জঙ্গি-প্রশ্নে আত্মতুষ্টির অবকাশ আছে কি

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 6 Oct 2015, 02:02 PM
Updated : 6 Oct 2015, 02:02 PM

দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী যে সংবাদ সম্মেলন করলেন, তার প্রায় পুরোটা দেখার সৌভাগ্য হল। আর সেদিনই এ নিবন্ধ লিখতে বসে মনে হচ্ছে, একই কায়দায় পরপর দুজন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার সঙ্গে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তাঁকে যে উদ্বিগ্ন দেখা গেল না, সেটা ঠিকই আছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অত উদ্বিগ্ন হলে চলে না। তাঁকে তো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু তিনি যদি 'কমপ্লাসেন্ট' বা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েন, সেটা কি মুশকিলের নয়?

এমন প্রশ্ন ফেসবুক ইনবক্সেও তিন-চারজন বন্ধু আমাকে করেছেন। আরও বহু লোকের মনে এ প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে, যারা বিশেষত জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। অবশ্য তিনি বারবারই দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি-উত্থান ঘটতে দেওয়া হবে না বা এটা তেমন কোনো রাষ্ট্র হবে না। দুয়েকটি অপঘটনায় বড় অর্জন ধূসর হয়ে যায় না বা অত চিন্তিত হয়ে পড়া ঠিক নয়, এটা তিনি বলেছেন বারবারই।

অবশ্যই বাংলাদেশের বড় অর্জন রয়েছে। ১৫-১৬ কোটি মানুষের দেশ তো হাওয়া খেয়ে নেই। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। সবজিতে হয়েছি প্রায়। মাছ-মুরগি ও দুধ উৎপাদনে এগিয়েছি। গার্মেন্টসহ রপ্তানিতে ভালো করছি। নারীর অগ্রগতির খবর আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। মাথাপিছু আয় বেড়ে চলেছে। আগেকার দারিদ্র্য আর নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতিও পাচ্ছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি বড় স্বীকৃতি নিয়ে ফিরেছেন।

এ-ও সত্য, রাজনৈতিকভাবে আমরা এগুতে পারছি না। এখানে গণতন্ত্র একটা ব্যবস্থা হিসেবে বিকশিত হতে পারছে না। নতুন নতুন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে এটা। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজে বাড়ছে অসহিষ্ণুতা। দরিদ্র ও ক্ষমতাহীনের প্রতি, সব ধরনের সংখ্যালঘুর প্রতি, নারীর প্রতি, আইন মান্যকারীর প্রতি, ভদ্রলোকের প্রতি অসহিষ্ণুতা, তাদের ওপর চাপ ও হামলা বেড়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনতরো পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হতে পারলে অন্তত একে 'কমপেনসেট' করা বা সহনীয় মাত্রায় রাখা যেত। সেটি হচ্ছে না। হলে সবচেয়ে বড় অসহিষ্ণুতা হিসেবে জঙ্গি-তৎপরতা রোধ করা যেত। বর্তমান সরকার অবশ্য এখনও জোরের সঙ্গে বলছে, জঙ্গিদের তারা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের তরফ থেকে আগে বলা হত, তাদের 'দৌড়ের ওপর' রাখা হয়েছে। এখন অতটা না হলেও বলা হচ্ছে, দেশে আইএসের কোনো ঘাঁটি নেই!

এটা ফট করে বলে দেওয়া কিনা, জানি না। আশ্বস্ত করার দায়িত্ব অবশ্য রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু সেটা করতে হবে কাজ দিয়ে, অগ্রগতি দৃশ্যমান করে। আন্দাজে একটা কিছু বলে দিয়ে নয়। আন্দাজে বলার চর্চা তো সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে রয়েছে। এটা পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে 'ইনহেরিট' বা গ্রহণ করেছেন বলেও মনে হয়, যাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিদিন বলে থাকেন। দয়া করে তারা এটা বুঝলে ভালো হয় যে, মানুষ এতে আশ্বস্ত হচ্ছে না।

