নদীর কাছে যাওয়া নদীর কথা শোনা

শেখ রোকন
Published : 3 Oct 2015, 08:12 AM
Updated : 3 Oct 2015, 08:12 AM

বাংলাদেশে 'বিশ্ব নদী দিবস' পালনের নাতিদীর্ঘ ইতিহাস যদি দেখি, ২০১০ সালের পর মাত্র গত বছর, ২০১৪ সালে, দিবসটি পালিত হয়েছে অপেক্ষাকৃত বেশি আড়ম্বরে। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে একটি 'দিবস' পালন নিয়ে আমাদের দেশে উৎসাহ যেমন অনেক, তেমন উন্নাসিকতাও কম নয়। দিবস পালনকারীদের মধ্যে জাতিসংঘ, রাষ্ট্র, বিভিন্ন সংগঠনের মতো প্রভাবশালী পক্ষ এবং উদযাপন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মাত্রায় আর্থিক বিষয় যুক্ত থাকলেও বিপক্ষের দলের প্রশ্নটি নেহাত বুদ্ধিবৃত্তিক: দিবস পালন করে আদৌ কি কিছু অর্জিত হয়? বা যেসব বিষয় এখনও আমাদের সমাজে জীবনঘনিষ্ঠ, নিত্য, যেমন মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক, মিথষ্ক্রিয়া ও আবেগ– তা নিয়ে বছরের একটি দিন 'মা দিবস' কিংবা 'বাবা দিবস' পালনের যথার্থতা কী?

'রিভারাইন পিপল' থেকে ২০১০ সালে আমরা যখন বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো 'বিশ্ব নদী দিবস' উদযাপন ও প্রতিপাদ্য নির্ধারণের উদ্যোগ নিই, এর যথার্থতা নিয়ে নিজেদের মধ্যেও প্রশ্ন তুলেছিলাম। উত্তর খুঁজে নিতে অবশ্য দেরি হয়নি।

গত বছর নদী দিবসে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল ঢাকায়, ২৭ সেপ্টেম্বর। যদিও নদী দিবস ছিল পর দিন, ২৮ সেপ্টেম্বর; ঢাকায় কর্মদিবসের যানজট বিবেচনায় নিয়ে আমরা একদিন আগেই কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। নদী, পানি ও পরিবেশ নিয়ে সক্রিয় ৩৬টি সংগঠন ও উদ্যোগ যৌথভাবে 'নদীর জন্য পদযাত্রা' করেছিলাম। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শুরুর পর শহীদ মিনারে গিয়ে নদীরক্ষার শপথ নিয়ে পদযাত্রাটি শেষ হয়েছিল শাহবাগে।

ঢাকার কর্মসূচির বাইরে আরও দুয়েক দিন আগে থেকেই এ উপলক্ষে পালিত হচ্ছিল নানা অনুষ্ঠান। কেউ সেমিনার করেছেন, নদীতে ফুল ভাসিয়েছেন, নদীতীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নদী সম্পর্কে প্রবীণদের কাছে নবীনদের গল্প শোনার অনুষ্ঠান করেছেন। রংপুরে 'রিভারাইন পিপল' গিয়েছিল একটি স্কুল ও কলেজে 'বাঁচায় নদী, বাঁচাই নদী' কর্মসূচি নিয়ে। উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের বোঝানো নদী কীভাবে আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, সভ্যতা গড়ে তুলেছে ও বাঁচিয়ে রেখেছে, আর এসবের স্বার্থেই নদী বাঁচানো কেন জরুরি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কর্মসূচি ছিল নদী নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনুভূতি, আবেগ, পর্যবেক্ষণ এবং প্রত্যাশা-সম্বলিত স্বাক্ষর গ্রহণ। কাগজে নয়, একটি বড় সাদা কাপড়ের ওপর এই কথাগুলো লিখে নেওয়ার উদ্দেশ্য এটা অনেক দিন স্থায়ী হবে এবং সংশ্লিষ্টরা তাদের কথাগুলো যেমন মনে করতে পারবেন, অন্যরাও উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত হবে।

