছে হাসান আব্বাসের পাকিস্তান'স ড্রিফট টু এক্সট্রিমিজম: আল্লাহ, দা আর্মি অ্যান্ড আমেরিকা'স ওয়ার অ্যান্ড টেরর বইটিতে। একটা জায়গার কথা উল্লেখ করি। সেটুকু পড়েই নিয়াজির পরিকল্পনা কিছুটা আন্দাজ করা যাবে।

নিয়াজি আগে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ভারতীয় সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী দখল করার আগে তার মৃতদেহের ওপর দিয়ে তাদের যেতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা আর আত্মসমর্পণের আগে বহু বাঙালি মেয়েদের জেহাদের নামে পাকিস্তানিদের ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। নিয়াজি এই ধর্ষণকে স্বাভাবিক বলে মনে করেছেন। তাঁর এই বক্তব্য সেইসময় শোনা গেছে- কেউ শুধু যুদ্ধ করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে আসবে আর বীর্যস্খলনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে দৌঁড়াবে এটা তো হতে পারে না। (আব্বাস ২০০৫: ৬৬)

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যারাকে পর্ণো ছবির চালান সাপ্লাই দিয়ে সৈন্যদের তাতিয়ে রাখানোর তথ্য আছে সুসান ব্রাউনমিলারের অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল বইতে। এর পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করে ঘটনাটির উল্লেখ আছে শিলা জেফ্রির দা ইন্ডাসস্ট্রিয়াল ভ্যাজাইনা বইতে। পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে ধর্ষকাম পৌরুষ মানসিকতার উন্মেষ ঘটাতে এইসব বিকৃত পর্ণো ছবি ট্রেইনিং দেয়া হতো।

মেয়েদের কাছ থেকে নিজেদের পার্থক্য করার সাথে সাথে নিজের পৌরুষত্ব তাতিয়ে তুলতে সামরিক বাহিনীতে পর্ণোগ্রাফি ব্যবহার করা হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা যখন বাংলাদেশ দখল করতে গেছে, তখন সামরিক প্রশিক্ষণে সেনাদের উত্তেজনা বৃদ্ধিতে পর্ণোগ্রাফি ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রাউনমিলারের রিপোর্টে (১৯৭৫) একজন ভারতীয় লেখকের বরাতে জানা গেছে- সেনাদের ঘাঁটিগুলোতে পর্ণো ছবি দেখানো হতো তাদের মধ্যের উত্তেজনা বাড়াতে। এইসব তাতিয়ে থাকা সেনারা হাজারে হাজারে বাংলাদেশের মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। রুথ সেইফার্টের মতে, সামরিক বাহিনী যুদ্ধের প্রয়োজনে তাদের সেনাদের পৌরুষত্ব বাড়িয়ে তুলতে চায়। পুরুষ সেনারা এর মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই বোধের অধিকারী হয় আর যুদ্ধকালীন সময়ে সেটা কাজে লাগায়। রুথ এটাকে বলছেন পশ্চিমা সমাজে সমরকালীন পৌরুষত্ব বাড়ানোর প্রক্রিয়া। (জেফ্রি ২০০৯: ১০৯)

পাকিস্তানিরা চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মনোবলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, উলঙ্গ করে গ্রাম প্রদক্ষিণ, পরিবারের লোকজনের সামনে মেয়েদের বলাৎকার থেকে শুরু করে শিউরে ওঠার মতো আরো নানা কিছু করেছে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা। ভারতীয় মেজর লক্ষণ সিং তাঁর ইন্ডিয়ান সোর্ড স্ট্রাইকস্‌ ইন ইস্ট পাকিস্তান বইতে পাকিস্তানি তরুণ সৈন্যদের বিকৃত ধর্ষকাম মানসিকতার কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সৈন্যদের দুষ্কর্মের নমুনা পাই এক তরুণ সৈন্যের জব্দকৃত ডায়েরি থেকে থেকে। সে তিনজন রাজাকারকে একজন বাঙালি মেয়েকে উলঙ্গ করে তার শাশুড়ির সামনে ধর্ষণ করার নির্দেশ দেয়। এইসব কাজ দেখে মনে হয় এগুলো তাদের মানসিক বিকার থেকে করা কাজ। নির্মম অত্যাচার, ধর্ষণ থেকে শুরু করে যাবতীয় অমানবিক অপকর্ম করে তারা নিজেদের অমানুষ হিসেবেই পরিচিত করিয়েছে। (সিং ১৯৭৯: ৪৪)

