বিপন্ন শরণার্থী, আরব নেতৃত্ব ও ইউরোপ

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 12 Sept 2015, 02:16 PM
Updated : 12 Sept 2015, 02:16 PM

ঠিক কেমন পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ তার নিজের দেশ এবং এর ভেতরকার হাজারও সম্পর্ক তুচ্ছ করে অন্য দেশে আশ্রয়প্রার্থী হয় আর সে ক্ষেত্রে এমনকি শিশুসন্তান নিয়ে বিপদসঙ্কুল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে, তা অন্য কারও পক্ষে বোঝা আসলে সম্ভব নয়।

আমাদের দেশেরও অনেককে একাত্তরে দেশ ছাড়তে হয়েছিল, পরিজনসহ। তারা হয়তো এর কিছুটা বুঝবে; তবে পুরোটা নয়। কারণ সম্প্রতি যারা সমুদ্র ও স্থলপথে ইউরোপের পছন্দসই দেশে গিয়ে পৌঁছতে উদগ্রীব, তারা আসলে আর দেশে ফেরার আশা করছে না। একাত্তরে যারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, তাদের মনে ক্ষীণ হলেও আশা ছিল ফিরে আসার। প্রতিরোধ বা মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর, বিশেষত ভারতীয় সহায়তা নিশ্চিত হলে সে আশা বেড়েও ছিল।

সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ছেড়ে বহু উদ্বাস্তু অবশ্য পাশের দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। একটা বিরাট অংশ গিয়ে উঠেছে তুরস্কে। লেবানন, জর্ডানেও গেছে অনেকে। লেবাননে প্রতি পাঁচ জনের একজন নাকি সিরিয়ান। এদের অনেকে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগেও গেছে, কর্মসংস্থানের সূত্রে। এ ধরনের সম্পর্ক পার্শ্ববর্তী বিশাল ও ধনী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গেও আছে সিরিয়ানদের। কিন্তু বিপন্ন শরণার্থীর একজনকেও তারা নেয়নি 'অফিসিয়ালি'।

সৌদি নেতৃত্বে ওখানে যে সুন্নি বেল্ট রয়েছে, কুয়েত-কাতার-আমিরাত প্রভৃতি– যাদের আমরা 'জিসিসি' বলি, তাদের সবার অভিন্ন অবস্থান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে। 'মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের' কোনো ব্যাপার এ ক্ষেত্রে নেই। এখানে আছে নির্ভেজাল রাজনীতি। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এতে আছে রাজতান্ত্রিক, ধর্মও নয়– সাম্প্রদায়িক ও গোত্রীয় বা গোষ্ঠীতান্ত্রিক স্বার্থ।

ভীতিও রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে শরণার্থী গ্রহণের অভিজ্ঞতা তো ভালো নয়। প্যালেস্টাইনি শরণার্থীদের যারা আশ্রয় দিয়েছিল, দশকের পর দশক তাদের অভিজ্ঞতা কি তিক্ত নয়? সিরিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে যা হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। শরণার্থী নিয়ে এর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে চাইছে না মধ্যপ্রাচ্যের ধনী ও আপাত স্থিতিশীল দেশগুলো।

তারা বড়জোর চেক লিখে দিতে রাজি আছে 'শরণার্থী ভাই'দের কল্যাণে। দিচ্ছেও; হয়তো আরও দেবে। সৌদি আরব অবশ্য যুদ্ধে জড়িত রয়েছে ইয়েমেনে। দৃশ্যত এটা শিয়া-সুন্নির যুদ্ধ। ইয়েমেন পরিস্থিতিও কম ভয়াবহ নয়। অবশ্য পরিষ্কারভাবে জানা যাচ্ছে না, ইউরোপের দিকে ধাওয়া করা লোকের মধ্যে কতজন ইয়েমেনি রয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, যেমন ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া থেকে বহু লোক পাড়ি দিচ্ছে ভূমধ্যসাগরে। এর একটা বড় অংশ অবশ্য দারিদ্র্যলাঞ্ছিত। তারা নাকি 'অর্থনৈতিক অভিবাসী'।