নদী নিয়ে একটি বিশেষ দিবস পালনের প্রাথমিক তাৎপর্য এটাই– বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নদীর ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহী, অনুপ্রাণিত ও সংবেদনশীল করে তোলা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভূখণ্ড, সভ্যতা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, অর্থনীতি, উৎপাদন ব্যবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশ গড়ে উঠেছে নদীর আশীর্বাদে; এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ের ক্ষেত্রে নদী পালন করেছে অনন্য ভূমিকা। এই বাংলাদেশের মানুষকে নদীর প্রতি সংবেদনশীল করে তোলার জন্য দিবস পালন খানিকটা হাস্যকর মনে হলেও এটাই দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। যে নদী তার বুকের পলি তিল তিল করে জমিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে, তার প্রতিদান দূরে থাক– দখলে, দূষণে, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করে আমরা সেই নদী তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আক্ষরিক অর্থেই জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীর মধ্যে বেষ্টিত থেকেও নদীর কথা মনে না রাখা। ফলে আমাদের নীতি ও কর্মে নদীর প্রেক্ষিত থাকে অনুপস্থিত। অথচ নদীমাতৃক একটি দেশে সব নীতি, চিন্তা ও তৎপরতার মূলে থাকতে হত নদী।

নদী দিবস পালনের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আমরা যারা নানা মাত্রায় নদী, পানি বা পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত– এ ধরনের দিবস ও সে উপলক্ষে কর্মসূচির ব্যবহারিক সুবিধাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ উপলক্ষে একত্র হওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তার মধ্য দিয়ে পরস্পর চেনা-জানা হয়; আরও নানা বিষয়ে সেতু ও জানালা খুলে যায়। যেমন, গত বছর 'বিশ্ব নদী দিবস' উপলক্ষে একত্র হওয়া ৩৬টি সংগঠনের অনেকের সঙ্গেই ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল। বিশেষভাবে নদী ও সার্বিকভাবে পরিবেশের যখন দুর্দিন, তখন এই ধরনের একত্রীকরণ আয়োজনের তুলনায় কার্যকর উদোগ আর কী হতে পারে?

'নদীমাতৃক' বাংলাদেশে নদী দিবস পালনের তাৎপর্য নিয়ে ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে লিখেছিলেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডক্টর আইনুন নিশাত:

"কোনো একটি দিবস নির্ধারণ ও তা উদযাপনের লক্ষ্য হচ্ছে, যে বিষয়কে কেন্দ্র করে আয়োজন, তার কিছু এলিমেন্টের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ কিংবা একটি বিশেষ সমস্যার মাত্রা তুলে ধরা ও তার সমাধানের লক্ষ্যে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, বিশ্ব নদী দিবস উদযাপনের লক্ষ্য হচ্ছে জনজীবনে ও জনপদের জন্য নদীর ভূমিকা সমুন্নত করা।…

এই লেখার আগে, আমি কৌতূহল নিয়ে ইন্টারনেটে ঢুকেছিলাম। আগ্রহ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নদী দিবসে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে বা বিভিন্ন দেশবাসী কীভাবে দিবসটি উদযাপন করছে। ওয়েবসাইটেই আবিষ্কার করলাম, বাংলাদেশে 'রিভারাইন পিপল' নামে একটি সংগঠন দিবসটি উদযাপনের আয়োজন করেছে। গত বছর তারা প্রথমবারের মতো এ দেশে বিশ্ব নদী দিবস পালন এবং এখানকার জন্য প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, 'অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার'। পাশপাশি এবার তারা নদী ও জীবনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে এবং বড়াল নদীকে কেন্দ্র করে একটি অনুষ্ঠানের চিন্তাভাবনা করছে। তখন আমার মনে পড়ল, সংগঠনটি বড়াল নদী নিয়ে একটি একাডেমিক ডকুমেন্টেশন করছে এবং সে বিষয়ে কথা বলার জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া কয়েকজন তরুণ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। মনে পড়ল, তাদের বলেছিলাম, বড়াল নদীকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। …

প্রকৃতপক্ষে কাজ হচ্ছে প্রথমত নদী-নিধন বন্ধ করা। নদী তো পুরোপুরি মরে না, তাকে আধমরা করা হয়। অর্থাৎ এগুলোর পুনরুজ্জীবন সম্ভব। তাহলে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।"