পাকিস্তানিরা তাদের কৃতকর্মের জন্য কখনো লজ্জাবোধ করেনি। জঘন্যতম অমানবিক ঘটনা ঘটানোর পরেও হানাদার বাহিনীর এক সেনার আস্ফালন নিয়ে একটি ঘটনার বিবরণ আছে অমিতা মালিকের বইতে।

বাংলাদেশের মেয়েদের ভাগ্যে মৃত্যু জোটেনি, জুটেছে তার চেয়েও ভয়াবহ রকমের সব পাশবিক নির্যাতন। 'হাম যা রাহে হ্যায়, লেকিন বীজ ছোড় কার যা রাহে হ্যায়'- পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন নিয়াজির অধীনে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিল সেই সময় এক পাকিস্তানি সৈন্য ভিড় করা বাঙালিদের উদ্দেশ্য এইসব বলছিল। (মালিক ১৯৭২:১৫৪)

হাসান আব্বাস তাঁর বইতে বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের জাতিবৈরী আচরণকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলতে চেয়েছেন- পাকিস্তানিরা কি আদৌ বাংলাভাষী এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে মানুষ মনে করতো, নাকি হিটলারীয় উন্নাসিকতায় ভেবে নিতো অবমানব হিসেবে?

নতুন কমান্ডার লিউটেনেন্ট জেনারেল টিক্কা খানের অধীনে পূর্ব পাকিস্তান পরিণত হয়েছিল নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, বর্বরতা আর ধর্ষণের রাজত্ব। পাকিস্তানের জন্য এটা ছিল মারাত্মক লজ্জার। এই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে পশুর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা মানুষ মনে না করে সাবজেক্ট মানুষ হিসেবে মনে করতো। সাবজেক্ট মানুষ হচ্ছে (পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদি সংস্কৃতি অনুসারে) সাব-হিউম্যান বা অবমানব। এই গোত্রের মানুষদের সাম্রাজ্যবাদিদের কথা অনুসারে কাজ করতে হয়, অন্যথায় তাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না। পূর্ব পাকিস্তানে এই ট্র্যাজেডিই নেমে এসেছিল। (আব্বাস ২০০৫: ৬৬)

দেখা যাচ্ছে- পাকিস্তানেরা সামরিক বাহিনী বাঙালিদের শায়েস্তা করার জন্য এদেরকে 'সাবজেক্ট পিউপিল' বলে গণ্য করতো। অত্যাচার, নিপীড়ণের মাধ্যমে এদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। জাতিগত ঘৃণা কতোটা ভয়ানক হলে (এবং স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেইজন্য) আত্মসমর্পণের দুই দিন আগে রাজাকার, আলবদরদের সহায়তায় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল এই পাকিস্তানি সেনারা- এসব ভাবলে অবাক হতে হয়।

পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের আত্মজীবনীতে জাতিবৈরিতার ভাষ্যটুকু ঢেকেঢুকে রাখেননি। জেনারেল মিঠা, জেনারেল গুল, আইয়ুব খান প্রত্যেকের মেমোয়ারে এই ভাষ্য পাওয়া যায়। আইয়ুব খানের আত্মজীবনী প্রভু নই বন্ধু পড়লে এর মধ্যকার 'অ্যান্টি বেঙ্গলি রেইসিজম' এর মাত্রা বোঝা যায়। আইয়ুব খান ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে দুই বছরের জন্য জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। বাংলাদেশিদের কথা বলতে গিয়ে এই অঞ্চলের লোকজনের অশিক্ষা, অপারগতা, অক্ষমতা নিয়ে তিনি বারবার খেদ প্রকাশ করেছেন। বাঙ্গালিরা খাঁটি পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে যোগ্যতায় পারে না দেখে পশ্চিম পাকিস্তানিদেরকে নিজেদের দুরবস্থার জন্য দায়ী করে বলে তিনি বইতে লিখেছেন।