অনেকে আবার 'চান্স' নিচ্ছে। এদের মধ্যে নাকি আছে বাংলাদেশিও। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে দেশে না ফিরে অন্যদের সঙ্গে মিশে তারা চলে যেতে চাইছে ইউরোপের কোনো পছন্দসই দেশে। এক খবরে দেখা গেল, এরা নাকি এক শতাংশ। এ দফায় চার-পাঁচ লাখ লোক সমুদ্র ও স্থলপথে ইউরোপ গিয়ে থাকলে বলতে হবে, এর মধ্যে চার-পাঁচ হাজার বাংলাদেশি রয়েছে! সংখ্যা যাই হোক, এরা ভাগ্যান্বেষী। দেশে ফিরে সেটা সম্ভব নয় মনে করেই তারা অন্যত্র ভাগ্যান্বেষণে যাচ্ছে।

লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে এর কয়েক জন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা ব্যথিত হয়েছি। সরকারের পক্ষে এ পরিস্থিতি অস্বীকার করা কঠিন। দেশের ভেতর থেকে অনেকে তো থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে গিয়ে গণকবরেও জীবনযাত্রা সাঙ্গ করেছে। এর একাংশ যে পাশের দেশ মিয়ারমারের তাড়া খাওয়া রোহিঙ্গা, সেটাও বলতে হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও ওখানে তৈরি হয়েছে সরকার-সমর্থিত একটি উগ্র গোষ্ঠী। বহু মত-পথের মানুষের দেশ তারা হতে দেবে না মিয়ানমারকে। নোবেলজয়ী, 'গণতন্ত্রী' অং সান সুচিও এদের সঙ্গে তাল দিয়ে চলছেন।

রাজনীতি যে কঠিন জিনিস, এটা জার্মানির নেত্রী অ্যাঞ্জেলা মার্কেল খোলাখুলিই বলেছেন তার দেশে আশ্রয় নেওয়া এক ক্রন্দনরত প্যালেস্টাইনি কিশোরীকে। তিনি ও তারা যে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে এগিয়ে এসেছেন এবং এটা করে সারা দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এর মধ্যে, তাতেও রয়েছে রাজনীতি বা আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থ। এটা নিতান্ত মানবিক অবস্থান নয়। সেটা আশা করাও বেঠিক হবে।

ইউরোপের দেশে দেশে সাধারণ মানুষ, অধিকার গ্রুপ, উদারনৈতিক রাজনৈতিক দল অবশ্য উন্নত বোধের পরিচয় দিচ্ছে। শরণার্থীদের আশ্রয় ও সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ইউরোপের দেশে দেশে রয়েছে নীতির বিভিন্নতা। সে সব মাথা থেকে নামিয়ে তারা বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে–বিহ্বলতা কাটিয়ে। সমুদ্রে ডুবে তুরস্কের সৈকতে ভেসে এসে বালিতে মুখ ডুবিয়ে পড়ে থাকা সিরিয়ান শিশুটির ছবি এ প্রক্রিয়া করেছে ত্বরান্বিত। এমন অনেক শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ করুণ মৃত্যুবরণ করেছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে।

বর্তমান পোপের আহ্বানও ইইউএর নীতিনির্ধারকদের কিছুটা হলেও প্রভাবিত করবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে তাদের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি ও তারা নিজেরা এদের আশ্রয় দেওয়ার যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, একে নতুন অভিজ্ঞতা বলতে হবে। এর প্রতীকী মূল্য অস্বীকার করবে কে?

এও ঠিক, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। পোপের কথায় নয়, তারা পরিচালিত হবেন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ দিয়ে। সেখানে আদর্শগত বিষয়ও থাকবে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর অপরাধবোধও আছে হয়তো। সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এদের 'অবদান' কি নেই? এ নিবন্ধ লেখার সময়ই খবর রয়েছে সিরীয় সরকারের কাছে রাশিয়া আরও যুদ্ধাস্ত্র পাঠাচ্ছে বলে। সমর বিশেষজ্ঞও পাঠাচ্ছে। অভিযোগ, রাশান সৈন্যরা নাকি ভাড়া খাটছে ওই সরকারের পক্ষে!