২০১০ সালে যখন প্রথমবারের মতো দিবসটি এ দেশে পালিত হয়, তখন অনেকটা ঘরোয়াভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে মিলিত হয়েছিল কিছু সদ্য-স্নাতক ও তরুণতর পেশাজীবী। তার আগের দিন সবাই মিলে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে যৌথ নিবন্ধ লিখেছেন। তারও আগে এ নিয়ে তারা মূলত ফেসবুকে মতবিনিময়, পরিকল্পনা করেছেন।

ওই দিন মধুর কেন্টিেন জমায়াতদের একটা বড় অংশের জন্য বিশ্ব নদী দিবসেই প্রথম 'অফলাইনে' সাক্ষাৎ। এখনকার মতো এত সংগঠনও যুক্ত হয়নি; অনেকে হয়তো জানতেনও না নদী নিয়ে একটি বৈশ্বিক দিবস আছে, সেটা অমুক দিন পালিত হয়। এখন যখন গোটা দেশেই দিবসটি পালিত হচ্ছে, বিপুলসংখ্যক সংগঠনের উদ্যোগে যৌথ বা এককভাবে, তখন সেই সন্ধ্যায় মিলিত হওয়া তরুণরা পেছনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা শ্লাঘা বোধ করার অধিকার রাখেন বৈকি।

খোদ বিশ্ব নদী দিবসের সূচনাও হয়েছিল এমনই এক ছোট্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে ১৯৮০ সালে দিবসটি প্রথম পালিত হওয়ার পর ক্রমে দেশটির অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ অনুসমর্থিত হওয়ার পর থেকে পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে আমরা 'রিভারাইন পিপল' থেকে বিশ্ব নদী দিবস পালন শুরু করি, আগেই বলেছি। ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে দিবসটি পালন সূচিত হয়েছিল, জানতে চেয়েছিলাম দিবসটির প্রতিষ্ঠাতা ও 'রিভার হিরো' মার্ক এঞ্জেলোর কাছে। তিনি বললেন:

"বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, এই নদী ও প্রবাহগুলোর গুরুত্বের স্বীকৃতি নেই! এগুলো কাজে লাগানো এবং অবদানের স্বীকৃতির জন্য এমনকি রাজ্য পর্যায়েও কোনো অনুষ্ঠান নেই। বিষয়টি মাথায় রেখে আমি এবং কিছু সমমনা বন্ধু ১৯৮০ সালে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাই, সেপ্টেম্বরের শেষ রোববার যেন উদ্বোধনী 'রিভার ডে' হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

দিবসটি উদযাপনের জন্য আমরা থম্পসন নদীতে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি গ্রহণ করি। এই নদী হচ্ছে ফ্রেজার এলাকার সবচেয়ে বড় প্রবাহ। ওই দিন একটি বড় স্বেচ্ছাসেবী দল এবং কয়েকটি ফ্লোটিলা ভেলা নিয়ে আমরা থম্পসন নদী থেকে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ও পরিত্যক্ত বস্তু সংগ্রহ করি। একই সঙ্গে নদীটির তীরবর্তী পাথুরে এলাকায় ও নদীর মধ্যেও অনেক পরিত্যক্ত গাড়ি ফেলে রাখত। আমরা স্থানীয় যানবাহন-বর্জ্য পরিষ্কার করার ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলি। তারা ওই পরিত্যক্ত গাড়িগুলো নদী ও নদীতীর থেকে সরিয়ে দিতে সম্মত হয়। এটি ছিল আমাদের জন্য প্রথম অথচ ব্যাপক সফল একটি কর্মসূচি।"

বাংলাদেশে এখন অনেকেরই জানা, সেপ্টেম্বরের শেষ রোববার বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই পালিত হয় 'বিশ্ব নদী দিবস'। এ বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ৭০টিরও বেশি দেশে বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠন ও উদ্যোগ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এ উপলক্ষে। মূল অনুষ্ঠানটি গত বছরের মতোই– 'মার্চ ফর রিভার' বা নদীর জন্য পদযাত্রা। গতবার 'নদীর জন্য পদযাত্রা' ছিল অনেকটা প্রতীকি; জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে সূচিত হয়ে শহীদ মিনার ঘুরে শাহবাগে সমাপ্ত হয়েছিল। এবার আমরা সত্যিই নদীর কাছে যাচ্ছি। পুরানো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সূচিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে সমাপ্ত হবে পদযাত্রা। আর কর্মসূচিটি পালিতও হচ্ছে নদী দিবসের এক সপ্তাহ পর, ৩ অক্টােবর, শনিবার। কারণ ঈদুল আযহার ছুটির আমেজে ২৭ অক্টোবর এ ধরনের কর্মসূচি কতটা সফল করে তোলা যাবে, সে নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল।