'মানুষ' বলতে বিশ্বসম্প্রদায়কেও বোঝাচ্ছি। জঙ্গি-প্রশ্নে তাদের স্পর্শকাতরতা কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। আর এখন তো বাংলাদেশে তাদের নাগরিকরাও খুন হচ্ছেন। এটা সম্পূর্ণ নতুন ব্যাপার। আমরা ক্রিকেটে ভালো করছিলাম এবং এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বটে। কিন্তু নিরাপত্তা প্রশ্নে আশ্বস্ত করতে না পারায় অস্ট্রেলিয়া এখানে টেস্ট খেলতে এল না। পরে হয়তো আসবে; কিন্তু নিরাপত্তা প্রশ্নে খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়াটা থেকে যাবে 'রেকর্ড' হিসেবে।

এটা তো হচ্ছিল পাকিস্তানে। ক্রিকেট শক্তি বলে বিবেচিতরা ওখানে খেলতে যাচ্ছে না। দেশটির এমন পরিণতিতে আমরা আনন্দিত নই, বরং ব্যথিত। কিন্তু এদেশেও যখন এমনটি ঘটতে শুরু করে, তখন তো চিন্তিত হই। আর এরই মধ্যে যখন ঘটে দু-দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা, তখন? প্রথম ঘটনায় অনেকে হিসাব মেলাচ্ছিলেন যে, এটা বোধহয় অস্ট্রেলিয়ার শঙ্কা সঠিক প্রমাণের চেষ্টা। কিন্তু এরপর ঘটল আরেকটি ঘটনা এবং যারা নিহত হলেন, তাদের কেউ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নন। আর এরা দুজনই এখানে সাধারণ কাজকর্ম করতে আসা মানুষ।

এমনটি বলার কি যুক্তি আছে যে, অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রেও একই সময়ে গুলিবর্ষণে মানুষ মারা গেছে? ওসব দেশে এগুলো প্রায়ই ঘটে থাকে। সেগুলো স্পষ্টতই ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আর তারা সেটা 'অ্যাড্রেস' করতেও সচেষ্ট। ওটা নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলবে। অার্থ-সামাজিক কিছু সূচকে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে 'কমপ্লাসেন্ট' না থেকে আমাদের অবশ্যই ভাবা দরকার জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে। আইএসের ঘাঁটি না থাকলেও অন্য কিছুর ঘাঁটি রয়েছে কিনা, সেটা ভেবে দেখা দরকার। আইএস বাদেও কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী রয়েছে। এদের ভিত্তি কেবল মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকায় নয়, এশিয়াতেও রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে এখানে যে জেএমবির উত্থান হয়েছিল, সেটা আমাদের কম ভোগায়নি। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওটা কোনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর দেশীয় শাখা নয়। জেএমবি কি তাহলে জাতীয়ভিত্তিক ছিল? কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপে ওদের দমন করা হলেও এর সদুত্তর কিন্তু মেলেনি। কারা এদের অর্থকড়ি জুগিয়েছিল, বিশেষত দেশ থেকে? ছত্রভঙ্গ হয়ে ওরা কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে বা আশ্রয় নিয়েছে? রাষ্ট্রীয় অর্থে এর মানসম্মত গবেষণাও হওয়া উচিত ছিল না কি?

এখন অবশ্য গবেষণার সময় নয়। এটা প্রতিরোধের সময় এবং প্রতিদিনই সেটা পার হয়ে যাচ্ছে। গুলশানের মতো কূটনীতিক পল্লীতে একজন বিদেশি রাস্তায় খুন হয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনিকভাবে এমন কঠোর অবস্থান কেন নেওয়া হল না, যাতে হত্যাকারীরা সত্যি সত্যি 'দৌড়ের ওপর' থাকে? কেন এর দু-তিনদিন পরই আরেক জায়গায় আরেকটি ঘটনা ঘটিয়ে তারা সরে পড়তে পারল? উল্টো একই কায়দায় তারা হত্যাকাণ্ড ঘটাল বোঝাতে যে, দুটিতে যোগসূত্র রয়েছে।