সিরিয়া ও ইরাকে 'আইএস' নামক যে দানব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তার পেছনে ছিল বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ান বিদ্রোহীদের অস্ত্র সহায়তা জুগিয়েছিল তার ইউরোপীয় মিত্ররাও। সেখান থেকে আইএসের জন্ম হয়েছে– যেমন সোভিয়েতবিরোধী আফগান যুদ্ধ থেকে জন্ম নিয়েছিল তালেবান। বারে বারে এমনতরো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের ভুল নীতির ফসল, নাকি পরিকল্পিতভাবেই তারা এটি করছে, সে প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। শেষে তাদেরও নামতে হচ্ছে এসব গোষ্ঠী দমনে।

ধর্মের নামে ব্যাপক হানাহানিতে বিশ্বাসী এসব গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অন্দরমহলে গিয়েও হানা দিচ্ছে। তাদের সাজানো সংসারে ঢুকিয়ে দিচ্ছে সংশয়, অনাস্থা ও ভীতির বীজ। এই যে সিরিয়ান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে ইউরোপীয় অনেক দেশ, কেউ কেউ এমনও বলছে যে, নিলে তারা শুধু খ্রিস্টানদের নেবে, তার পেছনেও রয়েছে ওই ভীতি। এদের ভেতর দিয়ে না আবার আইএস বা অন্য কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী ঢুকে পড়ে তাদের জনগোষ্ঠীতে!

সাধারণভাবে মুসলিমদের অভিবাসী হিসেবে নিতেও অনেক ইউরোপীয় দেশ অনাগ্রহী। মুসলিম জনগোষ্ঠী নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা নাকি সুখকর নয়। এদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, বিশেষত ওইসব দেশের দক্ষিণপন্থী দলগুলোর। আর যে সব দেশে অত বেশি মুসলমান নেই, তারা শুনে-শুনে চিন্তিত। 'নিজস্ব জীবনধারা' রক্ষায় তারা ব্যগ্র। ইইউএর মধ্যেও তো এক দেশ থেকে অন্যত্র যেয়ে থিতু হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোয় সাধারণভাবে চলতে থাকা অর্থনৈতিক মন্দা বা এর ধীরগতিও শরণার্থী বিষয়ে তাদের রক্ষণশীল মনোভাবের কারণ।

মজার বিষয়, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের জন্য দৃশ্যত যাকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, সে যুক্তরাষ্ট্রকে এ শরণার্থী সমস্যা তেমন পাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সে কী করবে বা করতে পারে, তা স্পষ্ট করে বলছেও না। এর মধ্যে অবশ্য তাকে অভিযোগ করে বলতে দেখা গেল, রাশিয়া এভাবে সিরীয় সরকারের পক্ষ নিলে তো পরিস্থিতির 'আরও অবনতি' ঘটবে! যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও যে পরিস্থিতির বড় রকম অবনতি ঘটাচ্ছে, এটা কে বলবে তাকে?

ইউরোপীয় দেশ, যারা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে দৃশ্যত কোনো শয়তানিতে নেই, তেমন কোনো বাণিজ্যিক স্বার্থও নেই যাদের– তারাও কি কথাটা যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে পারে না? তারা এও বলতে পারে, তোমরা যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছ, তার দায় আমরা নেব কেন? শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনে সই করেছি বলে? ইইউএর সদস্য হয়েছি বলে?

জার্মানি অবশ্য বলে দিয়েছে, তারা এ বছর আট লাখ শরণার্থী নেবে। এটা গত বছরের চার গুণ। এতে সমুদ্র ও একাধিক দেশের স্থলপথ পাড়ি দিয়ে জার্মানি যাওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে উঠবে। সিরিয়ার পাশের দেশগুলোর আশ্রয় শিবিরে থাকা শরণার্থীরাও এর সুযোগ নেবে বলে মনে হচ্ছে। আফগানি ও পাকিস্তানিরাও কি নেবে না? আর বলকান অঞ্চলের দরিদ্ররা? আফ্রিকার যেসব দেশে আপাতত যুদ্ধ নেই কিন্তু ভয়ানক দারিদ্র্য রয়েছে, তারা?