আন্তর্জাতিকভাবে পালিত অন্যান্য দিবসের সঙ্গে 'বিশ্ব নদী দিবস'এর একটি মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে, এর কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য থাকে না। অঞ্চল বা দেশভেদে আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন নদীর চরিত্র, ইস্যু, ক্রীড়নক, সংকট ও সমাধানের ভিন্নতার কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত এমন 'গণতান্ত্রিক' ব্যবস্থা।

২০১০ সাল থেকে কেবল নদী দিবস পালন নয়; বাংলাদেশের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ ও ঘোষণাও করে আসছে 'রিভারাইন পিপল'। এবারের প্রতিপাদ্য, 'নদী রাখ দূষণমুক্ত'। এর আগের পাঁচ বছরের প্রতিপাদ্য যথাক্রমে:

২০১০: নদী আমাদের ডাকছে, সাড়া দিতে হবে।

২০১১: অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার।

২০১২: ফিরে চল নদীর টানে।

২০১৩: নদীদখলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ হিমালয় অঞ্চল।

২০১৪: নদীকে তার তীর ফিরিয়ে দাও।

কোনো দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে পরবর্তী দিবস পর্যন্ত সেই বিষয়ে কর্মতৎপর থাকাই রেওয়াজ। তা না হলে প্রতিপাদ্য নির্ধারণের যৌক্তিকতা কী? স্বীকার করতে হবে যে, বিশ্ব নদী দিবসের বাংলাদেশ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ঠিকই, সে অনুযায়ী কাজ হয়নি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমাদের আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে নদী দিবস পালনের মিছিল প্রতি বছর বড় হচ্ছে। যোগ দিচ্ছে নতুন নতুন সংগঠন ও উদ্যোগ। বাংলাদেশি পরিবেশকর্মীরা গর্ব করতে পারেন যে, রিভারাইন পিপলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১৩ সালে উপমহাদেশীয় আরও তিনটি দেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান থেকে চারটি পরিবেশবাদী সংগঠন একযোগে বিশ্ব নদী দিবস পালন ও যৌথ প্রতিপাদ্য নির্ধারণে (নদীদখলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ হিমালয় অঞ্চল) সম্মত হয়েছিল। এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন:

"অভিন্ন অববাহিকার অংশ হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চলের সরকারগুলো যখন নদীর প্রশ্নে ঐকমত্যে ছতে পারছে না, তখন বেসরকারি পর্যায়ে এই অভিন্ন প্রতিপাদ্য নতুন পথ দেখাবে।"

বাংলাদেশে 'বিশ্ব নদী দিবস' পালিত হওয়া নিয়ে নিরাশার চিত্রও রয়েছে। সরকার তস্যাতি তস্য নানা দিবস পালন করে থাকে; কিন্তু নদীমাতৃক দেশ হয়েও নদী-বিষয়ক বৈশ্বিক দিবসটি নিয়ে উদ্যোগ নেই। ২০১১ সালে দিবসটির প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেন বলেছিলেন:

"এ ধরনের দিবস পালনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত নই। উদ্যোক্তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যাই হোক, সরকারের তরফ থেকেই আগামী বছর থেকে বিশ্ব নদী দিবস পালন করা হবে।"

সেই 'আগামী বছর' এখনও আসেনি। আমরা অপেক্ষায় থাকলেও বসে নেই কিন্তু। কবেই-বা কে বসে থেকেছে? আমাদের নদী, আমাদের জীবন। আমাদের জীবন বাঁচাতে আমাদেরই সতত সক্রিয় ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব নদী দিবস সেই ডাকই দিয়ে যায়।