এখানকার নয়া মধ্যবিত্ত সমাজ পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি এক ধরণের বিরূপ ধারণা পোষণ করে। তারা কর্মক্ষেত্রের নানা জায়গায় পশ্চিমাদের কাছ থেকে পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ করে। এখানকার আঞ্চলিক সরকার নানা চাপের মুখে আছে। এইসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মতো দক্ষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করার কোনো উদ্যোগ তারা নেয় না। এইজন্য এই এলাকার তরুণদের শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতায় উন্নত হতে হবে। কিন্তু এইসবের জন্য যে মানসিক প্রস্তুতি, শ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন সেটাতে তাদের আগ্রহ নাই। সহজ পথটা হচ্ছে অন্যকে দোষারোপ করা- এরা সেটাই করছে। তাদের যাবতীয় ব্যর্থতার দায় চাপাতে চাইছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের ওপর। … এই অঞ্চলে আছে চার কোটি মুসলমান, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মুসলমান জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। অথচ দেশের কাজে লাগবে এইরকম একটা মানুষ এখানে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। … আমি মাঝে মাঝে অবাক হই নেতৃত্ব দেয়ার মতো মানুষ এই অঞ্চলে একজনও নেই দেখে। (খান ১৯৬৯: ২২-২৫)

এবার সাম্প্রতিক প্রসঙ্গে আসি। পাকিস্তানি পরমাণু বিজ্ঞানী পারভেজ হুডবয় পাকিস্তানের বিজ্ঞানী কাদের খানের ন্যক্কারজনক বক্তব্য "If we had had nuclear capability before 1971, we would not have lost half of our country – present-day Bangladesh – after disgraceful defeat." এর প্রতিবাদে একটা লেখা প্রকাশ করেন দা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে। লেখাটির অনুবাদ ছাপানো হয় প্রথম আলোতে। অনুবাদটি করেন ফারুক ওয়াসিফ।

পারভেজ হুডবয় তাঁর লেখায় লিখেছেন-

Let's revisit 1971. Those of us who grew up in those times know in our hearts that East and West Pakistan were one country but never one nation. Young people today cannot imagine the rampant anti-Bengali racism among West Pakistanis then. With great shame, I must admit that as a thoughtless young boy I too felt embarrassed about small and dark people being among our compatriots. Victims of a delusion, we thought that good Muslims and Pakistanis were tall, fair, and spoke chaste Urdu. Some schoolmates would laugh at the strange sounding Bengali news broadcasts from Radio Pakistan.

হুডবয়ের এইটুকু বক্তব্যের মধ্যে পাকিস্তানিদের মধ্যে বাঙালিদের প্রতি জাতিবৈরিতার প্রণোদণা ঢুকিয়ে দেবার একটা চিত্র পাওয়া যায়। নিজেদের উচ্চগোত্রের, শ্বেতবর্ণের মনে করার পাশাপাশি বাঙালিদেরকে খাটো ও কৃষ্ণবর্ণের মনে করার চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দেয়া হতো অল্প বয়সেই। যেকোনো ধরণের জাতিবৈরিতার মধ্যে এই ধরণের চর্চার দেখা মেলে। হুডবয় যেভাবে স্পষ্ট করে 'অ্যান্টি-বেঙ্গলি রেইসিজম' ব্যবহার করেছেন- পাকিস্তানিদের কাছ থেকে সেটার দেখা প্রায় মিলেই না। পাকিস্তান-বাংলাদেশ পুনর্মিত্রতার ঝাণ্ডাধারি হামিদ মির এই তিনটা শব্দ একসাথে কোথাও ব্যবহার করেছেন বলে মনে মনে হয় না।

ফারুক ওয়াসিফের অনুবাদ খারাপ কি ভালো সেটা বিচারের ভার পাঠকের। তবে তিনি এই অনুবাদে জাতিবৈরিতার মতো কড়া শব্দ ব্যবহার করেন নাই। করেছেন 'বিদ্বেষ' এর মতো তুলনামূলকভাবে কোমল শব্দ। অনুবাদকৃত অংশটুকু পড়ি-