কে 'রাজনৈতিক উদ্বাস্তু' আর কে অর্থনৈতিক অভিবাসী, সেটা স্থির করা তো কঠিন। ইইউ দেশগুলোর কর্তৃপক্ষও সেটা করতে পারবে না। ইরাক বা লিবিয়া থেকে দালালের সহায়তায় ওখানে গিয়ে ওঠা বাংলাদেশি ভাগ্যান্বেষীরাও বলবে– 'আমি রাজনৈতিক উদ্বাস্তু'। গ্রিস ও ইতালির শহরগুলোয় এমন অনেক বাংলাদেশির দেখা নাকি মিলছে। তারা সুযোগ নিয়েছে শুধু তাই নয়, ওইসব দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। সন্দেহ কী যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশ গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের রক্ত জল করা সংগ্রামে।

এমন একটা পরিস্থিতির যে সৃষ্টি হবে, সেটা কি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ? আরব নেতৃত্বের কথা তুলে অবশ্য লাভ নেই। নিজ দেশের জনসাধারণের বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে এদের অধিকাংশই দেশ পরিচালনা করছে না। ওইসব দেশের জনসাধারণও সাধারণভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও রীতিনীতির প্রতি উদাসীন। ধর্মীয় মূল্যবোধ আর নিয়মনীতিও তাদের মধ্যে ঐক্য রচনা করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রেও সম্প্রদায়, গোত্র ও গোষ্ঠীতে তারা গভীরভাবে বিভক্ত। প্রত্যেকেই নিজেকে দাবি করছে 'সঠিক' বলে আর অন্যকে করতে চাইছে কোণঠাসা ও নিষ্ক্রিয়।

সত্যি বলতে, ক্ষমতা ও সম্পদলোলুপ বিশ্বশক্তিগুলো এর মধ্যে ঢুকে পড়ে ফায়দা লুটছে। এটা চিরকালই হয়ে এসেছে। ঘটে চলেছে এখনও। আর আমরা যারা এর মধ্যে নেই, তারা করে চলেছি অভিযোগ। আরব বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদ এটা বুঝতেন বলে অভিযোগ করতেন কম। তিনি বরং দেখতে চাইতেন আরব জনগোষ্ঠীতে শুভবুদ্ধির উন্মেষ, ওখানে জাতীয়তাবাদের উত্থান আর ওই সব দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। দুর্ভাগ্য, তার লেশমাত্রও তিনি দেখে যেতে পারেননি।

আর আমরা বেঁচে থেকে দেখছি পাশেই সম্পদশালী ও বিশাল ভূখণ্ডের অধিকারী দেশ থাকতে বিপন্ন সিরীয়রা, ইরাকি, নাইজেরিয়ান, আফগানি আর পাকিস্তানিরা রাবারের নৌকায়, জেলেনৌকায় এমনকি অনেক অর্থ ব্যয়ে দালাল ধরে যাচ্ছে 'বিধর্মী' ইউরোপে। এমন এক তামসিক পরিস্থিতিতে পড়ে তাদের কেউ কেউ নাকি স্বধর্ম ত্যাগেও প্রস্তুত! মাতৃ বা পিতৃভূমি যাই বলি না কেন, তা যদি এভাবে বিড়ম্বিত করে, তাহলে কী না করতে পারে মানুষ!

মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপের এসব ঘটনায় বিমূঢ় হয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দৃঢ় করার প্রয়োজনীয়তাই ব্যক্ত করতে হচ্ছে। বিভিন্ন মত-পথের মানুষ যেন সমানাধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে একই রাষ্ট্রে, গণতন্ত্রই দিতে পারে তার নিশ্চয়তা। নইলে ভাগ্যগুণে পাওয়া অঢেল সম্পদ আর অমিত সম্ভাবনাও কাজে আসবে না। সেটা বরং ডেকে আনবে বিপদ। উন্নত মানবসম্পদের অধিকারী বস্তুগত সম্পদলোলুপরা তাদের এভাবেই বিপদগ্রস্ত করতে থাকবে।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫


হাসান মামুন:
সাংবাদিক, কলামিস্ট।