এখন আইএস সত্যি এসব ঘটাল কিনা, তা খতিয়ে দেখুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না-হয় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু কথা বলেছেন। জাতি আপনার কথাই সরকারের সর্বশেষ অবস্থান বলে মানবে। আইএস না ঘটিয়ে এটা তো পাকিস্তানভিত্তিক কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীও ঘটাতে পারে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত যারা এখানে ভিন্নমতাবলম্বী তরুণদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তারাও হতে পারে। হয়তো কায়দা বদল করেছে আর বদলে ফেলেছে টার্গেট। ইইউ ব্লগার হত্যার যথাযথ তদন্ত ও বিচারে সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল, এটাও নজর এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়।

কোনো 'সেট আইডিয়া' বা পূর্ব-ধারণার মধ্যে থাকা কি ঠিক হবে? একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে ক্ষুব্ধ পক্ষের দিকে একটুখানি আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। সংসদের বাইরে অবস্থানকারী এ পক্ষ সরকার হটাতে অতিশয় নিকৃষ্ট আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এর মানে হল, সরকারকে বিপাকে ফেলতে তারা নতুন ধারায় এসব ঘটাতে পারে। তা পারে বৈকি। এদের বিরুদ্ধে তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেনেড হামলায় মেরে ফেলার চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে।

আমরা চাইব, এ-সংক্রান্ত মামলাটির নিষ্পত্তি হোক। এত বড় একটি বিষয় কেন এতদিন পরও অভিযোগের মধ্যে থেকে যাবে? দশ ট্রাক যুদ্ধাস্ত্র এনে ভারতীয় বিদ্রোহীদের কাছে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলাটিও ঝুলে আছে, দীর্ঘদিন হয়ে গেল। এরই মধ্যে বিএনপি আবার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্রতী হয়েছে। ভারত-বিষয়ক নীতিও বদলে ফেলতে চায় তারা! সেটা বদলাক, কিন্তু মামলার তো নিষ্পত্তি হতে হবে। কেননা এটা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে চাওয়াটা গণতন্ত্র-চর্চার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

এগুলো কিন্তু জঙ্গিবাদের সঙ্গেও সম্পর্কিত। জঙ্গি মোকাবেলায় সরকারকে 'স্কয়ারলি' বা চারদিক থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সে গভীরতায় গিয়ে কেউ প্রশ্ন করলেন না তাঁকে; প্রধানমন্ত্রীও সেদিকে গেলেন না। জঙ্গি-প্রশ্নে সরকারকে বারবার 'ডিফেন্ড' করার প্রবণতা দেখা গেল তাঁর মধ্যে। সরকারপ্রধান হিসেবে সেটা তিনি করবেন বৈকি। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় মানুষকে আশ্বস্ত করা। দুজন বিদেশি হত্যার ঘটনায় এখন তো বিশ্বসম্প্রদায়কেও আশ্বস্ত করতে হবে। হতে পারে, এতে দেশি বা বিদেশি কিংবা উভয়বিধ চক্রান্ত রয়েছে। কিন্তু কাজটি তো করেছে এদেশের এক শ্রেণির তরুণ। কথা কম বলে দ্রুততার সঙ্গে এদের ধরে ফেলতে হবে।