চলুন, আবার ১৯৭১ সাল ঘুরে আসি। আমরা যারা সে সময়টায় বড় হয়েছি, তারা অন্তর থেকে জানি, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এক দেশ হলেও কখনোই এক জাতি ছিল না। আজকের তরুণ পাকিস্তানিরা কল্পনাও করতে পারবে না সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানিদের মনে কী পরিমাণ বাঙালি-বিদ্বে কিলবিল করত। আমি শরমিন্দা হয়ে স্বীকার করি, আমার মতো সামান্য এক বালকও আমাদের চেয়ে খাটো ও কালোমতো বাঙালিদের স্বজাতিভুক্ত ভাবতে বিরক্ত হতাম। আমরা ছিলাম এক বদ খোয়াবের শিকার। আমরা ভাবতাম, লম্বা, ফরসা আর চোস্ত উর্দু বলিয়েরাই সাচ্চা মুসলমান আর ভালো পাকিস্তানি। রেডিও পাকিস্তানের অদ্ভুত ভাষায় উচ্চারিত বাংলা খবর শুনে স্কুলের বন্ধুরা হাসাহাসি করত।

এই অনুবাদ নিয়ে আর বিশ্লেষণে না যাই। একটু খুঁটিয়ে পড়লেই হুডবয়ের ইংরেজির চড়া আওয়াজটা যে ফারুক ওয়াসিফের কোমল অনুবাদে ঠিকঠাক আসে নাই সেটা বোঝা যাবে।

বিদ্বেষ শব্দটা আমরা যারা ১৯৭১ সালে সংঘটিত ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা ও ধর্ষণের জন্য রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তার জনগণকে এখনো ক্ষমা করিনি তাদের জন্য কিছুটা খাটে। ত্রিশ লক্ষ পাকিস্তানিদের মেরে-কেটে সাফ করে এথনিক ক্লিনজিং করার ইতিহাস আমাদের নেই। ফলে বিদ্বেষ শব্দটা আমাদের জন্য মোটামুটি ঠিক শোনালেও রেইসিজম বা জাতিবৈরিতার মতো ভারি অপরাধ আমাদের ঘাড়ে পড়ে না। অন্যদিকে পাকিস্তানের মজ্জার মধ্যে গেড়ে বসে আছে Anti-Bengali Racism বা বাঙালিদের প্রতি জাতিবৈরিতা। বেটে, কালো ও নিম্ন জাতিসত্ত্বার মানুষ মনে করে ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে তারা গণহত্যায় হত করেছে। পাকিস্তানিরা যে এখনো বাংলাদেশের মানুষের প্রতি জাতিবৈরী আচরণ থেকে মুক্ত নয় তার প্রমাণ সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া গগনের ঘটনা।

শর্মিলা বসু জাতিবৈরিতার যে দায় আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন সেটা উদ্দেশ্যমূলক। শোষক-শোষিতের ইতিহাস সম্পর্কে কোনোরকমের ধারণা না রেখেই শর্মিলা বসু শোষকদের পক্ষে কলম চালাচ্ছেন। বাঙালিদের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এইরকম প্রোপাগান্ডা চালানোর বিপক্ষে আমাদেরকেই সোচ্চার হতে হবে।

শুভাশীষ দাশ: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

সূত্র:
১। Malik, Amita, The Year of the Vulture, Orient Longman, New Delhi, 1972
২। Rummel, R.J., Death by Government, Transaction Publishers, USA, 1996
৩। Narayan, Anjana, Purkayastha, Bandana, Living our religions: Hindu and Muslim South Asian American women narrate their Experience, Kumarian Press, USA, 2009
৪। Kapur, Ashok, Pakistan in Crisis, Routledge, London, 1991
৫। Gerlach , Christian, Extremely Violent Societies: Mass Violence in the Twentieth-Century World, Cambridge University Press, USA, 2010
৬। Kiernan, Ben, Blood and Soil: A World History of Genocide and Extermination from Sparta to Darfur, Yale University Press, USA, 2007
৭। Abbas, Hassan, Pakistan's Drift to Extremism: Allah, the Army and America's War and Terror, ME Sharpe, NY, 2005
৮। Jeffreys, Sheila, The Industrial Vagina: The political economy of the global sex trade, Routledge, London, 2009
৯। Singh, Maj. General Lachhman, Indian Sword Strikes in East Pakistan, Vikas Publishing House Pvt. Ltd, New Delhi, 1979
১০। Khan, Md. Ayub, Friends not masters,: A political autobiography, Oxford University Press , Karachi, 1967
১১। http://tribune.com.pk/story/177622/anniversary-what-if-pakistan-did-not-have-the-bomb/
১২। http://www.eprothomalo.com/contents/2011/2011_06_02/content_zoom/2011_06_02_12_8_b.jpg