প্রশাসনে দুর্নীতি ও দলীয়করণ যে মাত্রায় পৌঁছেছে এবং এতে দক্ষতার যে অবনতি ঘটেছে, তাতে একে দিয়ে জঙ্গি দমনে কতটা কী করা যাবে, বলা কঠিন। জঙ্গি তৎপরতা কিন্তু নতুন মাত্রায় বিস্তৃত হচ্ছে। কেউ অবশ্য এমনটিও বলতে পারেন, দুজন বিদেশিকে হত্যা আদৌ কোনো জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। পশ্চিমা প্রভাবশালী মহলই এটা করছে সরকারকে বিপাকে ফেলতে বা এদেশে তাদের কোনো হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে। একে বলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের চর্চা। বড় বড় ঘটনার যখন গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি হয় না, তখন এটা পল্লবিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে এটি ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, তার প্রশাসন হত্যাকারীদের ধরে ফেলবে এবং এর বিচারও হবে। সত্যি বলতে, এটা সরকারকে করতেই হবে এখন। নইলে পশ্চিমা শক্তির সমালোচনার মুখে পড়তে হবে তাদের। সেটা কেবল ইইউ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কটা জটিলতাপূর্ণ। জাপানি নাগরিক হত্যার পরপরই দেশটির রাষ্ট্রদূত অর্থপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের কাছে নাকি খবর ছিল এ সময়ে বাংলাদেশে 'পশ্চিমা স্বার্থের ওপর' আঘাত আসার। সে বিষয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনের সঙ্গে তাদের তথ্য-বিনিময় হয়েছিল কি? নাকি আমাদের প্রশাসন গা করেনি?

প্রশাসন, বিশেষত পুলিশ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বী নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে বা তাদের সেভাবেই রাখা হয় কিনা, এ প্রশ্ন উঠতে পারে। ফেসবুকে কে কী লিখল, সে বিষয়েই তারা হয়তো বেশি আগ্রহী। ওদিকে যে বিদেশি খুনের মতো ঘটনার প্রস্তুতি চলছে, সেখানে হয়তো দৃষ্টি নেই। সে ক্ষেত্রে নিরীহ বিদেশিদেরই টার্গেট করা হয়েছে, যারা কখনও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হননি। এরা দুজন হয়তো একটি বড় কোনো 'ডিজাইন' বা নীলনকশার বলি হয়ে গেলেন। ভিন্নমতাবলম্বী ব্লগারদেরও কেউ কেউ ওটা হয়েছেন কিনা, কে জানে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ভালো বলেছেন যে, পাকিস্তান একটা 'ফিউডাল' বা 'কনজারভেটিভ সোসাইটি'। বাংলাদেশের মেয়েদের ওই দেশে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন তিনি। এখন আমাদের বিষয়েও পশ্চিমারা একইভাবে বলতে শুরু করবেন কিনা, আমরা তো সেটা নিয়ে চিন্তিত। না, 'দু-একটি ঘটনা'য় বড় অর্জনের কথা ভুলে যাওয়ার মতো লোক আমরা নই। এগুলো 'কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা' হিসেবেও দেখতে পারছি না। এর মধ্যে বরং কার্যকর যোগসূত্র ও ধারাবাহিকতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপে একে পুরো মোকাবেলা করা যাবে না। তবে এ মুহূর্তে প্রশাসনকেই সক্রিয় করতে হবে।

অবশ্য কেউ কেউ বলেন, প্রশাসনেও জঙ্গি রয়েছে। দুর্নীতি আর অদক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনে যদি বেশি মাত্রায় জঙ্গি কানেকশন তৈরি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু বিপদ। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকেই এ বিষয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করতে হবে। আরেকটি কথা, জঙ্গি বিপদ মোকাবেলায় রাজনৈতিক এবং তারও গভীরে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রয়োজন। এসব অনুপস্থিত হয়ে পড়া একটি সমাজের বড় অংশে জঙ্গি রূপান্তরও ঘটে থাকে, যেটি আমরা পাকিস্তানসহ বেশ কিছু দেশে এরই মধ্যে দেখতে পেয়েছি।

বাংলাদেশ নিশ্চয়ই পাকিস্তান বা তেমন কোনো দেশে রূপান্তরিত হবে না? তাহলে একাত্তরে যে কাণ্ডটা করেছিলাম, তার কোনো অর্থ থাকবে না। এরই মধ্যে যেসব অর্জন নিয়ে আমরা গর্ব করে থাকি, সেগুলোও রসাতলে যাবে।

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট।